দিনের শেষে ঘুমের দেশে
"দিনের শেষে ঘুমের দেশে" | |
---|---|
পঙ্কজকুমার মল্লিক হেমন্ত মুখোপাধ্যায় কিশোর কুমার প্রমুখ শিল্পীবৃন্দ কর্তৃক সঙ্গীত | |
ভাষা | বাংলা |
প্রকাশিত | ১৯৩৭ |
ধারা | বাংলা গান |
লেখক | রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর |
সুরকার | পঙ্কজকুমার মল্লিক |
দিনের শেষে ঘুমের দেশে হল রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা ও পঙ্কজকুমার মল্লিক কর্তৃক সুরারোপিত একটি জনপ্রিয় বাংলা গান। গানটি ১৯০৬ সালে রবীন্দ্রনাথের খেয়া কাব্যগ্রন্থে ‘শেষ খেয়া’ শিরোনামে প্রকাশিত হয়েছিল। ১৯৩৭ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত মুক্তি চলচ্চিত্রের জন্য রবীন্দ্রনাথের অনুমতিক্রমে পঙ্কজকুমার মল্লিক এই গানে সুরারোপ করেছিলেন। উক্ত চলচ্চিত্রে তিনিই এই গানটি গেয়েছিলেন। রবীন্দ্রনাথ কর্তৃক সুরারোপিত নয় বলে বিশ্বভারতী সংগীত সমিতি এটিকে ‘রবীন্দ্রসংগীত’ আখ্যা দেয়নি এবং রবীন্দ্রনাথের গীতি-সংকলন গীতবিতান-এও এই গানটি অন্তর্ভুক্ত হয়নি। পরবর্তীকালে হেমন্ত মুখোপাধ্যায় ও কিশোর কুমার এই গানটি রেকর্ড করেন।
কথা
[সম্পাদনা]১৩১২ বঙ্গাব্দের আষাঢ় মাসে রচিত এই কবিতাটির কথাটি এই রকম:
- দিনের শেষে ঘুমের দেশে ঘোমটা-পরা ওই ছায়া
- ভুলালো রে ভুলালো মোর প্রাণ।
- ও পারেতে সোনার কূলে আঁধারমূলে কোন্ মায়া
- গেয়ে গেল কাজ-ভাঙানো গান।
- নামিয়ে মুখ চুকিয়ে সুখ যাবার মুখে যায় যারা
- ফেরার পথে ফিরেও নাহি চায়,
- তাদের পানে ভাঁটার টানে যাব রে আজ ঘরছাড়া--
- সন্ধ্যা আসে দিন যে চলে যায়।
- ওরে আয়
- আমায় নিয়ে যাবি কে রে
- দিনশেষের শেষ খেয়ায়।
- সাঁজের বেলা ভাঁটার স্রোতে ও পার হতে একটানা
- একটি-দুটি যায় যে তরী ভেসে।
- কেমন করে চিনব ওরে ওদের মাঝে কোন্খানা
- আমার ঘাটে ছিল আমার দেশে।
- অস্তাচলে তীরের তলে ঘন গাছের কোল ঘেঁষে
- ছায়ায় যেন ছায়ার মতো যায়,
- ডাকলে আমি ক্ষণেক থামি হেথায় পাড়ি ধরবে সে
- এমন নেয়ে আছে রে কোন্ নায়।
- ওরে আয়
- আমায় নিয়ে যাবি কে রে
- দিনশেষের শেষ খেয়ায়।
- ঘরেই যারা যাবার তারা কখন গেছে ঘরপানে,
- পারে যারা যাবার গেছে পারে;
- ঘরেও নহে, পারেও নহে, যে জন আছে মাঝখানে
- সন্ধ্যাবেলা কে ডেকে নেয় তারে।
- ফুলের বার নাইকো আর, ফসল যার ফলল না--
- চোখের জল ফেলতে হাসি পায়--
- দিনের আলো যার ফুরালো, সাঁজের আলো জ্বলল না,
- সেই বসেছে ঘাটের কিনারায়।
- ওরে আয়
- আমায় নিয়ে যাবি কে রে
- বেলাশেষের শেষ খেয়ায়।
সুরারোপের ইতিহাস
[সম্পাদনা]১৯৩৭ সালে চিত্র পরিচালক প্রমথেশ বড়ুয়া মুক্তি চলচ্চিত্রটি নির্মাণের সময় যখন সংগীত পরিচালক পঙ্কজকুমার মল্লিককে চিত্রনাট্য পড়ে শোনাচ্ছিলেন, তখনই পঙ্কজকুমার শেষ খেয়া কবিতাটির কিছু অংশে সুর দিয়ে পরিচালককে শোনান। প্রথমেশ বড়ুয়া স্থির করলেন গানটি চলচ্চিত্রে ব্যবহার করবেন। তাই রবীন্দ্রনাথের অনুমোদনের জন্য গানটি রেকর্ড করে তার কাছে পাঠানো হল। রবীন্দ্রনাথ গানটি শিল্পীর স্বকণ্ঠে শোনার ইচ্ছা প্রকাশ করলেন। তখন পঙ্কজকুমার প্রশান্তচন্দ্র মহলানবিশের বরানগরের বাড়ি ‘আম্রপালী’তে (অধুনা ইন্ডিয়ান স্ট্যাটিস্টিক্যাল ইনস্টিটিউট ভবন) রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে দেখা করেন। রবীন্দ্রনাথ প্রথমে ছবির গল্পটি শুনতে চান। শোনার পর রবীন্দ্রনাথ ছবির নামকরণ করেন ‘মুক্তি’। এরপর পঙ্কজকুমার রবীন্দ্রনাথকে গানটি গেয়ে শোনান। গান শুনে রবীন্দ্রনাথ খুশি হয়ে চলচ্চিত্রে গানটি ব্যবহারের অনুমতি দেন ও রবীন্দ্রনাথের অন্যান্য কিছু কবিতায় সুরারোপ করার জন্য পঙ্কজকুমারকে অনুরোধ করেন। পরে গানের কথায় রবীন্দ্রনাথ সামান্য একটু পরিবর্তনের পরামর্শও দেন। ‘চোখের জল ফেলতে হাসি পায়’-এর পরিবর্তে ‘অশ্রু যাহার ফেলতে হাসি পায়’ করা হয়। পঙ্কজকুমার এই গানটির সঙ্গে সঙ্গে ‘আমি কান পেতে রই’ ও ‘তার বিদায়বেলার মালাখানি’ গানদুটি চলচ্চিত্রে ব্যবহারেরও অনুমতি নিয়ে আসেন। চলচ্চিত্রে গানদুটি যথাক্রমে পঙ্কজকুমার মল্লিক ও কানন দেবী গেয়েছিলেন। ‘দিনের শেষে ঘুমের দেশে’ গানটিও পঙ্কজকুমারই চলচ্চিত্রে গেয়েছিলেন। উল্লেখ্য, এই তিনটি গানই বাংলা চলচ্চিত্রে ব্যবহৃত রবীন্দ্রনাথের প্রথম তিনটি গান।[১]
গীতবিতান তৃতীয় খণ্ডের পরিশিষ্ট ভাগে অন্যান্য কিছু গানের সঙ্গে এই গানটির উল্লেখ করে বলা হয়েছে:[২]
…এই গানগুলি সময়বিশেষে প্রচলিত বা আদৃত হইলেও, এগুলিতে কোনোটিতেই কবি সুর না দেওয়াতে, এগুলিকে রবীন্দ্রসংগীত বলিয়া গণনা করা সম্ভবপর হয় নাই।
রেকর্ড
[সম্পাদনা]পঙ্কজকুমার মল্লিকের একাধিক রেকর্ডে এই গানটি রয়েছে। পরবর্তীকালে হেমন্ত মুখোপাধ্যায় ও কিশোর কুমার এই গানটি রেকর্ড করেন। পরবর্তীকালেও অনেক শিল্পী এই গানটি গেয়েছেন।