বিষয়বস্তুতে চলুন

স্বাধীন বাংলা ফুটবল দল

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
স্বাধীন বাংলা ফুটবল দল
Shadhin Bangla football team
দলের লোগো
অ্যাসোসিয়েশনবাংলাদেশ ক্রীড়া সমিতি
প্রধান কোচননী বসাক
অধিনায়কজাকারিয়া পিন্টু
প্রথম আন্তর্জাতিক খেলা
স্বাধীন বাংলা বাংলাদেশ ২–২ ভারত নদিয়া একাদশ
কৃষ্ণনগর স্টেডিয়াম,
নদিয়া জেলা, পশ্চিমবঙ্গ, ভারত
২৫ জুলাই ১৯৭১
সর্বশেষ আন্তর্জাতিক খেলা
বাংলাদেশ ৩–১ ভারত মুম্বই একাদশ
মুম্বই,
মুম্বই, মহারাষ্ট্র, ভারত
৩ ডিসেম্বর ১৯৭১

১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে বাংলাদেশের একটি ফুটবল দল বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে জনমত অর্জন এবং মুক্তিযোদ্ধাদের সাহায্যার্থে অর্থ সংগ্রহের উদ্দেশ্যে ভারতের বিভিন্ন স্থানে প্রদর্শনী ফুটবল খেলায় অংশ নেয়। এই দলটি স্বাধীন বাংলা ফুটবল দল নামে পরিচিত ছিল। এটি ছিল পৃথিবীর ইতিহাসে যুদ্ধকালীন প্রথম ফুটবল দল।[] বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দলের যেকোনো বিন্যাসে এটাই প্রথম নজির। মুক্তিযুদ্ধের প্রতি আন্তর্জাতিক সচেতনতা ও অর্থনৈতিক সমর্থন বাড়াতে দলটি মোট ১৬টি প্রীতি ম্যাচ খেলে ভারতজুড়ে সফর করেছিলেন।[][][]

স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের অধিনায়ক জাকারিয়া পিন্টুই প্রথম ব্যক্তি যিনি বাংলাদেশের ভূখণ্ডের বাইরে বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করেছিলেন।[] ১৬তম ম্যাচ শেষে দলটি ১৯৭১ সালে মুক্তিযোদ্ধা তহবিলে ৫ লাখ টাকা অনুদান দিয়েছেন।[] বর্তমানে ফিলিস্তিন ফুটবল দল এ ধরনের তহবিল সংগ্রহ ও জনমত গঠন করছেন।

সূচনাপর্ব

[সম্পাদনা]

১৯৭১ সালের জুন মাসে দলটি গঠিত হয়েছিল। প্রথম দিকে কয়েকজনকে অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম স্বাক্ষরিত চিঠিতে স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের কথা উল্লেখ করে মুজিবনগর গিয়ে তাতে যোগ দিতে বলা হয়েছিল। এ থেকে শুরু হয় বাংলাদেশের ইতিহাসে নতুন এক রূপকল্প। মুজিবনগরে প্রথমে গিয়ে উপস্থিত হন প্রতাপ শঙ্কর হাজরা, সাইদুর রহমান প্যাটেল, শেখ আশরাফ আলীসহ আলী ইমাম এবং অন্যরা। এরপর সেখান থেকে আকাশবাণীতে (কলকাতা রেডিও) ঘোষণা দেয়া হলো বিভিন্ন ক্যাম্পে অবস্থানরত খেলোয়াড়দের মুজিবনগরে রিপোর্ট করার জন্য। ঘোষণার পরে ৪০ জন খেলোয়াড় মুজিবনগর ক্যাম্পে যোগ দেন। সেখান থেকে ৩০ জন বাছাই করে স্বাধীন বাংলা ফুটবল দল গঠন করা হয়েছিল। পরে আরো একজনকে অন্তর্ভুক্ত করলে সদস্য সংখ্যা ৩১ জন হয়েছিলেন। সে দল ২৩ জুলাই মুজিবনগর থেকে নদিয়া পৌঁছে। নদিয়ার ডিসি দীপককানত্ম ঘোষ এবং স্পোর্টস অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদকসহ অন্য কর্মকর্তারা দলটিকে অভ্যর্থনা জানান। ২৫ জুলাই কৃষ্ণনগর স্টেডিয়ামে নদিয়া একাদশের বিপক্ষে স্বাধীন বাংলা ফুটবল দল প্রথম খেলতে নামে। এই দিন মেহেরপুর সীমান্ত এলাকা দিয়ে বিপুলসংখ্যক বাংলাদেশি ম্যাচ উপভোগ করতে স্টেডিয়ামে আসে। খেলা শুরুর আগে জাতীয় পতাকা নিয়ে মাঠ প্রদক্ষিণ করেন দলের সদস্যরা। এ সময় জাতীয় সঙ্গীতও বাজানো হয়। ম্যাচটি ২–২ গোলে ড্র হয়েছিল। শাহজাহান স্বাধীন বাংলা দলের হয়ে প্রথম গোল করেন। স্বীকৃতি ছাড়া বাংলাদেশের পতাকা ওড়ানোর দায়ে পরদিন নদিয়ার ডিসিকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছিল। মুক্তিযুদ্ধকালে স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের ব্যবহৃত জার্সি ২১ নভেম্বর ২০২১ সালে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে সংরক্ষণের জন্যে হস্তান্তর করা হয়েছিল।[]

সদস্যবৃন্দ

[সম্পাদনা]

৩৪ জন খেলোয়াড়, সাথে ম্যানেজার এবং কোচসহ সর্বমোট ৩৬ জন নিয়ে গড়া ফুটবল দলের অধিনায়ক ছিলেন জাকারিয়া পিন্টু, সহঃ অধিনায়ক ছিলেন প্রতাপ শংকর হাজরা। ব্যবস্থাপক ছিলেন তানভীর মাজহারুল ইসলাম তান্না (পরবর্তীতে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের কর্মকর্তা) এবং প্রশিক্ষক ছিলেন ননী বসাক।[][][][১০][১১]

খেলোয়াড়

[সম্পাদনা]
নাম[১২] জেলা বা উপজেলা
বাংলাদেশ প্রয়াত জাকারিয়া পিন্টু (অধিনায়ক) নওগাঁ
বাংলাদেশ প্রতাপ শংকর হাজরা (সহ-অধিনায়ক) শ্রীনগর
বাংলাদেশ কাজী সালাউদ্দিন ঢাকা
বাংলাদেশ প্রয়াত একেএম নওশেরুজ্জামান চাঁদপুর
বাংলাদেশ প্রয়াত লেফটেন্যান্ট খন্দকার এম নুরুন্নবী (মেজর জেনারেল হিসেবে অবসর গ্রহণ) কিশোরগঞ্জ
বাংলাদেশ প্রয়াত আলী ইমাম ফরিদপুর
বাংলাদেশ মোহাম্মদ শেখ তসলিম উদ্দিন ঢাকা
বাংলাদেশ প্রয়াত আইনুল হক ফরিদপুর
বাংলাদেশ ফজলে সাদাইন খোকন রাজশাহী
বাংলাদেশ লুৎফর রহমান যশোর
বাংলাদেশ শেখ আশরাফ আলী যশোর
বাংলাদেশ প্রয়াত অমলেশ সেন বগুড়া
বাংলাদেশ প্রয়াত আবদুল হাকিম যশোর
বাংলাদেশ প্রয়াত আমিনুল ইসলাম সুরুজ বরিশাল
বাংলাদেশ প্রয়াত বিমল কর নোয়াখালী
বাংলাদেশ সুভাষ চন্দ্র সাহা নরসিংদী
বাংলাদেশ মুজিবুর রহমান চট্টগ্রাম
বাংলাদেশ মোহাম্মদ কায়কোবাদ ব্রাহ্মণবাড়িয়া
বাংলাদেশ দেওয়ান মোহাম্মদ সিরাজউদ্দিন সিরু নারায়ণগঞ্জ
বাংলাদেশ আব্দুস সাত্তার নওগাঁ
বাংলাদেশ সঞ্জিত কুমার দে গাজীপুর
বাংলাদেশ আব্দুল মোমেন জোয়ার্দ্দার চুয়াডাঙ্গা
বাংলাদেশ মনিরুজ্জামান পিয়ারা কুষ্টিয়া
বাংলাদেশ এনায়েতুর রহমান খান কালীগঞ্জ
বাংলাদেশ শাহজাহান আলম ফরিদপুর
বাংলাদেশ অনিরুদ্ধ চট্টোপাধ্যায় কক্সবাজার
বাংলাদেশ নীহার রঞ্জন দাস নারায়ণগঞ্জ
বাংলাদেশ প্রাণ গোবিন্দ কুন্ডু ঢাকা
বাংলাদেশ প্রয়াত মাহমুদ রশিদ সাতক্ষীরা
বাংলাদেশ প্রয়াত শেখ মনসুর আলী লালু নড়াইল

কর্মকর্তারা

[সম্পাদনা]
অবস্থান নাম
উদ্যোগ দাতা বাংলাদেশ প্রয়াত সাইদুর রহমান প্যাটেল
ব্যবস্থাপক বাংলাদেশ তানভীর মাজহার ইসলাম তান্না
কোচ বাংলাদেশ প্রয়াত ননী বসাক
সম্পাদক, বাংলাদেশ ক্রীড়া সমিতি বাংলাদেশ প্রয়াত লুৎফর রহমান

সাফল্য

[সম্পাদনা]

৮ আগস্ট কলকাতার অন্যতম ফুটবল পরাশক্তি মোহনবাগানের খ্যাতনামা ফুটবলার গোষ্ঠ পাল-র নামে গড়া দলের বিপরীতে পরবর্তী ম্যাচ খেলে স্বাধীন বাংলা দল। মূলত মোহনবাগানের খেলোয়াড়রাই এই দলের হয়ে মাঠে নামেন। এভাবে বিভিন্ন এলাকায় মোট ১৬টি ম্যাচ খেলে স্বাধীনতা সংগ্রামের পক্ষে জনমত গড়ে তোলার পাশাপাশি ফান্ড সংগ্রহ করা হয়েছিল। ম্যাচগুলো থেকে আয়কৃত ৫ লাখ টাকা মুক্তিযুদ্ধের ফান্ডে জমা দেয়া হয়েছিল। ১৬ ডিসেম্বর চূড়ান্ত বিজয়ের পর দেশে ফেরেন স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের সদস্যরা। যুদ্ধ-পরবর্তী বাংলাদেশের ফুটবলকে চাঙ্গা করতে স্বাধীন বাংলা ফুটবল দল কাজ করেছিলেন। এই দলটি ভারতের বিভিন্ন স্থানে মোট ১২টি খেলায় জয়লাভ করেন এবং ৩.৫ লাখ রুপি (৫ লাখ টাকা) অর্থ জোগাড়ে সমর্থ হয়েছিলেন।[১৩] সর্বশেষ খেলাটি অনুষ্ঠিত হয় মুম্বই তে যেখানে মহারাষ্ট্র ফুটবল দলের নেতৃত্ব দেন ভারতের খ্যাতনামা সাবেক ক্রিকেট অধিনায়ক নবাব মনসুর আলি খান পতৌদি[১০]

জনপ্রিয় সংস্কৃতিতে

[সম্পাদনা]
  • এই দলকে নিয়ে তৈরি হয়েছে ১৯ মিনিট দৈর্ঘ্যের তথ্যচিত্র মুক্তির জন্য ফুটবল
  • ২০১০ সালের বাংলা ভাষার চলচ্চিত্র জাগো স্বাধীন বাংলা ফুটবল দল থেকে অনুপ্রাণিত।[১৪]
  • ফুটবল দলের উপর ভিত্তি করে ২০২২ সালের বাংলা ভাষার চলচ্চিত্র দামাল ইমপ্রেস টেলিফিল্ম প্রযোজনা করেছেন।[১৫][১৬]

আরও দেখুন

[সম্পাদনা]

তথ্যসূত্র

[সম্পাদনা]
  1. "তথ্যচিত্র প্রদর্শনী মুক্তির জন্য ফুটবল ও ধরিত্রীর সঙ্গে বসবাস - প্রথম আলো"দৈনিক প্রথম আলো। ২০১৩-০৮-৩১। ২০২০-০৩-০৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৩-১২-৩১ 
  2. "Shadhin Bangla Football Team: The underappreciated heroes"The Business Standard। ডিসেম্বর ১৬, ২০২০। মার্চ ১৯, ২০২২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ফেব্রুয়ারি ৩, ২০২২ 
  3. মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের জার্সিদৈনিক প্রথম আলো। ২০২২-০৩-১৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-০৯-২৭ 
  4. স্বাধীন বাংলা ফুটবলদৈনিক প্রথম আলো। ২০২২-০৩-১৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-০৯-২৭ 
  5. "Shadhin Bangla Football Team"Plaantik.com। ১০ আগস্ট ২০১৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। 
  6. Preetha, Sushmita S. (২৩ মার্চ ২০১২)। Star Weekend Magazine https://web.archive.org/web/20150415205914/http://archive.thedailystar.net/magazine/2012/03/04/cover.htm। ১৫ এপ্রিল ২০১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৯ আগস্ট ২০১৪  |শিরোনাম= অনুপস্থিত বা খালি (সাহায্য)
  7. "স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের জার্সি মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে"এনটিভি (ইংরেজি ভাষায়)। ২০২১-১১-২১। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-১১-২১ 
  8. http://nation.ittefaq.com/issues/2009/01/06/news0095.htm ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ৯ সেপ্টেম্বর ২০১৩ তারিখে দৈনিক ইত্তেফাক এ প্রকাশিত সংবাদ
  9. সিটিসেল প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তি[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
  10. http://www.thedailystar.net/story.php?nid=70074 ডেইলি স্টার পত্রিকার সংবাদ
  11. ডিসেম্বর ১৪, ২০০৮ (বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম)
  12. "'Shadhin Bangla Football Dal': A team like no other"The Business Standard। ডিসেম্বর ১৬, ২০১৯। আগস্ট ১৫, ২০২২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ আগস্ট ১৫, ২০২২ 
  13. দৈনিক ইত্তেফাক এ প্রকাশিত সংবাদ
  14. "'Jaago' wins big at Film Award Bangla 2010"দ্য ডেইলি স্টার। ২৫ জুন ২০১০। ১৮ অক্টোবর ২০১৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৬ নভেম্বর ২০২৪ 
  15. "Damal: Reliving the legacy of the Shadhin Bangla Football Team"দ্য ডেইলি স্টার। ২৩ নভেম্বর ২০২০। ২৮ আগস্ট ২০২২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৯ অক্টোবর ২০২২ 
  16. "দৈনিক প্রথম আলোর সংবাদ"। ২০১৭-০৫-০৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৩-১২-৩১ 

আরও পড়ুন

[সম্পাদনা]
  • Dulal, Mahmud (২০২০)। খেলার মাঠে মুক্তিযুদ্ধ (অনু. Liberation war in the playground)। Bishhoshahitto Bhobon। আইএসবিএন 978-984-8218-31-0 
  • Alam, Masud (২০১৭)। ফুটবলের গল্প ফুটবলারদের গল্প (অনু. The story of football the story of footballers)। Bishhoshahitto Bhobon। আইএসবিএন 9789849134688 
  • Mahmud, Noman (২০১৮)। ফুটবল পায়ে মুক্তির যুদ্ধ (অনু. Liberation war fought by football)Agamee Prakashaniআইএসবিএন 978-984-8218-31-0 

বহিঃসংযোগ

[সম্পাদনা]