সেলিম আল দীন মুক্তমঞ্চ
মুক্তমঞ্চ | |
পূর্ণ নাম | সেলিম আল দীন মুক্তমঞ্চ |
---|---|
প্রাক্তন নাম | জাহাঙ্গীরনগর মুক্তমঞ্চ |
ঠিকানা | বাংলাদেশ |
অবস্থান | জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় |
স্থানাঙ্ক | ২৩°৫২′৪৪″ উত্তর ৯০°১৬′১৫″ পূর্ব / ২৩.৮৭৮৭৭১৮° উত্তর ৯০.২৭০৭৯৯৯° পূর্ব |
মালিক | জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় |
পরিচালক | ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র[১] |
ধরন | উন্মুক্ত নাট্যমঞ্চ |
ধারণক্ষমতা | ১৫০০ |
উপরিভাগ | সিরামিক ইট |
বর্তমান ব্যবহার | নাটক ও বিবিধ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান |
নির্মাণ | |
চালু | ১৯৮০ |
কার্যকাল | ১৯৮০ - বর্তমান |
স্থপতি | আলমগীর কবির |
সেলিম আল দীন মুক্তমঞ্চ জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তর্গত একটি উম্মুক্ত বহিরাঙ্গন নাট্যমঞ্চ। প্রাচীন গ্রিসের নাট্যমঞ্চের আদলে লাল সিরামিক ইট দিয়ে নির্মিত খোলা আকাশের নীচে উম্মুক্ত মঞ্চটির অবস্থান বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রের পূর্বে, ও ক্যাফেটেরিয়ার দক্ষিণ সীমায় একটি ঢিবির ঢালে। এটি দক্ষিণ এশিয়ায় প্রাচীন গ্রিসের স্থাপত্যশৈলীতে নির্মিত প্রথম মুক্তমঞ্চ।[২][৩] প্রাথমিক অবস্থায় নামহীন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংস্কৃতিক তীর্থ হিসেবে পরিচিত স্থাপনাটি দীর্ঘদিন শুধু 'মুক্তমঞ্চ' নামে অভিহিত হওয়ার পর এটির মূল পরিকল্পনাকারী সেলিম আল দীনের মরনোত্তর সম্মানে আনুষ্ঠানিক নামকরণ করা হয়।[২][৪] ‘শকুন্তলা’ নাটক মঞ্চায়নের মাধ্যমে ১৯৮০ সালে মুক্তমঞ্চের অভিষেক ঘটে।[৩]
নকশা
[সম্পাদনা]জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগের শিক্ষার্থিদের তাত্ত্বিক ও ব্যবহারিক জ্ঞানের পাশাপাশি মঞ্চের পেশাগত অভিজ্ঞতা অর্জনের জন্য একটি ব্যবহারিক মঞ্চের প্রয়োজন ছিল। একাডেমিক থিয়েটারের বাইরেও অন্যান্য বিভাগের ছাত্রদের নাট্য দল গঠন ও নাট্য তৎপরতা বেড়েছিল। বিশ্ববিদ্যালয়ের নাট্য সংগঠক ও একাডেমিক চাহিদার অনুযায়ী একটি স্বতন্ত্র মঞ্চ স্থাপনের পরিকল্পনা করা হয়। নির্মাণের প্রাথমিক প্রক্রিয়া শুরু হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি সেলিম আল দীনের মাধ্যমে।[২]
মঞ্চের নকশা ও স্থান নির্বাচনে গ্রিসের অসমতল ভূমিরূপ ও পাহাড়ি ঢালের সাথে জাহাঙ্গীরনগরের সাদৃশ্য ও সামঞ্জস্যতার প্রভাব ছিল।[২] সেলিম আল দীন ছাড়াও মোস্তফা মনোয়ার, নাসির উদ্দীন ইউসুফ বাচ্চু ও জিল্লুর রহমান সিদ্দিকী নির্মাণ পরিকল্পনায় জড়িত ছিলেন। প্রাচীন গ্রিক উম্মুক্ত নাট্যমঞ্চের আদলে নির্মাণ পরিকল্পনা ছিল তাদের সম্মিলিত সিদ্ধান্ত। চলচ্চিত্র নির্মাতা ও স্থপতি আলমগীর কবির এটির স্থাপত্য নকশা করেন।[২]
স্থাপত্য বৈশিষ্ট্য
[সম্পাদনা]জাহাঙ্গীরনগরের মুক্তমঞ্চ গ্রিসের প্রাচীন উম্মুক্ত নাট্যমঞ্চের স্থাপত্যশৈলিতে বাংলাদেশ,[১] তথা দক্ষিণ এশিয়ায় নির্মিত প্রথম স্থাপনা।[২][৩] প্রাচীন গ্রিসে অসমতল উপত্যকা কেটে ঢালু জায়গায় মূল বেদি এবং বেদির সামনে থাকা পাহাড়ের ঢাল কেটে দর্শকসারি বানানোর মাধ্যমে মঞ্চ নির্মিত হতো। তেমনি মূল বেদির সামনে তিন পাশ খোলা রেখে সমতল থেকে নিচু জায়গায়[২] গ্রিক এপিডোরাস থিয়েটারের আদলে মুক্তমঞ্চ নির্মিত।[৫]
-
দর্শক সারি থেকে মূলমঞ্চ, পেছনে ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র
-
ভূমি থেকে দর্শক সারির একপাশ
-
ক্যাফেটেরিয়া থেকে মঞ্চের প্রবেশপথ
ঢাল কেটে বানানো দর্শক সারি সহ পুরস্থাপনা লাল সিরামিক ইটের গাথুনিতে বানানো। শব্দ ও আলোক তরঙ্গের সম্প্রসারণ নীতি অনুসরণ করায়[৬][৭] কৃত্রিম শব্দ প্রক্ষেপণ ও আলোক ব্যবস্থাপনা ছাড়াই দর্শকসারির সবপ্রান্ত থেকে মঞ্চের উপস্থাপনা স্পষ্ট দেখা ও শোনা যায়।[২] মূল বেদি আচ্ছাদনে কাপড় ও বাতি টানানোর জন্য লোহার কাঠামো আছে।[১] দর্শক সারি ১৪ ধাপে ঢালের উপর নির্মিত, যা একসাথে এক হাজার পাঁচশত দর্শকের আসন হিসেবে ব্যবহার করা যায়।[২]
ব্যবহার
[সম্পাদনা]বেশিরভাগ সময় নাটক মঞ্চস্থ হলেও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় সকল সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড মুক্তমঞ্চকে কেন্দ্র করে আয়োজন করা হয়।[১] জাতীয় বিতর্ক প্রতিযোগিতা,[৮] বিভিন্ন বিভাগের পুনর্মিলনী, শিক্ষা সমাপনী অনুষ্ঠান, কনসার্ট, নাট্যোৎসব, বিশ্ববিদ্যালয় দিবস সহ প্রতিবছর মুক্তমঞ্চে প্রায় ২৫০টি অনুষ্ঠানের আয়োজন হয়।[১]
কিংবদন্তি
[সম্পাদনা]বাংলাদেশে বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রিক প্রথম নাট্যদল জাহাঙ্গীরনগর থিয়েটার প্রাচীন গ্রিসের নাট্য ঐতিহ্য অনুসারে ১৯৮০ সালের এক ভোর বেলায় তাদের 'শকুন্তলা' নাটক মঞ্চায়নের মাধ্যমে মুক্তমঞ্চের অভিষেক ঘটায়। শহীদুজ্জামান সেলিম, ফারুক আহমেদ, শুভাশীষ ভৌমিক তাদের নাট্যজীবন শুরু করেন মুক্তমঞ্চের অভিষেকে অভিনয়ের মাধ্যমে।[২]
১৯৯১ সালে মুক্তমঞ্চে এক কনসার্টে ডিফারেন্ট টাচ তাদের জনপ্রিয় গান শ্রাবণের মেঘগুলো জড়ো হলো আকাশে শুরুর কয়েক মুহূর্ত পর বৃষ্টি নামে। ১৯৯২ সালে মুক্তমঞ্চে এইগান পরিবেশনার সময় পুনরায় বৃষ্টি নামে।[৯]
তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ ক খ গ ঘ ঙ "অবহেলায় নষ্ট হচ্ছে দেশের প্রথম মুক্তমঞ্চ"। জাগো নিউজ। ২০১৫-০৮-২৫। ২০২০-০১-২২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-১০-২১।
- ↑ ক খ গ ঘ ঙ চ ছ জ ঝ ঞ খান, ফরিদুর রেজা (২০২২-০৮-০৬)। "জাবির তারকাগর্ভা সেলিম আল দীন মুক্তমঞ্চ"। বাংলাদেশ জার্নাল। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-১০-২১।
- ↑ ক খ গ সুমন, আহমেদ (২০১৮-০১-১২)। "অনন্য জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়"। দৈনিক যুগান্তর। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-১০-২০।
- ↑ "একজন শেকড় সন্ধানী সেলিম আল দীন"। সারাবাংলা ডট নেট। ২০১৮-০৮-১৮। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-১০-২১।
- ↑ "ভাস্কর্য কথা বলে"। জাগো নিউজ। ২০১৫-০৭-০৪। ২০১৮-০৩-১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-১১-১২।
- ↑ ACOUSTICS, Bruce Lindsay, Dowden – Hutchingon Books Publishers, Chapter 3
- ↑ Ernst Mach, Introduction to The Science of Mechanics: A Critical and Historical Account of its Development (1893, 1960) Tr. Thomas J. McCormack
- ↑ "'National Debate Fest-2023' at JU on Thursday"। বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা (ইংরেজি ভাষায়)। ২০২৩-১০-১০। ২০২৩-১০-১১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-১০-২২।
- ↑ "'শ্রাবণের মেঘগুলো জড়ো হলো আকাশে' গানটির সৃষ্টি যেভাবে"। প্রথম আলো। ২০২৩-০৮-০২। ২০২৩-০৮-০২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২৩-০৮-০২।