ব্রজেন্দ্র নারায়ণ চৌধুরী
![](http://upload.wikimedia.org/wikipedia/commons/thumb/e/ef/%E0%A6%AA%E0%A6%BE%E0%A6%87%E0%A6%B2%E0%A6%97%E0%A6%BE%E0%A6%81%E0%A6%93%27%E0%A6%B0_%E0%A6%9C%E0%A6%AE%E0%A6%BF%E0%A6%A6%E0%A6%BE%E0%A6%B0%E0%A6%AC%E0%A6%BE%E0%A6%A1%E0%A6%BC%E0%A6%BF_%E0%A6%AA%E0%A7%8D%E0%A6%B0%E0%A6%AC%E0%A7%87%E0%A6%B6_%E0%A6%A6%E0%A7%8B%E0%A6%AF%E0%A6%BC%E0%A6%BE%E0%A6%B0.jpg/220px-%E0%A6%AA%E0%A6%BE%E0%A6%87%E0%A6%B2%E0%A6%97%E0%A6%BE%E0%A6%81%E0%A6%93%27%E0%A6%B0_%E0%A6%9C%E0%A6%AE%E0%A6%BF%E0%A6%A6%E0%A6%BE%E0%A6%B0%E0%A6%AC%E0%A6%BE%E0%A6%A1%E0%A6%BC%E0%A6%BF_%E0%A6%AA%E0%A7%8D%E0%A6%B0%E0%A6%AC%E0%A7%87%E0%A6%B6_%E0%A6%A6%E0%A7%8B%E0%A6%AF%E0%A6%BC%E0%A6%BE%E0%A6%B0.jpg)
ব্রজেন্দ্র নারায়ণ চৌধুরী (জন্মঃ ১৮৮২ ইং, মৃত্যুঃ ১৯৭২ ইংরেজি) । জগন্নাথপুর উপজেলার ৯ নম্বর পাইল গাঁও ইউনিয়নের 'পাইল গাঁও' জমিদার পরিবারের শেষ জমিদার ব্রজেন্দ্র নারায়ণ চৌধুরী ছিলেন একজন প্রখ্যাত শিক্ষাবিদ ও রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব, যিনি ব্রিটিশ বিরোধী এবং ভারতের স্বাধীনতা অন্দোলনের পূর্ব বাংলায় বিপ্লবী ভূমিকা পালন করেন। তিনি ছিলেন সিলেট বিভাগের ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস সভাপতি এবং আসাম আইন পরিষদের সদস্য।[১][২]
জন্ম ও বংশ পরিচয়[সম্পাদনা]
বংশ পরিচয়ের জন্য নিবন্ধ দেখুন সুখময় চৌধুরী
বাংলাদেশের সুনামগঞ্জ জেলার অন্তর্ভুক্ত আতুয়াজান পরগণার বর্তমান জগন্নাথপুর উপজেলার পাইল গাঁও গ্রামের প্রখ্যাত জমিদার[৩] বংশে ১৮৮২ সালে জন্মগ্রহণ করেন ব্রজেন্দ্র নারায়ণ চৌধুরী। প্রজাহিতৈষী জমিদার হিসেবে পরিচিত রসময় চৌধুরী ছিলেন তার পিতা। সিলেটের আদালতের উকিল ও একজন অনারারী ম্যাজিষ্ট্রেট এবং পাইল গাঁওয়ের প্রখ্যাত জমিদার ব্রজেন্দ্রনাথ চৌধুরী ছিলেন ব্রজেন্দ্র নারায়ণ চৌধুরীর দাদা।[১]
শিক্ষা জীবন[সম্পাদনা]
ব্রজেন্দ্র নারায়ণ চৌধুরী প্রেসিডেন্সী কলেজ থেকে ইতিহাস ও অর্থনীতিতে কৃতিত্বের সাথে এম.এ পাস করে স্বর্ণপদক লাভ করেন। ১৯০৬ সালে তিনি বি.এল পরিক্ষা দেন এবং ১৯০৭ সালে সিলেট বারে যোগ দিয়ে বৎসরখানেক ওকালতি প্র্যাকটিস্ করেন।[২]
কর্ম জীবন[সম্পাদনা]
তার কর্ম জীবনের শুরুতে প্রথমত সিলেট বারে উকিল হিসেবে যোগ দেন। ১৯০৮ সালে তার পিতার মৃত্যু হয়। এ সময় ওকালতি ত্যাগ করে পাইল গাঁওয়ের জমিদারি ষ্টেটের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। তখন থেকে তিনি রাজনীতি ও সমাজসেবার কাজে আত্মনিয়োগ করেন।[১] ১৯২৬সালে তার চাচা সুখময় চৌধুরীর উদ্যোগে নিজ তত্বাবধানে স্থাপিত হয় পাইল গাও ব্রজনাথ উচ্চ বিদ্যালয়। ১৯২৬ সালে তার পিতা রসময় চৌধুরীর নামে সিলেট শহরে চাচার সহযোগী হয়ে রসময় মেমোরিয়াল হাই স্কুল স্থাপন করেন। ১৯৩৯ সালে সিলেট চৌহাট্টাস্থিত নিজ বাড়িতে সিলেট সরকারি মহিলা কলেজ স্থাপিত করে দুই বৎসর তিনি অবৈতনিক অধ্যক্ষের দায়িত্ব পালন করেন। বর্তমানে এটি সিলেট সরকারি মহিলা কলেজে রুপান্তর।[১]
রাজনীতি[সম্পাদনা]
১৯১১ সালে বঙ্গভঙ্গ রদ হয়ে সিলেট যখন পুনরায় আসামে যুক্ত হয়, সেই থেকে তিনি সিলেটকে বঙ্গ প্রদেশের সঙ্গে সংযুক্ত রাখতে রাজনীতে যোগদেন। এ উদ্দেশ্য সফল করতে ১৯২০ সালে গঠন করেন Sylhet Re Union League। এ সময় রায় বাহাদুর গিরিশ চন্দ্র নাগ ও রায় বাহাদুর রমণী মোহন দাস তার সহকর্মী হিসেবে সঙ্গী হয়েছিলেন। ব্রজেন্দ্র নারায়ণ চৌধুরী ১৯২৩ সাল পর্যন্ত স্বরাজ্য দলের নেতা হিসেবে কাজ করেন। ১৯২৪ সালে সুরমা উপত্যকা রাষ্ট্রীয় সম্মিলনের ষষ্ঠ অধিবেশনে অভ্যর্থনা সমিতির সভাপতি মনোনিত হন। সুনামগঞ্জ জেলায় অনুষ্ঠিত এ সম্মিলনের সভানেত্রীত্ব করেন শ্রীমতি সরোজিনী নাইডু। ১৯২৯ সালে তিনি সিলেট কাছাড় বন্যা সাহায্য কমিটির অর্গেনাইজার ও সেক্রেটারী নিযুক্ত হন। ১৯৩০ সালে আইন অমান্য আন্দোলনের সময় জেলা কংগ্রেসের সভাপতিরুপে বিশেষ ভুমিকা রাখেন। ঐ বছরের মে মাসের ৩ তারিখে তাকে গ্রেফতার করে কারাগারে প্রেরণ করা হয়। জেল থেকে বের হয়ে দ্বিতীয়বার এ আন্দোলনে যোগ দিয়ে ১৯৩২ সালে গ্রেফতার হয়ে দুই বৎসরের জন্য আবার কারারুদ্ধ হন । ১৯৩৬ থেকে ১৯৪০ সাল পর্যন্ত বিনা প্রতিদ্বন্ধিতায় প্রাদেশিক ও কেন্দ্রীয় পরিষদে নির্বাচিত প্রতিনিধি ছিলেন। কংগ্রেস হাই কমান্ডের সাথে মতবিরোধ হওয়ায় ১৯৪১ সালে তিনি সদস্য পদ ত্যাগ করেন । ১৯৪৭ সালে সিলেট গণ ভোটের সময় তিনি কংগ্রেসের হয়ে কাজ করেন। [১][৪]
সাহিত্য কর্ম[সম্পাদনা]
১৯৪১ সালে রাজনীতি থেকে অবসরগ্রহণ করে তিনি জনশক্তি প্রেস নামের প্রতিষ্ঠান করে এর সম্পাদকের দায়িত্ব নেন। বহু দিন এ প্রেসের মাধ্যমে স্বদেশী আন্দোলনে ভূমিকা রাখেন। এখান থেকে তিনি পাইল গাঁও ধর বংশ এবং স্মৃতি ও প্রীতি দুটি গ্রন্থ রচনা করে প্রকাশ করেন।[১]
মৃত্যু[সম্পাদনা]
দেশ বিভাগের পর বিভিন্ন হিন্দু পরিবারের লোকজন-সহ হিন্দু নেতারাও যখন ভারতে চলে যান, সে সময় তার বংশীয় অনেক লোক ভারতে পাড়ি জমালেও তিনি স্বদেশের মায়া ত্যাগ করতে পারেননি। তখন নিজ বাড়িতে ও শহরের বাসায় থেকে নিজের স্থাপিত স্কুলসমূহের পরিচালনাসহ বিভিন্ন জনসেবার কাজে অবসর সময় ব্যয় করেন । ১৯৭২ সালে তিনি গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন। চিকিৎসার জন্য তাকে কলকাতায় নেয়া হলে ১৩৭৯ বাংলার ভাদ্র মাসের ১৪ তারিখে সেখানেই প্রাণত্যাগ করেন।[১]
তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]
- ↑ ক খ গ ঘ ঙ চ ছ সিলেটের একশত একজন ফজলুর রহমান' প্রকাশক- ফখরুল কবির খাঁ, প্রকাশকাল - এপ্রিল ১৯৯৪ খ্রিস্টাব্দ, পৃষ্ঠা ১৩৫, প্রবন্ধ- ব্রজেন্দ্র নারায়ণ চৌধুরী
- ↑ ক খ সিলেট বিভাগের ইতিবৃত্ত: প্রবন্ধঃ সিলেট বিভাগের বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ', মোহাম্মদ মুমিনুল হক, গ্রন্থ প্রকাশকাল: সেপ্টেম্বর ২০০১; পৃষ্ঠা ৫০৫
- ↑ শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত উত্তরাংশ, তৃতীয় ভাগ, পঞ্চম খণ্ড, দ্বিতীয় অধ্যায়, অচ্যুতচরণ চৌধুরী তত্ত্বনিধি; প্রকাশক: মোস্তফা সেলিম; উৎস প্রকাশন, ২০০৪, প্রবন্ধ -পাইল গাও এর জমিদার বংশ
- ↑ সিলেটের দুইশত বছরের আন্দোলন, তাজুল মোহাম্মদ; প্রকাশক: ওসমান গণি, আগামী প্রকাশনী, ৩৬ বাংলাবাজার, ঢাকা থেকে প্রকাশিত প্রকাশকাল: ১৯৯৫।