কাতার-ফ্রান্স সম্পর্ক
ফ্রান্স |
কাতার |
---|
কাতার - ফ্রান্স সম্পর্ক হল ফ্রান্স এবং কাতারের মধ্যকার দ্বিপাক্ষীয় সম্পর্ক। ফ্রান্সে স্থাপিত প্রথম কাতারের দূতাবাসটি ১৯৭২ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়,[১] এবং প্রথম দ্বিপাক্ষীয় চুক্তি স্বাক্ষরিত হয় ১৯৭৪ সালে।[২]
ইতিহাস
[সম্পাদনা]ফ্রান্স – কাতার সম্পর্কের সূত্রপাত ঘটে ২১শে সেপ্টেম্বর, ১৯৭১ সালে কাতারের স্বাধীনতা লাভের মধ্যদিয়ে। তখন জাতিসংঘে কাতারের তৎকালীন প্রতিনিধি হাসান কামেল ফরাসিতে তার দেশের হয়ে প্রথম বক্তৃতা প্রদান করেন। ১৯৭২ সালে ফ্রান্সে কাতার তাদের প্রথম দূতাবাস স্থাপন করেন, এবং ১৯৭৪ সালে ফ্রান্সে প্রথম রাষ্ট্রপতির সফরের আয়োজন করেন।[১]
কূটনৈতিক প্রতিনিধিত্ব
[সম্পাদনা]১৯৭২ সাল থেকেই প্যারিসের র্যু দ্য তিলসিতে কাতারের একটি দূতাবাস ছিল। বর্তমানে ফ্রান্সে কাতারের রাষ্ট্রদূত মিশাল বিন হামাদ আল থানি।[৩] ফ্রান্সের দূতাবাস দোহা জেলার ওয়েস্ট বে'তে অবস্থিত,[৪] এবং কাতারে ফ্রান্সের রাষ্ট্রদূত এরিক চেভ্যালিয়ার কর্তৃক পরিচালিত হয়ে থাকে।[৫]
কূটনৈতিক সফর
[সম্পাদনা]নিকোলা সারকোজি রাষ্ট্রপতি হওয়ার পর আমির প্রথম আরবনেতা হিসেবে হামাদ বিন খলিফা আল থানি ফ্রান্সে সফর করেন।[৬]
২২ জুন, ২০১৩ সালে ফরাসি রাষ্ট্রপতি ফ্রাঁসোয়া ওলাঁদ দোহায় ফ্রান্স এবং কাতারের মধ্যকার অর্থনৈতিক বন্ধনবিষয়ক দ্বিপাক্ষীয় আলোচনার জন্য কাতারে সফর করেন। তিনি আমির হামাদ বিন খলিফা আল থানির সাথে দেখা করেন এবং সিরিয় গৃহযুদ্ধ বিষয়ে আলোচনা করেন।[৭]
৩ মে, ২০১৫ সালে রাষ্ট্রপতি ওলাঁদ কাতারে সফর করেন, এবং এখানেই তিনি প্রতিরক্ষা খাতে সহযোগিতামূলক চুক্তিস্বাক্ষর করেন।[৮]
কূটনৈতিক সহযোগিতা
[সম্পাদনা]আন্তর্জাতিক সংস্থা
[সম্পাদনা]কাতারের জনসংখ্যার মাত্র ১% ফরাসি ভাষাভাষী হওয়া সত্ত্বেও দেশটি ২০১২ সালে অর্গানাইজেশন ইন্টারন্যাশনালে দে লা ফ্রাঙ্কোফোনির সহযোগি সদস্য হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হয়। দর্শকরাষ্ট্র হিসেবে নয়, বরং শুরু থেকেই পূর্ণাঙ্গ সদস্য হিসেবে কাতার এই সংস্থায় সাথে যুক্ত ছিল।[৯]
সামরিক বাহিনী
[সম্পাদনা]১৯৯৪ সাল থেকে ফ্রান্স এবং কাতারের প্রতিরক্ষা চুক্তিস্বাক্ষরিত হয়।[১০]
২০০৯ সালে, প্রায় ৮০% কাতারের সামরিক যন্ত্রপাতি নিয়ে মেয়েটা পালিয়ে যায়।[১১] ফ্রান্স কাতারের বিশেষ বাহিনীর জন্য বিশেষ প্রশিক্ষণে ব্যবস্থা করেন।[১২]
মে, ২০১৫ সালে ফরাসি রাষ্ট্রপতি ফ্রাঁসোয়া ওলাঁদ এবং কাতারের আমির তামিম বিন হামাদ আল থানি পরিদর্শনের জন্য ২৪টি দাসল্ট রাফালে ফাইটার জেট ক্রয় করার চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন।[১৩]
ব্যবসায় এবং বিনিয়োগ
[সম্পাদনা]ফ্রান্স ২০০৮ সালে একটি আইন পাস করায়, যেখানে একজন ফরাসি ব্যক্তি নির্দিষ্ট পরিমাণের কর উপেক্ষা করতে পারে।[৬]
২০১২ সালে কাতার ফ্রান্সের সপ্তম বৃহত্তম ক্রেতা এবং নিয়ার লিস্টের ষষ্ঠ বৃহ্ত্তম সরবরাহকারী হিসেবে স্বীকৃত হয়। ফ্রান্সের আমদানিকারকেরা মূলত কাঁচামাল, এয়ারবাস নামা-উঠা এবং বাণিজ্যিক বস্তুগুলো ক্রয় করে থাকে।[১৪]
কাতার ইনভেস্টমেন্ট অথরিটি ২০১২ সালের শুরুতেই ভিভেন্ড নামক ফরাসি মিডিয়া কোম্পানির ২% শেয়ার করয় করে। লাগাদেরে গ্রুপেরও সে যোগ দিয়েছে।[১৫] এছাড়াও কিনেছে নির্ম্মাণপ্রতিষ্ঠান এবং ভিন্সি এসএ, তাকে জোরকরে পড়াশোনার জন্য।[১৬]
২০১২ সালে কাতার - ফ্রান্সের মধ্যে ৫০ মিলিয়ন ইউরোর একটি প্রাথমিকচুক্তি করে, যার মাধ্যমে ফ্রান্সের উপশহরগুলোতে ক্ষুদ্র-ঋণের প্রকল্প তুলে ধরা হবে। এই প্রকল্পটি বিরোধী দলেদি তীব্র বিদ্রোধীটতায় বাদ দেওয়া হয়। ২০১৩ সাকের জুনমাসে একটি নতুন চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। নতুন চুক্তিতে ফরাসি ফিন্যান্স চাইসে দে ডিপটস এত কনসিগন্যাশন যুক্ত হয়ে পড়ে।[১৭]
শিক্ষা
[সম্পাদনা]ফরাসি আন্তর্জাতিক বিদ্যালয় লিঁসে বোনাপার্টে, ১৯৭০ সালের মধ্যভাগ থেকে দোহায় প্রতিষ্ঠিত হয়।[১৮] লিঁসে ভোল্টাইরে নামক অপর একটি ফরাসি বিদ্যালয় ২০০৮ সালে কাতারে প্রতিষ্ঠিত হয়। এর পরিচালনার দায়িত্বে ছিলেন্ন নিকোলাস সারকোজি। স্কুলবোর্ড এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মধ্যে বেশকিছু বিষয় ছিল। যেমন, শিক্ষা মন্ত্রণালয় বিদ্যালয়গুলোর পাঠ্যসূচী থেকে খ্রিস্টধর্ম প্রচারকারী একটি অধ্যায় বাদ দেয়া হয়।[১৯]
এইচইসি প্যারিস নামের একটি ব্যবসায় বিদ্যালয়ই প্রথম ইংরেজিবিহীন ইউরোপীয় প্রতিষ্ঠান হিসেবে শিক্ষানগরীতে শাখা খোলে,[৬] ১০১০ সালের জুনমাসে[২০]।২০১১ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে এটি কাতারের প্রথম এক্সিকিউটিভ এমবিএ চালু করে।[২১]
খেলা
[সম্পাদনা]কাতার স্পোর্টস ইনভেস্টমেন্ট, কাতার ইনভেস্টমেন্ট অথরিটির অঙ্গপ্রতিষ্ঠান, ফ্রান্সের ফুটবল ক্লাব প্যারিস সেন্ট-জার্মেইন ক্রয় করে, ২০১২ সালের অক্টোবর মাসে। ক্লাবটির দাম ১৩০ মিলিয়ন ডলার বলে ধারণা করা হয়। কিউএসআই ক্লাবের খেলোয়াড়দের জন্য ৩৪০ মিলিয়ন ডলারও পরবর্তীতে খরচ করা হয়।[২২] কাতার-ভিত্তিক বেইন স্পোর্টস ২০১৪ সালে লীগ ১ (ফ্রান্সের শীর্ষস্থানীয় ফুটবল লীগ) এর সহ-সম্প্রচার করার অধিকার ক্রয় করে।[২৩]
সংস্কৃতি ও কলা
[সম্পাদনা]আব্দুল্লাহ বিন খলিফা আল থানি, কাতারের রাজপরিবারের সদস্য, ২০০৭ সালে ৮৮ মিলিয়ন ডলারে সতের শতকের হোটেল, হোটেল ল্যাম্বার্ট ক্রয় করেন। তিনি ২০০৯ সালে হোটেলটির নবনির্মাণ করার চেষ্টা করে ব্যাপক সমালোচিত হন, কারণ যেকোন প্রকার পরিবর্তন ফ্রান্সের প্রত্নতাত্ত্বিক ঐতিহ্যিক এ স্থাপনার ক্ষতি করতে পারে।[২৪]
তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ ক খ Mehdi Lazar (৬ এপ্রিল ২০১৩)। "France - Qatar : une relation complexe, privilégiée et ancienne" (ফরাসি ভাষায়)। Atlantico। ৬ মার্চ ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৫।
- ↑ "Agreements and Treaties" (ইংরেজি ভাষায়)। দোহার ফরাসি দূতাবাস। সংগ্রহের তারিখ ১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৫।
- ↑ "Qatari Embassy in Paris, France"। embassypages.com। সংগ্রহের তারিখ ১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৫।
- ↑ "Address, directions, map"। French Embassy in Doha। সংগ্রহের তারিখ ১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৫।
- ↑ "Biography of His Excellency, Eric CHEVALLIER"। French Embassy in Doha। ১২ আগস্ট ২০১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৫।
- ↑ ক খ গ John Irish and Regan E. Doherty (১৩ এপ্রিল ২০১১)। "Libyan conflict brings French-Qatari ties to the fore"। Reuters। ১২ সেপ্টেম্বর ২০১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৫।
- ↑ "Continuity trumps change on Hollande's Qatar visit"। France 24। Agence France-Presse। ২১ জুন ২০১৩। ২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৫।
- ↑ "Qatar, France open new chapter in defence ties"। Gulf Times। ৪ মে ২০১৫। সংগ্রহের তারিখ ১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৫।
- ↑ "AJC Stunned by Qatar's Admission to Francophonie Organization"। Global Jewish Advocacy। ১৪ অক্টোবর ২০১২। ৪ মার্চ ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৫।
- ↑ "Qatari exports to France double over 2000"। Al Bawaba। ২৪ জুন ২০০১। সংগ্রহের তারিখ ১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৫।
- ↑ Dominique Lagarde (২৭ ফেব্রুয়ারি ২০০৯)। "Le Qatar, un émirat francophile" (French ভাষায়)। L'Express। ৬ অক্টোবর ২০১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৫।
- ↑ Hugh Eakin (২৭ অক্টোবর ২০১১)। "The Strange Power of Qatar"। The New York Review of Books। সংগ্রহের তারিখ ১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৫।
- ↑ "Qatar signs deal on French Rafale fighter jets"। Deutsche Welle। ৪ মে ২০১৫। সংগ্রহের তারিখ ১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৫।
- ↑ "Economic relations"। Ministry of Foreign Affairs and International Development (France)। ২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৫।
- ↑ Shane McGinley (২২ মার্চ ২০১২)। "Qatar boosts stake in French media giant Vivendi"। Arabian Business। সংগ্রহের তারিখ ১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৫।
- ↑ Justine Gay (২৭ নভেম্বর ২০১২)। "Le Qatar, deuxième actionnaire du groupe Vinci" (French ভাষায়)। Journal du Net। সংগ্রহের তারিখ ১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৫।
- ↑ Julien Ponthus (২৩ জুন ২০১৩)। "France and Qatar end suburbs dispute with new fund"। Reuters। ৯ অক্টোবর ২০১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৫।
- ↑ "Historique" (French ভাষায়)। Lycée Bonaparte। ১৯ অক্টোবর ২০১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৫।
- ↑ Sabah Ayoub (৮ নভেম্বর ২০১২)। "How Qatar Became a Francophone Country"। Al Akhbar। সংগ্রহের তারিখ ১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৫।
- ↑ "HEC Paris Showcases Top-Ranked Executive Education Programs at Access MBA Fair in Qatar"। Qatar Foundation। ৮ এপ্রিল ২০১৫। ৫ মার্চ ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৫।
- ↑ "HEC Paris welcomes Class of 2016 of Executive MBA program"। zawya.com। ৮ মার্চ ২০১৫। সংগ্রহের তারিখ ১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৫।
- ↑ Scott Sayare (২৬ অক্টোবর ২০১২)। "Qatar Is Becoming a Player in French Sports"। The New York Times। সংগ্রহের তারিখ ১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৫।
- ↑ "Ligue 1 nets nearly $1 billion for TV rights"। The National। ৫ এপ্রিল ২০১৪। সংগ্রহের তারিখ ১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৫।
- ↑ Jeffrey T. Iverson (২৯ অক্টোবর ২০০৯)। "Is France Doing Enough to Save Its Historic Buildings?"। TIME। সংগ্রহের তারিখ ১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৫।