বিষয়বস্তুতে চলুন

ফলাফল (ক্রিকেট)

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
অ্যাশেজ সিরিজের ফলাফলের পরিসংখ্যান,২০০৫

ফলাফল ক্রিকেটীয় পরিভাষাবিশেষ। দুই দলের মধ্যকার ক্রিকেট খেলায় ‘জয়’, ‘অমীমাংসিত’ ('ড্র') কিংবা 'সমতা'(‘টাই’)-কে বুঝানো হয়ে থাকে। তবে সীমিত ওভারের খেলায় ‘ফলাফলহীন’ তকমাটি ব্যবহৃত হয়। এ ধরনের ফলাফলের প্রয়োগ ও কীভাবে ফলাফলকে প্রকাশ করা হবে তা ক্রিকেটের আইনের ১৬-ধারায় বর্ণনা করা হয়েছে।[]

জয় ও পরাজয়

[সম্পাদনা]

প্রতিপক্ষের তুলনায় অধিক রান সংগ্রহের মাধ্যমে যে ফলাফল আসবে তা ‘জয়’ হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়। এছাড়াও সকল ইনিংস খেলা সম্পন্ন হবার পর যদি রান বেশি থাকে, তাহলেও জয় হিসেবে চিহ্নিত হবে। খেলায় এক পক্ষ বেশি রান করলে জয় ও অপর পক্ষ কম রান তুললে ‘পরাজয় বরণ’ করেছে বলে ধরে নেয়া হয়। যদি খেলায় সকল ইনিংস সম্পন্ন না হয় তাহলে 'অমীমাংসিত'/‘ড্র’ কিংবা ‘ফলাফলহীন’ হিসেবে লেখা হয়।

সমতা (টাই)

[সম্পাদনা]

একটি খেলায় তখনই সমতা বা ‘টাই’ হিসেবে ফলাফল ঘোষণা করা হয় যখন খেলা শেষে উভয় দলের রান সংখ্যা সমান হয়। কেবলমাত্র সর্বশেষে ব্যাটিংকারী দল তাদের ইনিংস খেলাকালেই এ সিদ্ধান্ত দেয়া হয়। যেমন: সকল ইনিংস খেলা সম্পন্ন হয়েছে কিংবা সীমিত ওভারের খেলায় নির্দিষ্ট ওভার খেলা হয়েছে কিংবা খারাপ আবহাওয়া অথবা মন্দালোকের কারণে খেলা বন্ধ হলেও এ সিদ্ধান্ত প্রযোজ্য।

টেস্ট ক্রিকেটে এটি অপ্রত্যাশিত ঘটনাবিশেষ। কেবলমাত্র দুইবার সমতাপ্রাপ্ত টেস্ট "টাইয়েড টেস্ট" হয়েছে।

একদিনের ক্রিকেটের কিছু সংস্করণে, বিশেষ করে টুয়েন্টি২০ ক্রিকেটে সুপার ওভার কিংবা বোল-আউটে সমতা ভাঙন বা "টাইব্রেক" করে ফলাফল নির্ধারণ করা হয়। অন্যথায় ফলাফল সমতা বা টাই হিসেবে পরিগণিত হবে। কিছু ক্ষেত্রে খেলার ফলাফলকে আনুষ্ঠানিক পরিসংখ্যানে সমতা+জয় কিংবা সমতা+পরাজয়রূপে সমতাকে চিহ্নিত করা হয় এবং তারপর জয় কিংবা পরাজয় লেখা হয়।

অমীমাংসিত (ড্র)

[সম্পাদনা]

১৬-ধারায় বর্ণিত সংজ্ঞানুসারে খেলা সমাপনান্তে জয় অথবা টাই না হলে খেলার ফলাফল অমীমাংসিত বা ‘ড্র’ হিসেবে আখ্যায়িত হবে।

কোন কারণে একটি দল বা উভয় দল তাদের ইনিংসগুলো নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সম্পূর্ণ করতে না পারলে ফলাফল অমীমাংসিত বা ড্র হয়। খেলায় ওভারের সংখ্যা অনির্ধারিত হলে একটি দল জয়লাভে সক্ষম না হলেও ব্যাটিং করে অল-আউট না হলে ড্র হিসেবে নিজেদেরকে রক্ষা করতে পারে। এ সময় দলের দুই বা ততোধিক ব্যাটসম্যান খেলা শেষ হবার পূর্ব-পর্যন্ত ক্রিজে অবস্থান করবেন ও অপরাজিত থাকবেন।

অন্যদিকে, বোলিংকারী দল ব্যাটিং দলকে প্রয়োজনীয় রান সংগ্রহে বাঁধা দিবে। উভয় দলের রানের পার্থক্য থাকা সত্ত্বেও খেলাটি তখন অমীমাংসিত বা ড্র হিসেবে গণ্য হবে।

ফলাফলহীন

[সম্পাদনা]

সীমিত ওভারের খেলায় খেলা শুরুর পর সম্পূর্ণ করা না হলে ‘ফলাফলহীন’রূপে গণ্য করা হয়। সচরাচর খারাপ আবহাওয়া কিংবা মন্দালোকের কারণে খেলায় বিঘ্নের কারণে এরূপটি হয়ে থাকে। কার্যত এটি অমীমাংসিত ফলাফল বা ড্রয়ের অনুরূপ।

সীমিত ওভারের ক্রিকেট খেলায় প্রত্যেকটি দলকে ফলাফল আনয়ণে পর্যাপ্তসংখ্যক ওভার ব্যাটিং করতে হয়। ২০১৬ সাল পর্যন্ত একদিনের আন্তর্জাতিকে কমপক্ষে ২০ ওভার ও টুয়েন্টি২০ ক্রিকেটে কমপক্ষে ৫ ওভার ব্যাটিং করার আদর্শ মানদণ্ডে নিয়ে আসা হয়েছে। যদি প্রত্যেক দল ঐ নির্ধারিতসংখ্যক ওভার মোকাবেলা করতে সক্ষম হয়, তাহলেই খেলায় ফলাফল নিয়ে আসা সম্ভবপর। প্রয়োজনে ডাকওয়ার্থ-লুইস পদ্ধতি প্রয়োগ কিংবা প্রতিযোগিতায় পূর্বে নির্ধারিত আইনের মাধ্যমে ফলাফল প্রদান করা হবে।

পরিত্যক্ত

[সম্পাদনা]

একটি খেলা ‘পরিত্যক্ত’ ঘোষণা করা হবে - যদি আবহাওয়া কিংবা আকস্মিকভাবে উদ্ভূত অন্য কোন পরিস্থিতির কারণে খেলা অনুষ্ঠিত না হলে। কোন খেলা শুরুর লক্ষ্যে বোলার তার প্রথম ওভার করার জন্য দৌঁড়ানো শুরু না করলে কর্মকর্তাগণ খেলাটিকে পরিত্যক্ত ঘোষণা করতে পারেন। তখন খেলাটি ‘বল মাঠে গড়ানো ছাড়াই পরিত্যক্ত’ পরিভাষা ফলাফলে উল্লেখ করা হয়। এ ধরনের খেলা আনুষ্ঠানিকভাবে পরিসংখ্যানগত রেকর্ডে উল্লেখ করা হয় না।

জুলাই, ২০০৪ সালের পূর্বে এ ধরনের ফলাফল করা হতো যদি টস করা সত্ত্বেও খেলাটিতে কোন বল মাঠে গড়ানো না হতো। ২০০৪ সাল থেকে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিল (আইসিসি) কর্তৃপক্ষ আন্তর্জাতিক খেলাগুলোর বিষয়ে আদেশনামা জারী করে যে, খেলায় টস হবার পর বল মাঠে গড়ানো না হবার কারণে পরিত্যক্ত হলে ‘অমীমাংসিত’ কিংবা সীমিত ওভারের খেলায় ‘ফলাফলহীন’রূপে ঘোষণা করতে হবে। এ ধরনের খেলাগুলো পরিসংখ্যানগত রেকর্ডে গণনা, অংশগ্রহণকারী দল ও মনোনীত খেলোয়াড়দের নাম অন্তর্ভুক্ত করা হয়।[]

সিদ্ধান্ত প্রদান

[সম্পাদনা]

আম্পায়ারদ্বয়কে খেলায় কোন দলকে বিজয়ী হিসেবে সিদ্ধান্ত প্রদানের অধিকারের ন্যায় ‘ক্ষমতা প্রদানের’ ব্যবস্থা রয়েছে। এ ক্ষেত্রে অন্য দল সম্ভাব্য পরাজয়ের কারণে খেলতে অস্বীকৃতিজ্ঞাপন অথবা, আম্পায়ারদ্বয়ের মতামতকে অগ্রাহ্যের ন্যায় প্রশ্নবিদ্ধতার কারণে হয়ে থাকে। লক্ষ্যণীয় যে, ১৫-ধারা অনুযায়ী ইনিংসে স্বেচ্ছায় ইনিংস ঘোষণার কারণে নয়। এ অধিকারটি খুব কমই প্রয়োগ করা হয়। এ নিয়ম প্রবর্তনের পূর্বে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট অঙ্গনে এক দলের খেলতে অস্বীকৃতি অথবা, খেলা চলাকালীন খেলতে অস্বীকৃতির ন্যায় ঘটনা ঘটেছে। উল্লেখযোগ্য ঘটনা হিসেবে রয়েছে -

শ্রীলঙ্কা দল সাময়িকভাবে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে খেলতে অস্বীকৃতি জানায়। আম্পায়ার ড্যারেল হেয়ার বল ছুঁড়ে মারার অভিযোগে মুত্তিয়া মুরালিধরনকে বোলিংয়ে নিষিদ্ধ ঘোষণা করলে এ ঘটনা ঘটে।

টেস্ট খেলায় এ ঘটনায় একবার কোন একটি দলকে জয় প্রদান করা হয়েছে। ড্যারেল হেয়ার ও বিলি ডকট্রোভ ২০০৬ সালে সফরকারী পাকিস্তান দলের বিপক্ষে ইংল্যান্ড সিরিজের চতুর্থ টেস্টে এ স্বীকৃতি পায়। ২০ আগস্ট, ২০০৬ তারিখে চতুর্থ দিন নির্ধারিত সময়ে চা বিরতির পর মাঠে নামতে অস্বীকৃতি জানায়। হেয়ার অভিযোগ করেন যে, পাকিস্তানি বোলারেরা বলে আঁচড় কেটে ক্ষতের সৃষ্টি করেছিল। এ ঘটনায় তিনি কোন খেলোয়াড়ের নাম প্রকাশ করেননি। পরবর্তীতে ২০০৮ সালে আইসিসি’র সাধারণ সভায় ফলাফল পরিবর্তন করে অমীমাংসিত হিসেবে ঘোষণা করা হয়। এরপর ফেব্রুয়ারি, ২০০৯ সালে পুনরায় পরিবর্তন করে ইংল্যান্ডের অনুকূলে জয় হিসেবে নিয়ে আসা হয়।[]

ফলাফল স্বীকার

[সম্পাদনা]

১৬-ধারায় কোন দলকে খেলার ফলাফল স্বীকার করে নেয়ার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। এটি একান্ত দলীয় বিষয় হলেও স্কোরবোর্ডে ভুল স্কোর প্রদর্শিত হবার পর পরাজিত দল তা মেনে নিয়ে মাঠ ত্যাগ করে থাকে। এরপর প্রতিপক্ষকে খেলায় জয়ী হয়েছে বলে মেনে নেয়া হয়।

ফলাফল প্রকাশ

[সম্পাদনা]

ক্রিকেট খেলার ফলাফলকে বিভিন্নভাবে তুলে ধরা হয়:

পরবর্তীতে ব্যাটিংকারী দল খেলায় কোন উইকেট না হারিয়ে জয় পেলে ঐ সংখ্যক উইকেটে বিজয়ী হিসেবে ফলাফলে উল্লেখ করা হবে। উদাহরণস্বরূপ: এক ইনিংসের খেলায় ‘ক’ দল প্রথমে ব্যাটিংয়ে নেমে ২০০ রান তুলে। পরবর্তীতে ‘খ’ দল ২০১ রানের জয়ের লক্ষ্যমাত্রায় অগ্রসর হয় ও চার উইকেট হারিয়ে জয় পায়। এক্ষেত্রে ‘খ’ দল ‘ছয় উইকেটে জয়ী’ হবে। ‘ক’ দলে কতজন ব্যাটসম্যান আউট হয়েছে, তা ধর্তব্যের বিষয় নয়।

ফিল্ডিংয়ে নামা দল খেলায় জয়ী হলে খেলার ফলাফলে ‘নির্দিষ্টসংখ্যক রানে জয়ী’ হয়েছে বলে ঘোষণা করা হয়। উদাহরণস্বরূপ: যদি ‘ক’ দল প্রথমে ব্যাট করে ২০০ রান করে ও ‘খ’ দল ১২৯ রান করতে সক্ষম হয় তাহলে ‘ক’ দল ৮১ রানে জয়ী হয়েছে।

শেষে ব্যাটিংকারী দল সকল উইকেট খোয়ানোর পরও জরিমানাস্বরূপ ৫ রান পেলে প্রতিপক্ষের তুলনায় সর্বমোট রান সংখ্যা অতিক্রম করলে জয়ী হবে। এক্ষেত্রে ‘জরিমানাস্বরূপ রানে জয়ী’ হয়েছে ঘোষণা করা হয়।

দুই ইনিংসের খেলায় কোন দলের প্রথম ইনিংসে সংগৃহীত রানের বিপরীতে প্রতিপক্ষ তাদের দুই ইনিংসে সংগৃহীত মোট রান কম হলে প্রথম দল ইনিংস ও পার্থক্য রানে জয়ী হয়েছে বলে ঘোষণা করা হয়। পরবর্তীতে ব্যাটিংকারী দলের কাছ থেকেও প্রথম ব্যাটিংকারী দল ফলো-অনে পড়তে পারে। উদাহরণস্বরূপ: ‘ক’ দল প্রথমে ব্যাট করে ২০০ রান তুলে। ‘খ’ দল তাদের প্রথম ইনিংসে ৩০০ তুলে। ‘ক’ দল দ্বিতীয় ইনিংসে ৯৫ রান তুললে ‘খ’ দল ইনিংস ও ৫ রানে জয়ী হবে।

খেলায় এক দল পরাজয় স্বীকার করলে বা খেলতে অস্বীকৃতি জানালে খেলায় ‘পরাজয় স্বীকার’ কিংবা ‘খেলায় পুরস্কৃত’রূপে ঘোষণা করা হয়।

সময়ের অভাবহেতু খেলা শেষ না হলে ফলাফল অমীমাংসিত বা ড্র ঘোষণা করা হয়। সীমিত ওভারের খেলায় এটি প্রয়োগ হয় না। সেখানে ফলাফল হয়নিরূপে উল্লেখ করা হয়। যদি উভয় দলের ইনিংস সম্পূর্ণ হবার পর রান সংখ্যা সমান হয় তাহলে খেলাটি 'সমতা' (‘টাই’) হিসেবে ঘোষণা করা হয়।

তথ্যসূত্র

[সম্পাদনা]
  1. "Law 16 – The result"MCC। সংগ্রহের তারিখ ২৯ জুন ২০১৭ 
  2. "Toss to signify start of a match"Rediff.com। ৯ জুলাই ২০০৪। সংগ্রহের তারিখ ৪ এপ্রিল ২০১৫ 
  3. "Cricket: England awarded Oval Test 'win' against Pakistan"The Guardian। ১ ফেব্রুয়ারি ২০০৯। সংগ্রহের তারিখ ৮ জানুয়ারি ২০১৮