গাছবাড়ি জামিউল উলুম কামিল মাদ্রাসা
এই নিবন্ধটিতে কোনো উৎস বা তথ্যসূত্র উদ্ধৃত করা হয়নি। |
গাছবাড়ি জামিউল উলুম কামিল মাদরাসা | |
---|---|
ঠিকানা | |
গাছবাড়ি বাজার-৩১৮৩ সিলেট,বাংলাদেশ | |
তথ্য | |
নীতিবাক্য | শিক্ষাই শক্তি, জ্ঞানই আলো |
প্রতিষ্ঠাকাল | ১৯০১ | খ্রিস্টাব্দ
প্রতিষ্ঠাতা | ক্বারী আতহার আলী |
অধ্যক্ষ | মাওলানা তাহির উদ্দীন |
শিক্ষার্থী সংখ্যা | ৭০০ (ছাত্র-ছাত্রী) |
ভাষা | বাংলা এবং আরবি |
আয়তন | ৮ একর |
ক্যাম্পাসের ধরন | শহুরে |
অন্তর্ভুক্তি | বাংলাদেশ মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড |
গাছবাড়ি জামিউল উলুম কামিল মাদরাসা সিলেট জেলার কানাইঘাট থানার গাছবাড়ি বাজারের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত। ১৯০১ সালে প্রতিষ্ঠিত [১] হওয়া এই মাদ্রাসায় বর্তমানে ১ হাজারেও বেশি শিক্ষার্থী রয়েছে।
ইতিহাস ও পটভূমি
[সম্পাদনা]১৯০১ খ্রিষ্টাব্দের দিকে সিলেট জেলার কানাইঘাট উপজেলার গাছবাড়ি এলাকার ধর্মপ্রাণ ব্যক্তি মাওলানা ক্বারী আতহার আলী, ইব্রাহিম দরিয়া সহ এলাকার নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিদের সাথে পরামর্শ করে গাছবাড়ি বাজারে একটি মাদরাসার ভিত্তি স্থাপন করেন। মাদরাসার প্রথম শিক্ষক হিসেবে নিযুক্তি পান মাওলানা জামাল উদ্দিন। মাদরাসাটি তখন ক্ষুদ্র পরিসরে হলেও আস্তে আস্তে উন্নতি লাভ করতে থাকে।
১৯০৪ সালে মতান্তরে ১৯০৯ খ্রিষ্টাব্দে ক্বারী আতহার আলী হজ্জ পালনের উদ্দেশ্যে মক্কায় যান, এবং সেখানেই মৃত্যু বরণ করেন। তার মৃত্যুর পর মাদরাসার দায়িত্বভার যার ন্যস্ত হলো মাওলানা কামিলের উপর (শাইখুল হাদিস মাওলানা ফজলে হক ফাজিলের পিতা)। তিনি সুষ্ঠুভাবে মাদরাসার দায়িত্ব পালন করতে থাকেন, এবং ১৯১৩ সালে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। তার মৃত্যুর পর মাওলানা ইব্রাহীম আলী (মাওলানা শফিকুল হক আকুনীর পিতা) দায়িত্ব পালন করেন। এসময় নদী ভাঙনে মাদরাসা ঘর বিলীন হয়ে গেলে তিনি নিজস্ব জমি মাদরাসার নামে ওয়াক্বফ করে পুনরায় মাদরাসা ঘর নির্মাণ করেন। মাদরাসার প্রাক্তন ছাত্র মাওলানা আঞ্জব আলী শওকের প্রস্তাব অনুযায়ী মাদরাসার নাম 'আইনে গুলজার' রাখা হয়। এ সময় মাদরাসা দ্রুত উন্নতি লাভ করে।
১৯১৯ সালে মাওলানা ইব্রাহীম আলীর মৃত্যুর পর আবু ইউসুফ মোঃ ইয়াকুবকে মুহতামিম নিযুক্ত করক হয়। অল্প দিনের মধ্যেই বিখ্যাত আলেম মাওলানা আব্দুস সামাদকে (শেখ সাহেব) প্রধান মৌলভি পদে নিয়োগ করা হয়। ১৯২১ খ্রিষ্টাব্দে ঢেউটিন দ্বারা মাদরাসা পুণঃনির্মাণ করা হয় এবং মাদরাসার নাম পরিবর্তন করে 'গাছবাড়ি জামিউল উলুম আলিয়া মাদরাসা' রাখা হয়। মাওলানা ইয়াকুব সাহেবের সুযোগ্য নেতৃত্বে এবং শেখ সাহেবের নিরলস প্রচেষ্টায় মাদরাসার সুখ্যাতি চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে এবং মাদরাসা দিন দিন উন্নতি লাভ করতে থাকে।
১৯২৩ সালে দাওরায়ে হাদিস (টাইটেল জামাত) খোলা হয়। মাওলানা আহমদ আলীকে (শাহ সাহেব) শায়খুল হাদিস নিযুক্ত করা হয়। ১৯২৬ খ্রিষ্টাব্দে সর্বপ্রথম মাদরাসা আসাম বোর্ডের অধীনে বৃত্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে এবং ফাযিল সাহেব প্রথম বৃত্তিপ্রাপ্ত হন। ২৪ ২৭ ২৯
১৯২৪ সালে আলেম মাওলানা সহুল হোসাইন এবং ১৯২৭ ও ১৯২৯ সালে মাওলানা সৈয়দ হোসাইন আহমদ মাদানি পর পর দুবার গাছবাড়ি মাদরাসায় তাশরিফ আনয়ন করেন।
১৯২৯ সালে দাওরায়ে হাদিসের উন্নতির জন্য ভারতের রামপুরা থেকে প্রখ্যাত মুহাদ্দিস মাওলানা ওয়াজিহ উদ্দিন কে শায়খুল হাদিস নিযুক্ত করা হয়। এদেশের আবহাওয়া তার স্বাস্থ্যের অনুকূলে না হওয়ায় কিছুদিন পর তিনি স্বদেশ প্রত্যাবর্তন করেন।
১৯৩৮ সাল হতে মাদরাসা আসাম বোর্ডের অধীনে ফাইনাল ক্লাস (ফাযিল স্তর) পর্যন্ত অনুমতি লাভ করে। ১৯৪০ সালে সর্বপ্রথম আসাম বোর্ডের অধীনে ফাযিল ফাইনাল পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে শতভাগ ছাত্র কৃতকার্য হন। মরহুম মাওলানা শহর উল্লাহ (সাবেক মুহতামিম, দারুল উলুম কানাইঘাট) উক্ত পরীক্ষায় আসাম বোর্ডে তৃতীয় স্থান অর্জন করেন।
১৯৪১ খ্রিষ্টাব্দে মাদরাসার বর্তমান দালানের কাজ শুরু হয়। ১৯৪৬ সালে মাওলানা মুশাহিদ বায়মপুরী কে শায়খুল হাদিস নিযুক্ত করা হয়। ১৯৫৩ খ্রিষ্টাব্দে মাদরাসা কামিল (হাদিস) স্তরে মাদরাসা বোর্ডের মঞ্জুরিপ্রাপ্ত হয়।
১৯৫৪ খ্রিষ্টাব্দে সর্বপ্রথম তৎকালীন পূর্বপাকিস্তান মাদরাসা শিক্ষা বোর্ডের কামিল (হাদিস) পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে শতভাগ পাশের সাফল্য অর্জন করে। মাওলানা আবু ইউসুফ মোঃ ইয়াকুব সুদীর্ঘ ৪৩ বছর মাদরাসা পরিচালনার পর ১৯৬১ সালে বার্ধক্যজনিত কারণে অবসর গ্রহণ করেন। মাওলানা ইয়াকুবের অবসর গ্রহণের পর মাওলানা হরমুজ উল্লাহ মাদরাসার দায়িত্ব গ্রহণ করেন।
প্রাক্তন অধ্যক্ষের তালিকা
[সম্পাদনা]- কারী মাওলানা আতহার আলি রহ. (প্রতিষ্ঠাতা প্রিন্সিপাল) আগফৌদ নারাইনপুর, ১৯০১ থেকে ১৯০৪ মতান্তরে ১৯০৯ সাল পর্যন্ত।
- মাওলানা কামিল আহমেদ, ১৯০৪ মতান্তর ১৯০৯ থেকে ১৯১৩ সাল পর্যন্ত।
- মাওলানা ইব্রাহিম আলি আকুনি, ১৯১৩ থেকে ১৯১৯ সাল পর্যন্ত।
- মাওলানা আবু ইউসুফ মুহাম্মদ ইয়াকুব, ১৯১৯ থেকে ১৯৬১ সাল পর্যন্ত।
- মাওলানা হরমুজ উল্লাহ, ১৯৬১ থেকে ১৯৬৬ সাল পর্যন্ত।
- মাওলানা আব্দুস সালাম দলইকান্দী
- ক্বারী মাওলানা ইদ্রিস আহমদ সিবনগরী
- মাওলানা বশির আহমেদ
- মাওলানা হাফিজ আব্দুর রহিম
- মাওলানা আবু তাহির (বর্তমানে দায়িত্বরত)
প্রাক্তন শিক্ষকগণ
[সম্পাদনা]- মুশাহিদ আহমদ বায়মপুরী
- আব্দুল লতিফ চৌধুরী ফুলতলী
- কমর উদ্দিন সিলেটি
- মুহিব্বুর রহমান
- সাঈদ আলী
প্রাক্তন ছাত্রগণ
[সম্পাদনা]- শাহ আব্দুল মান্নান
- শাহ ওলিউর রহমান
- জিয়া উদ্দিন
- শফিকুল হক
- শফিকুল হক আকুনী
- ফজলে হক
- আব্দুর রব কাসেমী
লাইব্রেরি
[সম্পাদনা]গাছবাড়ি জামিউল উলূমের লাইব্রেরিতে সর্বপ্রথম ১৯২৩ সালে কানাইঘাট উপজেলার মাওলানা আরমান আলী আরবি ভাষার অভিধান 'আল ক্বামুস' নামক কিতাব ওয়াক্বফ করেন। এরপর কিতাব সংগ্রহের কাজ শুরু হয়। বর্তমানে ওয়াক্বফকৃত ও খরিদকৃত দশহাজারের উপর পাঠ্যবই, রেফারেন্স পুস্তকাদিসহ অনেক গবেষণামূলক গ্রন্থ রয়েছে, যার মূল্য প্রায় বিশ লক্ষ টাকা। মাদরাসা ছাত্রদেরকে নামমাত্র ফিসের বিনিময়ে প্রয়োজনীয় পুস্তক সরবরাহ করা হয়। তাছাড়া রেফারেন্স বই বা বিভিন্ন প্রয়োজনীয় গবেষণামূলক পুস্তকাদি জ্ঞান তাপসদের জন্য সর্বদা উন্মুক্ত।
তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ হিফজুল কুরআন পরিক্রমা, সরওয়ার ফারুকী, প্রকাশকাল: ২০২১
১.জামিউল উলুমঃ শতবার্ষিকী সংখ্যা, ফেব্রুয়ারি ২০০১