বিষয়বস্তুতে চলুন

আমদানি ও রপ্তানি প্রধান নিয়ন্ত্রকের দপ্তর

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
আমদানি ও রপ্তানি প্রধান নিয়ন্ত্রকের দপ্তর
গঠিত১৯৫০
সদরদপ্তরঢাকা , বাংলাদেশ
যে অঞ্চলে কাজ করে
বাংলাদেশ
দাপ্তরিক ভাষা
বাংলা
ওয়েবসাইটOffice of Chief Controller of Imports and Exports

আমদানি ও রপ্তানি প্রধান নিয়ন্ত্রকের দপ্তর একটি সরকারি দপ্তর যা আমদানি ও রপ্তানি বিষয়ে তদারকি করে। দপ্তরটি রাজধানী ঢাকায় অবস্থিত। এই দপ্তর সরকারকে আমদানি ও রপ্তানি বিষয়ে পরামর্শ ও অনুমোদন দেয়।[][][]

ইতিহাস

[সম্পাদনা]

আমদানি ও রপ্তানি প্রধান নিয়ন্ত্রকের দপ্তর ১৯ এপ্রিল ১৯৫০ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। এর মূল আইনি ভিত্তি ছিল তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের আমদানি রপ্তানি আইন ১৯৫০।১৯৭১ সালরে ১৬ ডিসেম্বর বাংলেদেশের অভ্যূদয়ের পর আমদানি নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা এবং অর্থনীতি সম্পূর্ণরুপে বিধ্বস্ত অবস্থায় ছিল । ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারী স্বাধীনতার মহানায়ক, সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙ্গালী জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীন বাংলাদেশে পদার্পণ করে তিনি দেশের বিধ্বস্ত আমদানি ও রপ্তানি ব্যবস্থা তথা বৈদেশিক বাণিজ্যের উপর গুরুত্বরোপ করে এর উন্নতিকল্পে তিনি মনোযোগ দেন । তার স্বপ্ন ছিল কৃষি ও শিল্প খাতের যুগপৎ উন্নয়নের মাধ্যমে বাংলাদেশর অর্থনীতিকে শক্তিশালী ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠা করা । এরই ধারাবাহিকতায় ১৯৭৩ সালে আমদানি এ রপ্তানি দপ্তর পুর্ণগঠন এবং পণ্য আমদানির লাইসেন্সিং ব্যবস্থা সহজিকরণ করে ত্বরিত অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জন, কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং জনগনের আয় ও জীবনযাত্রার মানোন্নয়ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেন ।

বাংলাদেশের অভ্যূদয়ের পূর্ববর্তী সময়ে দেশের আমদানি নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা প্রায় অর্ধ শতাব্দীকাল ধরে বিস্তৃত । Defense of India Rules এর অধীনে প্রদত্ত ক্ষমতা বলে ১৯৪০ সালের ভারতবর্ষের আমদানি ও রপ্তানি বাণিজ্যের উপর প্রথম নিয়ন্ত্রণের সূচনা করে । মূলত : দ্বিতীয় মহাযুদ্ধকালে নৌ-পরিবহণ ব্যবস্থা মারাত্মক হুমকির সম্মুখীন হলে তদানীনতন বৃটিশ সরকার ভারত প্রতিরক্ষা বিধি জারি করে । এ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার মুখ্য উদ্দেশ্য ছিল সীমিত নৌ-পরিবহনের প্রেক্ষিতে কেবলমাত্র যুদ্ধ প্রচেষ্টার সাথে জড়িত এবং অতি প্রয়োজনীয় পণ্য সামগ্রীকে পরিবহনের অগ্রাধিকার প্রদান করা । ভারত বিভাগের পর পাকিস্থানে বৈদেশিক মুদ্রার মারাত্মক অভাব দেখা দিলে উপরোক্ত নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা অব্যাহত রাখা হয় এবং পরিধি আরও বিস্তৃত করা হয় । এরই ধারাবাহিকতায় আমদানি ও রপ্তানি ( নিয়ন্ত্রণ ) আইন , ১৯৫০ জারি করা হয় ।বঙ্গবন্ধু ১৯৫০ সালের আমদানি নিয়ন্ত্রণ আইনের মৌলিক কাঠামো ঠিক রেখে প্রথম সংশোধনী আনেন ১৯৭৪ সালে ।

আমদানি ও রপ্তানি ( নিয়ন্ত্রণ ) আইন, ১৯৫০ এর অধীনে প্রদত্ত ক্ষমতা বলেই পণ্য আমদানি নিয়ন্ত্রণ সংক্রান্ত সকল সরকারী নির্দেশাবলী এন্ড বিধি বিধান প্রণীত এ জারী করা হয়ে থাকে । সময়ের পরিবর্তনের পাশে সামঞ্জস্য রেখে এই সব বিধি বিধানও প্রয়োজন বোধে পরিবর্তন ও সংশোধন করা হয় । বর্তমানে সাধারনভাবে আমদানি সংক্রান্ত বিধি ও পদ্ধতি যথা আমদানিকারকগণের শ্রেনি বিন্যাস ও নিবদ্ধন, আমদানি খাতে প্রদেয় ফিস এবং আমদানি সংক্রান্ত বিষয়ের আবেদনের নিস্পত্তি উপর্যুক্ত আইনের প্রদত্ত ক্ষমতা বলে প্রণীত ২’টি আদেশ দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে । এ ২’টি আদেশ হচ্ছে :

(ক) The Importers, Exporters and Indentors (Registration)Orders,1981; এবং

(খ) The Review, Appeal and Revision Order, 1977.

অনুরুপভাবে উপরোক্ত আইনে প্রদত্ত ক্ষমতা বলে প্রণীত আমদানি বাণিজ্য নিয়ন্ত্রণ তফসিল, ১৯৮৮(Import Trade Control Schedule 1988 ) এর মাধ্যমে ১লা জুলাই ১৯৮৮ হতে হামোর্নাইজড পদ্ধতির অধীনে পন্যের নতুন শ্রেনি বিন্যাস প্রবর্তিত হয় । এসব সাধারণভাবে প্রযোজ্য বিধি বিধান ছাড়াও উপরোক্ত আইনের ক্ষমতা বলে সরকার প্রতি ৩ (তিন) বছর অন্তর আমদানি বানিজ্য সংক্রান্ত সুনির্দিষ্ট বিধি বিধান সম্বলিত আমদানি নীতি আদেশ প্রণয়ন করে থাকেন । প্রকৃতপক্ষে এই আমদানি নীতিই আমদানি নীতি আদেশ হলো বৈদেশিক বাণিজ্য নিয়ন্ত্রণের মুখ্য হাতিয়ার । আমদানি এ রপ্তানি (নিয়ন্ত্রণ) আইন , ১৯৫০ এর অধীনে প্রদত্ত ক্ষমতাবলে সরকার কর্তৃক প্রণীত ও আদেশ হিসাবে জারিকৃত আমদানি নীতি আদেশ আইনগতভাবে বাস্তবায়নের দায়িত্ব আমদানি ও রপ্তানি প্রধান নিয়ন্ত্রকের দপ্তর ।


বর্তমানে মুক্তবাজার অর্থনীতিতে বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে বৈদেশিক আমদানি বাণিজ্যর ভূমিকা অতি গুরুত্বপূর্ণ । খাদ্যশস্য, কৃষি উপাদান, শিল্পের মেশিনারী, কাঁচামাল ও যন্ত্রাংশ, জ্বালানী এবং অন্যান্য নীত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের চাহিদার একটি বৃহৎ অংশ বিদেশ থেকে আমদানির মাধ্যমেই মিটানো হয়ে থাকে । জাতীয় বাজেটের অর্থ সংস্থানের ক্ষেত্রে আমদানি উদ্ভুত কর ও শল্ক দেশের অভ্যান্তরীণ সম্পদ আহরনের প্রধানতম আয়ের উৎস । দেশের অর্থনীতিতে আমদানি বানিজ্যের এই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা অদূর ভবিষ্যতেও অব্যাহত থাকবে বলে ধারণা করা যায় । আর্ন্তজাতিক বাণিজ্যে ভারসাম্য অর্জন অর্থাৎ রপ্তানি আয়ের তুলনায় আমদানি ব্যয় হ্রাস করা সরকারের ঘোষিত নীতি এবং এই পরিপ্রেক্ষিতে সীমিত সাফল্য অর্জিত হলেও সংগত কারনেই বিগত বছর সমূহে আমদানি বৈশিষ্ট্যগত পরিবর্তন বিশেষভাবে লক্ষ্যনীয় । স্বাধীনতার অব্যবহিত পরবর্তী বছর সমূহে বার্ষিক আমদানির মধ্যে ভোগ্যপণ্য এবং তৈরি দ্রব্যাদির প্রধান্য ছিল । সাম্প্রতিককালে এই প্রাধান্য ক্রমান্বয়ে হ্রাস প্রয়েছে এবং তুলনামূলকভাবে শিল্পের কাঁচামাল, যন্ত্রপাতি এবং যন্ত্রাংশ আমদানির হার ও পরিমাপ বৃদ্ধি পাচ্ছে ।বাংলাদেশের অর্থনীতির বর্তমান পরিস্থিতিতে, বিশেষ করে রপ্তানিমূখী শিল্প এবং আমদানি প্রতিকল্প শিল্পের ওপর প্রদত্ত অগ্রাধিকারের ফলে এইরুপ আমদানির হার ও পরিমাপ যে আরও বৃদ্ধি পাবে তাতে কোন সন্দেহ নাই ।কার্যকরভাবে বাস্তাবায়নের লক্ষ্যে নীতিমালা প্রনয়নের ক্ষেত্রে বিভিন্ন ধারায় কৌশলগত পরিবর্তন ও বিন্যাস করা হয়েছে । এ সময়কালে যে দৃশ্যমান নীতি পরিবর্তন ঘটে তা হলো মুক্তবাজার অর্থনীতিতে ধারাবাহিক ও পদ্ধতিগতভাবে উত্তরণ । মুক্তবাজার অর্থনীতিতে ব্যক্তিখাতকে প্রধান চালিকাশক্তি হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছে ।কাজেই বাংলাদেশের জাতির পিতা বঙ্গবদ্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শুরু করা অগ্রণী ভূমিকার ফসল বর্তমান বাংলাদেশের অর্থনীতি এবং বৈদেশিক বাণিজ্যের উপর ভিত্তি করে বর্তমান সরকারের কার্যক্রমের লক্ষ্য ২০৪১ সালে বাংলাদেশকে উন্নত রাষ্ট্রের মর্যদার প্রতিষ্ঠা করা ।

দূর্নীতি

[সম্পাদনা]

২০১৫ সালের অক্টোবর মাসে একজন আমদানি ও রপ্তানি প্রধান নিয়ন্ত্রকের দপ্তরের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা মোঃ শহিদুল হকের ঘুষ নেওয়ার ভিডিও ভাইরাল হলে তাকে বরখাস্ত করা হয়।

তথ্যসূত্র

[সম্পাদনা]
  1. "Function of the organization"ccie.gov.bd (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২৫ জুন ২০১৮ 
  2. কিছু সংস্কার করে উন্নতির আশাProthom Alo। ২৮ এপ্রিল ২০১৮। সংগ্রহের তারিখ ২৫ জুন ২০১৮ 
  3. লবণ আমদানির এলসি খোলায় নিষেধাজ্ঞাBhorer Kagoj। ২৫ জুন ২০১৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৫ জুন ২০১৮