আবদুর রহিম (পণ্ডিত)
আবদুর রহিম | |
---|---|
বাংলাদেশে জামায়াতে ইসলামীর,১ম আমীর | |
কাজের মেয়াদ ১৯৫৬ – ১৯৬০ | |
পূর্বসূরী | বাংলাদেশে পদ প্রতিষ্ঠিত |
উত্তরসূরী | গোলাম আজম |
ব্যক্তিগত বিবরণ | |
জন্ম | পিরোজপুর, বেঙ্গল প্রেসিডেন্সি, ব্রিটিশ ভারত, (বর্তমান বাংলাদেশ) | ১৯ জানুয়ারি ১৯১৮
মৃত্যু | ১ অক্টোবর ১৯৮৭ ঢাকা | (বয়স ৬৯)
নাগরিকত্ব | ব্রিটিশ ভারত (১৯৪৭ সাল পর্যন্ত) পাকিস্তান (১৯৭১ সালের পূর্বে) বাংলাদেশ |
রাজনৈতিক দল | জামায়াতে ইসলামী |
দাম্পত্য সঙ্গী | খায়রুন্নেসা |
সন্তান | ১০ |
প্রাক্তন শিক্ষার্থী | কলকাতা আলিয়া মাদ্রাসা. |
পেশা | দাওয়া |
জীবিকা | লেখক, অনুবাদক, রাজনীতিবিদ |
ধর্ম | ইসলাম |
মুহাম্মদ আবদুর রহীম (১৯ জানুয়ারি,১৯১৮ – ১ অক্টোবর ১৯৮৭) ছিলেন একজন বাংলাদেশি ইসলামি পণ্ডিত ও খ্যাতনামা রাজনীতিবিদ। তিনি বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর প্রথম নেতাদের অন্যতম।[১] পরবর্তীতে জামাআত ত্যাগ করে ইসলামী ঐক্য আন্দোলন এবং ১৯৮৭ সালে ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলন প্রতিষ্ঠার সাথে যুক্ত হন।[২] শুরুতে এটি একটি রাজনৈতিক মোর্চা হলেও পরবর্তীতে তা চরমোনাই পীর ফজলুল করিমের সংগঠনে পরিণত হয়, যার বর্তমান নাম ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ। তিনি ইসলামি পণ্ডিত সাইয়েদ আবুল আ'লা মওদুদী ও ইউসূফ আল-কারযাভীর বই বাংলায় অনুবাদ করেন। এছাড়াও ইসলাম নিয়ে বাংলা ও উর্দুতে তার মৌলিক রচনা রয়েছে।
প্রাথমিক জীবন
[সম্পাদনা]আবদুর রহিম বাংলাদেশের পিরোজপুর জেলার শিয়ালকাঠি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা হাজি খবিরউদ্দিন ও মা আকলিমুন্নেসা। পরিবারের ১২ সন্তানের মধ্যে তিনি চতুর্থ। তার ভাইদের মধ্যে পরিচিতজন হিসেবে আছেন তার ভাই এ টি এম আবদুল ওয়াহিদ যিনি কলকাতা আলিয়া মাদ্রাসার স্নাতক ও খ্যাতনামা লেখক। তার আরো দুই ভাই এম এ করিম ও এম এ সাত্তারও খ্যাতনামা লেখক ছিলেন।[১] তিনি ইসলামিক ডেমোক্রেটিক লীগের (আইডিএল) ব্যানারে বিভিন্ন ইসলামি রাজনৈতিক দলকে একই কাতারে আনার প্রচেষ্টা চালান। এই দল ১৯৭৯ সালের ১৮ জুন অনুষ্ঠিত সংসদ নির্বাচনে ২০টি আসন লাভ করে।
শিক্ষাজীবন
[সম্পাদনা]নিজ গ্রামের বাড়ির পার্শ্ববর্তী মসজিদে চার বছর শিক্ষা সমাপ্ত করার পর ১৯৩৪ সালে তিনি শর্ষিনা আলিয়া মাদ্রাসায় ভর্তি হন। এখানে তিনি প্রায় পাঁচ বছর শিক্ষাগ্রহণ করেন। ১৯৩৮ সালে তিনি এখান থেকে কৃতিত্বের সাথে উত্তীর্ণ হন। এরপর তিনি কলকাতা আলিয়া মাদ্রাসায় ভর্তি হন (বর্তমান আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়)। এখান থেকে তিনি ১৯৪০ সালে ‘ফাজিল’ ও ১৯৪২ সালে ‘কামিল’ পাশ করেন।[১]
জামায়াতে ইসলামীতে অংশগ্রহণ
[সম্পাদনা]আলিয়া মাদ্রাসার ছাত্র থাকাবস্থায় মাওলানা আবদুর রহিম সাইয়েদ আবুল আ'লা মওদুদী কর্তৃক সম্পাদিত ম্যাগাজিন ‘তরজমানুল কুরআন’ নিয়মিত গ্রহণ করতেন। এই ম্যাগাজিন ও সাইয়েদ মওদুদির অন্যান্য রচনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে তিনি ১৯৪৬ সালে জামায়াতে ইসলামীর নিখিল ভারত সম্মেলনে অংশ নেন। এখানে তিনি জামায়াতের অন্যান্য নেতাদের সাথে পরিচিত হন। ১৯৪৬-৪৭ সালের পর্বে তিনি সংগঠনে যোগ দেন।[১]
মাওলানা আবদুর রহিম বাংলাদেশে জামায়াতে ইসলামীর প্রতিষ্ঠার জন্য কাজ করা চারজন ব্যক্তির অন্যতম। অন্যান্যরা হলেন মাওলানা রফি আহমেদ ইন্দরি, খোরশেদ আহমেদ ভাট ও মাওলানা কারি জলিল আশরাফি নদভি। ১৯৫৫ সালে মাওলানা আবদুর রহিম পূর্ব পাকিস্তান জামায়াতে ইসলামীর আমির নির্বাচিত হন।[৩] ১৯৭০ সালে পাকিস্তান জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির (ভাইস চেয়ারম্যান বা ভাইস প্রেসিডেন্ট) হন। এসময় গোলাম আজম পূর্ব পাকিস্তান জামায়াতে ইসলামীর নতুন আমির নির্বাচিত হন। তিনি বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর প্রথম নির্বাচিত নেতা। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় তিনি পাকিস্তানে অবস্থান করছিলেন।[১] ১৯৭৪ সালে তিনি দেশে ফিরে আসেন।[৪] ১৯৭১-১৯৭৮ সালের সময়সীমায় জামায়াত বাংলাদেশের রাজনীতিতে নিষিদ্ধ ছিল।[৪]
গ্রন্থ
[সম্পাদনা]মাওলানা আবদুর রহিম বেশ কিছু বই লিখেছেন। তন্মধ্যে কিছু বই হল,
- আল কুরআনের আলোকে উন্নত জীবনের আদর্শ (১৯৮০)
- আজকের চিন্তাধারা (১৯৮০)
- "হাদীস শরীফ ৩ খন্ড (১৯৬৪)"
- "হাদীস সংকলনের ইতিহাস (১৯৭০)"
- পাশ্চাত্য সভ্যতার দার্শনিক ভিত্তি (১৯৮৪)
- আল কুরআনের নবুয়ত ও রিসালাত (১৯৮৪)
- আল কুরআনের আলোকে শিরক ও তাওহিদ (১৯৮৩)
- আল কুরআনের রাষ্ট্র ও সরকার (১৯৮৮)
- ইসলামের জাকাত বিধান (১৯৮২-১৯৮৬) – ইউসূফ আল-কারযাভীর বইয়ের অনুবাদ
- বিংশ শতাব্দীর জাহিলিয়াত (১৯৮২-১৯৮৬) – সাইয়েদ কুতুবের বইয়ের অনুবাদ
- তাফহিমুল কুরআন, ১৯ খন্ড – সাইয়েদ আবুল আ'লা মওদুদীর বইয়ের অনুবাদ
- ইসলামে হালাল-হারামের বিধান - ইউসূফ আল-কারযাভী বইয়ের অনুবাদ
- ইসলামে অর্থনৈতিক ব্যবস্থা
- গণতন্ত্র নয় পূর্ণাঙ্গ বিপ্লব
- গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা ও শুরায়ী নিজাম
- প্রচলিত রাজনীতি নয় জিহাদই কাম্য
মৃত্যু
[সম্পাদনা]১৯৮৭ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর তিনি গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন। ৩০ সেপ্টেম্বর তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ১ অক্টোবর দুপুর ১২টার দিকে তিনি ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন।
তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ ক খ গ ঘ ঙ "Moulana Muhammad Abdur Rahim"। marrf.com। মাওলানা আবদুর রহিম গবেষণা ফাউন্ডেশন। ১৩ নভেম্বর ২০১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৫ সেপ্টেম্বর ২০১৪।
- ↑ প্রতিবেদক, নিজস্ব। "ইসলামী রাজনীতিতে মওলানা মুহাম্মদ আবদুর রহীম"। DailyInqilabOnline (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০৯-০৮।
- ↑ "History of Bangladesh Jamaat-e-Islami"। jamaatsupporters.com। ৫ সেপ্টেম্বর ২০১৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৫ সেপ্টেম্বর ২০১৪।
- ↑ ক খ Political Islam and the Elections in Bangladesh (পিডিএফ)। 34 South Molton Street, London, W1K 5RG: Institute of Commonwealth Studies। ২০১৩। পৃষ্ঠা 41। ১২ অক্টোবর ২০১৩ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৫ সেপ্টেম্বর ২০১৪।
- ১৯১৮-এ জন্ম
- ১৯৮৭-এ মৃত্যু
- মুসলিম পণ্ডিত
- বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর রাজনীতিবিদ
- বাংলাদেশী সুন্নি মুসলিম
- বাংলাদেশী রাজনীতিবিদ
- পিরোজপুর জেলার রাজনীতিবিদ
- সুন্নি মুসলিম পণ্ডিত
- বাংলাদেশী মুসলিম
- বাংলাদেশী সুন্নি মুসলিম পণ্ডিত
- মাদ্রাসা-ই আলিয়া, কলকাতার প্রাক্তন শিক্ষার্থী
- মাদ্রাসা-ই আলিয়া, কলকাতার শিক্ষক
- ছারছিনা দারুসসুন্নাত কামিল মাদ্রাসার প্রাক্তন শিক্ষার্থী
- সরকারি মাদ্রাসা-ই-আলিয়া, ঢাকার শিক্ষক
- ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের রাজনীতিবিদ
- বরিশাল বিভাগের ইসলামি ব্যক্তিত্ব
- পিরোজপুর জেলার ব্যক্তি
- ২০শ শতাব্দীর বাঙালি
- বাঙালি আলেম