অ্যাস্টাটিন
সাধারণ বৈশিষ্ট্য | |
---|---|
প্রতীক | At |
পারমাণবিক সংখ্যা | ৮৫ |
গ্রুপ | ১৭ |
পর্যায় | ৬ |
ব্লক | p |
পারমাণবিক ভর | (210) g/mol |
ইলেকট্রন বিন্যাস | [Xe] 4f14 5d10 6s2 6p5 |
ভৌত বৈশিষ্ট্য | |
দশা | কঠিন |
গলনাঙ্ক | 575 K (302 °C, 576 °F) |
স্ফুটনাঙ্ক | 610 K ( 337 °C, 639 °F) |
ঘনত্ব | 8.91–8.95 g/cm3[১] |
মোলার আয়তন | 23.6 cm3/mol |
পারমাণবিক বৈশিষ্ট্য | |
জারণ অবস্থা | ±1, 3, 5, 7 |
তড়িৎ ঋণাত্মকতা | 2.2 (পাউলিং স্কেল) |
পর্যায় ৬, গ্রুপ ১৭
| |
গ্রুপক্রমে মৌল | |
পোলোনিয়াম অ্যাস্টাটিন রেডন
| |
পর্যায়ক্রমে মৌল | |
আয়োডিন অ্যাস্টাটিন টেনেসিন
| |
অ্যাস্টাটিন একটি তেজস্ক্রিয় কঠিন মৌলিক পদার্থ। এর রাসায়নিক প্রতীক At। এর পারমাণবিক সংখ্যা ৮৫। এটি পর্যায় সারণীর ১৭নং (৭এ) শ্রেণী তথা হ্যালোজেন শ্রেণীর মৌলিক পদার্থগুলির মধ্যে সবচেয়ে ভারী।
১৯৪০ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বার্কলি শহরে ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে মার্কিন পদার্থবিজ্ঞানী ডেল আর কারসন, কেনেথ রস ম্যাকেঞ্জি ও এমিলিও সেগ্রে (যিনি পরবর্তীতে ম্যানহাটন প্রকল্পে কাজ করেন) বিসমাথ ধাতুর উপর সাইক্লোট্রন কণা ত্বরক যন্ত্র দ্বারা ত্বরিত উচ্চশক্তিসম্পন্ন আলফা কণা (হিলিয়াম পরমাণুকেন্দ্রীন) বর্ষণের মাধ্যমে কৃত্রিমভাবে পরীক্ষাগারে প্রথমবারের মতো মৌলটিকে সংশ্লেষণ করেন। প্রথম যে সমস্থানিকটিকে সংশ্লেষণ করে প্রস্তুত করা হয়, সেটির আণবিক ভর ২১১ এবং অর্ধায়ু ৭.২ ঘণ্টা। বিজ্ঞানী ত্রয়ী মৌলটির নাম দেন অ্যাস্টাটিন। নামটি প্রাচীন গ্রিক শব্দ আস্তাতোস (ἄστατος) থেকে এসেছে, যার অর্থ "অস্থিতিশীল"। এর কারণ মৌলটির কোনও স্থিতিশীল বা দীর্ঘায়ু সমস্থানিক নেই। তবে এই কৃত্রিম সংশ্লেষণের আগেই রসায়নবিদেরা আয়োডিন ও পোলোনিয়ামের অন্তর্বর্তী ধর্মবিশিষ্ট একটি মৌলিক পদার্থের পূর্বাভাস করেছিলেন এবং এটিকে দিমিত্রি মেন্দেলিয়েভের প্রস্তাবিত নামকরণ পদ্ধতি অনুসারে প্রাথমিকভাবে "একা-আয়োডিন" নামে পর্যায় সারণীতে স্থান দেওয়া হয়েছিল।
অ্যাস্টাটিন প্রকৃতির সবচেয়ে বিরল মৌলিক পদার্থগুলির একটি। মৌলটিকে প্রথমদিকে প্রকৃতিতে খুঁজে পাওয়া যায়নি। পরে কিছু প্রাকৃতিকভাবে উৎপন্ন ইউরেনিয়াম আকরিকে ও অন্যান্য ভারী তেজস্ক্রিয় মৌলের আকরিকের সাথে ক্ষয়প্রাপ্ত পদার্থ হিসেবে অত্যন্ত স্বল্প পরিমাণে চার ধরনের অ্যাস্টাটিন সমস্থানিক শনাক্ত করা সম্ভব হয়। প্রকৃতিতে মূলত তিনটি স্বাভাবিক তেজস্ক্রিয় ক্ষয় ধারাতে অ্যাস্টাটিন খুঁজে পাওয়া গেছে: ইউরেনিয়াম ধারার অ্যাস্টাটিন-২১৮, থোরিয়াম ধারার অ্যাস্টাটিন-২১৬ এবং অ্যাক্টিনিয়াম ধারার অ্যাস্টাটিন-২১৫ ও অ্যাস্টাটিন-২১৯। মৌলটির কোনও স্থিতিশীল সমস্থানিক প্রকৃতিতে বিদ্যমান নেই। এর সমস্থানিকগুলির সবগুলিই অস্থিতিশীল ও তেজস্ক্রিয়। সবচেয়ে দীর্ঘায়ু সমস্থানিকটি হল অ্যাস্টাটিন-২১০, যার অর্ধায়ু প্রায় ৮.১ ঘণ্টা। এরপর অ্যাস্টাটিনের আরও প্রায় ৩২টি সমস্থানিক তালিকাভুক্ত করা হয়েছে (অ্যাস্টাটিন ১৯০ থেকে অ্যাস্টাটিন ২২৩ পর্যন্ত)। এদের কতগুলির অর্ধায়ু এক সেকেন্ডের ভগ্নাংশমাত্র। এই কারণে মৌলটির কোনও কঠিন নমুনা অদ্যাবধি পর্যবেক্ষণ করা সম্ভব হয় নি, কেননা যেকোনও আণুবীক্ষণিক নমুনা তেজস্ক্রিয়তার উত্তাপে তৎক্ষণাৎ বাষ্পীভূত হয়ে যায়। যেকোনও সময়ে সমগ্র পৃথিবীর ভূ-ত্বকের ১ কিলোমিটার গভীরতা পর্যন্ত অ্যাস্টাটিনের পরিমাণ প্রায় এক আউন্স বা ২৮ গ্রামের চেয়ে খুব বেশি নয়। বিসমাথ-২০০ বা বিসমাথ-২০৯ ধাতুর উপর আলফা কণা বর্ষণ করে কৃত্রিম উপায়ে অ্যাস্টাটিন প্রস্তুত করা হয়। এ পর্যন্ত মাত্র ০.০৫ মাইক্রোগ্রাম অ্যাস্টাটিন কৃত্রিমভাবে প্রস্তুত করা সম্ভব হয়ছে।
বিরলতা ও তেজস্ক্রিয়তার কারণে দ্রুত ক্ষয়ের জন্য মৌলিক বৈজ্ঞানিক গবেষণা ব্যতীত অ্যাস্টাটিনের কোনও অর্থনৈতিক গুরুত্ব নেই। একই কারণে অ্যাস্টাটিনের বৃহদায়তনিক ধর্মগুলি এখনও নিশ্চিতভাবে জানা সম্ভব হয়নি। পর্যায় সারণীতে ফ্লোরিন, ক্লোরিন, ব্রোমিন ও আয়োডিনের সাথে একই শ্রেণীতে অবস্থান করে বলে এটির ধর্মগুলি অনুমান করা হয়েছে। তাত্ত্বিকাভবে ধারণা করা হয় যে কক্ষ তাপমাত্রায় এটি একটি কঠিন পদার্থ, যার গলনাংক ২৯ থেকে ৬৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস, স্ফুটনাংক ২৩০ থেকে ৩৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং ঘনত্ব প্রতি ঘনসেন্টিমিটারে ৬.৩৫ থেকে ৭ গ্রাম। অ্যাস্টাটিন হ্যালোজেন শ্রেণীর মৌলগুলির মধ্যে সবচেয়ে বেশি ধাতুর মতো আচরণ করে। জলীয় দ্রবণে এটির কমপক্ষে ৫টি জারণ অবস্থার (হ্যালোজেন শ্রেণীর প্রত্যাশিত -১-এর পাশাপাশি +১, +৩ +৫, +৭) কথা জানা গেছে। হ্যালোজেন মৌলগুলির এটি রাসায়নিকভাবে সবচেয়ে কম বিক্রিয়াশীল। অন্যান্য হ্যালোজেন মৌলগুলির সাথে এটি আন্তঃহ্যালোজেন যৌগ যেমন অ্যাস্টাটিন আয়োডাইড ও অ্যাস্টাটিন ক্লোরাইড গঠন করে। হাইড্রোজেনের সাথে বিক্রিয়া করে এটি হাইড্রোজেন অ্যাস্টাটিড নামক যৌগ গঠন করে যা পানিতে দ্রবীভূত হবে হাইড্রোঅ্যাস্ট্যাটিক অ্যাসিড নামক অম্ল সৃষ্টি করে; এটি হাইড্রোক্লোরিক অ্যাসিডের একটি দুর্বল সংস্করণ। অ্যাস্টাটিন সম্ভবত আয়োডিনের মতো বা তার চেয়েও গাঢ় বা উজ্জ্বল ধূসরবর্ণ এবং অর্ধপরিবাহী। অ্যাস্টাটিনের সাথে আয়োডিনের সাদৃশ্য আছে। রাসায়নিকভাবে অ্যাস্টাটিনের একাধিক অ্যানায়নীয় প্রজাতি বিদ্যমান এবং এর বেশির ভাগ যৌগের সাথে আয়োডিনের যৌগের সাদৃশ্য আছে। তেজস্ক্রিয় আয়োডিন-১৩১-এর মতো এটিও উচ্চতর প্রাণীদের থাইরয়েড গ্রন্থিতে জমা হয়। ৭.২ ঘণ্টা অর্ধায়ুবিশিষ্ট অ্যাস্টাটিন-২১১ সমস্থানিকটি চিকিৎসা শাস্ত্রের জন্য গুরুত্বপূর্ণ কেননা এটিকে থাইরয়েড গ্রন্থির কর্কটরোগের চিকিৎসায় ব্যবহার করার সম্ভাবনা আছে। সমস্থানিকটি থেকে উচ্চশক্তিসম্পন্ন আলফা কণা নিঃসরিত হয়ে আশেপাশের সুস্থ কোষের ক্ষতি না করেই নৈর্বাচনিকভাবে ক্যানসারের কোষগুলিকে ধ্বংস করে দিতে পারে। কদাচিৎ অ্যাস্টাটিন ধাতব ধর্ম প্রদর্শন করে এবং রূপার সাথে সাদৃশ্য প্রদর্শন করে। এটি ধাতু ও অধাতুর মধ্যবর্তী বিভাজক রেখাতে অবস্থান করে বলে মনে করা হয়। অ্যাস্টাটিন ধাতু তেজস্ক্রিয় ক্ষয়ের মাধ্যমে (আলফা ক্ষয়, বিটা ক্ষয় বা ইলেকট্রন কব্জাকরণ) পোলোনিয়াম, বিসমাথ বা রেডনের সমস্থানিক উৎপন্ন করে।
অ্যাস্টাটিন তেজস্ক্রিয় বলে বিপজ্জনক এবং উচ্চমাত্রায় কর্কটরোগ (ক্যানসার) উৎপাদক। মাত্র একবার সূচিপ্রয়োগের মাধ্যমে পরীক্ষাগারের প্রাণীদের স্তন ও পিটুইটারি গ্রন্থিতে অর্বুদ বা টিউমার সৃষ্টি করা গিয়েছে। মৌলটি গবেষণা করার সময় তাই খুব সাবধানে তেজস্ক্রিয়তারোধী ঢাল ব্যবহার করে দূর থেকে এটিকে নাড়াচাড়া করতে হয়।
তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ বই: Selected Values of the Crystallographic Properties of Elements, সম্পাদক: Arblaster, প্রকাশকাল: ২০১৮, প্রকাশক: ASM International, পৃষ্ঠা: ৬০৪
বহিঃসংযোগ
[সম্পাদনা]রসায়ন বিষয়ক এই নিবন্ধটি অসম্পূর্ণ। আপনি চাইলে এটিকে সম্প্রসারিত করে উইকিপিডিয়াকে সাহায্য করতে পারেন। |