শিব
শিব (সংস্কৃত: शिव [ɕɪʋɐ], সংস্কৃত: शिवः, আইএএসটি: Śiva, আইএসও: Śiva, ) হলেন হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের সর্বোচ্চ দেবতা। সনাতন ধর্মের শাস্ত্রসমূহে তিনি পরমসত্ত্বা রূপে ঘোষিত। শিব সৃষ্টি-স্থিতি-প্রলয়রূপ তিন কারণের কারণ। তিনি সমসাময়িক হিন্দুধর্মের তিনটি সর্বাধিক প্রাচীন সম্প্রদায়ের অন্যতম শৈব সম্প্রদায়ের প্রধান দেবতা।[৫][৬] এছাড়া শিব স্মার্ত সম্প্রদায়ে পূজিত ঈশ্বরের পাঁচটি প্রধান রূপের (গণেশ, শিব, সূর্য, বিষ্ণু, দুর্গা) একটি রূপ।[৫] তার বিশেষ রুদ্ররূপ ধ্বংস, সংহার ও প্রলয়ের দেবতা।[১]
শিব | |
---|---|
ত্রিমূর্তি গোষ্ঠীর সদস্য | |
অন্যান্য নাম | মহেশ, শঙ্কর, ভোলানাথ, নীলকণ্ঠ, মহাদেব, রুদ্র ইত্যাদি |
দেবনাগরী | शिव (Śiva) |
অন্তর্ভুক্তি | পরব্রহ্ম (শৈবধর্ম), ত্রিমূর্তি, পরমাত্মা, ঈশ্বর, দেব |
আবাস | কৈলাস পর্বত[১] |
মন্ত্র | ওঁ নমঃ শিবায় ॐ नमः शिवाय॥ |
অস্ত্র | পাশুপতাস্ত্র, ত্রিশূল, পরশু (কুঠার), পিণাক[২] |
প্রতীকসমূহ | লিঙ্গ,[২] ত্রিশূল, অর্ধচন্দ্র, ডমরু |
দিবস | সোমবার |
বাহন | নন্দী |
উৎসব | শ্রাবণ, শিবরাত্রি, একাদশী, কার্তিক পূর্ণিমা, ভৈরব অষ্টমী |
ব্যক্তিগত তথ্য | |
সঙ্গী | সতী (প্রথম স্ত্রী), পার্বতী |
সন্তান | কার্তিকও গণেশ অশোকসুন্দরী (পার্বতীর সন্তান)[৩][৪] |
সর্বোচ্চ স্তরে শিবকে সর্বোৎকর্ষ, অপরিবর্তনশীল পরম ব্রহ্ম মনে করা হয়।[৭][৮][৯][১০][১১] ব্রহ্ম স্বরূপে পরমাত্মা শিব বিন্দুর ন্যায় অর্থাৎ নিরাকার,এই অবস্থায় শিবকে কল্পনাও করা যায়না,তিনি কালচক্র ও সংসারের সকল গুণ-অগুণ এর উর্দ্ধে। শিবের অনেকগুলি সদাশয় ও ভয়ঙ্কর মূর্তিও আছে।[১২] সদাশয় রূপে তিনি একজন সর্বজ্ঞ যোগী। তিনি কৈলাস পর্বতে সন্ন্যাসীর জীবন যাপন করেন।[১] আবার গৃহস্থ রূপে তিনি পার্বতীর স্বামী। তার দুই পুত্র বর্তমান। এঁরা হলেন গণেশ ও কার্তিক। ভয়ঙ্কর রূপে তাকে প্রায়শই দৈত্যবিনাশী বলে বর্ণনা করা হয়। শিবকে যোগ, ধ্যান ও শিল্পকলার দেবতাও মনে করা হয়। এছাড়াও তিনি চিকিৎসা বিদ্যা ও কৃষিবিদ্যারও আবিষ্কারক।[১৩][১৪][১৫]
শিবমূর্তির প্রধান বৈশিষ্ট্যগুলি হল তাঁর তৃতীয় নয়ন, গলায় বাসুকী নাগ, জটায় অর্ধচন্দ্র, জটার উপর থেকে প্রবাহিত গঙ্গা, অস্ত্র ত্রিশূল ও বাদ্য ডমরু। শিবকে সাধারণত ‘শিবলিঙ্গ’ নামক বিমূর্ত প্রতীকে পূজা করা হয়।[২][১৬][১৭] সমগ্র হিন্দু সমাজে শিবপূজা প্রচলিত আছে। ভারত, বাংলাদেশ, নেপাল, শ্রীলঙ্কা রাষ্ট্রে, পাকিস্তানের কিছু অংশে শিবপূজার ব্যাপক প্রচলন লক্ষিত হয়। সনাতন ধর্মীয় শাস্ত্রসমূহে শিব পূজা কে সর্বশ্রেষ্ঠও সর্বাধিক ফলপ্রদ বলে বর্ণনা করা হয়।[১৮][১৯][২০]
বুৎপত্তি ও অন্যান্য নাম
সম্পাদনাসংস্কৃত শিব (দেবনাগরী: शिव, Śiva) শব্দটি একটি বিশেষণ, যার অর্থ "শুভ, দয়ালু ও মহৎ"।[২১][২২] ব্যক্তিনাম হিসেবে এই শব্দটির অর্থ "মঙ্গলময়"। রূঢ় রুদ্র শব্দটির পরিবর্তে অপেক্ষাকৃত কোমল নাম হিসেবে এই শব্দটি ব্যবহৃত হয়।[২২] বিশেষণ হিসেবে শিব শব্দটি কেবলমাত্র রুদ্রেরই নয়, অন্যান্য বৈদিক দেবদেবীদের অভিধা রূপে ব্যবহৃত হয়ে থাকে।[২৩]
সংস্কৃতে শৈব শব্দটির অর্থ "শিব সংক্রান্ত"। এই শব্দটি হিন্দুধর্মের একটি অন্যতম প্রধান শাখাসম্প্রদায় ও সেই সম্প্রদায়ের মতাবলম্বীদের নাম হিসেবে ব্যবহৃত হয়।[২৪] শৈবধর্মের কয়েকটি প্রথা ও ধর্মবিশ্বাসের বিশেষণ রূপেই এই শব্দটি ব্যবহৃত হয়ে থাকে। শৈবধর্ম আবার হিন্দুধর্মের প্রবেশদ্বার[২৫] শিব শব্দটির একাধিক অর্থ ব্যাখ্যা করেছেন: "পবিত্র ব্যক্তি", "প্রকৃতির তিন গুণের (সত্ত্ব, রজ ও তম) অতীত যিনি", অথবা "যাঁর নাম উচ্চারণ মাত্রেই মানুষ পাপমুক্ত হয়"।[২৬] স্বামী চিন্ময়ানন্দ তার বিষ্ণু সহস্রনাম অনুবাদে স্তবটির ব্যাখ্যা আরও প্রসারিত করে বলেছেন: শিব শব্দের অর্থ যিনি চিরপবিত্র বা যিনি রজ বা তমের দোষ কর্তৃক স্পর্শিত হন না।[২৭]
শিবের নাম সংবলিত শিব সহস্রনাম স্তোত্রের অন্তত পাঠান্তর পাওয়া যায়।[২৮] মহাভারতের ত্রয়োদশ পর্ব অনুশাসনপর্ব-এর অন্তর্গত পাঠটি এই ধারার মূলরচনা বলে বিবেচিত হয়।[২৯] মহান্যাসে শিবের একটি দশ সহস্রনাম স্তোত্রেরও সন্ধান পাওয়া যায়। শতরুদ্রীয় নামে পরিচিত শ্রীরুদ্রম্ চমকম্ স্তোত্রেও শিবকে নানা নামে বন্দনা করা হয়েছে।[৩০][৩১]
ঐতিহাসিক বিবর্তন
সম্পাদনাভারত, নেপাল, শ্রীলঙ্কার সমগ্র হিন্দুসমাজেই শিবের পূজা প্রচলিত।[২০][৩২] কোনো কোনো ঐতিহাসিক মনে করেন, একাধিক ধর্মীয় সম্প্রদায়ের ধারণা একক মূর্তিতে একীভূত হয়ে শিবের আধুনিক রূপটি দান করেছে।[৩৩] তবে শিবের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যগুলি কীভাবে একক দেবতায় সম্মিলিত হয়, সে সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য পাওয়া যায় না।[৩৪] অ্যাক্সেল মাইকেলস শৈবধর্মের এই সম্মিলিত জটিল প্রকৃতিটি ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বলেছেন:
বিষ্ণুর মতো, শিবও একজন উচ্চস্থানীয় দেবতা। তাঁর নামানুসারে "শৈবধর্ম" নামক ধর্মীয় মত ও সম্প্রদায়ের নামকরণ হয়েছে। বৈষ্ণবধর্মের মতোই এই শব্দটির দ্বারাও এমন এক ঐকমত্যকে বোঝায় যা ধর্মানুশীলন বা দার্শনিক ও আধ্যাত্মিক মতবাদের মধ্যে স্পষ্টরূপে প্রতীয়মান হয় না। তাছাড়া ধর্মানুশীলন ও মতবাদকে পৃথক রাখাই কর্তব্য।[৩৫]
এই ধরনের সম্মিলনের একটি উদাহরণের দেখা মেলে মহারাষ্ট্রে। সেখানে কৃষি ও পশুপালনের দেবতা ছিলেন খন্ডোবা নামে এক স্থানীয় দেবতা।[৩৬] মহারাষ্ট্রে খন্ডোবার প্রধান উপাসনাকেন্দ্র ছিল জেজুরি।[৩৭] খন্ডোবার রূপকল্পটি ঠিক শিবের মতো[৩৮] এবং তাকে পূজাও করা হয় লিঙ্গের আকারে।[৩৬][৩৯] অবশ্য সূর্য[৩৬] ও কার্তিকেয়ের[৪০] সঙ্গেও খাণ্ডোবার রূপগত মিল লক্ষ্য করা যায়।
পশুপতি সিলমোহর
সম্পাদনামহেঞ্জোদারোয় খননকার্য চালানোর সময় একটি সিলমোহর আবিষ্কৃত হয়, যাতে খোদিত চিত্রটি "আদি-শিব"-এর ("Proto - Shiva") একটি সম্ভাব্য প্রতিকৃতিরূপে সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করে।[৪১] উপবিষ্ট, সম্ভবত ইথিফেলিক, জন্তুজানোয়ার বেষ্টিত[৪২] এই মূর্তিটিকে পশুপতি নামে অভিহিত করা হয়।[৪৩] স্যার জন মার্শাল এবং অন্যান্যরা এই ছবিতে হাঁটু মুড়ে বসা "যোগ ভঙ্গিমা" দেখে এটিকে শিবের আদিরূপ বলে দাবি করেন। যদিও গেভিন ফ্লাড[৪১][৪৪] ও জন কি[৪৫] প্রমুখ গবেষক এই দাবি অস্বীকার করেছেন।
রুদ্র
সম্পাদনাআধুনিক শিবের সঙ্গে বৈদিক দেবতা রুদ্রের নানা মিল পরিলক্ষিত হয়।[৪৬] হিন্দুসমাজে রুদ্র ও শিবকে একই ব্যক্তি মনে করা হয়। রুদ্র হলেন বজ্রবিদ্যুৎসহ ঝড়ের দেবতা; তাকে একজন ভয়ানক, ধ্বংসকারী দেবতা হিসেবে কল্পনা করা হতো।
হিন্দুধর্মের প্রাচীনতম ধর্মগ্রন্থ হল ঋগ্বেদ। ভাষাতাত্ত্বিক তথ্যপ্রমাণ থেকে জানা যায় যে ১৭০০ থেকে ১১০০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দের মধ্যবর্তী সময়ে এই গ্রন্থের রচনা।[৪৭] ঋগ্বেদে রুদ্র নামে এক দেবতার উল্লেখ রয়েছে। রুদ্র নামটি আজও শিবের অপর নাম হিসেবে ব্যবহৃত হয়। ঋগ্বেদে (২।৩৩) তাকে "মরুৎগণের পিতা" বলে উল্লেখ করা হয়েছে; মরুৎগণ হলেন ঝঞ্ঝার দেবতাদের একটি গোষ্ঠী।[৪৮] এছাড়াও ঋগ্বেদ ও যজুর্বেদে প্রাপ্ত রুদ্রম্ স্তোত্রটিতে রুদ্রকে নানা ক্ষেত্রে শিব নামে বন্দনা করা হয়েছে; এই স্তোত্রটি হিন্দুদের নিকট একটি অতি পবিত্র স্তোত্র। তবে বেদপ শিব শব্দটি ইন্দ্র, মিত্র ও অগ্নির বিশেষণ হিসেবেও ব্যবহৃত হয়েছে।
তবে প্রাচীন দেবতা রুদ্রের সঙ্গে শিবের এই সমত্বারোপ সার্বজনীনভাবে স্বীকৃত নয়। অ্যালেক্স মাইকেলসের ব্যাখ্যা অনুযায়ী:
রুদ্রের মধ্যে শিবের উৎপত্তি কতটুকু তা অত্যন্ত অস্পষ্ট। শিবকে একটি প্রাচীন দেবতা মনে করার প্রবণতা এই শনাক্তকরণের উপর ভিত্তি করে, যদিও এমন একটি সুদূরপ্রসারী অনুমানকে ন্যায্যতা দেয় এমন তথ্যগুলি নগণ্য। অর্থাৎ রুদ্রের মধ্যে শিব-এর উৎপত্তি কতটুকু তা অস্পষ্ট। শিব একজন প্রাচীন দেবতা বিবেচনা করার প্রবণতা এই শনাক্তকরণের উপর ভিত্তি করে, যদিও এমন একটি সুদূরপ্রসারী অনুমানকে ন্যায্যতা দেয় এমন তথ্যপ্রমাণগুলো খুবই নগণ্য।[৪৯]
রুদ্রকে "শর্ব" (ধনুর্ধর) নামেও অভিহিত করা হয়।[৫০] রুদ্রের একটি প্রধান অস্ত্র হল ধনুর্বাণ।[৫১] নামটি শিব সহস্রনাম স্তোত্রেও পাওয়া যায়। আর. কে. শর্মা মনে করেন, পরবর্তীকালের ভাষাগুলোতেও এই নামটি শিবের অপর নাম হিসেবে ব্যবহৃত হয়।[৫২] শব্দটির বুৎপত্তি সংস্কৃত শব্দ শর্ব থেকে, যার অর্থ আঘাত করা বা হত্যা করা।[৫৩] আর. কে. শর্মার ব্যাখ্যা অনুযায়ী এই শব্দটির অর্থ "যিনি অন্ধকারের শক্তিসমূহকে হত্যা করতে সক্ষম"।[৫২] শিবের অপর দুই নাম ধন্বী ("ধনুর্ধারী")[৫৪] ও বাণহস্ত ("ধনুর্বিদ", আক্ষরিক হস্তে "বাণধারী")[৫৪][৫৫] ধনুর্বিদ্যার সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত।
অন্যান্য বৈদিক দেবতাদের সঙ্গে সম্পর্ক
সম্পাদনাহিন্দু দেবমণ্ডলী একজন প্রধান দেবতারূপে শিবের উত্থানের পশ্চাতে কার্যকরী ছিল অগ্নি, ইন্দ্র, প্রজাপতি, বায়ু প্রমুখ বৈদিক দেবতাদের সঙ্গে তার সম্পর্ক।[৫৬]
অগ্নি
সম্পাদনারুদ্রের সঙ্গে অগ্নির সম্পর্ক অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ।[৫৭][৫৮] বৈদিক সাহিত্যে অগ্নি ও রুদ্রের পারস্পরিক অঙ্গীভবন রুদ্রের রুদ্র-শিব রূপে বিবর্তনের ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ।[৫৯] নিরুক্ত নামক প্রাচীন বুৎপত্তিতত্ত্ববিষয়ক একটি গ্রন্থে এই অঙ্গীভবনের বিষয়টি অত্যন্ত সুস্পষ্ট। এই গ্রন্থে লেখা আছে, "অগ্নিকে রুদ্র নামেও অভিহিত করা হয়"।[৬০] দুই দেবতার পারস্পরিক সম্পর্কের বিষয়টি অত্যন্ত জটিল। স্টেল ক্র্যামরিকের মতে:
রুদ্র-শিবের অগ্নি পৌরাণিক কাহিনীটি আগুনের সমগ্র ধারায় খেলা করে, এর সমস্ত সম্ভাবনা এবং পর্যায়গুলিকে মূল্যায়ন করে, জ্বলন থেকে আলোকসজ্জা পর্যন্ত।[৬১]
শতরুদ্রীয় স্তবে "সসিপঞ্জর" ("সোনালি লাল রঙের শিখার মতো আভাযুক্ত") ও "তিবষীমতি" ("জ্বলন্ত শিখা") বিশেষণদুটি রুদ্র ও অগ্নির সমরূপত্ব নির্দেশ করছে।[৬২] অগ্নিকে ষাঁড়ের রূপে কল্পনা করা হয়ে থাকে,[৬৩] এবং শিবের বাহনও হল নন্দী নামে একটি ষাঁড়। ষাঁড়ের মতো অগ্নিরও শিং কল্পনা করা হয়ে থাকে।[৬৪][৬৫] মধ্যযুগীয় ভাস্কর্যে অগ্নি ও ভৈরব শিব – উভয়েরই বিশেষত্ব হল অগ্নিশিখার ন্যায় মুক্ত কেশরাশি।[৬৬]
ইন্দ্র
সম্পাদনাঋগ্বেদে একাধিক স্থলে শিব শব্দটি ইন্দ্রের অভিধা রূপে ব্যবহৃত হয়েছে (২।২০।৩,[৬৭] ৬।৪৫।১৭,[৬৮][৬৯] এবং ৮।৯৩।৩[৭০])
রূপ
সম্পাদনা- তৃতীয় নয়ন: শিবের একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হল তার তৃতীয় নয়ন। এই নয়ন দ্বারা শিব কামকে ভস্ম করেছিলেন।[৭১] বিভিন্ন শাস্ত্রগ্রন্থে শিবের যে ত্র্যম্বকম্ (সংস্কৃত: त्र्यम्बकम्) নামটি পাওয়া যায় তার প্রকৃত অর্থ নিয়ে মতবিরোধ রয়েছে।[৭২] ধ্রুপদি সংস্কৃতে অম্বক শব্দের অর্থ চক্ষু; মহাভারতে শিবকে ত্রিনয়ন রূপে কল্পনা করা হয়েছে; তাই উক্ত নামটির আক্ষরিক অর্থ করা হয়ে থাকে "তৃতীয় নয়নধারী"।[৭৩] যদিও বৈদিক সংস্কৃতে অম্বা বা অম্বিকা শব্দের অর্থ মা; এই প্রাচীন অর্থের ভিত্তিতে ত্র্যম্বকম্ নামটির আক্ষরিক অর্থ করা হয়, তিন জননীর সন্তান। ম্যাক্স ম্যুলার ও আর্থার ম্যাকডোনেল শব্দটির শেষোক্ত অর্থটিকেও ধরেছেন।[৭৪][৭৫] তবে শিবের তিন জননী সংক্রান্ত কোনো কাহিনীর প্রচলন নেই। তাই ই. ওয়াশবার্ন হপকিনস মনে করেন, এই নামটির সঙ্গে তিন জননীর কোনো সম্পর্ক নেই; বরং অম্বিকা নামে পরিচিত তিন মাতৃদেবীর সঙ্গে এটি সম্পর্কযুক্ত।[৭৬] শব্দটির অন্য একটি অর্থ করা হয় "যাঁর তিন স্ত্রী বা ভগিনী বর্তমান"। কেউ কেউ মনে করেন, শব্দটি এসেছে রুদ্রের সঙ্গে শিবের সমত্বারোপের ফলশ্রুতিতে। কারণ রুদ্রের সঙ্গে দেবী অম্বিকার একটি সম্পর্ক রয়েছে।[৭৭]
- অর্ধচন্দ্র: শিবের মস্তকে একটি অর্ধচন্দ্র বিরাজ করে।[৭৮] এই কারণে শিবের অপর নাম চন্দ্রশেখর (সংস্কৃত: चन्द्रशेखर)।[৭৯][৮০][৮১] রুদ্রের রুদ্র-শিব রূপে বিবর্তনের প্রথম যুগ থেকেই এই অর্ধচন্দ্র শিবের একটি বৈশিষ্ট্য।[৮২] সম্ভবত বৈদিক ও পরবর্তীকালের সাহিত্যে চন্দ্রদেবতা সোম ও রুদ্রের একীভবনের সূত্রেই শিবের এই বৈশিষ্ট্যটির উদ্ভব ঘটেছিল।[৮৩]
- বিভূতি: শিব তাঁর সর্বাঙ্গে বিভূতি বা ভস্ম মাখেন।[৮৪] ভৈরব ইত্যাদি শিবের কয়েকটি রূপ প্রাচীন ভারতীয় শ্মশান বৈরাগ্য দর্শনের সঙ্গে যুক্ত। রক্ষণশীল ব্রাহ্মণ্যবাদের সঙ্গে সম্পর্কহীন কয়েকটি গোষ্ঠী এই মত অনুযায়ী ধর্মসাধনা করেন।[৮৫] থেরোবাদী বৌদ্ধধর্মের পালি ধর্মগ্রন্থেও এই শ্মশান সাধনার উল্লেখ রয়েছে।[৮৬] এই কারণে শিবের অপর নাম শ্মশানবাসী[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ] ও বিভূতিভূষণ ।[৮৭]
- জটাজুট: শিবের মস্তকের কেশরাশি জটাবদ্ধ। এই কারণে শিবের অপর নাম জটী[৮৮] বা কপর্দী ("কপর্দ বা কড়ির ন্যায় কেশযুক্ত")।[৮৯][৯০]
- নীলকণ্ঠ: একবার দেবতা আর অসুর মধ্যে যুদ্ধে অমৃত পানের জন্যে দেবতারা সমুদ্রমন্থন করছিলেন। মন্থনকালের এক পর্যায়ে সমুদ্র থেকে হলাহল বিষ উত্থিত হলে তার বিষাক্ত নির্যাসে দেবতারা অজ্ঞান হয়ে যাচ্ছিলেন। তখন দেবতাদের রক্ষা করার জন্য ভগবান শিব সেই বিষাক্ত বিষ পান করেন। এর ফলে উনার কণ্ঠ নীল হয়ে যায়।[৯১][৯২] একারণেই ভগবান শিব নীলকণ্ঠ (সংস্কৃত: नीलकण्ठ) নামে পরিচিত হন।[৯৩][৯৪][৯৫]
- পবিত্র গঙ্গা: হিন্দু বিশ্বাস অনুযায়ী, গঙ্গা নদীর উৎসস্থল শিবের জটা।[৯৬] এই কারণে শিবের অপর নাম গঙ্গাধর।[৯৭][৯৮]
- ব্যাঘ্রচর্ম: শিবের পরিধেয় বস্ত্র ব্যাঘ্রচর্ম বা বাঘছাল। এই কারণে শিবের অপর নাম কৃত্তিবাস।[৮৪] শিব ব্যাঘ্রচর্মের আসনের উপর উপবিষ্টও থাকেন। উল্লেখ্য, ব্যাঘ্রচর্মের আসন ছিল প্রাচীন ভারতের ব্রহ্মর্ষিদের জন্য রক্ষিত একটি বিশেষ সম্মান।[৯৯]
- সর্প: শিবের গলায় একটি সাপ সর্বদা শোভা পায়। এই সাপটি হলো শিবের পরম ভক্ত এবং সমস্ত সাপের রাজা নাগরাজ বাসুকি।[১০০]
- ত্রিশূল: শিবের অস্ত্র হল ত্রিশূল।[৮৪]
- ডমরু: শিবের হাতে ডমরু নামে একপ্রকার বাদ্যযন্ত্র শোভা পায়।[১০১][১০২] নটরাজ নামে পরিচিত শিবে নৃত্যরত মূর্তির এটি একটি বিশিষ্ট দিক।[১০৩] ডমরুধারণের জন্য নির্দিষ্ট একটি মুদ্রা বা হস্তভঙ্গিমা ডমরুহস্ত নামে পরিচিত।[১০৪] ডমরু কাপালিক সম্প্রদায়ের প্রতীক হিসেবেও ব্যবহৃত হয়।[১০৫]
- নন্দী: নন্দী নামে একটি পৌরাণিক ষাঁড় শিবের বাহন।[১০৬][১০৭] শিবকে পশুদের দেবতা মনে করা হয়। তাই তার অপর নাম পশুপতি (সংস্কৃত: पशुपति)।[১০৮] আর. কে. শর্মার মতে, পশুপতি শব্দটির অর্থ "গবাদি পশুর দেবতা"।[১০৮] অন্যদিকে ক্র্যামরিক এই নামটিকে প্রাচীন রুদ্রের অভিধা আখ্যা দিয়ে এর অর্থ করেছেন "পশুদের দেবতা"।[১০৯]
- গণ: শিবের অনুচরদের গণ বলা হয়। এঁদের নিবাসও কৈলাস। এঁদের ভৌতিক প্রকৃতি অনুসারে ভূতগণ নামেও অভিহিত করা হয়। এঁরা সাধারণত দয়ালু। কেবল কোনো কারণে তাদের প্রভু ক্রুদ্ধ হলে এঁরা প্রভুর সঙ্গে ধ্বংসলীলায় মেতে ওঠেন। শিব স্বীয় পুত্র গণেশকে তাদের নেতা মনোনীত করেন। এই কারণেই গণেশ গণপতি নামে অভিহিত হন।[১১০]
- কৈলাস: হিন্দু বিশ্বাস অনুযায়ী, শিবের অধিষ্ঠান হিমালয়ের কৈলাস পর্বতে।[৮৪] হিন্দুপুরাণ অনুসারে, লিঙ্গাকার কৈলাস পর্বত মহাবিশ্বের কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত।[১১১]
- বারাণসী: বারাণসী শিবের প্রিয় নগরী। এই নগরী হিন্দুদের পবিত্রতম তীর্থগুলির অন্যতম। হিন্দু ধর্মগ্রন্থে এই নগরী কাশীধাম নামে পরিচিত।[১১২]
রূপভেদ
সম্পাদনাভগবান শিবের বিভিন্ন নাম ও তার সম্পর্কে প্রচলিত বিভিন্ন কাহিনিতে এই দ্বিমুখী সত্ত্বার সন্ধান পাওয়া যায়। উল্লেখযোগ্য রূপভেদ হলো শৈলপুত্র,ব্রক্ষচারী,স্কন্দপিতা,কুষ্মান্ড,সিদ্ধিদাতা,সর্পদেব,গৌরীপতি,অর্ধচন্দ্রঘন্টা,কাত্যায়ন ও অন্যান্য।
ধ্বংসকর্তা ও মঙ্গলময় সত্তা
সম্পাদনাযজুর্বেদে শিবের দুটি পরস্পরবিরোধী সত্তার উল্লেখ রয়েছে। এখানে একদিকে তিনি যেমন ক্রূর ও ভয়ংকর (রুদ্র); অন্যদিকে তেমনই দয়ালু ও মঙ্গলময় (শিব)। এই কারণে চক্রবর্তী মনে করেন, "যে সকল মৌলিক উপাদান পরবর্তীকালে জটিল রুদ্র-শিব সম্প্রদায়ের জন্ম দিয়েছিল, তার সবই এই গ্রন্থে নিহিত রয়েছে।"[১১৩] মহাভারতেও শিব একাধারে "দুর্জেয়তা, বিশালতা ও ভয়ংকরের প্রতীক" এবং সম্মান, আনন্দ ও মহত্ত্বের দ্বারা ভূষিত।[১১৪] শিবের নানা নামের মধ্যে তার এই ভয়াল ও মঙ্গলময় সত্তার বিরোধের উল্লেখ রয়েছে।
রুদ্র (সংস্কৃত: রুদ্র) নামটি শিবের ভয়ংকর সত্ত্বার পরিচায়ক। প্রথাগত বুৎপত্তি ব্যাখ্যা অনুসারে, রুদ্র শব্দটির মূল শব্দ হল রুদ্-, যার অর্থ রোদন করা বা চিৎকার করা।[১১৫] স্টেলা ক্র্যামরিক অবশ্য এর একটি পৃথক বুৎপত্তি ব্যাখ্যা দিয়েছেন। এই ব্যাখ্যাটি বিশেষণ রৌদ্র শব্দটির সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত, যার অর্থ বন্য বা রুদ্র প্রকৃতির। এই ব্যাখ্যা অনুযায়ী, তিনি রুদ্র নামটির অর্থ করেছেন যিনি বন্য বা প্রচণ্ড দেবতা।[১১৬] এই বুৎপত্তিব্যাখ্যা অনুসারে, আর. কে. শর্মা রুদ্র শব্দের অর্থ করেছেন ভয়ংকর।[১১৭] মহাভারতের অনুশাসনপর্বের অন্তর্গত শিব সহস্রনাম স্তোত্রে শিবের হর (সংস্কৃত: हर) নামটির উল্লেখ করা হয়েছে তিন বার। এটি শিবের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ নাম। অনুশাসনপর্বে তিন বারই এই নামের উল্লেখ করা হয়েছে সম্পূর্ণ ভিন্নতর অর্থে। আর. কে. শর্মা এই তিনটি উল্লেখে হর নামটির অর্থ করেছেন "যিনি বন্দী করেন", "যিনি এক করেন" এবং "যিনি ধ্বংস করেন"।[১১৮] শিবের অপর দুই ভয়ংকর রূপ হল "কাল" (সংস্কৃত: काल) ও "মহাকাল" (সংস্কৃত: महाकाल)। এই দুই রূপে শিব সকল সৃষ্টি ধ্বংস করেন।[১১৯][১২০][১২১] ধ্বংসের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত শিবের অপর একটি রূপ হল ভৈরব (সংস্কৃত: भैरव)।[১২২] "ভৈরব" শব্দটির অর্থও হল "ভয়ানক"।[১২৩]
অপরপক্ষে শিবের শঙ্কর (সংস্কৃত: शङ्कर) নামটির অর্থ "মঙ্গলকারক"[৫২] বা "আনন্দদায়ক"।[১২৪] এই নামটি শিবের দয়ালু রূপের পরিচায়ক। বৈদান্তিক দার্শনিক আদি শঙ্কর (৭৮৮-৮২০ খ্রি.) এই সন্ন্যাসজীবনের নাম হিসেবে নামটি গ্রহণ করে শঙ্করাচার্য নামে পরিচিতি লাভ করেন।[১২৫][১২৬] একই ভাবে শম্ভু (সংস্কৃত: शम्भु) নামটির অর্থও "আনন্দদায়ক"। এই নামটিও শিবের দয়ালু রূপের পরিচায়ক।[১২৭][১২৮]
যোগী ও গৃহী সত্ত্বা
সম্পাদনাশিবকে একাধারে যোগী ও গৃহী রূপে কল্পনা করা হয়।[১২৯] যোগী শিবের মূর্তি ধ্যানরত।[১৩০] যোগশাস্ত্রের সঙ্গে তার সম্পর্কের পরিপ্রেক্ষিতে তাকে মহাযোগী নামে অভিহিত করা হয়।[১৩১] বৈদিক ধর্মে যজ্ঞের উপর অধিক গুরুত্ব আরোপ করা হলেও, মহাকাব্যিক যুগে তপস্যা, যোগ ও কৃচ্ছ্রসাধন অধিকতর গুরুত্ব পেতে শুরু করে। যোগীবেশে শিব কল্পনার আবির্ভাব তাই অপেক্ষাকৃত পরবর্তীকালে ঘটেছিল।[১৩২]
গৃহী রূপে তিনি পার্বতীর স্বামী এবং গণেশ ও কার্তিকেয় নামে দুই পুত্রের জনক। পার্বতী বা উমা তার স্ত্রী বলে তাকে উমাপতি, উমাকান্ত ও উমাধব নামেও অভিহিত করা হয়।[১৩৩][১৩৪][১৩৫] শিবের স্ত্রী পার্বতীই বিশ্বজননী বা মহাশক্তি। গৃহী রূপে শিব আপন পত্নীকে ভালবাসেন এবং শ্রদ্ধা করেন।
শিব ও পার্বতীর দুই পুত্র – কার্তিকেয় ও গণেশ। দক্ষিণ ভারতে সুব্রহ্মণ্যন, ষন্মুখন, স্বামীনাথন ও মুরুগান নামে কার্তিকেয়ের পূজা বহুল প্রচলিত; উত্তর ভারতে তিনি স্কন্দ, কুমার ও কার্তিকেয় নামেই সর্বাধিক পরিচিত।[১৩৬] শিবের স্ত্রীকে তার শক্তির উৎস মনে করা হয়।[১৩৭]
নটরাজ
সম্পাদনানটরাজ (তামিল: நடராஜா) বেশে শিবের মূর্তি অত্যন্ত জনপ্রিয়।[১৩৮][১৩৯] শিব সহস্রনামে শিবের নর্তক ও নিত্যনর্ত নামদুটি পাওয়া যায়।[১৪০] পৌরাণিক যুগ থেকেই নৃত্য ও সঙ্গীতের সঙ্গে শিবের যোগ বিদ্যমান।[১৪১] সারা ভারতে, বিশেষত তামিলনাড়ুতে, নটরাজের পাশাপাশি নৃত্যমূর্তি নামে শিবের নানান নৃত্যরত মূর্তি সারা ভারতে পাওয়া যায়।[১৪২] শিবের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত দুটি নৃত্যের নাম হল তাণ্ডব ও লাস্য। তাণ্ডব ধ্বংসাত্মক ও পুরুষালি নৃত্য; শিব কাল-মহাকাল বেশে বিশ্বধ্বংসের উদ্দেশ্যে এই নাচ নাচেন[১৪৩][১৪৪] এবং মধুর ও সুচারু নৃত্যকলা; এই আবেগময় নৃত্যকে পার্বতীর নাচ রূপে কল্পনা করা হয়।[১৪৫][১৪৬] লাস্যকে তাণ্ডবের নারীসুলভ বিকল্প মনে করা হয়।[১৪৬] তাণ্ডব ও লাস্য নৃত্য যথাক্রমে ধ্বংস ও সৃষ্টির সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত।[১৪৭][১৪৮]
সুইজারল্যান্ডের জেনেভা শহরে অবস্থিত বিশ্বের সবচেয়ে বড় ফিজিক্স ল্যাব দ্যা ইউরোপিয়ান অর্গানাইজেশন ফর নিউক্লিয়ার রিসার্চ (CERN)। এখানে রয়েছে মহাদেব শিবের একটি মূর্তি। এটিকে বলা হয় নটরাজ শিব। ভারত এই প্রতিমাটি উপহার দেয়। ২ মিটার উঁচু এই প্রতিমাটি ২০০৪ সালের ১৮ জুন বিশ্বের সবচেয়ে বড় ফিজিক্স ল্যাবে উন্মোচন করা হয়।
দক্ষিণামূর্তি
সম্পাদনাদক্ষিণামূর্তি (সংস্কৃত: दक्षिणामूर्ति)[১৪৯] শিবের একটি বিশিষ্ট রূপ। আক্ষরিকভাবে দক্ষিণামূর্তি কথাটির অর্থ দক্ষিণদিকে মুখ যাঁর। এই রূপে শিব যোগ, সঙ্গীত ও বিদ্যাচর্চার গুরু এবং শাস্ত্রের ব্যাখ্যাকর্তা।[১৫০] প্রধানত তামিলনাড়ুতে শিবের এই মূর্তি প্রচলিত।[১৫১] দক্ষিণামূর্তি শিব মৃগসিংহাসনে অধিষ্ঠিত এবং জ্ঞানপিপাসু ঋষিগণ কর্তৃক পরিবৃত।[১৫২]
মৃত্যুঞ্জয়
সম্পাদনা"মৃত্যুঞ্জয়" কথাটির আক্ষরিক অর্থ "যিনি মৃত্যুকে জয় করেছেন"। কথিত আছে, শিব মৃত্যুর দেবতা যমকে জয় করেছিলেন। একটি কিংবদন্তি অনুসারে, ঋষি মার্কণ্ডেয়ের ষোলো বছর বয়সে মৃত্যুযোগ ছিল। মার্কণ্ডেয় শিবের আরাধনা করেন। মৃত্যুকাল উপস্থিত হলে, তিনি শিবের নিকট জীবন ভিক্ষা করেন। শিব যমকে পরাজিত করে মার্কণ্ডেয়কে জীবন দান করেন।
অর্ধনারীশ্বর
সম্পাদনাঅর্ধনারীশ্বর বেশে শিব অর্ধেক পুরুষ অর্ধেক নারীদেহধারী। এই রূপের অপর একটি নাম হল "তৃতীয় প্রকৃতি"।[১৫৩] এলান গোল্ডবার্গের মতে, সংস্কৃত অর্ধনারীশ্বর কথাটির অর্থ যে দেবতা অর্ধেক নারী; অর্ধেক পুরুষ অর্ধেক নারী নয়।[১৫৪] হিন্দু দর্শনে এই রূপের ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে বলা হয়েছে, এই বিশ্বের পবিত্র পরমাশক্তি একাধারে পুরুষ ও নারীশক্তি।[১৩৭]
ত্রিপুরান্তক
সম্পাদনাএকটি পৌরাণিক উপাখ্যান অনুসারে, শিব ধনুর্ধর বেশে ত্রিপুর নামে অসুরদের তিনটি দুর্গ ধ্বংস করেন।[১৫৫] এই কারণে শিবের অপর নাম ত্রিপুরান্তক (সংস্কৃত: त्रिपुरान्तक)।[১৫৬]
শিবের এই নামটির একটি দার্শনিক ব্যাখ্যাও রয়েছে। পণ্ডিতগণ মনে করেন মানবদেহ তিন প্রকার - স্থূল শরীর বা বহিঃস্থ দেহ, সূক্ষ্ম শরীর বা মন এবং কারণ শরীর বা আত্মার চৈতন্যময় রূপ। এই তিন শরীরকে একত্রে ত্রিপুর বলা হয়। ত্রিপুরান্তক বেশে শিব মানব সত্ত্বার এই ত্রিমুখী অস্তিত্বের ধ্বংস ও বিলোপ ঘটিয়ে মানবকে পরমসত্ত্বার সঙ্গে লীন হতে সহায়তা করেন। এই বেশে তিনি মায়া ও অজ্ঞানকে ধ্বংস করে পরম চৈতন্যের সঙ্গে মানুষের মিলন ঘটান।
অষ্টমূর্তি
সম্পাদনাশিবের আটটি বিশেষ রূপকে একত্রে অষ্টমূর্তি বলে। এঁরা হলেন: ভব (অস্তিত্ব), শর্ভ (ধনুর্ধর), রুদ্র (যিনি দুঃখ ও যন্ত্রণা প্রদান করেন), পশুপতি (পশুপালক), উগ্র (ভয়ংকর), মহান বা মহাদেব (সর্বোচ্চ আত্মা), ভীম (মহাশক্তিধর) ও ঈশান (মহাবিশ্বের দিকপতি)।
শিবলিঙ্গ
সম্পাদনানৃতত্ত্বারোপিত মূর্তি ব্যতিরেকেও শিবলিঙ্গ বা লিঙ্গ-এর আকারে শিবের পূজাও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে বিবেচিত হয়।[৪৬][১৫৭][১৫৮] শিবলিঙ্গ বিভিন্ন প্রকারের হয়ে থাকে। শিব শব্দের অর্থ মঙ্গলময় এবং লিঙ্গ শব্দের অর্থ প্রতীক; এই কারণে শিবলিঙ্গ শব্দটির অর্থ সর্বমঙ্গলময় বিশ্ববিধাতার প্রতীক।[১৫৯] শিব শব্দের অপর একটি অর্থ হল যাঁর মধ্যে প্রলয়ের পর বিশ্ব নিদ্রিত থাকে;[১৫৯] এবং লিঙ্গ শব্দটির অর্থও একই – যেখানে বিশ্বধ্বংসের পর যেখানে সকল সৃষ্ট বস্তু বিলীন হয়ে যায়। যেহেতু হিন্দুধর্মের মতে, জগৎের সৃষ্টি, রক্ষা ও ধ্বংস একই ঈশ্বরের দ্বারা সম্পন্ন হয়, সেই হেতু শিবলিঙ্গ স্বয়ং ঈশ্বরের প্রতীক রূপে পরিগণিত হয়।[১৫৯] মনিয়ার-উইলিয়ামস ও ওয়েন্ডি ডনিগার প্রমুখ কয়েকজন গবেষক শিবলিঙ্গকে একটি পুরুষাঙ্গ-প্রতিম প্রতীক মনে করেন।[১৬০][১৬১] যদিও ক্রিস্টোফার ইসারহুড,[১৬২] স্বামী বিবেকানন্দ,[১৬৩] স্বামী শিবানন্দ,[১৬৪] এস. এন. বালগঙ্গাধর[১৬৫] প্রমুখ বিশেষজ্ঞগণ এই মতকে খণ্ডন করেছেন।
অথর্ববেদ সংহিতা গ্রন্থে যূপস্তম্ভ নামে একপ্রকার বলিদান স্তম্ভের স্তোত্রে প্রথম শিব-লিঙ্গ পূজার কথা জানা যায়। এই স্তোত্রের আদি ও অন্তহীন এক স্তম্ভ বা স্কম্ভ-এর বর্ণনা পাওয়া যায়। এই স্কম্ভ-টি চিরন্তন ব্রহ্মের স্থলে স্থাপিত। যজ্ঞের আগুন, ধোঁয়া, ছাই, সোম লতা, এবং যজ্ঞকাষ্ঠবাহী ষাঁড়ের ধারণাটির থেকে শিবের উজ্জ্বল দেহ, তার জটাজাল, নীলকণ্ঠ ও বাহন বৃষের একটি ধারণা পাওয়া যায়। তাই মনে করা হয়, উক্ত যূপস্তম্ভই কালক্রমে শিবলিঙ্গের রূপ ধারণ করেছে।[১৬৬][১৬৭] লিঙ্গপুরাণ গ্রন্থে এই স্তোত্রটিই উপাখ্যানের আকারে বিবৃত হয়েছে। এই উপাখ্যানে কীর্তিত হয়েছে সেই মহাস্তম্ভ ও মহাদেব রূপে শিবের মাহাত্ম্য্য।[১৬৭]
পঞ্চমন্ত্র
সম্পাদনাশিবের পবিত্র সংখ্যা হল পাঁচ।[১৬৮] তার সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রগুলির একটি (নমঃ শিবায়) পাঁচটি অক্ষর দ্বারা গঠিত।[১৬৯]
কথিত আছে, শিবের শরীর পাঁচটি মন্ত্র দ্বারা গঠিত। এগুলিকে বলা হয় পঞ্চব্রহ্মণ।[১৭০] দেবতা রূপে এই পাঁচটি মন্ত্রের নিজস্ব নাম ও মূর্তিতত্ত্ব বর্তমান:[১৭১]
শিবের মূর্তি এই পাঁচটি রূপ পঞ্চাননের আকারে কল্পিত হয়। বিভিন্ন শাস্ত্রে এই পাঁচটি রূপ পঞ্চভূত, পঞ্চ জ্ঞানেন্দ্রিয় ও পঞ্চ কর্মেন্দ্রিয়ের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত।[১৭২][১৭৩] তবে এই পাঁচটি রূপের বর্ণনা প্রসঙ্গে পণ্ডিতদের মধ্যে মতবিরোধ রয়েছে।[১৭৪] স্টেলা ক্র্যামরিক এই সম্মিলনের সামগ্রিক অর্থ সম্পর্কে মন্তব্য করেছেন:
এই অতীন্দ্রিয় শ্রেণীগুলির মাধ্যমে, শিব, চূড়ান্ত বাস্তবতা, সমস্ত কিছুর কার্যকরী এবং বস্তুগত কারণ হয়ে ওঠে।[১৭৫]
অন্যদিকে পঞ্চব্রহ্মণ উপনিষদ মতে:
জানবে, পার্থিব জগৎের সকল বস্তুর পঞ্চমুখী চরিত্র বিদ্যমান। এর কারণ পঞ্চমুখী ব্রহ্মের চরিত্রবৈশিষ্ট্যরূপে শিবের চিরন্তন বৈচিত্র্য। (পঞ্চব্রহ্মণ উপনিষদ ৩১)[১৭৬]
শিব লিঙ্গ পূজার তাৎপর্য কি? শিব পূজা দু'রকম ভাবেই হয়। মূর্তি এবং লিঙ্গ। পূবেই বলা হয়েছে লিঙ্গ শব্দে অনেক গুলো অর্থ আছে। লিঙ্গ শব্দের অর্থ চিহ্ন বা প্রতীক। সাকার রূপে এরূপ লিঙ্গ শরীর বা চিহ্ন আমরা সর্বত্রই ব্যবহার করি। একটি দেশের পরিচয় বহন করে একটি পতাকা। বিষ্ণুমন্ত্রের যারা অনুসারী তাদের পরিচয় তারা দেন দেহতে তিলক ফোঁটা অঙ্কিত করে। ঘটে আমরা দেবদেবীর পুত্তলী এঁকে দেবতার চিহ্ন বা প্রতীক বসাই। এরূপ দুটি প্রতীক বা লিঙ্গ বা চিহ্ন আমরা পূজায় ব্যবহার করি। একটি শিব লিঙ্গ আরেকটি নারায়ণ শিলা। শিব লিঙ্গের গঠন প্রণালী সহজ হওয়ায় মূর্তি তৈরী থেকে লিঙ্গ পূজায় আমরা আগ্রহী বেশি। মাটি দিয়ে অতি সহজে অল্প সময়ে এ প্রতীক তৈরী করা যায় এবং পূজান্তে বিসর্জনও দেয়া যায়। কিন্তু প্রতীকটির নাম লিঙ্গ দেয়াতে আমাদের মধ্যে এ নিয়ে নীল সাহিত্য গড়ে উঠেছে যা সত্যিই দু:খজনক। অথচ একই প্রতীক ব্যবহৃত হচ্ছে নারায়ণ পূজায়, তাকে নিয়ে এরূপ আচারণ আমরা করি না। বিশেষ করে শিব-এর সঙ্গে সৃষ্টির কার্যক্রম যুক্ত থাকাতে আমরা লিঙ্গ শব্দটিকে একেবারে পার্থিব কাজের সঙ্গে মিলিয়ে দিয়েছি। এ বিভ্রান্তি থেকে আমাদের মুক্ত হতে হবে এবং আমাদের শিবত্বে উন্নীত হতে হবে।
হরিহর
সম্পাদনাবৈদিক যুগে নারায়ণরূপী বিষ্ণু ও রুদ্ররূপী শিব ছিলেন অপেক্ষাকৃত অপ্রধান দেবতা। তবে ব্রাহ্মণ (১০০০-৭০০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দ) রচনার সময় থেকেই তাদের গুরুত্ব বৃদ্ধি পেতে থাকে।[১৭৭] পৌরাণিক যুগে দুই দেবতাকে কেন্দ্র করেই পৃথক সম্প্রদায় গড়ে ওঠে। এই সম্প্রদায়গুলি ভক্ত টানবার লক্ষ্যে পরস্পরের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় অবতীর্ণ হয়।[১৭৮] ফলত এই দুই প্রধান দেবতার পারস্পরিক সম্পর্কটি বর্ণনা করার জন্য রচিত হয় একাধিক ভিন্নধর্মী কাহিনি।
প্রত্যেক সম্প্রদায়ই নিজ নিজ দেবতাকে সর্বোচ্চ দেবতা রূপে উপস্থাপিত করে। এইভাবে বিষ্ণুকেন্দ্রিক পৌরাণিক সাহিত্যে বিষ্ণু শিবে "পরিণত হন"।[১৭৯] বিষ্ণুপুরাণ (খ্রিষ্টীয় চতুর্থ শতাব্দী) গ্রন্থের উপাখ্যান অনুসারে, বিষ্ণু জাগরিত হয়ে বিশ্ব সৃষ্টির জন্য ব্রহ্মা এবং তা ধ্বংসের জন্য শিবে রূপান্তরিত হয়েছিলেন।[১৮০] ভাগবত পুরাণ অনুসারে, শিব বিষ্ণুরই একটি রূপ মাত্র।[১৮১] অন্যদিকে শিবকেন্দ্রিক পৌরাণিক সাহিত্যে দেখা যায়, শিব একাই এবং স্বাধীনভাবেই বিশ্ব সৃষ্টি, রক্ষা ও ধ্বংস করছেন।[১৮২] শিবলিঙ্গের উৎপত্তি সংক্রান্ত শিব পুরাণ আছে, জ্যোতির্লিঙ্গরূপী শিবের দেহ থেকেই বিষ্ণু ও ব্রহ্মার উৎপত্তি হয়েছিল।[১৮৩] শৈব শতরুদ্রীয় স্তোত্রে শিবকে "বিষ্ণুরূপী"-ও বলা হয়েছে।[১৮৪] শরভের উপাখ্যানে দুই দেবতার পারস্পরিক সম্পর্ক প্রসঙ্গে দুই সম্প্রদায়ের মতবাদের পার্থক্যটি সুষ্পষ্ট হয়। উক্ত কাহিনিতে শিব একাধারে মানুষ, পাখি ও পশুর রূপে অবতীর্ণ হয়েছিলেন। হিরণ্যকশিপু বধের জন্য নৃসিংহ রূপে অবতার গ্রহণের জন্য বিষ্ণুকে ভর্ৎসনা করার লক্ষ্যেই শিব উক্ত রূপে অবতীর্ণ হন।[১৮৫][১৮৬] যদিও বৈষ্ণব ও বিজয়ীন্দ্র তীর্থ (১৫৩৯-৯৫) প্রমুখ দ্বৈতবাদী পণ্ডিতেরা তাদের সাত্ত্বিক পুরাণ ও শ্রুতি পাঠের ভিত্তিতে নৃসিংহ অবতার সম্পর্কে মতবিরোধ পোষণ করতেন।[১৮৭]
বিভিন্ন সমন্বয়বাদী গোষ্ঠী অবশ্য দুই দেবতার পারস্পরিক মধুর ও সহযোগিতাপূর্ণ সম্পর্কের কথাই বলে থাকেন। এই সকল গোষ্ঠীর মতবাদে হরিহর নামে এক দেবতার অস্তিত্ব লক্ষিত হয়। ইনি বিষ্ণু (হরি) ও শিব (হর)-এর সম্মিলিত রূপ।[১৮৮] এই রূপ হরিরুদ্র নামেও পরিচিত। মহাভারতে এই রূপের উল্লেখ রয়েছে।[১৮৯] শিবের মহাবলেশ্বর নামটির উৎপত্তি আখ্যানটি হল এই জাতীয় সমন্বয়মূলক কাহিনির একটি উদাহরণ। এই আখ্যান অনুযায়ী, শিব রাবণকে বরস্বরূপ একটি শিবলিঙ্গ প্রদান করেছিলেন। শর্ত ছিল লিঙ্গটি রাবণকে সর্বদা বহন করতে হবে। একটি স্থানে এসে রাবণ মূত্রত্যাগ করার জন্য ব্রাহ্মণের ছদ্মবেশধারী বিষ্ণুভক্ত নারদকে লিঙ্গটি কিছুক্ষণের জন্য ধরতে বলেন। নারদ এটি মাটিতে রেখে অদৃশ্য হয়ে যান। রাবণ ফিরে এসে লিঙ্গটি স্থানান্তরে অসমর্থ হন এবং সেই থেকে লিঙ্গটি সেই স্থানেই থেকে যায়। কথিত আছে, এই স্থানটি হল অধুনা ঝাড়খণ্ড রাজ্যের দেওঘর।[১৯০] কর্ণাটকের গোকর্ণের কাহিনিটিও কতকটা একই প্রকার। এই আখ্যানে দেখা যায়, কৈলাস থেকে লঙ্কায় প্রত্যাবর্তন কালে রাবণ গণেশকে একটি শিবলিঙ্গ ধরতে দিয়ে স্নান করতে যান। কিন্তু গণেশ সেটি ভূমিতে স্থাপন করেন। এই কারণে লিঙ্গটির নাম হয় মহাবলেশ্বর।
অপর একটি কাহিনি অনুসারে, শিব বিষ্ণুর নারী অবতার মোহিনীর রূপে মুগ্ধ হয়ে তার সঙ্গে মিলিত হন। উভয়ের মিলনের ফলে আয়াপ্পার জন্ম হয়। এই আয়াপ্পা শাস্তা বা আয়ানারের সমরূপীয়। একদল উদ্ধত ঋষিকে শিক্ষা দেবার সময়ও মোহিনী শিবের সেবা করেন।
শিবের বিভিন্ন নাম
সম্পাদনাশিবকে বিভিন্ন নামে ডাকা হয়ে থাকে। অন্য সকল দেবতার মত তারও ১০৮ নাম রয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম হল - মহাদেব, শিব, নটরাজ, শম্ভু, পশুপতি, নীলকণ্ঠ, চিন্তামণি, মহেশ্বর, রুদ্র, গৌরিপতি, মাতাঙ্গেশ্বর, মহাশম্বরানন্দ ভৈরব, রাক্ষসেশ্বর, ভীমেশ্বর, শৈলেন্দ্রেশ্বর, কোটেশ্বর মহাদেব, কালভৌরব, জগন্নাথদেব, মল্লিকার্জুন, অ্যাকাম্রনাথ, সিদ্ধিনাথ, বাল্ব্রক্ষেশ্বর, লম্বকর্ণ, চামুণ্ডেশ্বর, মহাকাল, ভুবনেশ্বর, বগলামুখেশ্বর, সতীপতি, ত্রিপুরারি, তীর্থরাজ, সদাশিব, যোগীশ্বর ইত্যাদি।
শিবের অন্যান্য পুত্র
সম্পাদনাহিন্দু মাত্রেই জানেন শিবের পুত্রের সংখ্যা দুই। কার্তিক বা ষড়ানন আর গণেশ বা গজানন। কিন্তু, ‘শিব পুরাণ’ জানাচ্ছে, শিবের মোট পুত্রসংখ্যা ৬। এই পুত্রেরা কেউই কিন্তু পার্বতীর সন্তান নন। শিবের বিভিন্ন লীলার সময়ে তাদের জন্ম হয়েছিল। কার্তিক-গণেশ ছাড়াও বাকি চার পুত্রের সন্ধান রইল এখানে।
• আয়াপ্পান— অসুরদের হাত থেকে অমৃতকে বাঁচানোর জন্য বিষ্ণু মোহিনীরূপ ধারণ করেন। শিব মোহিনীর সৌন্দর্যে বশীভূত, মনোমুগ্ধকর ও মোহিত হন। মোহিনীর সাথে মিলিত হওয়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু তার আগেই তার বীর্য স্খলন হয়ে মাটিতে পরে। সেখান থেকেই আয়াপ্পানের জন্ম হয়। দক্ষিণ ভারতে আইপ্পানকে গুরুত্বপূর্ণ দেবতা বলেই মনে করা হয়। তাকে হরি ও হরের সম্মিলিত রূপ বলে মনে করা হয়।
• অন্ধকাসুর— দানবরাজ হিরণ্যাক্ষ পুত্রহীন ছিলেন। তিনি পুত্রলাভের আশায় শিব তপস্যা করেন। শিব তাকে এক পুত্রসন্তান প্রদান করেন। জন্মান্ধ সেই পুত্রের নাম ছিল অন্ধকাসুর। পরে অন্ধকাসুর পার্বতীকে অনৈতিকভাবে অধিকার করতে চাইলে স্বয়ং শিবই তাকে হত্যা করেন।
• ভৌম— শিবের স্বেদবিন্দু ভূমিতে পড়েই ভৌমের জন্ম হয়েছিল। শিব তখন গভীর ধ্যানে মগ্ন ছিলেন। ভূমিদেবীই ভৌমকে পালন করেন। পরে শিব ভৌমের কথা জানতে পারেন এবং তাকে পুত্র হিসেবে স্বীকার করে নেন।
• খুজ— একবার গভীর ধ্যানে মগ্ন অবস্থায় শিবের দেহ থেকে তীব্র জ্যোতি বিকীর্ণ হতে থাকে। সেই জ্যোতি ভূমিতে প্রবিষ্ট হলে খুজের জন্ম হয়। তাকে লৌহের দেবতা বলে মনে করা হয়।
অবতার
সম্পাদনালোকবিশ্বাস অনুসারে, হিন্দুধর্মের অন্যান্য দেবদেবীদের মতো শিবেরও একাধিক অবতার বিদ্যমান। তবে পুরাণ শাস্ত্রে শিবের অবতারের উল্লেখ থাকলেও, এই অবতারতত্ত্ব শৈবধর্মে স্বীকৃত নয়।[১৯১]
- আদি শঙ্কর, খ্রিষ্টীয় অষ্টম শতাব্দীতে বর্তমান অদ্বৈত বেদান্ত প্রবক্তা। কোনো কোনো শাস্ত্রে তাকে শিবের অবতার বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
- হনুমান চালিশা স্তোত্রে হনুমানকে শিবের একাদশ অবতার বলা হয়েছে, তবে এই মত সর্বজনস্বীকৃত নয়।[১৯২]
উৎসব
সম্পাদনাপ্রতি বছর হিন্দু পঞ্জিকা অনুযায়ী ফাল্গুন মাসের কৃষ্ণ চতুর্দশী তিথিতে শিবরাত্রি উৎসব উদযাপিত হয়। এই উৎসব হিন্দুদের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উৎসব। এই দিন ভক্তের শিবের মস্তকে ফল, ফুল ও বিল্বপত্র অর্পণ করে।
চৈত্রসংক্রান্তির দিন বাংলায় শিবকেন্দ্রিক একটি বিশেষ উৎসব পালিত হয়। এটি চড়ক উৎসব নামে পরিচিত। এটি পৌরাণিক উৎসব নয়, লোকউৎসব। গাজন এই উৎসবের অন্যতম বৈশিষ্ট্য।[১৯৩]
মন্দির
সম্পাদনাভারতীয় উপমহাদেশে অনেক শিবমন্দির রয়েছে। এগুলির মধ্যে জ্যোতির্লিঙ্গ মন্দিরগুলি সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ।
জ্যোতির্লিঙ্গ মন্দির
সম্পাদনাশিবের সর্বাপেক্ষা পবিত্র মন্দির হল দ্বাদশ জ্যোতির্লিঙ্গ মন্দির। এগুলি হল:
জ্যোতির্লিঙ্গ | অবস্থান | |
---|---|---|
সোমনাথ | প্রভাস পাটন, বেরাবলের নিকট, গুজরাত | |
মল্লিকার্জুন | শ্রীশৈলম, অন্ধ্রপ্রদেশ | |
মহাকালেশ্বর | উজ্জ্বয়িনী, মধ্যপ্রদেশ | |
ওঙ্কারেশ্বর | ইন্দোরের নিকটস্থ, মধ্যপ্রদেশ | |
কেদারনাথ | কেদারনাথ, উত্তরাখণ্ড | |
ভীমাশঙ্কর | বিতর্কিত:
| |
কাশী বিশ্বনাথ | বারাণসী, উত্তরপ্রদেশ | |
ত্র্যম্বকেশ্বর | ত্র্যম্বক, নাসিক, মহারাষ্ট্র | |
রামনাথস্বামী | রামেশ্বরম, তামিলনাড়ু | |
ঘৃষ্ণেশ্বর | ইলোরা, মহারাষ্ট্র | |
বৈদ্যনাথ | বিতর্কিত:
| |
নাগেশ্বর | বিতর্কিত:
|
শিবতান্ডবস্তোত্র
সম্পাদনাভগবান শিবের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ স্তোত্রগুলির মধ্যে একটি হলো 'শিবতাণ্ডবস্তোত্র'। বিশ্বাস করা হয় যে, রাজা রাবণ ছিলেন শিবের একনিষ্ঠ ভক্ত। শিবের অনুসারীগণ মনে করেন যে, রাবণ এই স্তোত্রটি রচনা করেন এবং তিনিই প্রথম এটি পাঠ করেন।
সেই মুহূর্তে রাবণকে শিক্ষা দেয়ার জন্য ভগবান শিব তার পায়ের আঙুল দিয়ে কৈলাস পর্বতকে প্রচন্ড শক্তিতে চেপে ধরলেন। পর্বতের চাপে রাবণের হাত পিষে যেতে থাকল। যন্ত্রণায় রাবণ চিৎকার করতে লাগলেন। সেই চিৎকার ত্রিলোকের (স্বর্গ, পৃথ্বী, পাতাল) সব যায়গা থেকে শোনা গেল। সংস্কৃতে এই চিৎকারের ধ্বণিকে বলে 'রব'। সেই রব শুনে মহর্ষি নারদ সেখানে উপস্থিত হলেন। তিনি সেই অবস্থা থেকে পরিত্রাণের জন্য রাবনকে শিবের আরাধনা করতে পরামর্শ দিলেন। মহর্ষি নারদের পরামর্শ অনুযায়ী রাবন চৌদ্দ দিন ধরে শিব মন্ত্র পাঠ করতে থাকলেন। এরপর প্রদোষকালে (সূর্যোদয়ের পূর্বে একঘন্টা ও সূর্যাস্তের পরে একঘন্টার মধ্যের সময়) শিব তান্ডব স্তোত্র পাঠ করতে থাকলেন। যাদুকরী সেই স্তোত্র পাঠ ত্রিভুবনের সব যায়গা থেকে শোনা গেলো। শিবের সৌন্দর্য ও প্রশংসা সংবলিত সেই স্তোত্র শুনে সবাই মুগ্ধ হল।
স্তোত্র পাঠ শেষ হলে ভগবান শিব রাবনের প্রতি অত্যন্ত সন্তুষ্ট হয়ে কৈলাস থেকে নেমে এলেন এবং তাঁর নাম দিলেন রাবন। এর আগে রাবনকে দশানন (দশ মাথা যার) বলে ডাকা হতো। রাবন ছিলেন সত্যিকারের একজন বেদজ্ঞ এবং দেবী সরস্বতীর আশির্বাদধন্য। যথাযথ সুর ও ছন্দের সমন্বয়ে তৈরি শিব তান্ডব স্তোত্র পাঠ শুনে রাবনের প্রতি ভগবান শিব এতটাই সন্তুষ্ট হলেন যে, তখন তাঁকে তিনি অতি দূর্লভ চন্দ্রহাস তরবারি দান করলেন।
শিবের অনুসারীগণ বিশ্বাস করেন, শিবের অন্যান্য স্তোত্রের মত শিব তান্ডব স্তোত্রও সবার পাঠ করা উচিত। তাদের মতে, এই স্তোত্রের যাদুকরী ক্ষমতা রয়েছে। তাই আমাদের শারীরিক, মানসিক ও আত্মিক উন্নতিতে এই স্তোত্র সঠিক নিয়মে এবং ভগবান শিবের প্রতি পূর্ণ ভক্তি নিয়ে পাঠ করা উচিত। তাছাড়া এই স্তোত্র পাঠে আমাদের সুখ, সমৃদ্ধি ও শক্তি বৃদ্ধি পায় এবং আমরা আমাদের মধ্যে শিবের উপস্থিতি অনুভব করি। যে কোন সময় শিব তান্ডব স্তোত্র পাঠ ও শ্রবণ করা যায়, তবে প্রদোষকালে এই স্তোত্র পাঠ করাই উত্তম।
আরও দেখুন
সম্পাদনা- শৈবধর্ম
- শিবপূজা
- শিবপুরাণ
- দাক্ষায়ণী
- পার্বতী
- অন্নপূর্ণা (দেবী)
- হনুমান
- শিবমহিম্নস্তোত্রম্
- পরমেশ্বর
পাদটীকা
সম্পাদনা- ↑ ক খ গ Zimmer (1972) p. 124.
- ↑ ক খ গ See Fuller, The Camphor Flame, pp 58.
- ↑ Joanna Gottfried Williams (১৯৮১)। Kalādarśana: American Studies in the Art of India। BRILL Academic। পৃষ্ঠা 62। আইএসবিএন 90-04-06498-2। ৭ নভেম্বর ২০২০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০ জুলাই ২০২০।
- ↑ Denise Cush; Catherine A. Robinson; Michael York (২০০৮)। Encyclopedia of Hinduism। Routledge। পৃষ্ঠা 78। আইএসবিএন 978-0-7007-1267-0। ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০ জুলাই ২০২০।
- ↑ ক খ Flood (1996), p. 17.
- ↑ Tattwananda, p. 45.
- ↑ See Parmeshvaranand, Volume 3.
- ↑ See Kramrisch, The presence of Siva, page 186.
- ↑ See Abhayananda, page 95.
- ↑ See Davis, pp 113-114.
- ↑ Chatterji, Kashmir Shaivism.
- ↑ Sharma, Iconography of Sadasiva
- ↑ See Shiva Samhita, e.g. translation by Mallinson.
- ↑ Yoga and the Hindu Tradition, Varenne, page 82.
- ↑ See Marchand for Jnana Yoga.
- ↑ Davis writes on page 122: "The Saiva worshipper does not worship the object itself as Siva or as representing Siva; he directs his worship toward it as the physical support for Siva's special presence."
- ↑ Hinduism: Beliefs and Practices, by Jeanne Fowler, pgs. 42–43, In traditional Indian society, the linga is rather seen as a symbol of the energy and potentiality of the god.
- ↑ "125 Hindus from India arrive in Pakistan for Maha Shivratri"। The Times of India। মার্চ ৫, ২০১৬। এপ্রিল ৮, ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ জুন ১৭, ২০১৬।
- ↑ Flood 1996, পৃ. 17।
- ↑ ক খ Keay, p.xxvii.
- ↑ Apte, p. 919.
- ↑ ক খ Macdonell, p. 314.
- ↑ For use of the term śiva as an epithet for other Vedic deities, see: Chakravarti, p. 28.
- ↑ Apte, p. 927
- ↑ For the definition "Śaivism refers to the traditions which follow the teachings of Śiva (śivaśāna) and which focus on the deity Śiva... " see: Flood (1996), p. 149.
- ↑ Sri Vishnu Sahasranama, Ramakrishna Math edition, pg.47 and pg. 122.
- ↑ Swami Chinmayananda's translation of Vishnu sahasranama, pg. 24, Central Chinmaya Mission Trust.
- ↑ Sharma 1996, পৃ. viii-ix
- ↑ This is the source for the version presented in Chidbhavananda, who refers to it being from the Mahabharata but does not explicitly clairify which of the two Mahabharata versions he is using. See Chidbhavananda, p.5.
- ↑ For an overview of the Śatarudriya see: Kramrisch, pp. 71-74.
- ↑ For complete Sanskrit text, translations, and commentary see: Sivaramamurti (1976).
- ↑ Flood (1996), p. 17
- ↑ Keay, p. xxvii.
- ↑ For Shiva as a composite deity whose history is not well-documented, see: Keay, p. 147.
- ↑ Michaels, p. 215.
- ↑ ক খ গ Courtright, p. 205.
- ↑ For Jejuri as the foremost center of worship see: Mate, p. 162.
- ↑ 'Khandoba: Ursprung, Geschiche und Umvelt von Pastoralem Gotheiten in Maharashtra, Wiesbaden 1976 (German with English Synopsis) pp. 180-98, "Khandoba is a local deity in Maharashtra and been Sanskritised as an incarnation of Shiva."
- ↑ For worship of Khandoba in the form of a lingam and possible identification with Shiva based on that, see: Mate, p. 176.
- ↑ For use of the name Khandoba as a name for Karttikeya in Maharashtra, see: Gupta, Preface, and p. 40.
- ↑ ক খ Flood (1996), pp. 28-29.
- ↑ For a drawing of the seal see Figure 1 in: Flood (1996), p. 29.
- ↑ For translation of paśupati as "Lord of Animals" see: Michaels, p. 312.
- ↑ Flood (2003), pp. 204-205.
- ↑ Keay, p. 14.
- ↑ ক খ Michaels, p. 216.
- ↑ For dating based on "cumulative evidence" see: Oberlies, p. 158.
- ↑ Doniger, pp. 221-223.
- ↑ Michaels, p. 217.
- ↑ For Śarva as a name of Shiva see: Apte, p. 910.
- ↑ For archer and arrow associations see Kramrisch, Chapter 2, and for the arrow as an "essential attribute" see: Kramrisch, p. 32.
- ↑ ক খ গ Sharma 1996, পৃ. 306
- ↑ For root śarv- see: Apte, p. 910.
- ↑ ক খ Chidbhavananda, p. 33.
- ↑ For translation of Bāṇahasta as "Armed with arrows in his hands") see: Sharma 1996, পৃ. 294.
- ↑ For Shiva being identified with Agni, Indra, Prajāpati, Vāyu, and others see: Chakravarti, p. 70.
- ↑ For general statement of the close relationship, and example shared epithets, see: Sivaramamurti, p. 11.
- ↑ For an overview of the Rudra-Fire complex of ideas, see: Kramrisch, pp. 15-19.
- ↑ For quotation "An important factor in the process of Rudra's growth is his identification with Agni in the Vedic literature and this identification contributed much to the transformation of his character as Rudra-Śiva." see: Chakravarti, p. 17.
- ↑ For translation from Nirukta 10.7, see: Sarup (1927), p. 155.
- ↑ Kramrisch, p. 18.
- ↑ For "Note Agni-Rudra concept fused" in epithets Sasipañjara and Tivaṣīmati see: Sivaramamurti, p. 45.
- ↑ "Rig Veda: Rig-Veda, Book 6: HYMN XLVIII. Agni and Others"। ২৫ মার্চ ২০১০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১১ ফেব্রুয়ারি ২০১০।
- ↑ For the parallel between the horns of Agni as bull, and Rudra, see: Chakravarti, p. 89.
- ↑ RV 8.49; 10.155.
- ↑ For flaming hair of Agni and Bhairava see: Sivaramamurti, p. 11.
- ↑ For text of RV 2.20.3a as स नो युवेन्द्रो जोहूत्रः सखा िशवो नरामस्तु पाता। and translation as "May that young adorable Indra, ever be the friend, the benefactor, and protector of us, his worshipper" see: Arya & Joshi (2001), p. 48, volume 2.
- ↑ For text of RV 6.45.17 as यो गृणतामिदासिथापिरूती शिवः सखा। स त्वं न इन्द्र मृलय॥ and translation as "Indra, who has ever been the friend of those who praise you, and the insurer of their happiness by your protection, grant us felicity" see: Arya & Joshi (2001), p. 91, volume 3.
- ↑ For translation of RV 6.45.17 as "Thou who hast been the singers' Friend, a Friend auspicious with thine aid, As such, O Indra, favour us" see: Griffith 1973, পৃ. 310.
- ↑ For text of RV 8.93.3 as स न इन्द्रः सिवः सखाश्चावद् गोमद्यवमत्। उरूधारेव दोहते॥ and translation as "May Indra, our auspicious friend, milk for us, like a richly-streaming (cow), wealth of horses, kine, and barley" see: Arya & Joshi (2001), p. 48, volume 2.
- ↑ For Shiva as depicted with a third eye, and mention of the story of the destruction of Kama with it, see: Flood (1996), p. 151.
- ↑ For a review of theories about the meaning of tryambaka, see: Chakravarti, pp.37-39.
- ↑ For usage of the word ambaka in classical Sanskrit and connection to the Mahabharata depiction, see: Chakravarti, pp. 38-39.
- ↑ For translation of Tryambakam as "having three mothers" and as an epithet of Rudra, see: Kramrisch, p. 483.
- ↑ For vedic Sanskrit meaning and "having three mothers" as the translation of Max Müller and Macdonell, see: Chakravarti, pp. 37-38.
- ↑ For discussion of the problems in translation of this name, and the hypothesis regarding the Ambikās see: Hopkins (1968), p. 220.
- ↑ For the Ambikā variant, see: Chakravarti, pp. 17, 37.
- ↑ For the moon on the forehead see: Chakravarti, p. 109.
- ↑ For śekhara as crest or crown, see: Apte, p. 926.
- ↑ For Chandraśekhara as an iconographic form, see: Sivaramamurti (1976), p. 56.
- ↑ For translation "Having the moon as his crest" see: Kramrisch, p. 472.
- ↑ For the moon iconography as marking the rise of Rudra-Shiva, see: Chakravarti, p. 58.
- ↑ For discussion of the linkages between Soma, Moon, and Rudra, and citation to RV 7.74, see: Chakravarti, pp. 57-58.
- ↑ ক খ গ ঘ Flood (1996), p. 151.
- ↑ Flood (1996), pp. 92, 161.
- ↑ Flood (1996), p. 161.
- ↑ Chidbhavananda, p. 23.
- ↑ Chidbhavananda, p. 22.
- ↑ Kramrisch, p. 475.
- ↑ For Kapardin as a name of Shiva, and description of the kaparda hair style, see, Macdonell, p. 62.
- ↑ For Shiva drinking the poison churned from the world ocean see: Flood (1996), p. 78.
- ↑ Kramrisch, p. 473.
- ↑ Sharma 1996, পৃ. 290
- ↑ See: name #93 in Chidbhavananda, p. 31.
- ↑ Ziegenbalg, Bartholomaeus (৮৬৯)। Genealogy of the South-Indian Gods। Germann1। পৃষ্ঠা 151। অজানা প্যারামিটার
|coauthors=
উপেক্ষা করা হয়েছে (|author=
ব্যবহারের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে) (সাহায্য) - ↑ For Shiva supporting Gangā upon his head, see: Kramrisch, p. 473.
- ↑ For alternate stories about this feature, and use of the name Gaṅgādhara see: Chakravarti, pp. 59 and 109.
- ↑ For description of the Gaṅgādhara form, see: Sivaramamurti (1976), p. 8.
- ↑ "Mythology ~ The birth of Brahmarishis"। ২০০৮-০৪-০৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০০৮-০৫-০৭।
- ↑ Flood (1996), p. 151
- ↑ Michaels, p. 218.
- ↑ For definition and shape, see: Apte, p. 461.
- ↑ Jansen, p. 44.
- ↑ Jansen, p. 25.
- ↑ For use by Kāpālikas, see: Apte, p. 461.
- ↑ For a review of issues related to the evolution of the bull (Nandin) as Shiva's mount, see: Chakravarti, pp. 99-105.
- ↑ For spelling of alternate proper names Nandī and Nandin see: Stutley, p. 98.
- ↑ ক খ Sharma 1996, পৃ. 291
- ↑ Kramrisch, p. 479.
- ↑ Dictionary of Hindu Lore and Legend (আইএসবিএন ০-৫০০-৫১০৮৮-১) by Anna L. Dallapiccola
- ↑ For identification of Mount Kailāsa as the central linga, see: Stutley (1985), p. 62.
- ↑ Keay, p. 33.
- ↑ For quotation regarding Yajur Veda as containing contrary sets of attributes, and marking point for emergence of all basic elements of later sect forms, see: Chakravarti, p. 7.
- ↑ For summary of Shiva's contrasting depictions in the Mahabharata, see: Sharma 1988, পৃ. 20-21.
- ↑ For rud- meaning "cry, howl" as a traditional etymology see: Kramrisch, p. 5.
- ↑ Citation to M. Mayrhofer, Concise Etymological Sanskrit Dictionary, s.v. "rudra", is provided in: Kramrisch, p. 5.
- ↑ Sharma 1996, পৃ. 301.
- ↑ Sharma 1996, পৃ. 314.
- ↑ For translation of Mahākāla as "Time beyond time" see: Kramrisch, p. 476.
- ↑ For the name Kāla translated as "time; death", see: Kramrisch, p. 474.
- ↑ The name Kāla appears in the Shiva Sahasranama, where it is translated by Ram Karan Sharma as "(The Supreme Lord of) Time". See: Sharma 1996, পৃ. 280.
- ↑ For Bhairava form as associated with terror see: Kramrisch, p. 471.
- ↑ For भैरव as one of the eight forms of Shiva, and translation of the adjectival form as "terrible" or "frightful" see: Apte, p. 727, left column.
- ↑ Kramrisch, p. 481.
- ↑ For adoption of the name Śaṇkara by Shankaracarya see: Kramrisch, p. 481.
- ↑ For dating Shankaracharya as 788-820 CE see: Flood (1996), p. 92.
- ↑ For translation of Śambhu as "Causing Happiness" see: Kramrisch, p. 481.
- ↑ For speculation on the possible etymology of this name, see: Chakravarti, pp. 28 (note 7), and p. 177.
- ↑ For the contrast beteween ascetic and householder depictions, see: Flood (1996), pp. 150-151.
- ↑ For Shiva's representation as a yogin, see: Chakravarti, p. 32.
- ↑ For name Mahāyogi and associations with yoga, see, Chakravarti, pp. 23, 32, 150.
- ↑ For the ascetic yogin form as reflecting Epic period influences, see: Chakravarti, p. 32.
- ↑ For Umāpati, Umākānta and Umādhava as names in the Shiva Sahasranama literature, see: Sharma 1996, পৃ. 278.
- ↑ For Umā as the oldest name, and variants including Pārvatī, see: Chakravarti, p. 40.
- ↑ For Pārvatī identified as the wife of Shiva, see: Kramrisch, p. 479.
- ↑ For regional name variants of Karttikeya see: Gupta, Preface.
- ↑ ক খ Search for Meaning By Antonio R. Gualtieri
- ↑ For description of the nataraja form see: Jansen, pp. 110-111.
- ↑ For interpretation of the naṭarāja form see: Zimmer, pp. 151-157.
- ↑ For names Nartaka (Sanskrit नर्तक) and Nityanarta (Sanskrit नित्यनर्त) as names of Shiva, see: Sharma 1996, পৃ. 289.
- ↑ For prominence of these associations in puranic times, see: Chakravarti, p. 62.
- ↑ For popularity of the nṛtyamūrti and prevalence in South India, see: Chakravarti, p. 63.
- ↑ Kramrisch, Stella (১৯৯৪)। "Siva's Dance"। The Presence of Siva। Princeton University Press। পৃষ্ঠা 439।
- ↑ Klostermaier, Klaus K. (১৯৮৪)। "Shiva the Dancer"। Mythologies and Philosophies of Salvation in the Theistic Traditions of India। Wilfrid Laurier Univ. Press। পৃষ্ঠা 151।
- ↑ Massey, Reginald (১৯৯৯)। "India's Kathak Dance"। India's Kathak Dance, Past Present, Future। Abhinav Publications। পৃষ্ঠা 8।
- ↑ ক খ Moorthy, Vijaya (২০০১)। Romance of the Raga। Abhinav Publications। পৃষ্ঠা 96।
- ↑ Leeming, David Adams (২০০১)। A Dictionary of Asian Mythology। Oxford University Press। পৃষ্ঠা 45।
- ↑ Radha, Sivananda (১৯৯২)। "Mantra of Muladhara Chakra"। Kuṇḍalinī Yoga। Motilal Banarsidass Publ.,। পৃষ্ঠা 304।
- ↑ For iconographic description of the Dakṣiṇāmūrti form, see: Sivaramamurti (1976), p. 47.
- ↑ For description of the form as representing teaching functions, see: Kramrisch, p. 472.
- ↑ For characterization of Dakṣiṇāmūrti as a mostly south Indian form, see: Chakravarti, p. 62.
- ↑ For the deer-throne and the audience of sages as Dakṣiṇāmūrti, see: Chakravarti, p. 155.
- ↑ Goldberg, p. 1.
- ↑ Goldberg specifically rejects the translation by Frederique Marglin (1989) as "half-man, half-woman", and instead adopts the translation by Marglin as "the lord who is half woman" as given in Marglin (1989, 216). Goldberg, p. 1.
- ↑ For evolution of this story from early sources to the epic period, when it was used to enhance Shiva's increasing influence, see: Chakravarti, p. 46.
- ↑ For the Tripurāntaka form, see: Sivaramamurti (1976), pp. 34, 49.
- ↑ Flood (1996), p. 29.
- ↑ Tattwanandaz, pp. 49-52.
- ↑ ক খ গ Harshananda, Swami। "Sivalinga"। Principal Symbols of World Religions। Sri Ramakrishna Math Mylapore। পৃষ্ঠা 6–8।
- ↑ See Monier William's Sanskrit to english Dictionary
- ↑ O'Flaherty, Wendy Doniger (১৯৮১)। Śiva, the erotic ascetic। Oxford: Oxford University Press। আইএসবিএন 0-19-520250-3।
- ↑ Isherwood, Christopher। "Early days at Dakshineswar"। Ramakrishna and his disciples। পৃষ্ঠা 48।
- ↑ Sen, Amiya P. (২০০৬)। "Editor's Introduction"। The Indispensable Vivekananda। Orient Blackswan। পৃষ্ঠা 25–26।
- ↑ Sivananda, Swami (১৯৯৬)। "Worship of Siva Linga"। Lord Siva and His Worship। The Divine Life Trust Society। ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০১০।
- ↑ Balagangadhara, S.N. (Spring ২০০৮)। "Are Dialogues Antidotes to Violence? Two Recent Examples From Hinduism Studies" (পিডিএফ)। Journal for the Study of Religions and Ideologies। 7 (19): 118–143। ২০ আগস্ট ২০০৯ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০১০। অজানা প্যারামিটার
|coauthors=
উপেক্ষা করা হয়েছে (|author=
ব্যবহারের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে) (সাহায্য) - ↑ Harding, Elizabeth U. (১৯৯৮)। "God, the Father"। Kali: The Black Goddess of Dakshineswar। Motilal Banarsidass। পৃষ্ঠা 156–157। আইএসবিএন 9788120814509।
- ↑ ক খ Vivekananda, Swami। "THE PARIS CONGRESS OF THE HISTORY OF RELIGIONS"। The Complete Works of Swami Vivekananda। Vol.4। ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০১০।
- ↑ For five as a sacred number, see: Kramrisch, p. 182.
- ↑ It is first encountered in an almost identical form in the Rudram. For the five syllable mantra see: Kramrisch, p. 182.
- ↑ For discussion of these five forms and a table summarizing the associations of these five mantras see: Kramrisch, pp. 182-189.
- ↑ For distinct iconography, see Kramrisch, p. 185.
- ↑ For association with the five faces and other groups of five, see: Kramrisch, p. 182.
- ↑ For the epithets pañcamukha and pañcavaktra, both of which mean "five faces", as epithets of Śiva, see: Apte, p. 578, middle column.
- ↑ For variation in attributions among texts, see: Kramrisch, p. 187.
- ↑ Kramrisch, p. 184.
- ↑ Quotation from Pañcabrahma Upanishad 31 is from: Kramrisch, p. 182.
- ↑ For relatively minor position in Vedic times, and rise in progress by 1000-700 BCE see: Zimmer (1946), p. 125, note 2.
- ↑ For the rise in popularity of Shiva and Vishnu, and the role of Puranas in promoting sectarian positions, see: Flood (1996), pp. 110-111.
- ↑ For Visnu becoming Shiva in Vaishnava myths, see: Zimmer (1946), p. 125.
- ↑ For Vishnu Purana dating of 4th c. CE and role of Vishnu as supreme deity, see: Flood (1996), p. 111.
- ↑ For identification of Shiva as a manifestation of Vishnu see: Bhagavata Purana 4.30.23, 5.17.22-23, 10.14.19.
- ↑ For predominant role of Shiva in some myths, see: Zimmer (1946), p. 128.
- ↑ For the lingodbhava myth, and Vishnu and Brahmā as emanations of Shiva, see: Zimmer (1946), pp. 128-129.
- ↑ For translation of the epithet शिपिविष्ट (IAST: śipiviṣṭa) as "salutation to him of the form of Vishṇu" included in the fifth anuvāka, and comment that this epithet "links Śiva with Vishṇu" see: Sivaramamurti, pp. 21, 64.
- ↑ For Śarabha as an "animal symplegma" form of Shiva, see: Kramrisch, p. 481.
- ↑ For incarnation in composite form as man, bird, and beast to chastise Narasimha, see: Chakravarti, p. 49.
- ↑ Sharma, B. N. Krishnamurti (২০০০)। A history of the Dvaita school of Vedānta and its literature: from the earliest beginnings to our own times। Motilal Banarsidass Publ.। পৃষ্ঠা 412। ১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৮ মার্চ ২০১০।
- ↑ Chakravarti, pp. 54-55.
- ↑ For Harirudra citation to Mbh. III.39.76f see: Hopkins (1969), p. 221.
- ↑ For the story of Rāvaṇa and the Mahābaleśvara linga see: Chakravarti, p. 168.
- ↑ Parrinder, Edward Geoffrey (১৯৮২)। Avatar and incarnation। Oxford: Oxford University Press। পৃষ্ঠা 88। আইএসবিএন 0-19-520361-5।
- ↑ Sri Ramakrishna Math (1985) "Hanuman Chalisa" p. 5
- ↑ সনৎকুমার মিত্র: "শিবের চড়ক-গাজন", লোকসংস্কৃতি গবেষণা পত্রিকা, কার্তিক-পৌষ ১৪১৩ সংখ্যা, পৃ. ৩০২-০৮
তথ্যসূত্র
সম্পাদনা- Apte, Vaman Shivram (১৯৬৫), The Practical Sanskrit Dictionary (Fourth revised and enlarged সংস্করণ), Delhi: Motilal Banarsidass Publishers, আইএসবিএন 81-208-0567-4
- Arya, Ravi Prakash & K. L. Joshi. Ṛgveda Saṃhitā: Sanskrit Text, English Translation. Parimal Publications, Delhi, 2001, আইএসবিএন ৮১-৭১১০-১৩৮-৭ {{আইএসবিএন}} এ প্যারামিটার ত্রুটি: চেকসাম (Set of four volumes). Parimal Sanskrit Series No. 45; 2003 reprint: 81-7020-070-9.
- Chakravarti, Mahadev (১৯৯৪), The Concept of Rudra-Śiva Through The Ages (Second Revised সংস্করণ), Delhi: Motilal Banarsidass, আইএসবিএন 81-208-0053-2
- Chidbhavananda, Swami (১৯৯৭)। Siva Sahasranama Stotram: With Navavali, Introduction, and English Rendering.। Sri Ramakrishna Tapovanam। আইএসবিএন 81-208-0567-4। (Third edition). The version provided by Chidbhavananda is from chapter 17 of the Anuśāsana Parva of the Mahābharata.
- Courtright, Paul B. (১৯৮৫)। Gaṇeśa: Lord of Obstacles, Lord of Beginnings। New York: Oxford University Press। আইএসবিএন [[Special:BookSources/আইএসবিএন ০-১৯-৫০৫৭৪২-২|[[আইএসবিএন (শনাক্তকারী)|আইএসবিএন]] [[বিশেষ:বইয়ের_উৎস/0-19-505742-2|০-১৯-৫০৫৭৪২-২]]]]
|আইএসবিএন=
এর মান পরীক্ষা করুন: invalid character (সাহায্য)। - Flood, Gavin (১৯৯৬)। An Introduction to Hinduism। Cambridge: Cambridge University Press। আইএসবিএন 0-521-43878-0।
- Flood, Gavin (Editor) (২০০৩)। The Blackwell Companion to Hinduism। Malden, MA: Blackwell Publishing Ltd.। আইএসবিএন 1-4051-3251-5।
- Goldberg, Ellen (২০০২)। The Lord Who is Half Woman: Ardhanārīśvara in Indian and Feminist Perspective। Albany, New York: State University of New York Press। আইএসবিএন 0-7914-5326-X।
- Griffith, T. H. (১৯৭৩), The Hymns of the Ṛgveda (New Revised সংস্করণ), Delhi: Motilal Banarsidass, আইএসবিএন 81-208-0046-X
- Gupta, Shakti M. (১৯৮৮)। Karttikeya: The Son of Shiva। Bombay: Somaiya Publications Pvt. Ltd.। আইএসবিএন 81-7039-186-5।
- Hopkins, E. Washburn (১৯৬৯)। Epic Mythology। New York: Biblo and Tannen। Originally published in 1915.
- Jansen, Eva Rudy (১৯৯৩)। The Book of Hindu Imagery। Havelte, Holland: Binkey Kok Publications BV। আইএসবিএন 90-74597-07-6।
- Keay, John (২০০০)। India: A History। New York: Grove Press। আইএসবিএন 0-8021-3797-0।
- Kramrisch, Stella (১৯৮১)। The Presence of Śiva। Princeton, New Jersey: Princeton University Press। আইএসবিএন 0-691-01930-4।
- Macdonell, Arthur Anthony (১৯৯৬)। A Practical Sanskrit Dictionary। New Delhi: Munshiram Manoharlal Publishers। আইএসবিএন 81-215-0715-4।
- Mate, M. S. (১৯৮৮)। Temples and Legends of Maharashtra। Bombay: Bharatiya Vidya Bhavan।
- Michaels, Axel (২০০৪)। Hinduism: Past and Present। Princeton, New Jersey: Princeton University Press। আইএসবিএন 0-691-08953-1।
- Sarup, Lakshman (১৯২০–১৯২৭)। The Nighaṇṭu and The Nirukta। Reprint: Motilal Banarsidass, 2002, আইএসবিএন ৮১-২০৮-১৩৮১-২.
- Sharma, Ram Karan (১৯৮৮), Elements of Poetry in the Mahābhārata (Second সংস্করণ), Delhi: Motilal Banarsidass, আইএসবিএন 81-208-0544-5
- Sharma, Ram Karan (১৯৯৬), Śivasahasranāmāṣṭakam: Eight Collections of Hymns Containing One Thousand and Eight Names of Śiva, Delhi: Nag Publishers, আইএসবিএন 81-7081-350-6 This work compares eight versions of the Śivasahasranāmāstotra with comparative analysis and Śivasahasranāmākoṣa (A Dictionary of Names). The text of the eight versions is given in Sanskrit.
- Sivaramamurti, C. (১৯৭৬)। Śatarudrīya: Vibhūti of Śiva's Iconography। Delhi: Abhinav Publications।
- Stutley, Margaret (১৯৮৫)। The Illustrated Dictionary of Hindu Iconography। First Indian Edition: Munshiram Manoharlal, 2003, আইএসবিএন ৮১-২১৫-১০৮৭-২.
- Tattwananda, Swami (১৯৮৪)। Vaisnava Sects, Saiva Sects, Mother Worship। Calcutta: Firma KLM Private Ltd.। First revised edition.
- Zimmer, Heinrich (১৯৪৬)। Myths and Symbols in Indian Art and Civilization। Princeton, New Jersey: Princeton University Press। আইএসবিএন 0-691-01778-6। First Princeton-Bollingen printing, 1972.
- of Goswami Tulsidas; original text, transliteration, English translation and notes. (১৯৮৫)। Hanuman Chalisa। Chennai, India: Sri Ramakrishna Math। আইএসবিএন 81-7120-086-9।