ফজলুর রহমান খান
ফজলুর রহমান খান (১৯২৯ - ১৯৮২) বিশ্বখ্যাত বাংলাদেশী - আমেরিকান স্থপতি ও পুরকৌশলী। তিনি পৃথিবীর অন্যতম উচ্চ ভবন শিকাগোর সিয়ার্স টাওয়ার (বর্তমানে উইলিস টাওয়ার)-এর নকশা প্রণয়ন করেন। তাকে বিংশ শতকের শ্রেষ্ঠ প্রকৌশলীদের মধ্যে অন্যতম বলা হয়।
ফজলুর রহমান খ়ান | |
---|---|
ব্যক্তিগত তথ্য | |
নাম | ফজলুর রহমান খ়ান |
জাতীয়তা | বাংলাদেশি আমেরিকান |
জন্ম তারিখ | এপ্রিল ৩, ১৯২৯ |
জন্মস্থান | ঢাকা, বাংলাদেশ |
মৃত্যুর তারিখ | ২৭ মার্চ ১৯৮২ | (বয়স ৫২)
মৃত্যুর স্থান | জেদ্দা, সৌদি আরব |
শিক্ষা | আরমানিটোলা সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়, বেঙ্গল ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড সায়েন্স ইউনিভার্সিটি, শিবপুর, ইউনিভার্সিটি অফ ইলিনয় অ্যাট আর্বানা-শ্যাম্পেইন |
পিতামাতা | খান বাহাদুর আবদুর রহমান খাঁ (বাবা) |
কর্মজীবন | |
প্রকৌশলের বিষয় | স্থাপত্য, পুরকৌশল |
গুরুত্বপূর্ণ নকশা | সিয়ার্স টাওয়ার, হাজ্জ টারমিনাল, কিং আব্দুল আজিজ বিশ্ববিদ্যালয় |
গুরুত্বপূর্ণ পুরস্কার | আগা খান অ্যাওয়ার্ড ফর আর্কিটেকচার, স্বাধীনতা দিবস পুরস্কার |
জন্ম
সম্পাদনাফজলুর রহমান খান ১৯২৯ খ্রিষ্টাব্দে ৩ এপ্রিল তৎকালীন বেঙ্গল প্রেসিডেন্সির ঢাকায় একটি বাঙ্গালী মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বাবা খান বাহাদুর আবদুর রহমান খাঁ ছিলেন একজন শিক্ষাবিদ। তাঁর দাদার নাম আসলত রহমান খাঁন এবং তাঁদের আদিবাড়ি ছিল মাদারীপুর জেলার শিবচর উপজেলার ভাণ্ডারিকান্দি গ্রামে। তাঁর মা খাদিজা খাঁতুন ছিলেন পাবনা জেলার দুলাই ও পার্শ্ববর্তী এলাকার জমিদার আব্দুল বাসিত চৌধুরীর মেয়ে এবং তাঁদের পূর্বপুরুষ শরফুদ্দীন সরকার তুর্কেস্তানের সমরকন্দ শহর থেকে বাংলায় এসে দুলাই গাঁওয়ে বসতি স্থাপন করেছিলেন। ফজলুর রহমান খানের ভাই হলেন ডাঃ জিল্লুর রহমান খান এবং তার বোন মাসুদা খান লীনা হলেন সাবেক মন্ত্রী এনায়েতুল্লাহ্ খানের বিবি।[১]তার স্ত্রীর নাম মাসুদা খান
শিক্ষাজীবন
সম্পাদনাতিনি ১৯৪৪ খ্রিষ্টাব্দে ঢাকার আরমানিটোলা সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ম্যাট্রিক বা মাধ্যমিক পরীক্ষায় এবং ১৯৪৬ খ্রিষ্টাব্দে কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে কলকাতার শিবপুর বেঙ্গল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে (বর্তমানে বেঙ্গল ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড সায়েন্স ইউনিভার্সিটি, শিবপুর) ভর্তি হন। চূড়ান্ত পরীক্ষা চলাকালে পঞ্চাশের সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার কারণে তিনি ঢাকায় ফিরে এলে তৎকালীন আহসানউলাহ ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ (বর্তমানে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়) থেকে বাকি পরীক্ষা সমাপ্ত করেন৷ কলকাতার শিবপুর ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে অনুষ্ঠিত পরীক্ষার এবং আহসানউলাহ ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের পরীক্ষার উভয় ফলের ভিত্তিতে তাকে বিশেষ বিবেচনায় ব্যাচেলর অফ ইঞ্জিনিয়ারিং ডিগ্রি অর্থাৎ প্রকৌশলে স্নাতক উপাধি প্রদান করা হয়৷ এ মূল্যায়নে তিনি প্রথম শ্রেণীতে প্রথম স্থান অধিকার করেন। ফজলুর রহমান খান ১৯৫২ খ্রিষ্টাব্দে যুগপৎ সরকারী বৃত্তি ও ফুলব্রাইট বৃত্তি নিয়ে পিএইচডি উপাধি অর্জনের উদ্দেশ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে গমন করেন৷ সেখানে ১৯৫৩ খ্রিষ্টাব্দে তিনি ইউনিভার্সিটি অব ইলিনয় অ্যাট আর্বানা-শ্যাম্পেইন থেকে অবকাঠামো প্রকৌশল (স্ট্রাকচারাল ইঞ্জিনিয়ারিং) ক্ষেত্রে সনদ এবং ১৯৫৫ খ্রিষ্টাব্দে তত্ত্বীয় ও ফলিত বলবিজ্ঞান ক্ষেত্রে বিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর (মাস্টার অফ সায়েন্স) উপাধি লাভ করেন।[২]
কর্মজীবন
সম্পাদনাস্নাতক উপাধি অর্জনের পরপরই ফজলুর রহমান খান আহসানউলাহ ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে অধ্যাপকের পদে নিযুক্তি লাভ করেন। ১৯৫৫ খ্রিষ্টাব্দে তিনি শিকাগো শহরের স্কিডমোর, ওউইং ও মেরিল নামের প্রকৌশল প্রতিষ্ঠানে প্রকল্প প্রকৌশলী হিসেবে যোগদান দেন। ডক্টরেট উপাধি অর্জনের পর ১৯৫৬ খ্রিষ্টাব্দে দেশে ফিরে আহসানউল্লাহ ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে পূর্ব পদে যোগদান করেন। পরবর্তীতে আমেরিকার স্থাপত্য প্রতিষ্ঠান স্কিড মোর এর আমন্ত্রণে যুক্তরাষ্ট্র গিয়ে এ কোম্পানীর শিকাগো অফিসের পরিচালক হিসেবে যোগদান করেন৷ পাশাপাশি তিনি আমেরিকার ইন্টারন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অব টেকনোলজি এর স্থাপত্য বিভাগে অধ্যাপক পদে অধিষ্ঠিত হন। সেখানে পরে তিনি প্রফেসর এমিরিটাস হয়েছিলেন।
কৃতিত্ব
সম্পাদনাশিকাগোর সিয়ার্স টাওয়ার তার অনন্য কীর্তি। তিনি ১৯৭২ খ্রিষ্টাব্দে 'ইঞ্জিনিয়ারিং নিউজ রেকর্ড'-এ ম্যান অব দি ইয়ার বিবেচিত হন[৪] এবং পাঁচবার স্থাপত্য শিল্পে সবচেয়ে বেশি অবদানকারী ব্যক্তিত্ব হিসেবে অভিহিত হবার গৌরব লাভ করেন (৬৫,৬৮,৭০,৭১,৭৯ খ্রিষ্টাব্দে)৷ ১৯৭৩ খ্রিষ্টাব্দে যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল একাডেমি অফ ইঞ্জিনিয়ারিং এর সদস্য নির্বাচিত হন।[৫] ১৯৭৪ খ্রিষ্টাব্দে আমেরিকার 'নিউজ উইক' ম্যাগাজিন শিল্প ও স্থাপত্যের উপর প্রচ্ছদ কাহিনীতে তাকে মার্কিন স্থাপত্যের শীর্ষে অবস্থানকারী ব্যক্তি হিসেবে বর্ণনা করে৷ স্থপতি ডঃ এফ, আর, খান আন্তর্জাতিক গগনচুম্বী ও নগরায়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ছিলেন৷ তার অন্যান্য অবদানের মধ্যে রয়েছে শিকাগোর জন হ্যানকক সেন্টার, বাদশাহ আব্দুলআজিজ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের হজ্ব টার্মিনাল এবং বাদশাহ আব্দুল আজিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থাপত্য মডেল অঙ্কন৷
১৯৯৮ সালে শিকাগো শহরের সিয়ার্স টাওয়ারের পাদদেশে অবস্থিত জ্যাকসন সড়ক পশ্চিম পার্শ্ব এবং ফ্রাঙ্কলিন সড়কের দক্ষিণ পার্শ্বের সংযোগস্থলটিকে নামকরণ করা হয় "ফজলুর আর. খান ওয়ে"।[৬]
গবেষণা
সম্পাদনাএফ, আর, খান মুসলিম স্থাপত্য বিষয়ের উপর নানা ধরনের গবেষণা করেছেন৷ ডঃ খান Tube in Tube নামে স্থাপত্য শিল্পের এক নতুন পদ্ধতি উদ্ভাবন করেছিলেন যার মাধ্যমে অতি উচ্চ (কমপক্ষে একশত তলা) ভবন স্বল্প খরচে নির্মাণ সম্ভব৷ গগনচুম্বী ভবনের উপর সাত খণ্ডে প্রকাশিত একটি পুস্তকের তিনি সম্পাদনা করেন৷[২]
অবদান
সম্পাদনা- সিয়ার্স টাওয়ার (Sears Tower) এর নকশা প্রনয়ন করেন।
- জন হ্যানকক সেন্টার এর নকশা। (১০০ তলা)
- জেদ্দা আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর।
- হজ্ব টার্মিনালের ছাদ কাঠামো। (৫০,০০০ বর্গফুট)
- বাদশাহ আব্দুল আজিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থাপত্য নকশা।
স্বাধীনতা যুদ্ধকালীন ভূমিকা
সম্পাদনাতিনি ১৯৭১ সনে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে প্রবাসে গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকা পালন করেন ৷ বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে তার অবদান স্মরণীয় হয়ে আছে।[৭] মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানিরা যখন নিক্সন সরকারের সমর্থনের বিরোধিতা করেন এফ আর খান। মুক্তিযুদ্ধের সমর্থনে আমেরিকা প্রবাসী বাংলাদেশীদের আন্দোলনে নেতৃত্ব দেন তিনি। তার নেতৃত্বে প্রবাসীদের নিয়ে গঠিত হয় দুটি সংগঠন: ‘বাংলাদেশ ইমার্জেন্সি ওয়েলফেয়ার আপিল’, যার উদ্দেশ্য ছিলো মুক্তিবাহিনীর সমর্থনে প্রচার-প্রচারণা এবং রিলিফ সংগ্রহ এবং ‘বাংলাদেশ ডিফেন্স লীগ’, এই সংগঠনটি কূটনৈতিকভাবে মুক্তিযুদ্ধকে বিশ্ববাসীর কাছে তুলে ধরেছিল। মূলত এই সংগঠনের তৎপরতায় যুক্তরাষ্ট্র পাকিস্তানে সৈন্য পাঠাতে অপারগতা প্রকাশ করে।
মৃত্যু
সম্পাদনা১৯৮২ সনের ২৬শে মার্চ জেদ্দায় তিনি মৃত্যুবরণ করেন৷ মৃত্যুর পর তার দেহ আমেরিকায় নিয়ে যাওয়া হয় এবং শিকাগোতে তাকে সমাহিত করা হয়।[৮]
সম্মাননা
সম্পাদনা- ডঃ এফ আর খান নর্থ ওয়েস্টার্ন বিশ্ববিদ্যালয়, লি হাই বিশ্ববিদ্যালয় ও সুইস ফেডারেল ইনিস্টিটিউট অফ টেকনোলজি জুরিখ থেকে সম্মানসূচক ডক্টরেট উপাধি লাভ করেন ৷
- ১৯৯৯ খ্রিষ্টাব্দে তাকে স্বাধীনতা দিবস পুরস্কার (মরণোত্তর) প্রদান করা হয়।[৯]
- ফজলুর রহমান খানকে নিয়ে গুগল তার ৮৮ তম জন্মদিনে গুগল ডুডল প্রকাশ করে।[১০]
- ১৯৯৯ সালে ফজলুর রহমান খানের স্মরণে বাংলাদেশ ডাক বিভাগ একটি ডাকটিকিট প্রকাশ করেছে। ২ টাকা মূল্যমানের এই টিকিটটিতে রয়েছে ফজলুর রহমান খানের আবক্ষ চিত্র, আর পটভূমিতে রয়েছে সিয়ার্স টাওয়ারের ছবি।[১১]
- ২০২৪ সালের ৮ম শ্রেণির ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান বইয়ে ফজলুর রহমান খান সম্পর্কে লেখা সংযোজিত করা হয়েছে।[১২]
তথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ জীবনী গ্রন্থমালা। ১৯। বাংলা একাডেমি। ১৯৯০। পৃষ্ঠা ১২।
- ↑ ঝাঁপ দিন: ক খ "সংরক্ষণাগারভুক্ত অনুলিপি"। ৭ এপ্রিল ২০১৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১০ ডিসেম্বর ২০০৯।
- ↑ p. 422, American Architecture: A History, Leland M. Roth, Westview Press, 2003,আইএসবিএন ০-৮১৩৩-৩৬৬২-৭
- ↑ http://archone.tamu.edu/crs/engine/archive_files/People_file/1068.0509.29-34.pdf[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
- ↑ http://www.scholarsbangladesh.com/journal/frkhan.php
- ↑ http://www.thedailystar.net/suppliments/2006/15thanniv/celebrating_bd/celeb_bd12.htm
- ↑ "1971: Bangladesh Liberation War"। Dr. Fazlur R. Khan (ইংরেজি ভাষায়)। ২০১৪-০৩-০৬। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-০৮-১৩।
- ↑ "সংরক্ষণাগারভুক্ত অনুলিপি"। ৩০ মে ২০১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৩ অক্টোবর ২০১২।
- ↑ "পুরস্কার প্রাপ্তির সাল: ১৯৯৯"। cabinet.gov.bd। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, বাংলাদেশ সরকার। সংগ্রহের তারিখ ৫ অক্টোবর ২০২৩।
- ↑ "Fazlur Rahman Khan's 88th Birthday"। গুগল। এপ্রিল ৩, ২০১৭। সংগ্রহের তারিখ এপ্রিল ৩, ২০১৭।
- ↑ Fazlur Khan (1929–1982): reflections on his life and works. by Aftab A. Mufti and Baidar Bakht. Can. J. Civ. Eng. 29(2): 238–245 (2002).
- ↑ ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান। জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। ডিসেম্বর ২০২৩। পৃষ্ঠা ২২–২৩।
বহিঃসংযোগ
সম্পাদনাএই নিবন্ধটি অসম্পূর্ণ। আপনি চাইলে এটিকে সম্প্রসারিত করে উইকিপিডিয়াকে সাহায্য করতে পারেন। |