এস এম সুলতান

বাংলাদেশী চিত্রশিল্পী

এটি এই পাতার একটি পুরনো সংস্করণ, যা Moheen (আলোচনা | অবদান) কর্তৃক ০৩:২৪, ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪ তারিখে সম্পাদিত হয়েছিল (খ্যাতি এবং উত্তরাধিকার: সংশোধন)। উপস্থিত ঠিকানাটি (ইউআরএল) এই সংস্করণের একটি স্থায়ী লিঙ্ক, যা বর্তমান সংস্করণ থেকে ব্যাপকভাবে ভিন্ন হতে পারে।

শেখ মোহাম্মদ সুলতান, (১০ আগস্ট ১৯২৩ - ১০ অক্টোবর ১৯৯৪) যিনি এস এম সুলতান নামে সমধিক পরিচিত, ছিলেন একজন বাংলাদেশি ঔপনিবেশিক এবং আভঁ-গার্দ চিত্রশিল্পী।[][] তিনি বাংলাদেশে আধুনিকতার অন্যান্য পথিকৃৎ।[][] বাংলাদেশের আধুনিক শিল্পকলা আন্দোলনকে এগিয়ে নিয়ে যেতে যে কয়জন শিল্পী অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছেন, সুলতান তাদের মধ্যে অন্যতম ৷[] তিনি ভারতীয় উপমহাদেশের সর্বশ্রেষ্ঠ শিল্পীদের একজন হিসেবে বিবেচিত।[] তার কাজের মধ্যে ল্যান্ডস্কেপ, প্রতিকৃতি এবং আত্মপ্রতিকৃতি অন্তর্ভুক্ত, যার অধিকাংশই বাংলার কৃষক এবং কৃষিজীবনের চিত্রায়ন। তার চিত্রের পেশীবহুল কৃষক এবং তাদের জীবনসংগ্রামের প্রতিফলন বাংলাদেশের আধুনিক শিল্পে অভিব্যক্তিবাদের উত্থানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিল। আবহমান বাংলার ইতিহাস-ঐতিহ্য, দ্রোহ-প্রতিবাদ, বিপ্লব-সংগ্রাম এবং বিভিন্ন প্রতিকূলতার মধ্যেও টিকে থাকার ইতিহাস তার শিল্পকর্মকে সবচেয়ে বেশি প্রভাবিত করেছে। যেখানে গ্রামীণ জীবনের পরিপূর্ণতা, প্রাণপ্রাচুর্যের পাশাপাশি শ্রেণিদ্বন্দ্ব এবং গ্রামীণ অর্থনীতির চিত্র ফুটে উঠেছে। তার চিত্রকর্মে বিশ্বসভ্যতার কেন্দ্র হিসেবে গ্রামের মহিমা উঠে এসেছে এবং কৃষককে এই কেন্দ্রের রূপকার হিসেবে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। তিনি বাংলাদেশের চিত্রকলাকে পশ্চিমা বিশ্ব, বিশেষ করে ইউরোপ এবং আমেরিকায় তুলে ধরতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।[] তার উল্লেখযোগ্য কাজের মধ্যে রয়েছে প্রথম বৃক্ষরোপণ (১৯৭৫), চরদখল (১৯৭৬), জমি চাষ (১৯৮৬), এবং মাছ ধরা-৩ (১৯৯১)। তিনি ছিলেন একজন সুরসাধক এবং বাঁশিবাদক।

এস এম সুলতান
এস এম সুলতান
আশির দশকে সুলতান
জন্ম
শেখ মোহাম্মদ সুলতান

(১৯২৩-০৮-১০)১০ আগস্ট ১৯২৩
মৃত্যু১০ অক্টোবর ১৯৯৪(1994-10-10) (বয়স ৭১)
যশোর, খুলনা, বাংলাদেশ
সমাধিনড়াইল, খুলনা, বাংলাদেশ
২৩°০৯′২৯″ উত্তর ৮৯°৩০′০৩″ পূর্ব / ২৩.১৫৮১৭৯৬° উত্তর ৮৯.৫০০৯৪৮৫° পূর্ব / 23.1581796; 89.5009485
জাতীয়তাব্রিটিশ ভারতীয় (১৯২৩–১৯৪৭)
পাকিস্তানি (১৯৪৭–১৯৭১)
বাংলাদেশী (১৯৭১–১৯৯৪)
মাতৃশিক্ষায়তনকলকাতা আর্ট স্কুল
পরিচিতির কারণচিত্রাঙ্কন, অঙ্কন
উল্লেখযোগ্য কর্ম
প্রথম বৃক্ষরোপণ (১৯৭৫)
জমি চাষ (১৯৮৬)
আন্দোলনবাংলাদেশে আধুনিক শিল্পকলা আন্দোলন
পিতা-মাতা
  • শেখ মোহাম্মদ মেসের আলী (পিতা)
  • মোছাম্মদ মেহেরুননেসা (মাতা)
পুরস্কারএকুশে পদক
১৯৮২
স্বাধীনতা দিবস পুরস্কার
১৯৯৩
জাতীয়তাবাংলাদেশী
অন্যান্য নামলাল মিয়া
পেশাচিত্রশিল্পী
কর্মজীবন১৯৪৬-১৯৯৪

১৯৮২ সালে কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি ম্যান অব অ্যাচিভমেন্ট এবং এশিয়া উইক পত্রিকা থেকে ম্যান অব এশিয়া খেতাব লাভ করেন। একই বছর শিল্পকলায় অনন্য অবদানের জন্য তিনি একুশে পদক লাভ করেন। ১৯৯৬ সালে বাংলাদেশ সরকার তাকে দেশের সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা স্বাধীনতা দিবস পুরস্কার প্রদান করে। বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর, জাতীয় চিত্রশালা, সুলতান স্মৃতি সংগ্রহশালা এবং বেঙ্গল ফাউন্ডেশন সহ দেশে-বিদেশের বিভিন্ন সর্বজনীন এবং ব্যক্তিগত সংগ্রহে তার চিত্রকর্ম সংরক্ষিত আছে।

সুলতানের কাজ তার জীবনের শেষ দশকে সমালোচকদের শিল্পগত মনোযোগ আকর্ষণ করতে শুরু করে। মৃত্যুর পর, তার শিল্পকর্ম ও জীবনাচার জনসাধারণের কল্পনায় এক ভুল বোঝা প্রতিভার প্রতীক হিসেবে স্থান পায়, যার জন্য বাংলাদেশের তৎকালীন শিল্পবোদ্ধা এবং সমালোচকরা অনেকাংশে দায়ী ছিলেন। তার কাজ পরবর্তী কয়েক দশকে ব্যাপক সমালোচনামূলক এবং বাণিজ্যিক সফলতা অর্জন করে।

জীবনী

প্রাথমিক জীবন

 
২০১১ সালে নড়াইলের মাসিমদিয়া গ্রামে সুলতানের বাসভবন।

শেখ মোহাম্মদ সুলতান ১৯২৩ সালের ১০ আগস্ট তৎকালীন পূর্ব বাংলা, ব্রিটিশ ভারতের (বর্তমান বাংলাদেশ) নড়াইলের মাসিমদিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।[][] তার পৈতৃক ভিটা পুরুলিয়া গ্রামে।[] তার জন্ম হয়েছিল দরিদ্র কৃষক-পরিবারে।[] তার মায়ের নাম মোছাম্মদ মেহেরুননেসা। তার বাবা শেখ মোহাম্মদ মেসের আলী পেশায় ছিলেন রাজমিস্ত্রী[১০][১১] তবে কৃষিকাজই ছিল তার বাবার মূল পেশা, পাশাপাশি বাড়তি আয়ের জন্য ঘরামির কাজ করতেন।[১২] সুলতান ছিলেন পরিবারের একমাত্র সন্তান।[][১৩] শৈশবে পরিবারের সবাই তাকে লাল মিয়া বলে ডাকতো।[][১৪] বিদ্যালয়ে পড়ানোর মত সামর্থ্য তার পরিবারের না থাকলেও ১৯২৮ সালে নড়াইলের ভিক্টোরিয়া কলেজিয়েট স্কুলে তাকে ভর্তি করানো হয়।[][১২] তবে মাত্র পাঁচ বছর অধ্যয়নের পর তিনি সেই বিদ্যালয়ে ছেড়ে বাড়ি ফিরে বাবার সহযোগী হিসেবে রাজমিস্ত্রীর কাজ শুরু করেন।[][১৫] এসময় বাবার ইমারত তৈরির কাজ সুলতানকে প্রভাবিত করে এবং তিনি রাজমিস্ত্রীর কাজের ফাঁকে আঁকাআঁকি শুরু করেন। কাঠকয়লা দিয়ে আঁকার প্রতিটি সুযোগ তিনি কাজে লাগান।[১৬] তার বাবার এই পেশাই সুলতানের ভেতরে শিল্পীসত্তার জন্ম দেয়।[১৭] সুলতানের বাল্যবয়সের চরিত্র-গঠন সম্পর্কে আহমদ ছফা লিখেছেন: "কোনো কোনো মানুষ জন্মায়, জন্মের সীমানা যাদের ধরে রাখতে পারে না। অথচ যাদের সবাইকে ক্ষণজন্মাও বলা যাবে না। এরকম অদ্ভুত প্রকৃতির শিশু অনেক জন্মগ্রহণ করে জগতে, জন্মের বন্ধন ছিন্ন করার জন্য যাদের রয়েছে এক স্বাভাবিক আকুতি। ...শেখ মুহাম্মদ সুলতান সে সৌভাগ্যের বরে ভাগ্যবান, আবার সে দুর্ভাগ্যের অভিশাপে অভিশপ্ত।"[১৮][] ১৯৩৩ সালে, ১০ বছর বয়সে, যখন তিনি বিদ্যালয়ে পড়েন তখন রাজনীতিবিদ স্যার আশুতোষ মুখোপাধ্যায়ের ছেলে ড. শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জি নড়াইলে ভিক্টোরিয়া কলেজিয়েট স্কুল পরিদর্শনে এলে সুলতান তার একটি পেন্সিল স্কেচ আঁকেন।[১৯] শাম্যপ্রসাদ তার আঁকা পেন্সিল স্কেচ দেখে বিশেষভাবে আকৃষ্ট হন এবং এই পেন্সিল স্কেচের মাধ্যমেই শিল্পী হিসেবে সুলতানের প্রথম আত্মপ্রকাশ ঘটে।[১১][১৫] বাল্যবয়সে নড়াইলের জমিদার আরুণ রায়ের মাধ্যমে পুরানো মাস্টারপিস চিত্রকর্মগুলি দেখার সুযোগ ঘটেছিল সুলতানের।[২০]

কলকাতা আর্ট কলেজে পড়াশোনা

 
কলকাতা আর্ট স্কুল

সুলতানের অল্প বয়সে স্থানীয় পৃষ্ঠপোষক তার আঁকা দেখে মুগ্ধ হয়ে তাকে কলকাতা আর্ট স্কুলে ভর্তির জন্য জোর দেন। ছবি আঁকার প্রতিভার কারণে শৈশব থেকেই তিনি এলাকার জমিদার ধীরেন্দ্রনাথ রায়ের স্নেহভাজন হয়ে উঠেন।[১৯] ধীরেন্দ্রনাথের ভাইয়ের ছেলে অরুণ রায় তখন কলকাতা আর্ট স্কুলের ছাত্র। সেই অরুণ রায়ের কাছে সুলতান ছবি আঁকা শিখতে শুরু করেন।[২১]

গতানুগতিক পড়াশোনার প্রতি সুলতানের আগ্রহ না থাকায় ১৯৩৮ সালে অষ্টম শ্রেণীতে উঠে তিনি বিদ্যালয় ত্যাগ করেন। একইবছর ছবি আঁকা শেখার জন্য কলকাতায় পাড়ি জমান।[] বয়স কম হবার কারণে তখন কলকাতা আর্ট স্কুলে ভর্তি হতে পারেননি। কখনো ধীরেন্দ্রনাথ রায়ের বাড়ি, কখনো তার ভাই সত্যেন রায়ের বাড়ি, কখনো তাদের অন্যান্য ভাইদের বাড়িতে থেকে সুলতান তিন বছর ছবি আঁকার চর্চা করেন।[১১][২২]

১৯৪১ সালে তিনি কলকাতা আর্ট স্কুলে ভর্তি পরীক্ষা দেন। পরীক্ষায় অংশ নেয়া চারশো ছেলেমেয়েকে পনেরো মিনিটে ভেনাস মিলোর ছবি আঁকতে দেয়া হয়। সুলতান প্রথম হন, কিন্তু প্রবেশিকা পাশ না থাকার কারণে তার ভর্তি নিয়ে জটিলতার সৃষ্টি হয়। তখন ধীরেন্দ্রনাথ রায় বিষয়টা অবগত করেন শিল্প ইতিহাসবিদ ও সমালোচক হাসান শহীদ সোহ্‌রাওয়ার্দীকে, যিনি তখন কলকাতা আর্ট স্কুলের পরিচালনা পরিষদের সদস্য।[] তার সাহায্যে সুলতান কলকাতা আর্ট স্কুলে ভর্তি হন।[] তিনিই সুলতানকে পরামর্শ দেন ভর্তি হবার সময় কাগজপত্রে লাল মিয়া না লিখে শেখ মোহাম্মদ সুলতান লিখতে। সুলতানকে সোহরাওয়ার্দী সব ধরনের পৃষ্ঠপোষকতা করতে থাকেন।[১৬] তার অসাধারণ সমৃদ্ধ গ্রন্থাগার সুলতানের জন্য সব সময় উন্মুক্ত ছিল। কিছুকাল তার বাসায় ও তার ভাই শহীদ সোহরাওয়ার্দীর বাসায় থেকে সুলতান পড়াশোনা করেন।[২৩] কলকাতা আর্ট স্কুলের তৎকালীন প্রধান শিক্ষক মুকুলচন্দ্র দের অধীনে, স্কুলটি পুরনো শিল্পগুরুদের অনুকরণকে গুরুত্বহীন করে তোলে এবং ভারতীয় পৌরাণিক, রূপক এবং ঐতিহাসিক বিষয়গুলিকে ছাড়িয়ে যায়। সেসময় শিক্ষার্থীদের তাদের নিজস্ব জীবনের অভিজ্ঞতা থেকে মৌলিক বিষয়বস্তুর মাধ্যমে সমকালীন দৃশ্য এবং প্রতিকৃতি আঁকতে উৎসাহিত করা হত।[]

কলকাতা আর্ট স্কুলের অন্যান্য ক্লাসে তখন জয়নুল আবেদিন, কামরুল হাসান, সফিউদ্দিন আহমেদ, রাজেন তরফদার, আনওয়ারুল হকের মত মানুষেরা পড়াশোনা করতেন। ফলে তাদের সাথে সুলতানের যোগাযোগ ঘটে। ছাত্র হিসেবে সুলতান ভাল ছিলেন, এর পাশাপাশি মঞ্চনাটকে অভিনয় করেও প্রশংসা অর্জন করেন।[২৪] ১৯৪৩ সালে, তৃতীয় বর্ষে উঠে সুলতান তার ছয় বছরের কোর্সের অর্ধেক সম্পন্ন করার পর আর্ট স্কুল ছেড়ে দেন।[২৫][২৬][২৭] আর্ট স্কুল ছেড়ে সুলতান ভারত ভ্রমণে বের হয়ে পড়েন।[] তিনি দিল্লি, আগ্রা, শিমলা, লাহোর, কাঘান উপত্যকা এবং কাশ্মির ভ্রমণ করেছিলেন।[২৮] যে সময়ে বিশেষত কাশ্মীরে ভ্রমণ তার উপর একটি দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব রাখে, যা কয়েক দশক পরে তৈরি করা তার কাজগুলিতে দেখা যায়।[]

কর্মজীবন

ব্রিটিশ ভারত আমল

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বাঁধাধরা জীবন এবং প্রাতিষ্ঠানিক চর্চার কঠোর রীতিনীতি সুলতানের জীবনের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ ছিল না। তিনি ছিলেন বোহেমীয় জীবনাচারের অনুসারী। চেতনায় তিনি ছিলেন স্বাধীন এবং প্রকৃতিগতভাবে ছিলেন ভবঘুরে এবং ছন্নছাড়া। প্রকৃতিকে তিনি সবসময় রোমান্টিক কবির আবেগ দিয়ে ভালোবেসেছেন। আবার যান্ত্রিক নগরজীবনকে সেরকমই ঘৃণা করেছেন। ১৯৪৩ সালে সুলতান ব্রিটিশ ভারতে ইনায়েতউল্লাহ খান মাশরিকির খাকসার আন্দোলনে যোগ দেন।[][১৯] মোস্তফা জামান তার "লাল মিয়ার রূপকল্প পুনর্বিবেচনা" শিরোনামে লিখেছেন: "তার সাবলীল গতিবিধি নানা সামাজিক ভূগোলের মধ্য দিয়ে এবং কিছু অনন্য ব্যক্তিত্বের সান্নিধ্য, আল্লামা মাশরিকির খাকসার আন্দোলনের সাথে তার সম্পৃক্ততা, যা 'স্ব' এবং 'মুসলিম সামাজিকতাকে' সংগঠিত করে উপনিবেশ মুক্তির ভিত্তি স্থাপনের চেষ্টা করেছিল; এবং আমেরিকা ও ইউরোপে তার ভ্রমণ তাকে তার ক্যানভাসের জন্য প্রস্তুত করেছিল, যা শীঘ্রই শক্তিশালী পুরুষ ও মহিলাদের দ্বারা পূর্ণ হতে থাকে।[২৯] এগুলো স্পষ্টতই সেই কৃষক জনসংখ্যার প্রতিফলন ছিল যার সাথে তিনি একাত্ম হয়ে উঠেছিলেন।"[৩০] এর অব্যবহিত পরেই বেরিয়ে পড়েন এবং উপমহাদেশের পথে পথে ঘুরে তার অনেকটা সময় পাড় করেন। তখন ছিল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়। ভারতে সে সময় অনেক মার্কিন ও ব্রিটিশ সৈন্য আবস্থান নিয়েছিল। তিনি ছোট-বড় বিভিন্ন শহরে ঘুরে-ঘুরে ছবি এঁকে তা সৈন্যদের কাছে বিক্রি করতেন। মাঝে-মাঝে তার চিত্রকর্মের প্রদর্শনীও হয়েছে।[১৫] এর মাধ্যমে তিনি শিল্পী হিসেবে কিছুটা পরিচিতি লাভ করেন। কিন্তু সুলতানের চরিত্রে পার্থিব বিষয়ের প্রতি যে অনীহা এবং যে খামখেয়ালীপনা ছিল তার কারণে সেই চিত্রকর্মগুলো রক্ষা করা সম্ভব হয়নি। সেগুলোর কোনো আলোকচিত্রও এখন আর পাওয়া যায় না। এছাড়া তিনি কখনও একস্থানে বেশিদিন থাকতেন না। তিনি বলেন:[১০]

তবে এটুকু জানা গেছে যে, সেসময় তিনি প্রাকৃতিক নৈসর্গ্য এবং প্রতিকৃতি আঁকতেন। ১৯৪৬ সালে কানাডিয় শিল্পপ্রেমী মিসেস হাডসন সিমলায় সুলতানের আঁকা ছবির প্রথম প্রদর্শনী করেন।[১৯][২৭] কাপুরথালার মহারাজা সেই প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেছিলেন।[] পরে মহারাজার সঙ্গে সুলতানের ঘনিষ্ঠতা গড়ে উঠে এবং তিনি শিমলা ও জলন্ধরে মহারাজার ব্যক্তিগত অতিথি হয়ে উঠেছিলেন। পরে তিনি কাঘান উপত্যকা সুন্দর প্রাকৃতিক দৃশ্য এবং এর পরিশ্রমী মানুষের কঠোর জীবনচিত্র আঁকতে ব্যস্ত ছিলেন।[২৮] ১৯৪৬ সালে, তিনি কাশ্মিরে যান এবং সেখানে তিনি প্রাকৃতিক দৃশ্য এঁকেছেন এবং কাশ্মিরের সংগ্রামী মানুষদের স্কেচ করেছেন।[২৮]

পাকিস্তান আমল

১৯৪৭ সালে ব্রিটিশ উপনিবেশ বিভক্ত হয়ে পাকিস্তানভারতের জন্ম হয়। এই বিভক্তির পর সুলতান কিছুদিনের জন্য নিজ দেশ তথা তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে ফিরে আসেন। সে বছরের শেষের দিকে তাকে শ্রীনগর থেকে লাহোরের উদ্দেশ্যে একটি শরণার্থী ট্রাকে দ্রুত পালিয়ে যেতে হয়েছিল। তার আঁকা চিত্রকর্মগুলি তিনি সেখানেই ফেলে আসেন। লাহোরে তিনি শিল্প সমালোচক আমজাদ আলির সাথে দেখা করেন। পরে আমজাদ আলির সুলতানকে উপমহাদেশের আরেকজন উজ্জ্বল শিল্পী— আব্দুর রহমান চুঘতাইয়ের সাথে পরিচয় করিয়ে দেন। ১৯৪৮ সালের ডিসেম্বরে, আমজাদ আলি এবং চুঘতাই সহ অন্যান্যদের সহায়তায় লাহোরে সুলতানের একটি একক প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হয়। এই প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন স্যার মালিক ফিরোজ খান নুন, যিনি পরবর্তীতে পাকিস্তানের সপ্তম প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন।[২৮] পরের বছর, সুলতান করাচিতে চলে যান। সেখানে আমজাদ, চুঘতাই, শাকির আলীর এবং কয়েকজনের পৃষ্ঠপোষকতায় তিনি একটি বড় একক প্রদর্শনী করেন, যা উদ্বোধন করেন মোহতারমা ফাতিমা জিন্নাহ।[২৮] চিত্রকর্ম সংরক্ষণের ব্যাপারে সুলতানের উদাসীনতার কারণে তার এই সময়ের কোনো শিল্পকর্মই বর্তমানে টিকে নেই।[][৩১] পঞ্চাশের দশকের শুরুতে ফোর্ড এবং রকফেলার ফাউন্ডেশনের অর্থায়নে, নিউ ইয়র্কের ইন্সটিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল এডুকেশন তাদের আন্তর্জাতিক শিল্প কর্মসূচির মাধ্যমে ২৫ থেকে ৩৫ বছর বয়সী অসাধারণ প্রতিশ্রুতিশীল বিদেশি শিল্পীদের যুক্তরাষ্ট্রে কয়েক সপ্তাহের কর্মসূচিতে অংশগ্রহণের সুযোগ দিত। এই শিল্পীদের নির্বাচন করা হত মার্কিন শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং ইন্সটিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল এডুকেশনের যৌথ উদ্যোগে। উক্ত কর্মসূচির মধ্যে ছিল জাদুঘর পরিদর্শন, একটি স্কুলে সৃজনশীল কাজ বা অধ্যয়নের সময়কাল, আমেরিকার নেতৃস্থানীয় শিল্পীদের সাথে পরামর্শ এবং দর্শকদের কাজের প্রদর্শনী।[৩২][৩৩][৩৪] ১৯৫০ সালে আন্তর্জাতিক শিক্ষা বিনিময় প্রোগ্রামের অধীনে চিত্রশিল্পীদের এই আন্তর্জাতিক সম্মেলনে যোগ দেয়ার উদ্দেশ্যে সুলতান যুক্তরাষ্ট্রে যান।[টীকা ১][৩৫] সেখানে তিনি গ্যালারি এবং জাদুঘর পরিদর্শন করেন, ছবি আঁকেন, প্রদর্শনী করেন এবং বিভিন্ন সভায় বক্তব্য রাখেন।[২৮] এই সফরে নিউ ইয়র্কের ইন্সটিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল এডুকেশনের, ওয়াশিংটন, ডি.সি.র ওয়াইএমসিএ,[৩৬] বস্টন, শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্টারন্যাশনাল হাউস এবং অ্যান আর্বারের মিশিগান বিশ্ববিদ্যালয়ে তার শিল্পকর্মের প্রদর্শনী হয়। এই সফরকালে সুলতানকে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়, এবং নিউ ইয়র্ক টাইমস, ওয়াশিংটন পোস্ট, দ্য টেলিগ্রাফ, টাইমস, গার্ডিয়ান, ল্য মোঁদসহ বিভিন্ন বিখ্যাত সংবাদপত্রে তার কাজের প্রশংসামূলক সমালোচনা প্রকাশিত হয়।[২৮] তিনি ভার্মন্টেও বেশকয়েক সপ্তাহ কাটিয়েছেন।[৩৫] পরে তিনি ইংল্যান্ডে যান, যেখানে তিনি লন্ডনর হ্যাম্পস্টেডের ভিক্টোরিয়া বাঁধ গার্ডেনে বার্ষিক ওপেন-এয়ার গ্রুপ প্রদর্শনীতে অংশগ্রহণ করেন।[৩৫] সেখানে পাবলো পিকাসো, সালভাদোর দালি, জর্জেস ব্রাক, পল ক্লির মতো আধুনিক চিত্রশিল্পীদের সাথে সুলতানের চিত্রকর্ম প্রদর্শিত হয়েছিল।[৩৫] সে সময়ে ইউরোপজুড়ে তার কুড়িটির মতো চিত্রপ্রদর্শনী হয়।[১৭] সুলতানের জীবনমুখী ও বাংলার রূপের সেসব চিত্রকর্ম আলোড়িত এবং প্রশংসিত হয়েছিল।[]

১৯৫১ সালে তিনি করাচি চলে যান।[] সেখানে পারসি স্কুলের শিল্প শিক্ষক হিসেবে দুই বছর কর্মরত ছিলেন। কাশ্মীরে কিছুকাল বসবাস ও ছবি আঁকার পর, ১৯৫৩ সালের অক্টোবরে তিনি আবার নড়াইলে ফিরে আসেন।[] তিনি চিত্রা নদীের তীরে একটি পরিত্যক্ত ভবনে বসতি স্থাপন করেছিলেন, যেখানে তিনি বিভিন্ন পোষাপ্রাণীর একটি সারগ্রাহী সংগ্রহ নিয়ে থাকতেন।[৩৭] পরবর্তী তেইশ বছর তিনি মাটির কাছাকাছি বাইরের শিল্পজগত থেকে দূরে থাকতেন, ফলে একজন বিচ্ছিন্ন এবং বোহেমিয়ান হিসেবে তার পরিচিত ঘটে।[১৬][৩৮] তার কিছুদিন পর তিনি চলে আসেন চাঁচুড়ী পুরুলিয়াতে। সেখানকার পরিত্যক্ত কৈলাসটিলা জমিদারবাড়ি পরিষ্কার করে সেখানে তিনি নন্দনকানন প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং 'নন্দনকানন স্কুল অব ফাইন আর্টস' প্রতিষ্ঠা করেন।[১৫] সেখানকার ছাত্র-ছাত্রীদের কাছ থেকে তিনি কোন পারিশ্রমিক নিতেন না৷[] যদিও চারুকলা বিদ্যালয়টি পরে বন্ধ হয়ে যায়। নন্দনকানন প্রাথমিক বিদ্যালয়টি পরে চাচুড়ী পুরুলিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে পরিণত হয়। চারুকলা বিদ্যালয়টি বন্ধ হয়ে যাওয়ার পরে অনেকটা অভিমান নিয়েই সুলতান আবার নড়াইলে ফিরে আসেন।[১৭] এবার এসে তিনি শিশুশিক্ষার প্রসারে কাজ শুরু করেন। শেষবয়সে তিনি নড়াইলে শিশুস্বর্গ এবং যশোরে চারুপীঠ নামে দুটি শিশু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছিলেন।[১৫] ১৯৬৯ সালে ২০ সেপ্টেম্বর তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের খুলনা ক্লাবে সুলতানের একটি একক প্রদর্শনী হয়।[][৩৯]

বাংলাদেশ আমল

সত্তরের দশকের শুরুর দিকে তিনি নড়াইল জেলার পুরুলিয়া গ্রামে থাকতেন। সুলতান তার সেরা কিছু কাজ ১৯৭০ এবং ১৯৮০-এর দশকে তৈরি করেন। এসময় তিনি তার সবচেয়ে পরিচিত চিত্রকর্ম প্রথম বৃক্ষরোপণ (১৯৭৫) আঁকেন।[৪০] ১৯৭৬ সালের আগ অবধি পুরুলিয়া গ্রামে তার যাওয়া-আসা ছিল। ১৯৭৬ সাল পর্যন্ত, ঢাকায় আধুনিক চিত্রশিল্পের বিকাশের সময়টায় তিনি শিল্পরসিকদের চোখের আড়ালেই থেকে যান।[][১৫] সত্তরের দশকের মধ্যভাগে তার কিছু শুভানুধ্যায়ী তাকে ঢাকায় নিয়ে আসেন। এখানে এসে তিনি কিছু চিত্রকর্ম আঁকেন। ১৯৭৫ সালে ঢাকায় ১ম জাতীয় চারুকলা প্রদর্শনীতে (একটি দলগত প্রদর্শনী) তার কাজের মধ্যে পরিবর্তন দেখা যায়।[৩৯] ১৯৭৬ সালে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি তার একটি একক প্রদর্শনীর আয়োজন করে, এবং এই প্রদর্শনীর মাধ্যমেই তিনি নতুন করে শিল্পসমাজে প্রতিষ্ঠা লাভ করেন।[][১২][২৭] এটি ছিল একইসাথে তার প্রথম বড় প্রদর্শনী এবং ঢাকায় তার প্রথম চিত্রপ্রদর্শনী।[][৩৭]

আশির দশক থেকে তিনি আবার নড়াইলেই থাকতে শুরু করেন। তার কাছে যেসব মানুষ এবং শিশু আশ্রয় নিয়েছিল তাদের জন্য তিনি নিজের ঘর ছেড়ে দেন। জীবজন্তুর প্রতি ভালোবাসা থেকে তিনি একটি অভয়ারণ্য তৈরি করেন। সেখানে তিনি তার পোষা বিড়াল, কুকুর, বেজি এবং বানরের সাথে বাস করতেন—এছাড়াও তার একটি সাপ ছিল।[৪১] তিনি সম্পূর্ণ নিজস্ব অর্থায়নে শিশুদের জন্য সুন্দরী কাঠ দিয়ে একটি বড় আকারের নৌকা তৈরি করেছিলেন।[১৫] তার ইচ্ছা ছিল শিশুরা নৌকায় চড়ে সমুদ্র পরিভ্রমণে বের হবে আর শিল্পচর্চার উপকরণ খুঁজে পাবে।[১০] সুলতান শিশুদের চিত্রাঙ্কন শেখানোর জন্য নড়াইল শহরের উপকণ্ঠে কুড়িগ্রামে ১৯৭৮ সালে প্রতিষ্ঠা করেন "শিশুস্বর্গ"।[৪২] ১৯৮১ সনে ঢাকায় অনুষ্ঠিত এশীয় চারুকলা প্রদর্শনীতে তিনি আন্তর্জাতিক জুরী কমিটির সদস্য মনোনীত হন৷[] ১৯৮৬ সালের তার তেলরঙে আঁকা ধান-মাড়াই-১ (মতান্তরে ধান ঝাড়াই) শিরোনামের চিত্রকর্মগুলোতে মোটাদাগে গ্রামবাংলার চিত্র ফুটে উঠেছে। যেখানে পেশীবহুল কৃষক, গ্রামীণ নারীর দেহসৌষ্ঠব, গবাদি পশু, দোচালা খড়ের ঘর, গোলাঘর আর মাঠ-ঘাট-নদী-গাছপালার সৌন্দর্য ধরা পরে।[৪০] ১৯৮৭ সালে ঢাকার জার্মান সাংস্কৃতিক কেন্দ্রে তার একক প্রদর্শনীর ক্যাটালগে তার চিত্রকর্মের বিষয়বস্তুগুলোকে তিনি কীভাবে দেখতেন তার বর্ণনা করা হয়েছিল:

এই মানুষগুলো, যারা মাটির কাছাকাছি জীবনযাপন করত এবং যাদের কাঁধে সভ্যতার বোঝা ছিল, সুলতানের কাছে তারা দুর্বল, অবসন্ন বা করুণার যোগ্য ক্ষুধার্ত প্রাণী বলে মনে হয়নি। বরং বিপরীতভাবে, তিনি তাদের ফুলে ওঠা পেশী, সবল দেহ, তেজস্বী প্রাণশক্তি, সুগঠিত নিতম্ব এবং স্ফীত বক্ষ দেখেছিলেন, যারা জীবনের সাথে লড়াই করতে প্রস্তুত ছিল।

সুলতানের চিত্রকর্মের নায়ক ছিল বাংলার কৃষকেরা, তিনি তার শিল্পে তাদের স্থান বর্ণনা করেছিলেন:

আশির দশকের শেষদিকে তার স্বাস্থ্য খারাপ হতে থাকে। ১৯৯৪ সালে ঢাকার গ্যালারি টোনে তার সর্বশেষ প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হয়।[১২] সে বছরেরই আগস্ট মাসে নড়াইলে ঘটা করে তার জন্মদিন পালন করা হয়।

শৈলী এবং শিল্পকর্ম

সুলতানের প্রথমদিকের চিত্রকর্মগুলো পশ্চিমা কৌশল এবং গঠন, বিশেষ করে অন্তর্মুদ্রাবাদ দ্বারা প্রভাবিত। তেলেরঙে তিনি ভিনসেন্ট ফন গখের ইম্পাস্টো কৌশল ব্যবহার করতেন। ভারতীয় উপমহাদেশের সর্বশ্রেষ্ঠ শিল্পীদের একজন হিসেবে তার তার অন্তর্মুদ্রাবাদী চিত্রকর্ম, তুলির তেজ ও নড়াচড়া, অবয়বের লাবণ্যতা, তাদের জাগতিকতা এবং কামুক সৌন্দর্য সম্পূর্ণরূপে মুক্ত নান্দনিকতার অন্তর্নিহিত যুক্তি প্রদান করতে সক্ষম।[] তার জলরঙের চিত্রগুলো ছিল প্রধানত প্রাকৃতিক দৃশ্য, উজ্জ্বল ও প্রাণবন্ত।[][৪৩] তার চিত্রকর্মের প্রধান বিষয়বস্তু ছিল প্রকৃতি ও গ্রামীণ জীবন।[] তার চিত্রকর্মের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হল প্রাণবন্ত রঙের যথেষ্ট ব্যবহার।[৪৪] ১৯৫২ সালে ত্রৈমাসিক পাকিস্তানে লেখক এস. আমজাদ আলী সুলতানকে "ল্যান্ডস্কেপ শিল্পী" হিসেবে বর্ণনা করেছিলেন। তার দৃশ্যপটে থাকা মানবচরিত্রগুলো ছিল গৌণ। আলীর মতে, সুলতান স্মৃতি থেকে আঁকতেন এবং তার শৈলী ছিল এমন যা নির্দিষ্ট কোনো পরিচয় বা উৎসের সাথে সম্পৃক্ত ছিল না।[৪৩] পাকিস্তানে আমলে তিনি কিছু বিমূর্ত ছবি এঁকেছেন, যদিও পরে তা আর দেখা যায় না। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, "এর পেছনে একটি কারণ হতে পারে মুক্তিযুদ্ধ। যুদ্ধের পরে, আমি সাধারণ মানুষ এবং কৃষকদের আঁকার টান অনুভব করেছি। তাদের অবদানই শহরটিকে গড়ে তুলতে সাহায্য করেছিল, এবং সেই কারণেই তাদের দৈহিক দেহ আমাকে আন্দোলিত করেছিল।"[২০]

পঞ্চাশের দশকের মধ্যভাগে বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকায় আধুনিক চিত্রকলার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ কাজ হচ্ছিল। অনেক শিল্পীই সেখানে নতুন শৈলী, গড়ন এবং মিডিয়া নিয়ে উপস্থিত হচ্ছিলেন। কিন্তু সুলতান সেসময়ও গ্রামীণ জীবনের প্রতি তার চিরন্তন আকর্ষণ এবং সহমর্মিতার ফলে নড়াইলে থেকে যান, অনেকটা লোকচক্ষুর অন্তরালে। তার শিল্পকর্মের স্বরূপ খুঁজে পাওয়া যায় এই গ্রামীণ জীবনযাত্রার প্রেক্ষাপটে। একজন আভঁ-গার্দ শিল্পী হিসেবে, সুলতান কৃষকদের তার প্রেরণা হিসেবে বেছে নেন।[৪৫] তার কাজগুলোতে কৃষকদের দৃঢ় সাহস, টিকে থাকার শক্তি এবং জমির প্রতি অবিরাম প্রতিশ্রুতি চিত্রিত হয়েছে।[৪৫] তার সেসময়কার চিত্রকর্মগুলোতে গ্রামীণ কৃষকদের দেখা যায় পেশীবহুল এবং বলশালী হিসেবে। এবিষয়ে তার বক্তব্য হল:[১০]

সুলতানের পুরুষদের চিত্রে পেশীবহুল আধিক্য চিত্রিত করার প্রবণতার কারণে, কিছু শিল্প বিশেষজ্ঞ তার রচনাগুলিতে ইউরোপীয় রেনেসাঁ শিল্পের প্রভাব খুঁজে পান।[৪৪] ১৯৭৬ সালে তার আঁকা শিল্পকর্ম নিয়ে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির প্রদর্শনীতে তার চিত্রকর্মের মহিমা নতুন করে প্রস্ফুটিত হয়। এই চিত্রকর্মগুলোর মধ্যে দেখা যায় বিশ্বের কেন্দ্র হচ্ছে গ্রাম আর সেই কেন্দ্রের রূপকার কৃষককে আপন মহিমায় সেখানে অধিষ্ঠিত দেখা যায়। গ্রাম ও গ্রামের মানুষ ছিল তার শিল্পকর্মের অনুপ্রেরণা আর উপকরণ ছিল কৃষক এবং কৃষকের জীবন চেতনা। বিদ্যালয় জীবনে সুলতান কয়লা দিয়ে ছবি আঁকতেন।[৪৫] পরিণত বয়সে তিনি তেলরঙ এবং জলরঙে চিত্রকর্ম আঁকতেন৷ পাশাপাশি এঁকেছেন রেখাচিত্র। আঁকার জন্য তিনি একেবারে সাধারণ কাগজ, রঙ এবং চটের ক্যানভাস ব্যবহার করেছেন। এজন্য তার অনেক চিত্রকর্মই রঙ নষ্ট হয়ে যাচ্ছিল, যদিও এসবের প্রতি তিনি তেমন ভ্রূক্ষেপ করতেন না। নড়াইলে থাকাকালীন সময়ে তিনি অনেক চিত্রকর্ম কয়লা দিয়ে একেছিলেন তবে সঠিকভাবে সংরক্ষণের অভাবে সেগুলো নষ্ট হয়ে যায়৷ সুলতান তার সমাপ্ত চিত্রকর্মগুলোর সামান্যই যত্ন নিতেন, ফলে সেগুলির অধিকাংশ হারিয়ে যায়। চিত্রকর্ম সংরক্ষণ করার উদ্দেশ্যে এমন উপকরণ ব্যবহারেও তিনি নির্লিপ্ত ছিলেন।[] ফলে জীবিতকালে তিনি নিজের শিল্পকর্ম সংরক্ষণে কোন তাগিদ দেখাননি।[৪৬]

তবে, তার পরবর্তী কাজগুলিতে বিশেষত, ১৯৭৬ সালে প্রদর্শিত কাজগুলিতে, তার শিল্প কৌশল এবং গঠনগুলিকে উপনিবেশিত করার একটি ধ্রুবক প্রলোভন দেখা যায়।[৪৭] সুলতানের ক্যানভাসে হাল চাষ, রোপণ, মাড়াই এবং মাছ ধরার মতো দৈনন্দিন কাজে কৃষিশ্রমিকরা ভূমিকা পালন করতেন। প্রাকৃতিক দৃশ্য—ফসলের জমি, নদী, গ্রাম—তখন কেবল পটভূমি হিসেবে ছিল। তার আঁকা চরিত্রগুলোর, যেমন ১৯৭৬ সালের চরদখল চিত্রকর্মের, বিশেষ বৈশিষ্ট্য ছিল তাদের অতিরঞ্জিত পেশীবহুল গঠন। এইভাবে, তিনি বাংলাদেশের সমর্থ, পরিশ্রমী কৃষকদের আভ্যন্তরীণ শক্তি ফুটিয়ে তোলেন, যারা জাতির মেরুদণ্ড, যা আরও বাস্তবধর্মী চিত্রায়ণে হয়তো লুকায়িত থেকে যেত।[][][৩১] তার চিত্রকর্মে গ্রামীণ রমণীদের দেখা যায় সুডৌল ও সুঠাম গড়নে। নারীর মধ্যে উপস্থিত চিরাচরিত রূপলাবণ্যের সাথে তিনি শক্তির সম্মিলন ঘটিয়েছিলেন। একই সাথে তার এ চিত্রকর্মগুলোতে গ্রামীণ প্রেক্ষাপটের শ্রেণী-দ্বন্দ্ব এবং গ্রামীণ অর্থনীতির কিছু ক্রূর বাস্তবতা উঠে এসেছে। তার এরকম দুটি বিখ্যাত চিত্রকর্ম হচ্ছে হত্যাযজ্ঞ (১৯৮৭) এবং চরদখল (১৯৮৮)।[] ১৯৮৭ সালের ৬ মে সাপ্তাহিক প্রহরের সাথে এক সাক্ষাৎকারে সুলতান তার চিত্রকর্মে পেশীবহুল কৃষকদের চিত্রায়নের পেছনের অনুপ্রেরণার কথা তুলে ধরেন। তিনি ব্যাখ্যা করেছিলেন, "কৃষকরাই আমাদের দেশের প্রকৃত নায়ক, কোনও নায়ক কি কখনও দুর্বল হতে পারে? তারা আমাদের অস্তিত্বের মূল চালিকা শক্তি, তাই তাদের সবসময় সবল হিসেবে চিত্রিত করা উচিত। তারা কঠিন মাটিতে লাঙল চালিয়ে ফসল ফলায়, অথচ প্রায়ই ক্ষুধা ও দারিদ্র্যের মধ্যে দিন কাটায়। বাস্তবতা হলো, আমাদের টিকে থাকা তাদের শ্রমের উপর নির্ভর করে। বাস্তব জীবনে তাদের কৃশতা ও বঞ্চনা সত্ত্বেও আমি তাদের শক্তির প্রতীক হিসেবে উপস্থাপন করতে পছন্দ করি। আমি আশা করি, এই উপস্থাপনা তাদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার প্রতি সমৃদ্ধি ও শ্রদ্ধার এক দৃষ্টিভঙ্গি প্রতিফলিত করবে।[] তার চিত্রকর্মে পুরুষদের তুলনায় নারীদের কোমলভাবে চিত্রায়িত করার প্রসঙ্গে তিনি বলেন যে নারীদের ভালোবাসা ও মমতায় পূর্ণ ভূমিকা তাকে গভীরভাবে অনুপ্রাণিত করে।[] চিত্রকর্মে তার নারীরা- কোমল-স্তনবিশিষ্ট এবং তাদের লাবণ্য প্রাচীন ভারতীয় ঐতিহ্যের অন্তর্গত।[৪৪]

সুলতানের চিত্রকর্মে কখনো নগর উপাদান বা আধুনিক প্রযুক্তি দ্বারা তৈরি কিছুই অন্তর্ভুক্ত হয়নি, যা তিনি আমদানিকৃত মনে করতেন। এগুলো আধুনিক শিল্প হিসাবে গণ্য করা যায় কারণ তিনি অতীতের শিল্পকর্মের রীতিকে ভেঙে দিয়েছেন, কিন্তু এগুলো রূপবাদী শিল্প ছিল যা একটি বর্ণনা ধারণ করে। তিনি বিমূর্ত শিল্পের প্রতি তেমন আগ্রহী ছিলেন না।[][৪৩] সুলতান আধুনিকতার একটি নিজস্ব সংজ্ঞা গ্রহণ করেছিলেন। তার তেমন কোনো অনুসারী ছিলনা যারা একই সংজ্ঞা মেনে শিল্পচর্চা করতেন। একারণেই তার প্রতিষ্ঠিত আধুনিকতার স্বরূপ নিয়ে নতুন কোনো ধারার সৃষ্টি হয়নি। কেউ তার মত করে আধুনিকতার ব্যাখ্যাও দেননি। এছাড়া তার মত মাটির জীবন তখনকার কোনো শিল্পী যাপন করেননি। তার কাছে আধুনিকতার সংজ্ঞা কেমন ছিল তা বলতে গিয়ে বাংলাপিডিয়ায় তার জীবনীর লেখক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম লিখেছেন:[]

তাঁর কাছে অবয়বধর্মিতাই প্রধান। তিনি আধুনিক, বিমূর্ত শিল্পের চর্চা করেননি; তাঁর আধুনিকতা ছিল জীবনের শাশ্বত বোধ ও শিকড়ের প্রতিষ্ঠা করা। তিনি ফর্মের নিরীক্ষাকে গুরুত্ব দেননি, দিয়েছেন মানুষের ভেতরের শক্তির উত্থানকে, ঔপনিবেশিক শক্তির বিরুদ্ধে লড়াই এবং ঔপনিবেশিক সংগ্রামের নানা প্রকাশকে তিনি সময়ের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে উপস্থাপন করেছেন। এটাই তাঁর কাছে ছিল 'আধুনিকতা', অর্থাৎ তিনি ইউরো-কেন্দ্রিক, নগর নির্ভর, যান্ত্রিকতা-আবদ্ধ আধুনিকতার পরিবর্তে অন্বেষণ করেছেন অনেকটা ইউরোপের রেনেসাঁর শিল্পীদের মত মানবের কর্মবিশ্বকে।

শিল্প সমালোচকদের মতে, সুলতান সম্ভবত সমসাময়িক বাংলাদেশের সবচেয়ে রহস্যময় চিত্রশিল্পী ছিলেন।[৪৮] তার চিত্রকর্ম অতি সরল কিন্তু অত্যন্ত দার্শনিকতাপূর্ণ।[] আহমদ ছফার মতে সুলতানের কর্ম রেনেসাঁর চিত্রকর্মের যথেষ্ট সাক্ষ্য বহন করে।[] পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর সুলতান বেশিরভাগই বাংলা ও কাশ্মীরের ল্যান্ডস্কেপ একেছেন।[৩৫] কাশ্মীরে, যখন তিনি তার স্মৃতি থেকে বাংলার চিত্র আঁকলেন, তখন সেগুলো ছিল জলরঙে আঁকা, যাতে ছিল পাম গাছনৌকা[৪১] তিনি তার চিত্রকর্মের বিষয় হিসাবে কৃষকদের বেছে নিয়েছিলেন। তার চিত্রকর্মগুলি কৃষকদের বীরত্ব, বেঁচে থাকার শক্তি এবং ভূমির প্রতি অবিরাম প্রতিশ্রুতিকে চিত্রিত করেছে।[] সুলতানের চরিত্র ছিল কৃষক, গ্রামীণ নারী, শিশু, পশু এমনকি পোষা প্রাণী।[] তিনি বাড়িতে তৈরি মাটির রং ব্যবহার করে বড় পাটের ক্যানভাসে ছবি আঁকতেন।[] তার জলরংয়ে আঁকা চিত্রকর্মগুলিতে তিনি উজ্জ্বল-প্রাণবন্ত এবং গ্রামীণ জীবনের মনোরম দৃশ্য ফুটিয়ে তুলেছেন। সুলতানের অনেক আকর্ষণীয় তৈলচিত্র গ্রামজীবনের সংগ্রাম এবং স্থিতিস্থাপকতার মহাকাব্যিক আখ্যান তৈরি করে। তিনি কোনো ফাঁকা স্থান না রেখেই পুরো ক্যানভাস জুড়ে আঁকতেন। সুলতানের অক্ষত থাকা অনেক চিত্রকর্মে প্রাকৃতিক দৃশ্য, শান্ত প্রাণী, প্রাণবন্ত পুরুষ এবং স্বেচ্ছাচারী নারীদের চিত্রায়ন দেখা যায়।[] আধুনিক ইতিহাস গবেষণার পথিকৃৎ সিরাজুল ইসলাম এক প্রদর্শনী দেখে লিখেছিলেন, "এখানে এই অর্থে পার্থক্য সহ একটি প্রদর্শন রয়েছে যে এত বড় ক্যানভাসে এবং এত বড় পরিসরে এর আগে কোনও শিল্পী নিপুণ স্ট্রোক চালানোর সাহস করেননি। … এস এম সুলতান তার অসাধারণ শক্তিশালী চিত্রকর্মগুলিতে একটি নৈতিক এবং আধ্যাত্মিক স্পর্শ প্রদান করেছেন।"[]

শিল্পসমালোচক মারিও পালমা তার "টেলস অব অ্যান আর্ট লাভার" গ্রন্থে সুলতান সম্পর্কে লিখেছেন, "আমার মতে, সুলতান হলেন বাংলাদেশের মাটি ও আত্মার সর্বশ্রেষ্ঠ ব্যাখ্যাকার... তার চিত্রকর্মগুলি সমসাময়িক শিল্পের দৃশ্যে সত্যিই আকর্ষণীয় এবং অনন্য।"[] বোরহানউদ্দিন খান জাহাঙ্গীর, সুলতানের উপর তার দেশজ আধুনিকতা : সুলতানের কাজ (১৯৯৯) বইয়ে বলেছেন, "তাহলে সুলতান আসলে কে? একজন লুকানো পিকাসো? একজন অনাবিষ্কৃত ভিনসেন্ট ফন গখ? নিজের মধ্যে, সুলতান উভয়কে একত্রিত করেছেন। হয়তো আরও বেশি..."।[] তবে ১৯৮৭ সালের ৬ মে, সাপ্তাহিক প্রহারের সাথে একটি সাক্ষাৎকারে, সুলতান স্পষ্টভাবে পিকাসোর সাথে তার শৈলীগত তুলনা নিশ্চিত বা অস্বীকার করেননি।[] সুলতান বলেছিলেন, "পিকাসো এবং আমার মধ্যে কিছু পার্থক্য রয়েছে। পিকাসো আলংকারিক শিল্প থেকে নন-ফিগারেটিভ শিল্পে স্থানান্তরিত হয়েছিলেন এবং আমি নন-ফিগারেটিভ আর্ট থেকে আলংকারিক শিল্পে স্থানান্তরিত হয়েছি। পিকাসো তার গের্নিকা (১৯৩৭) চিত্রকর্মে সংঘটিত সহিংসতার একটি ছবি এঁকেছিলেন। আমি একটি বলিদানের ছবি এঁকেছিলাম।"[] আহমদ ছফা, দৈনিক যুগান্তরে লিখেছেন "সুলতানের চিত্রকর্মে অনন্তকাল এবং উজ্জ্বলতা রয়েছে যা অন্য শিল্পীদের মধ্যে খুব কমই পাওয়া যায়। জয়নুল আবেদিনও একজন প্রখ্যাত শিল্পী ছিলেন, কিন্তু সুলতানের সার্বজনীনতাই তাকে অন্য সবার থেকে আলাদা করেছে। আমাদের দেশের অধিকাংশ শিল্পীর মধ্যে এই বিশেষ বৈশিষ্ট্যটি অনুপস্থিত।"।[৪৯]

সুলতান শেষজীবনে বলে গিয়েছেন:[১০]

খ্যাতি এবং উত্তরাধিকার

চিত্র:S M Sultan, Bangladesh Postage Stamp, 26 June 1997.jpg
১৯৯৭ সালের ২৬ জুন প্রবর্তিত বাংলাদেশের ডাকটিকিটে সুলতানের চিত্রকর্ম জমি কর্ষণ-২

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাস্কর্য বিভাগের চেয়ারম্যান অধাপক লালা রুখ সেলিম, সুলতানকে বাংলাদেশের আধুনিকতার চারজন অগ্রদূতের মধ্যে একজন হিসেবে বর্ণনা করেছেন, যাদের মধ্যে জয়নুল আবেদিন, সফিউদ্দীন আহমেদ, এবং কামরুল হাসানও রয়েছেন।[] আহমদ ছফা তার প্রতিভাময় ও গভীর বিশ্লেষণমূলক লেখায় সুলতান সম্পর্কে উল্লেখ করেছেন, "সুলতানের চিত্রে যে মানুষগুলো ফুটে উঠেছে, তারা যদিও বাংলাদেশের, আসলে তারা পৃথিবীরই সন্তান… তিনি তুলনাহীন, কারণ অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর, যামিনী রায়, নন্দলাল বসু, জয়নুল আবেদিন, কামরুল হাসান, আব্দুর রহমান চুঘতাই কিংবা আহমেদ সাঈদ নাগীর মতো খ্যাতিমান শিল্পীদের মতো উপমহাদেশীয় আদর্শ ও ধাঁচের বাইরে বেরিয়ে এসে তিনি নিজেকে মহাকাব্যিক সৃষ্টিকারী হিসেবে প্রমাণ করেছেন।"[২৮]

১৯৫০-এর দশকে শিকাগো ক্রনিকলে তাকে 'মানবতাকে উপড়ে ফেলা' একজন ভালো শিল্পী হিসেবে প্রশংসা করা হয়েছিল।[৪১] ১৯৮৪ সালেে তাকে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির তাকে আজীবন শিল্পী হিসেবে নিয়োগ দেয়, যা তার শিল্পের অবিচল প্রভাব ও শিল্পজগতে তার সম্মানিত অবস্থানের প্রতিফলন।[৫০][১৭][] সুলতানের চিত্রকর্ম জমি চাষ (১৯৮৬) বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরের ১০০টি প্রসিদ্ধ বস্তুর তালিকায় ৯৩তম স্থানে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।[৫১][৫২] ২০২৪ সালে তার জন্ম শতবর্ষে সুলতান জাতীয় ও আন্তর্জাতিক উদ্‌যাপন কমিটি গঠিত হয়েছিল।[৪৬]

সাহিত্যিক হাসনাত আব্দুল হাই সুলতানের জীবন নিয়ে সুলতান (১৯৯১) নামে একটি গবেষণামূলক উপন্যাস লিখেছেন,[১৯] যা পরে কবি শামসুর রাহমান তার প্রবন্ধে "সুলতান তার সুলতানাত ছাড়েননি" শিরোনামে সুপারিশ করেছিলেন।[২৮] ২০০৫ সালে আলোকচিত্রী নাসির আলী মামুন গুরু নামে একটি বই প্রকাশ করেন, যাতে সুলতানের ৬৮টি আলোকচিত্র রয়েছে। এই ছবিগুলো ১৯৭৮ সালে সুলতানের সাথে নাসির আলী মামুনের প্রথম সাক্ষাত থেকে তার মৃত্যুর সময় পর্যন্ত তোলা সহস্রাধিক ছবির মধ্যে থেকে নির্বাচন করা হয়েছে।[৫৩]

প্রামাণ্য চলচ্চিত্র

১৯৮৯ সালে বাংলাদেশী চলচ্চিত্রনির্মাতা তারেক মাসুদ, শিল্পী এস এম সুলতানের জীবন ও কাজের উপর ভিত্তি করে আদম সুরত সামে একটি ৫৪ মিনিটের প্রামাণ্য চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন। ১৯৮২ সাল থেকে ১৯৮৯ সাল পর্যন্ত সাত বছর ধরে সুলতানের সাহচর্যে থেকে মাসুদ এটি নির্মাণ করেন।[] এই প্রামাণ্যচিত্রে সুলতানের দৈনন্দিন কর্মজীবন তুলে ধরার পাশাপাশি বাংলার সংস্কৃতি এবং কৃষিচিত্র উপস্থাপন করা হয়েছে।[৫৪] মাসুদের মতে, প্রাথমিক অবস্থায় শিল্পী সুলতান স্বভাববশত গণমাধ্যম বা ক্যামেরার সামনে আসতে অনিচ্ছা প্রকাশ করেন। তবে পরে তিনি সহযোগিতা করতে রাজি হয়েছিলেন কেবল এই শর্তে যে "... আমি বরং নিমিত্ত, আমাকে উপলক্ষ করে আপনারা বাংলার কৃষকের ওপর ছবি বানান। আমি আপনাদের সঙ্গে ক্যাটালিস্ট হিসেবে থাকব।"[৫৫]

সুলতানের জীবন এবং কর্মের ওপর ২০১০ সালে ফাহিম মিউজিকের ব্যানারে লাল মিয়া নামে প্রামাণ্যচিত্র নির্মাণ করেছেন আমিরুল ইসলাম। এতে সুলতানের স্মৃতিবিজড়িত নড়াইলের বিভিন্ন স্থান, চিত্রা নদী, শিশুস্বর্গ, বিভিন্ন সময়ে তার আঁকা চিত্র ও দুর্লভ আলোকচিত্র রয়েছে। এছাড়াও রয়েছে সুলতানের পাঁচ মিনিটের একটি সাক্ষাৎকার।[৫৬]

সুলতান স্বর্ণ পদক

বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি "সুলতান স্বর্ণ পদক" নামে একটি পুরস্কার চালু করেছে। সুলতানের নামে নামকরণ করা এই পুরস্কারটি প্রতি বছর তার জন্মবার্ষিকী উদযাপন অনুষ্ঠানে একজন বিশিষ্ট শিল্পীকে প্রদান করা হয়।[৫৭] ২০২০ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত পুরস্কার প্রাপ্তদের মধ্যে রয়েছেন কাইয়ুম চৌধুরী, রফিকুন নবী, মুর্তজা বশীর, আমিনুল ইসলাম, সৈয়দ জাহাঙ্গীর, মাহমুদুল হক, আব্দুস শাকুর শাহ্, আবুল বারাক আলভী, সমরজিৎ রায় চৌধুরী, আবু তাহের, হামিদুজ্জামান খান, মনিরুল ইসলাম, মনসুর উল করিম, কালিদাস কর্মকার, আব্দুল মান্নান, হাশেম খান, ফেরদৌসী প্রিয়ভাষিণী, মোস্তফা মন্ওয়ার এবং ফরিদা জামান[৫৭]

সংগ্রহশালা

বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর, জাতীয় চিত্রশালা (বাংলাদেশ), এস.এম. সুলতান স্মৃতি জাদুঘর এবং বেঙ্গল ফাউন্ডেশন সহ বাংলাদেশের বেশকয়েকটি বড় সংগ্রহে তার কাজ সংরক্ষিত আছে।[৫৮]

সুলতান কমপ্লেক্স

সুলতানের স্মৃতিসংগ্রহ সুলতান কমপ্লেক্স চিত্রা নদীর তীরে নড়াইল শহরের মাছিমদিয়া এলাকায় মনোরম পরিবেশে প্রায় ২৬ একর এলাকা জুড়ে অবস্থিত। এখানে চিত্রশিল্পী সুলতানকে সমাহিত করা হয়েছে। সমাধির সামনে সুলতানের আদি বাসভবনের একটি ছোট অংশ রয়েছে। লাল সিরামিক দিয়ে মোড়ানো কমপ্লেক্সটি শান্ত, নির্জন এবং চমৎকার সব চিত্রকর্ম সুলতান কমপ্লেক্সের মর্যাদা বাড়িয়ে দিয়েছে। কমপ্লেক্সের পাশে চিত্রা নদীর পাড়ে সংরক্ষিত হয়েছে সুলতানের তৈরি "শিশুস্বর্গ"।[৫৯] এই কমপ্লেক্সে শিশুদের জন্য সুলতানের তৈরি নৌকা সংরক্ষিত আছে।[৬০]

সুলতান স্মৃতি সংগ্রহশালা

নড়াইলের মাছিমদিয়ায় চিত্রা নদীর পারে সরকারি উদ্যোগে ২০১৬ সালে এস এম সুলতান স্মৃতি সংগ্রহশালা প্রতিষ্ঠা করা হয়।[৬১] দোতলা জাদুঘরটি শিল্পীর স্মৃতিতে পূর্ণ, যা তার শিল্পকর্মের সমৃদ্ধ স্মারক বহন করে। যদিও কিছু জিনিসপত্র সময়ের সাথে সাথে হারিয়ে গেছে, তারপরও সুলতানের কিছু ব্যক্তিগত সামগ্রী এখনও রয়েছে - যার মধ্যে রয়েছে কুরআন, পোশাক, রং-তুলি, ক্যানভাস, বাদ্যযন্ত্র, লাঠি, টর্চ, আয়না, ফুলদানি, ছবি এবং আরও অনেক কিছু। এই সংগ্রহশালায় সুলতানের ৭৭টি শিল্পকর্ম রয়েছে যার মধ্যে একটি অসম্পূর্ণ।[৬০]

উল্লেখযোগ্য চিত্রকর্ম

প্রদর্শনীসমূহ

স্বাধীন বাংলাদেশে সুলতানের শিল্পকর্ম নিয়ে মাত্র দুটি শিল্প প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হয়েছিল। প্রথমটি ১৯৭৬ সালে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমিতে এবং দ্বিতীয়টি ১৯৮৭ সালে জার্মান সাংস্কৃতিক কেন্দ্রে (বর্তমানে গ্যোটে ইনস্টিটিউট)।[৪৯]

একক প্রদর্শনী

সুলতানের জীবদ্দশায় এবং মৃত্যুর পর দেশে-বিদেশে তার বহু একক চিত্রপ্রদর্শনী আয়োজিত হয়েছে।[১১] এর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন শহরে তার ১৭টি একক প্রদর্শনী হয়েছিল।[]

বছর স্থান তথ্যসূত্র
১৯৪৬ সিমলা, ভারত প্রদর্শনী উদ্বোধন করেন কাপুরথালার মহারাজা[][১১]
১৯৪৮ লাহোর, পাকিস্তান প্রদর্শনী উদ্বোধন করেন পাকিস্তানের ৭ম প্রধানমন্ত্রী ফিরোজ খান নুন[১১]
১৯৪৯ করাচি, পাকিস্তান প্রদর্শনী উদ্বোধন করেন ফাতেমা জিন্নাহ[১১]
১৯৫০ ইন্টারন্যাশনাল এডুকেশন ইনস্টিটিউট, নিউ ইয়র্ক, যুক্তরাষ্ট্র [১১]
ওয়াইএমসিএ, ওয়াশিংটন, ডি.সি. [৩৬]
বোস্টন, যুক্তরাষ্ট্র [১১]
ইন্টারন্যাশনাল হাউজ, শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়, যুক্তরাষ্ট্র [১১]
মিশিগান বিশ্ববিদ্যালয়, অ্যান আর্বার, মিশিগান, যুক্তরাষ্ট্র [১১]
২০ সেপ্টেম্বর ১৯৬৯ খুলনা ক্লাব, খুলনা, পূর্ব পাকিস্তান [][৩৯]
১৯৭৬ বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি, ঢাকা, বাংলাদেশ বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের পর সুলতানের প্রথম একক প্রদর্শনী[১১]
১৯৮১ এশীয় চারুকলা প্রদর্শনী, ফুকুওকা জাদুঘর, জাপান []
১৯৮৭ গ্যোটে ইনস্টিটিউট, ঢাকা, বাংলাদেশ [][১১]
১৯৯৪ গ্যালারি টোন, ঢাকা, বাংলাদেশ [১২]

যৌথ প্রদর্শনী

বছর স্থান তথ্যসূত্র
১৯৫৬ ভিক্টোরিয়া এম্ব্যাঙ্কমেন্ট গার্ডেন, হ্যামস্টেড, লন্ডন, যুক্তরাজ্য পাবলো পিকাসো, সালভাদোর দালি, জর্জেস ব্রাক, পল ক্লী, জন মার্টিন প্রমুখের সাথে যৌথ প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হয়।[১১][][৩৫]
১৯৭৫ জাতীয় চারুকলা প্রদর্শনী, বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি, ঢাকা, বাংলাদেশ [১১]
১৯৭৬ জাতীয় চারুকলা প্রদর্শনী, বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি, ঢাকা, বাংলাদেশ [১১]

পুরস্কার এবং সম্মাননা

তিনি ১৯৮০-এর দশকে যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট রোনাল্ড রিগ্যানের কাছ থেকে শ্রেষ্ঠত্বের পুরস্কার গ্রহণ করেন।[১১] তিনি ১৯৫১ সালে নিউ ইয়র্কে, ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল এডুকেশন কর্তৃক আয়োজিত সেমিনারে সরকারি প্রতিনিধি হিসেবে অংশগ্রহণ করেন৷ এছাড়াও ১৯৮১ খ্রিষ্টাব্দে ঢাকায় অনুষ্ঠিত এশীয় চারুকলা প্রদর্শনীতে আন্তর্জাতিক জুরী কমিটির অন্যতম সদস্য মনোনীত হন৷[] কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে "ম্যান অব অ্যাচিভমেন্ট" সম্মাননা প্রদান অনুষ্ঠানের বক্তব্যে তিনি বলছেন, "শিল্পের কখনো পুরস্কার হয় না। শিল্পের ভার তো প্রকৃতি স্বীয় হাতে প্রদান করে।"[]

বছর পুরস্কার আয়োজক টীকা
১৯৮২ "ম্যান অব অ্যাচিভমেন্ট" খেতাব কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় []
"ম্যান অব এশিয়া" খেতাব এশিয়া উইক
একুশে পদক বাংলাদেশ সরকার চারুকলায় অবদান[৬৪]
১৯৮৪ "আর্টিস্ট অব রেসিডেন্ট" বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি [১৭]
১৯৮৬ বাংলাদেশ চারুশিল্পী সংসদ সম্মান বাংলাদেশ চারুশিল্পী সংসদ [][১১]
১৯৯৩ স্বাধীনতা দিবস পুরস্কার বাংলাদেশ সরকার চারুকলায় অবদান[]

ব্যক্তিগত জীবন

সুলতান সাধারণত দীর্ঘ কালো কুর্তা, এবং একটি স্কার্ফ পরিধান করতেন। তিনি ছিলেন একজন সুরসাধক এবং বাঁশিবাদক। রাতের বেলা চিত্রা নদীর তীরে তিনি বাঁশি বাজাতেন।[] এছাড়াও বাজাতেন তবলা। মাঝে মাঝে শাড়ি পরে পায়ে ঘুঙুর পায়ে নাচতেন।[] তিনি বিষেষভাবে বিড়ালদের সঙ্গ পছন্দ করতেন।[] তিনি মুঘল সম্রাটদের নামে তার বিড়ালদের নাম রেখেছিলেন। ১৯৯২ সালে দিকে তার পাচটি বিড়ালের নাম জানা যায়, যথাক্রমে জাহাঙ্গীর, দারাশিকো, সাজাহান, বাবর এবং আওরঙ্গজেব।[৬৫] নিজের সৃষ্টিকর্মের বিষয়ে তার ছিল নির্মোহ দৃষ্টি। তার জীবনের অন্যতম চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য ছিল শহরকেন্দ্রিক জীবনযাপনে অনীহা।[৬৬]

১৯৯৪ সাল পর্যন্ত তিনি নড়াইলের মাছিমদিয়ায় নিজ বাসস্থানে পালিত কন্যা নীহার বালাকে নিয়ে বাস করেতেন।[৬০][৬৭] সুলতান ১৯৯৪ সালের ১০ অক্টোবর যশোরে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে বিকেল ৪টা ৩৫ মিনিটে শেষনিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।[][] জীবনের শেষসময় পর্যন্ত তিনি শিশুদের আঁকা শেখাতেন।[৪৪]

টীকা

  1. জার্মান সাংস্কৃতিক কেন্দ্রেের এস.এম. সুলতান এবং তাঁর চিত্রকর্ম এবং বাংলাপিডিয়ার নিবন্ধে সুলতানের যুক্তরাষ্ট্র সফরের তারিখ দেয়া আছে ১৯৫০ সাল। "স্বাধীনতা পুরস্কার তালিকা বিবরণী" বলছে এটা ছিল ১৯৫১ সাল। আইইই এবং রকফেলার ফাউন্ডেশনের বার্ষিক প্রতিবেদনের অনুযায়ী, ১৯৫১-১৯৫২ শিক্ষাবর্ষ ছিল প্রথম বছর যখন পাকিস্তান আইইই-এর আন্তর্জাতিক শিল্প কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করেছিল।

তথ্যসূত্র

  1. বিশ্বাস, দোয়েল (১০ আগস্ট ২০২৩)। "100 Years of SM Sultan" (ইংরেজি ভাষায়)। দ্য ডেইলি স্টার (বাংলাদেশ)। ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪ 
  2. "এস এম সুলতানের মৃত্যুবার্ষিকী আজ"প্রথম আলো। ১০ অক্টোবর ২০১৫। ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২ জুলাই ২০২০ 
  3. সেলিম, লালা রুখ (২০১৪)। "Art of Bangladesh: the Changing Role of Tradition, Search for Identity and Globalization"সাউথ এশিয়া মাল্টিডিসিপ্লিনারি একাডেমিক জার্নাল (ইংরেজি ভাষায়)। ডিওআই:10.4000/samaj.3725। ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪ 
  4. "S M Sultan"বেঙ্গল ফাউন্ডেশন। ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪ 
  5. "স্বাধীনতা পুরস্কারপ্রাপ্ত ব্যক্তি/প্রতিষ্ঠানের পরিচিতি"মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। ২৩ আগস্ট ২০১১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৮ জুলাই ২০১৪ 
  6. কলা ও বিনোদন ডেস্ক (১০ আগস্ট ২০২৪)। "Celebrating SM Sultan's birth anniversary: The timeless legacy of a pioneering art icon" (ইংরেজি ভাষায়)। দ্য ডেইলি স্টার। ১০ আগস্ট ২০২৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪ 
  7. সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম (২০১২)। "সুলতান, এস.এম"ইসলাম, সিরাজুল; মিয়া, সাজাহান; খানম, মাহফুজা; আহমেদ, সাব্বীর। বাংলাপিডিয়া: বাংলাদেশের জাতীয় বিশ্বকোষ (২য় সংস্করণ)। ঢাকা, বাংলাদেশ: বাংলাপিডিয়া ট্রাস্ট, বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটিআইএসবিএন 9843205901ওএল 30677644Mওসিএলসি 883871743 
  8. খান ২০০৩, পৃ. ৩১।
  9. ইশতিয়াক, আহমাদ (১০ আগস্ট ২০২৩)। "এস এম সুলতান: বাংলার মাটি ও মানুষের শিল্পী"দ্য ডেইলি স্টার (বাংলাদেশ)। ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪ 
  10. রশীদ, হারুনুর (সেপ্টেম্বর ১৯৯২)। "সাক্ষাতকার: অন্তরঙ্গ আলোকে শিল্পী এস, এম সুলতান"। নতুন ঢাকা ডাইজেস্টঢাকা। পৃষ্ঠা ৩৩-৩৮। 
  11. খান ২০০৩, পৃ. ১৩৫।
  12. গাফফার, আবদুল (৫ আগস্ট ২০১৮)। "প্রাণ ও প্রকৃতির শিল্পী"প্রথম আলো। ১৯ মে ২০২০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৮ জুলাই ২০২০ 
  13. "বরেণ্য: এস এম সুলতান"দৈনিক যুগান্তর। ১৪ জানুয়ারি ২০২০। সংগ্রহের তারিখ ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪ 
  14. হাই ২০১৮, পৃ. ১৪৫।
  15. "'শিশু স্বর্গ' গড়েছিলেন সুলতান"বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম। ১১ আগস্ট ২০১৬। ১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪ 
  16. জার্মান সাংস্কৃতিক ইনস্টিটিউট ১৯৮৭, পৃ. ১১–৩৫।
  17. গাফফার, আবদুল (২৯ নভেম্বর ২০২০)। হক, আনিসুল, সম্পাদক। "এস এম সুলতান: প্রাণ ও প্রকৃতির শিল্পী"কিশোর আলো। গুণীজন। মতিউর রহমান। ২৩ জুন ২০২১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪ 
  18. ছফা ১৯৮১
  19. রহমান, আশীষ উর (১০ আগস্ট ২০২৩)। "উজ্জ্বলতর শিল্পের সুলতান"ঢাকা: প্রথম আলো। ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪ 
  20. পল, প্রিয়ম প্রীতিম (৬ মে ১৯৮৭)। "Sultan -- Artist of the land"সাপ্তাহিক প্রহর (সাক্ষাৎকার)। সাক্ষাত্কার গ্রহণ করেন আহমদ ছফাদ্য ডেইলি স্টার। ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪ 
  21. হাই ২০১৮, পৃ. ১৩৬।
  22. হাই ২০১৮, পৃ. ১৪১-১৪২।
  23. হাই ২০১৮, পৃ. ১৪৩-১৪৫।
  24. হাই ২০১৮, পৃ. ১৪৬-১৪৭।
  25. বোস, ড্যানিয়েল সুগিত (১০ আগস্ট ২০১৪)। "90th birth anniversary of SM Sultan" (ইংরেজি ভাষায়)। নড়াইল: দ্য ডেইলি স্টার। ১২ নভেম্বর ২০১৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪ 
  26. হাই ২০১৮, পৃ. ১৫০।
  27. মজুমদার, মোবাশ্বির আলম। "এক ভবঘুরের মহাজাগতিক পরিভ্রমণ"কালি ও কলম। ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৮ জুলাই ২০২০ 
  28. চৌধুরী, এনাম এ (১০ আগস্ট ২০২০)। "SM Sultan: The greatest interpreter of the human spirit" (ইংরেজি ভাষায়)। দ্য ডেইলি স্টার। ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪ 
  29. জামান, মোস্তফা (৭ আগস্ট ২০১৭)। "S M Sultan: The vision of a coming society" (ইংরেজি ভাষায়)। দ্য ডেইলি স্টার। ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪ 
  30. জামান, মোস্তফা (১০ আগস্ট ২০১৯)। "Revisiting Lal Mia's vision" (ইংরেজি ভাষায়)। নিউ এজ। ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪ 
  31. টিপু, সাখাওয়াত (২০১০)। "The resistant corpus: Recontextualizing the communal vision of Lal Miah"Depart, 2nd Issue (ইংরেজি ভাষায়)। ৬ নভেম্বর ২০১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৮ জুলাই ২০১৪ 
  32. ইন্সটিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল এডুকেশন (১৯৫১)। Institute of International Education 32nd Annual Report [ইন্সটিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল এডুকেশন ৩২তম বার্ষিক প্রতিবেদন] (PDF) (ইংরেজি ভাষায়)। নিউ ইয়র্ক: ইন্সটিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল এডুকেশন। পৃষ্ঠা ২৮, ৩১। সংগ্রহের তারিখ ৩০ জুলাই ২০১৪ 
  33. The Rockefeller Foundation Annual Report 1950 (পিডিএফ) (ইংরেজি ভাষায়)। নিউ ইয়র্ক: রকফেলার ফাউন্ডেশন। ৩১ ডিসেম্বর ১৯৫০। পৃষ্ঠা ২৫৬। ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৩০ জুলাই ২০১৪ 
  34. The Rockefeller Foundation Annual Report 1951 (পিডিএফ) (ইংরেজি ভাষায়)। নিউ ইয়র্ক: রকফেলার ফাউন্ডেশন। ৩১ ডিসেম্বর ১৯৫১। পৃষ্ঠা ৮৪। ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৩০ জুলাই ২০১৪ 
  35. হোক, লটি; সান্ডারেসন, সানজুকটা (৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৯)। "Journeying through Modernism: Travels and Transits of East Pakistani Artists in Post-Imperial London"ব্রিটিশ আর্ট স্টাডিজ (ইংরেজি ভাষায়) (১৩)। ৯ আগস্ট ২০২০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৮ জুলাই ২০২০ 
  36. "১৯৫১ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এস এম সুলতানের প্রদর্শনীর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে [[ফাতেমা জিন্নাহ|ফাতিমা জিন্নাহর]] ওয়াইডব্লিউসিএ বক্তৃতা" (ইংরেজি ভাষায়)। ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪ 
  37. চক্রবর্তী ও চক্রবর্তী ২০১৩, পৃ. ৪৪৪–৪৪৫।
  38. খান ও মালাকার ২০১৩, পৃ. ২৩–২৪।
  39. "Artist in Bangladesh"গ্যালারি নৃ (ইংরেজি ভাষায়)। ২৭ নভেম্বর ২০১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। 
  40. বিশ্বাস, অমিত বিশ্বাস (১৭ আগস্ট ২০২৩)। "শতবর্ষে এস এম সুলতান, ফিরে দেখা"বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম। ২৪ আগস্ট ২০২৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৬ আগস্ট ২০২৪ 
  41. হক, ফায়েজা (২৭ সেপ্টেম্বর ২০১৩)। "Sultan and His Mystery" (ইংরেজি ভাষায়)। দ্য ডেইলি স্টার। ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪ 
  42. রহমান, আজিবর (২ ফেব্রুয়ারি ২০১৬)। "Sultan's Shishu Swarga in a state of neglect..." (ইংরেজি ভাষায়)। ঢাকা: দ্য ডেইলি স্টার। ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪ 
  43. দস্তগীর, সৈয়দ গোলাম (২০১০)। "Sultan and his spirited peasant population"ডিপার্ট (ইংরেজি ভাষায়) (২)। ৪ ডিসেম্বর ২০১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৮ জুলাই ২০১৪ 
  44. কমল, এরশাদ (১০ আগস্ট ২০০৮)। "S.M. Sultan: The golden man of fine arts" (ইংরেজি ভাষায়)। দ্য ডেইলি স্টার। ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪ 
  45. কলা ও বিনোদন ডেস্ক (১০ আগস্ট ২০১৮)। "SM Sultan: The birth of a Bengali Avant-garde artist" (ইংরেজি ভাষায়)। দ্য ডেইলি স্টার। ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪ 
  46. মামুন, নাসির আলী মামুন (১০ আগস্ট ২০২৪)। "শতবর্ষে এস এম সুলতান"প্রথম আলো। ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪ 
  47. নিজার ২০১৭
  48. বোস, ড্যানিয়েল সুগিত (১৫ জানুয়ারি ২০১৩)। "Week-long Sultan Mela starts in Narail" (ইংরেজি ভাষায়)। নড়াইল: দ্য ডেইলি স্টার। ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪ 
  49. ছফা, আহমদ (১৭ আগস্ট ২০০০)। "100th Birth Anniversary of SM Sultan: My heart doesn't desire to speak about Sultan"দৈনিক যুগান্তর। ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪ 
  50. "চিত্রশিল্পী এস এম সুলতান"দৈনিক কালবেলা। ১০ আগস্ট ২০২৪। সংগ্রহের তারিখ ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪ 
  51. "১০০ নির্দশন সংখ্যা (৯৩তম)"বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর। ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪ 
  52. "SM Sultan: An artist never to be forgotten"। The Asian Age। ১৩ আগস্ট ২০১৬। সংগ্রহের তারিখ ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪ 
  53. আহমেদ, আফসার (১৩ জুলাই ২০০৫)। "The lens on legendary artist SM Sultan"দ্য ডেইলি স্টার (ইংরেজি ভাষায়)। ২৮ জুন ২০০৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৮ আগস্ট ২০০৫ 
  54. মাসুদ ২০১২, পৃ. ১৩-১৬।
  55. মাসুদ ২০১২, পৃ. ১৪।
  56. "এস এম সুলতানের ওপর প্রামাণ্যচিত্র"দৈনিক প্রথম আলোঢাকা। জানুয়ারি ২৭, ২০১০। সংগ্রহের তারিখ অক্টোবর ১৩, ২০১০ [স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
  57. "বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি'র 'সুলতান স্বর্ণ পদক ২০২০' ভূষিত হলেন অধ্যাপক ড. ফরিদা জামান"বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি। ২৯ জানুয়ারি ২০২০। ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৭ এপ্রিল ২০২০ 
  58. "Remembering SM Sultan, the Bangladeshi Artist Who Captured Peasants With Exaggerated Muscles"ভারতের একমাত্র দৈনিক ডিজিটাল আর্ট সংবাদপত্র (ইংরেজি ভাষায়)। আবির পোথি। ১০ আগস্ট ২০২৪। ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪ 
  59. "সুলতান কমপ্লেক্স"বিউটিফুল বাংলাদেশ (ইংরেজি ভাষায়)। ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪ 
  60. জাহান, নীলিমা (৪ জুন ২০১৬)। "Empire of S M Sultan" (ইংরেজি ভাষায়)। দ্য ডেইলি স্টার। ৩ জুলাই ২০২৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪ 
  61. "নতুনরূপে সুলতানের তিন ছবি"নড়াইল: প্রথম আলো। ২৬ মার্চ ২০২১। ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪ 
  62. হাই, হাসনাত আবদুল (১৮ আগস্ট ২০২৩)। "এস এম সুলতান কেন জাতিস্মর"প্রথম আলো। ২৪ আগস্ট ২০২৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪ 
  63. চৌধুরী, সেলিমা কাদের (২০ এপ্রিল ২০১৮)। "Was Sultan a feminist?" (ইংরেজি ভাষায়)। দ্য ডেইলি স্টার। ১৯ মে ২০২৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪ 
  64. "একুশে পদকপ্রাপ্ত সুধীবৃন্দ ও প্রতিষ্ঠান" (পিডিএফ)সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়। পৃষ্ঠা ১১। ২২ এপ্রিল ২০১৯ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২২ এপ্রিল ২০১৯ 
  65. ঠাকুর, টোকন (১০ আগস্ট ২০২৩)। "জন্মদিনে বিড়াল লাফ দিল এস এম সুলতানের ঘাড়ে!"দৈনিক প্রথম আলো। সংগ্রহের তারিখ ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪ 
  66. সম্পাদকীয় (১০ অক্টোবর ২০২৩)। "এস এম সুলতান"আজকের পত্রিকা। সংগ্রহের তারিখ ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪ 
  67. "বরেণ্য চিত্রশিল্পী এস এম সুলতানের নীহার বালা আর নেই"নড়াইল: দৈনিক প্রথম আলো। ৩০ নভেম্বর ২০২২। সংগ্রহের তারিখ ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪ 

উৎস

বহিঃসংযোগ