বুধবার, ০৪ ডিসেম্বর ২০২৪ ।। ১৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ ।। ২ জমাদিউস সানি ১৪৪৬


৬ এপ্রিল ইসলামী আন্দোলনের একটি মাইলফলক

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

আবদুল লতিফ নেজামী

৬ এপ্রিল ইসলামী আন্দোলনের একটি মাইল ফলক। ২০১৩ সালের এদিনে হেফাজতে ইসলামের ডাকে অনুষ্ঠিত হয় ঢাকা লংমার্চ ও সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মহাসমাবেশ।

মহানবী সা. সম্পর্কে ব্যাঙ্গাত্মক, অরুচিকর ও অবমাননাকর উক্তির জন্যে দায়ী ব্লগারদের সর্বোচ্চ শাস্তি সম্বলিত আইন প্রণয়নের দাবিতে একর্মসূচি পালিত হয়। আর এই ঐক্যের উজ্জ্বল নক্ষত্র হচ্ছেন দেশ বরেণ্য আলেমে দ্বীন হযরত মাওলানা শাহ আহমদ শফী।

কারণ তিনি তৌহিদী জনতার চিন্তা-চেতনায় গভীর ও ব্যাপক অধিকার বিস্তার করেছিলেন। এতে শাহ আহমদ শফীর স্বরূপ প্রতিভাত হয় বর্ণাঢ্য রূপে, সহজ এবং আন্তরিক মর্মস্পর্শীতায়।

আল্লামা শাহ আহমদ শফীর নেতৃত্বে সংঘটিত লংমার্চে একটি চৈতন্যের সাড়া অনুভূত হয়। সূচিত হয় মহানবীর সা. মর্যদার পতাকাকে সমুন্নত রাখার লক্ষ্যে শাহাদাতের নবতর অধ্যায় ।

এই জাগরণের মাধ্যমে মহানবীর সা.মর্যদা রক্ষার জন্যে আপসহীন সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়ার এবং প্রয়োজনে সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকারের এক অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপিত হয়, যা মুসলিম মননকে প্রেরণা যোগাচ্ছে।

যাকে বেষ্টন করে এদেশের তৌহিদী জনতার মনন বিশেষ তাৎপর্য চেতনায় সমৃদ্ধ হয়, তিনি (আল্লামা আহমদ শফী) শান্তি, বিশ্রাম উপেক্ষা করে একজন বৃদ্ধ জরাগ্রস্ত, স্বাস্থ্যহীন মনুষ নেমে পড়লেন দুর্ধর্ষ সংগ্রামে দুর্জয় বিশ্বাস নিয়ে। জরাজীর্ণ বার্ধক্যে এরূপ অদ্ভুত কর্মোদ্মাদনা সত্যিই বিস্ময়কর।

অনৈক্য, দ্বিধা, দ্বন্ধ ও সংশয়াগ্রস্থ যখন এদেশের তৌহিদী জনতা। তখন বৃদ্ধ শাহ আহমদ শফী তাঁর জীবনের মহত্তম, কঠিনতম ও শেষতম কর্মের আহ্বান পেলেন অন্তর্দেশ থেকে।

অপূর্ব আত্মবিশ্বাস, অদম্য উৎসাহ, দুর্জয় সাহস এবং অসাধারণ প্রজ্ঞার সাহায্যে তিনি মাত্র এক মাসের (৯ মার্চ থেকে ৬ এপিল) মধ্যে নবীপ্রেমিক জনতাকে একটি সংঘবব্ধ শক্তিতে পরিণত করেন। যেন কোনো যাদুমন্ত্রের আকর্ষণে বিচ্ছিন্ন, আত্মবিশ্বাসহীন, দুঃসহ ও বিঘ্নসংকুল একটা গোষ্ঠীকে ঐক্যে সমবেত হয়ে তাঁর আহ্বানের প্রতীক্ষায় দাঁড়িয়ে গেলো।

আল্লাহর মেহেরবানী মূর্ত হয়ে শাহ আহমদ শফীর আকারে আত্মপ্রকাশ করেছিল বলে’ই এই অসম্ভব সম্ভম হয়েছিল। অনেকে সন্দিগ্ধচিত্ত ছিলেন। কিন্তু বিরাট জনতা সেদিন এক নতুন দিগন্তের, নতুন আলোক রেখার সন্ধান পেয়ে নব উৎসাহে, নব উদ্দীপনায় অনুপ্রাণিত হয়ে উঠেছিলেন।

সেদিনের জনতার মনে হয়েছিল, তাদের দীর্ঘদিনের মনের নিষ্ক্রিয়তা ও নিরুৎসাহিকতা দূর হতে চলেছে। সেদিন তারা এগিয়ে চলেছিল দুর্বার গতিতে; কোনো বাধা, কোনো প্রতিবন্ধক দেখে তারা ভীত হয়নি।

আর গতিপথে তৌহিদ জনতা পেয়েছিল আল্লামা আহমদ শফীর মতো হিমালয় সদৃশ সুদৃঢ়, স্থির, অচঞ্চল, দূরদর্শী অনির্বাণ দীপশিখার মতো সদাজাগ্রত, সদাসচেতন একজন নেতা।

আরও পড়ুন: ‘কুরআনে হাফেজদের রক্তে ভেসে যাচ্ছিল মেঝে’

তিনি ইসলামী ঐক্যের নেশা এমনভাবে জাগিয়ে দিতে পেরেছিলেন যে, দুশমনদের সকল চক্রান্ত সকল বাধা-বিঘ্ন ব্যর্থ করে দিয়েই তৌহিদী জনতার কাফেলাকে তিনি ৫ মে পর্যন্ত পৌঁছাতে পেরেছিলেন। তাঁর এই সাফল্যে সেদিন সকলেই বিস্ময়ে হতবাক হয়েছিলেন।

তৌহিদী জনতার জীবনে বহু সংকট আসে। কিন্তু তারা যদি দৃঢ় চরিত্রবল ও ঐক্যের অধিকারী হয়, তা হলে সাময়িক বিপর্যয় ঘটলেও তারা আবার মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারে। তার অনেক নজির আছে।

৬এপ্রিল তারই একটি নজির। তাঁরা বলেন, হেফাজতে ইসলামের আন্দোলনের ফলে এদেশে যে তরঙ্গ উঠেছিল, তা ব্যর্থ হয়ে যায়নি। মহানবীর সা. মর্যদা রক্ষা ও ইসলামের দাবির ভেতরই হেফাজতে ইসলামের পরোক্ষ প্রতিধ্বনির আভাস পাওয়া যায়।

সেই লংমার্চ ও মহাসমাবেশ শুধু ইতিহাসের একটি ঘটনামাত্র নয়, বরং নবী প্রেমে উচ্ছ্বলিত আত্ম-প্রত্যয় সিদ্ধ চিত্তের তরঙ্গাভিঘাত এবং এক শিক্ষণীয় ও অনুসরনীয় ঘটনা।

সেই সাথে তৌহিদী জনতার চিত্তকে নতুন করে এক গরিয়ান আসন দেয়। ন্যায়, সত্য ও সততা প্রতিষ্ঠার দৃঢ় প্রত্যয়ের প্রেরণায় উদ্বুদ্ধ করে। তাই সেই দিনটি আমাদের কাছে এক শিক্ষার বাণী বহন করে ফেরে।

তৌহিদী জনতার চিত্তের ওপর লংমার্চ ও মহাসমাবেশের নায়ক হযরত মাওলানা আহমদ শফীর প্রভাব যে অত্যন্ত বেশি তাতে সন্দেহ নেই। সঙ্কীর্ণতা তাঁকে স্পর্শ করতে পারেনি। এই উদার চিত্ত হযরত আহমদ শফী যেভাবে এই আন্দোলন দেশবাসীকে উপহার দিয়েছেন, সে-কথা এদেশের জনগণ বিস্ময় ও শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করবেন।

 দেখুন আওয়ার ইসলাম টিভি, সাবস্ক্রাইব করুন ইউটিউব চ্যানেল

ইসলামী আন্দোলনের জন্যে আল্লামা শাহ আহমদ শফী যে প্রদীপ জ্বেলেছেন, তাঁর পথ ধরে তৌহিদী জনতা দীর্ঘকাল চলতে পারে এবং পেতে পারে মুক্তির সন্ধান। তিনি যে অঙ্গুলি সঙ্কেতে দেখিয়ে দিলেন ঐক্য পাহাড় টলাতে পারে।

তাঁর সূচিত আন্দোলন এদেশের ইসলামী দল, সংগঠন ও ব্যক্তিত্বকে চালিত করবে ঐক্যের পথে; অন্তরে শক্তি সঞ্চার করবে ইসলাম প্রতিষ্ঠার প্রচেস্টায়। তাঁর অনুসৃত ঐক্যের পথ অব্যাহত রাখতে পারলে নিজস্ব তাহযিব-তমদ্দুন এবং ঈমান-আক্বিদা বজায় রেখে ইসলামি জীবনধারার পথে অগ্রসর হওযার সুযোগ পাওয়া যাবে।

তাঁর অবদানের কথা তৌহিদী জনতা চিরদিনই বিস্ময় ও শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করবে।

লেখক: চেয়ারম্যান, ইসলামী ঐক্যজোট


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ