সিরিয়ায় হামলা চালিয়ে দেশটির নৌবাহিনীর ১৫টি জাহাজ ধ্বংস করে দিয়েছে ইসরাইল। বুধবার সিরিয়ার বিভিন্ন স্থাপনা লক্ষ্য করে হামলা চালায় ইসরাইলি বাহিনী। বাশার আল আসাদের পতনের পর থেকে সিরিয়াজুড়ে হামলা চালাচ্ছে ইসরাইল। গত ২৪ ঘণ্টায় ৪৮০টি বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরাইলি বাহিনী। এর মধ্যে সিরিয়ার নৌবহরও রয়েছে। এদিকে সিরিয়ায় একটি নিয়ন্ত্রিত অঞ্চল গঠনের কথা জানিয়েছেন ইসরাইলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরাইল কাটজ। এরই মধ্যে দেশটির দক্ষিণের ওই অঞ্চলে সিরিয়ার ভূখণ্ড দখলে নিয়েছে ইসরাইলি বাহিনী। খবর বিবিসি ও আলজাজিরার।
বুধবার এক প্রতিবেদনে বলা হয়, আল-বাইদা ও লাতাকিয়া বন্দরে নোঙর করা সিরিয়ার নৌবাহিনীর ১৫টি জাহাজ হামলা চালিয়ে ধ্বংস করে দিয়েছে ইসরাইল। এই হামলার তথ্য স্বীকার করে ইসরাইলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) বলেছে, বাশার আল আসাদের পতনের পর সিরিয়ার সামরিক স্থাপনাগুলোকে অকার্যকর করার যে পদক্ষেপ নিয়েছে ইসরাইল, এসব হামলা সেই পদক্ষেপেরই অংশ। এ ছাড়া ইসরাইলের স্থল বাহিনী সিরিয়া ও দখলকৃত গোলান মালভূমির মধ্যবর্তী বাফার জোনেরও দখল নিয়েছে। ইসরাইলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরাইল কাটজ বলেন, ইসরাইলের প্রতি হুমকির আশঙ্কা রয়েছে এমন সব স্থাপনা ধ্বংস করাই আমাদের লক্ষ্য। তিনি সিরিয়ার নৌবহর ধ্বংস করাকে বিশাল সাফল্য হিসেবে আখ্যায়িত করেন। আইডিএফ দাবি করেছে, আসাদ সরকারের পতনের পর অস্ত্র যাতে চরমপন্থিদের হাতে চলে না যায় সেজন্যই এ পদক্ষেপ নিয়েছে তারা। ইসরাইলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরাইল কাটজ মঙ্গলবার বলেন, তিনি সামরিক বাহিনীকে সিরিয়ার দক্ষিণাঞ্চলে নিয়ন্ত্রিত অঞ্চল গড়ে তোলার নির্দেশ দিয়েছেন। সেখানে ইসরাইলি বাহিনীর স্থায়ী উপস্থিতি থাকবে না। তবে সেটি নিয়ন্ত্রিত হবে। এ বিষয়ে বিস্তারিত কিছু জানাননি কাটজ।
বাশার আল আসাদের পতনের পর সিরিয়ার বিভিন্ন স্থানে ব্যাপক হামলা চালাচ্ছে ইসরাইল। বিদ্রোহীদের মাত্র ১২ দিনের তীব্র হামলায় পতন ঘটেছে ২৪ বছর ধরে ক্ষমতায় থাকা প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদের। এর মধ্য দিয়ে সমাপ্তি ঘটল আসাদ পরিবারের ৫৩ বছরের সাম্রাজ্যের। স্বৈরাচার পতনের তিনদিন পেরিয়ে গেলেও উচ্ছ্বসিত সিরিয়ার বাসিন্দারা। তবে বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দাদের মাঝে স্বস্তির বদলে দানা বেঁধেছে উদ্বেগ। গত ২৪ ঘণ্টায় ৪৮০ বার দেশটির কৌশলগত বিভিন্ন সামরিক স্থাপনায় হামলা চালিয়েছে ইসরাইল। এর মধ্যে ১৫টি নৌযান, বিমান-বিধ্বংসী ব্যাটারি এবং কয়েকটি শহরে অস্ত্র উৎপাদনকারী কেন্দ্রও আছে। ইসরাইলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) বলেছে, গত ৪৮ ঘণ্টায় সিরিয়ার বিভিন্ন স্থানে বিমান হামলা চালানো হয়েছে। হামলার লক্ষ্যবস্তুর মধ্যে ১৫টি নৌযান, বিমান-বিধ্বংসী ব্যাটারি এবং কয়েকটি অস্ত্র উৎপাদন সাইট ছিল। এদিকে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে- অস্ত্রের গুদাম, গোলাবারুদের গুদাম, বিমানবন্দর, নৌঘাঁটি ও গবেষণা কেন্দ্রসহ সিরিয়ার সেনাবাহিনীর সামরিক স্থাপনা লক্ষ্য করে ইসরাইলি বাহিনী হামলা চালিয়েছে। আসাদকে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দেওয়া বিদ্রোহী গোষ্ঠীদের মধ্যে কয়েকটি আল কায়েদা ও ইসলামিক স্টেটের সঙ্গে যুক্ত। ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, সিরিয়ার অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করার কোনো অভিপ্রায় নেই। তবে আমাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে যা যা করা প্রয়োজন আমরা তা করতে চাই।
সিরিয়ায় গৃহযুদ্ধ শুরু হওয়ার পর লাখ লাখ নাগরিক প্রতিবেশীগুলোতে আশ্রয় নিয়েছিল। বিশেষ করে তুরস্ক ও লেবাননে। ইউরোপের দেশগুলোতেও বিপুলসংখ্যক সিরিয়ার নাগরিক শরণার্থী হিসেবে আশ্রয় নিয়েছে। দীর্ঘ গৃহযুদ্ধে প্রাণ হারিয়েছেন বহু মানুষ।
তবে বাশার আল আসাদের পতনের পর সিরিয়ার পরিস্থিতি পাল্টে যেতে শুরু করেছে। সাধারণ নাগরিকরা রাস্তায় বেরিয়ে আনন্দ-উল্লাস করছেন। আসাদ পালিয়ে যাওয়ায় স্বস্তি প্রকাশ করছেন। এমন পরিস্থিতিতে যেসব নাগরিক প্রতিবেশী তুরস্ক ও লেবাননে আশ্রয় নিয়েছিলেন তারা এখন ফিরতে শুরু করেছেন। বহু শরণার্থীকে দেখা গেছে সীমান্ত দিয়ে সিরায়ায় প্রবেশ করেছেন। এ সময় তাদের সঙ্গে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র বহন করতে দেখা গেছে। এদিকে স্বৈরশাসক বাশার আল আসাদের পতনের পর সিরিয়ায় অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করা হয়েছে। এতে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে মোহাম্মাদ আল বশিরকে। তিনি আসাদ সরকারের পতনে বিদ্রোহী গোষ্ঠীর নেতৃত্বে ছিলেন। এক টেলিভিশন ভাষণে মোহাম্মাদ আল বশির জানিয়েছেন, ১ মার্চ পর্যন্ত তিনি প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন।