সংখ্যারেখা
সংখ্যারেখা শব্দটি সন্ধিবিচ্ছেদ করলে দ্বারায় 'সংখ্যা+রেখা' অর্থাৎ একটি নির্দিষ্ট রেখার মাধ্যমে সংখ্যাগুলো প্রকাশ করাকে সংখ্যারেখা বা NUMBER LINE বলে।একটি সংখ্যারেখায় শুধুমাত্র বাস্তব সংখ্যাগুলোকেই দেখানো হয়।
বাস্তব সংখ্যাকে জ্যামিতিক আকারে প্রকাশের উপায় হচ্ছে সংখ্যারেখা। সংখ্যারেখা একটি সরলরেখা যা দু'দিকেই অসীম পর্যন্ত বিস্তৃত। এর মধ্যবিন্দুকে শূন্য ধরে ডানদিকে ধনাত্মক এবংবামদিকে ঋণাত্মক সংখ্যাগুলিকে বসিয়ে বাস্তব সংখ্যা কে জ্যামিতিকভাবে উপস্থাপন করা হয়। ঐতিহাসিকদের মতে প্রাচীন মিশরে আনুমানিক চার হাজার বছর আগে ভূমি বা
জমি জরিপ ও নির্মাণ কার্যের জন্য বিভিন্ন ধ্যান-ধারণা ব্যবহার করা হতো। প্রাচীন মিশর, ব্যাবিলন, ভারত এবং চীনেও
বিভিন্ন ব্যবহারিক কাজে জ্যামিতিক তথ্য প্রয়োগের নিদর্শন রয়েছে। তবে প্রাচীন গ্রীক সভ্যতার যুগেই জ্যামিতির প্রণালীবদ্ধ
রূপটি সুস্পষ্টভাবে লক্ষ করা যায়।
মিশরের আলেকজান্দ্রিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক গ্রীক প-িত ইউক্লিড আনুমানিক খ্রিস্টপূর্ব ৩০০ অব্দে জ্যামিতিক
পরিমাপ পদ্ধতির সংজ্ঞা ও বিভিন্ন সূত্রসমূহকে ধারাবাহিকভাবে সুবিন্যস্ত করে একটি অসাধারণ গ্রন্থ রচনা করেন। ১৩টি
খ-ে প্রণীত এই গ্রন্থের নাম Elements। গ্রন্থটি আধুনিক জ্যামিতির ভিত্তিস্বরূপ।
সংখ্যারেখার মাধ্যমে পূর্ণসংখ্যার চার প্রক্রিয়ার ধারণা
[সম্পাদনা]- একটি সরল রেখা এঁকে তার উপরের যে কোনো বিন্দুকে ০ দ্বারা চিহ্নিত করো।
- ০ এর ডানদিকে দ্বিতীয় একটি বিন্দুকে ১ দ্বারা চিহ্নিত করো।
- ০ এবং ১ হিসেবে চিহ্নিত এই বিন্দুগুলোর মধ্যে দূরত্বকে একক দূরত্ব বলা হয়।
- এবারে এই সরলরেখায় ১ এর ডানদিকে এবং ১ থেকে একক দূরত্বে একটি বিন্দুকে ২ দ্বারা চিহ্নিত করো।
- এইভাবে সরলরেখায় ৩, ৪, ৫, ... হিসেবে ইউনিট দূরত্বে বিন্দু চিহ্নিত করো।
- এই পদ্ধতিতে তুমি ডানদিকে ০ এবং ০ থেকে বড় সকল পূর্ণ সংখ্যা চিহ্নিত করতে পারবে।
এখানে উপরের সংখ্যারেখার ০ এবং তার ডান পাশের অংশ নিয়ে আমরা আলোচনা করব।
এখানে ২ এবং ৪ এর মধ্যে দূরত্ব কত? অবশ্যই এটি ২ একক। তুমি কি ২ এবং ৬ এর মধ্যে, ২ এবং ৭ এর মধ্যে দূরত্ব বলতে পারবে?
সংখ্যারেখায় তুমি দেখতে পাবে যে ৭ নম্বরটি ৪ এর ডানদিকে রয়েছে। এই ৭ নম্বরটি ৪ এর চেয়ে বড় অর্থ্যাৎ ৭ > ৪। ৮ নম্বরটি ৬ এর ডানদিকে রয়েছে এবং ৮ > ৬।
এই পর্যবেক্ষণ গুলি আমাদের বলতে সাহায্য করে যে, যে কোনো দুটি পূর্ণ সংখ্যার মধ্যে, ডানদিকের সংখ্যাটি বৃহত্তর সংখ্যা। আমরা আরও বলতে পারি যে, বাম দিকের পূর্ণ সংখ্যাটি ছোট সংখ্যা।
উদাহরণস্বরূপ, ৪ < ৯; ৯ এর বাম দিকে ৪ আছে। একইভাবে, ১২ > ৫; ১২ হলো ৫ এর ডানদিকে।
এবারে তুমি ১০ এববং ২০ সম্পর্কে মতামত দাও।
সংখ্যারেখায় ৩০, ১২, ১৮ চিহ্নিত করো। সবচেয়ে দূরে বাম দিকে কোন সংখ্যা? তুমি কি ১০০৫ এবং ৯৭৫৬ থেকে বলতে পারো, কোন নম্বরটি অন্য নম্বরের তুলনায় ডানদিকে হবে?
সংখ্যারেখায় ১২ এর পরের পূর্ণ সংখ্যা এবং ৭-এর আগের পূর্ণ সংখ্যা চিহ্নিত করো।
সংখ্যারেখায় যোগ
[সম্পাদনা]সংখ্যারেখায় পূর্ণ সংখ্যার যোগ দেখানো যেতে পারে। ৩ এবং ৪ এর যোগ দেখা যাক।
৩ থেকে শুরু করো। যেহেতু আমরা এই সংখ্যার সাথে ৪ যোগ করি, তাই ডানদিকে ৪ টি লাফ দাও; ৩ থেকে ৪, ৪ থেকে ৫, ৫ থেকে ৬ এবং ৬ থেকে ৭ পর্যন্ত (উপরের চিত্রে প্রদর্শিত)। ৪টি লাফের শেষ অবস্থান হবে ৭-এ।
সুতরাং, ৩ এবং ৪ এর যোগফল হবে ৭। অর্থাৎ ৩ + ৪ = ৭
সংখ্যারেখা ব্যবহার করে ৪ + ৫, ২ + ৬, ৩ + ৫ এ বং ১ + ৬ এই যোগফলগুলি চিহ্নিত করো।
সংখ্যারেখায় বিয়োগ
[সম্পাদনা]দুটি পূর্ণ সংখ্যার বিয়োগ ও সংখ্যারেখায় দেখানো যেতে পারে। এসো ৭-৫ বের করি।
৭ থেকে শুরু করি। যেহেতু আমরা এই সংখ্যার ৫ বিয়োগ করব, তাই ইহা বামদিকে ১ টি লাফে ১ একক যাবে।
এরূপ ৫টি লাফে ২ বিন্দুতে গিয়ে পৌঁছবে।
সুতরাং ৭ এবং ৫ এর বিয়োগফল হবে ২। অর্থাৎ ৭ - ৫ = ২
সংখ্যারেখা ব্যবহার করে ৮-৩, ৬-২ এবং ৯-৬ এই বিয়োগফলগুলি চিহ্নিত করো।
সংখ্যারেখার মাধ্যমে গুণ
[সম্পাদনা]এখন সংখ্যারেখায় পূর্ণ সংখ্যার গুণ দেখতে পাচ্ছি।
সংখ্যারেখা ব্যবহার করে এসো আমরা ৩ × ৪ বের করি।
০ থেকে শুরু করো, ডানদিকে একবারে ৩ টি একক লাফ দাও, এইরকম ৪ টি লাফ দিতে হবে।
কোথায় পৌঁছাবে বলো তো? ১২ তে।
তাই, আমরা বলি, ৩ × ৪ = ১২।
সংখ্যারেখা ব্যবহার করে ৬ × ২, ৬ × ৭ এবং ৫ × ৩ এই গুণফলগুলি নির্ণয় করো।
সংখ্যারেখার মাধ্যমে ভাগের ধারণা
[সম্পাদনা]সংখ্যারেখায় আমরা যোগ, বিয়োগ ও গুণের ধারণা দেখেছি। এবারে দেখবো ভাগের ধারণা। ভাগ অর্থ ভাজ্য
থেকে বারবার করে ভাজককে বিয়োগ করা। এবং সবশেষে আমরা ভাজকের চেয়ে ছোট একটা সংখ্যায় পৌঁছালে সেটাকেই ভাগশেষ বলি।
এববারে তোমরা সংখ্যারেখার মাধ্যমে ১৩ কেকে ৪ দিয়ে ভাগ করে ভাগফল ও ভাগশেশেষ নির্ণয় করো।
চলো সংখ্যারেখার মাধ্যমে ২ কে ০ দিয়ে ভাগ করি।
[সম্পাদনা]
এখানে, ভাজ্য = ২ এবং ভাজক = ০। ফলে, ২ থেকে ০ দৈর্ঘ্যের লাফ যতবারই দেওয়া হোক অর্থাৎ যতবারই ০ বিয়োগ করা হোক অবস্থান ২ ই হবে। কাজেই কখনোই এই বিয়োগ শেষ হবে না। ফলে ভাগ প্রক্রিয়া চলতেই থাকবে। কোনো ভাগফলও পাওয়া যাবে না। অর্থাৎ, ভাগ প্রক্রিয়ার সংজ্ঞা অনুসারে কোনো ভাগফল পাওয়া যাচ্ছে না।
একইভাবে ১, ৩, ৪, ৫, ৬, ১২ এরকম সব সংখ্যাকেই ০ দিয়ে ভাগ করলে আমরা অসংজ্ঞায়িত (Undefined)
বলবো।
কিন্তু, ০ কে ০ দিয়ে ভাগ করলে কী হবে?
এবারে কিন্তু একটু অন্যরকম ঘটনা ঘটল।
এখানে, ভাজ্য = ০ এবং ভাজক = ০। ফলে, ০ থেকে ০ দৈর্ঘ্যের লাফ যতবারই দেওয়া হোক অর্থাৎ যতবারই
০ বিয়োগ করা হোক অবস্থান ০ ই হবে। এমনকি কোনোরকম লাফ না দিলে অর্থাৎ একবারও ০ বিয়োগ না
করলেও একই ঘটনা ঘটবে। তাই ভাগফল ০, ১, ২, ৩, ৮, ১৫, ১৬ এভাবে অনেক কিছুই হতে পারে। এক্ষেত্রে
একটি নির্দিষ্ট ভাগফল নির্ণয় করা সম্ভব নয়।
একারণে- ০ কে ০ দিয়ে ভাগ করলে সেটাকে আমরা অনির্ণেয় (Indeterminate) বলি।
গণিত বিষয়ক এই নিবন্ধটি অসম্পূর্ণ। আপনি চাইলে এটিকে সম্প্রসারিত করে উইকিপিডিয়াকে সাহায্য করতে পারেন। |