মরক্কো
মরক্কো রাজ্য
| |
---|---|
মানচিত্রে মরক্কোর অবস্থান | |
রাজধানী | রাবাত |
বৃহত্তম নগরী | কাসাব্লাংকা |
সরকারি ভাষা | সরকারি: আরবি[১] প্রশাসনিক: ফরাসি1 |
ধর্ম | |
জাতীয়তাসূচক বিশেষণ | মরক্কান, মরক্কীয় |
সরকার | সাংবিধানিক রাজতন্ত্র |
• বাদশাহ | ষষ্ঠ মুহাম্মদ |
আজিজ আখনোশ | |
স্বাধীনতা | |
• ফ্রান্স থেকে | মার্চ ২ ১৯৫৬ |
• স্পেন থেকে | এপ্রিল ৭ ১৯৫৬ |
আয়তন | |
• মোট | ৭,১০,৮৫০ কিমি২ (২,৭৪,৪৬০ মা২) or ৪৪৬,৫৫০কি.মি2[b] (৪০তম বা ৫৭তম) |
• পানি (%) | ০.০৫৬ (২৫০ km2) |
জনসংখ্যা | |
• ১ সেপ্টেম্বর ২০১৪ আনুমানিক | ৩৩,৮৪৮,২৪২[২] (৩৭তম) |
• ২০০৪ আদমশুমারি | ২৯,৬৮০,০৬৯[২] |
জিডিপি (পিপিপি) | ২০১৫ আনুমানিক |
• মোট | $২৭৪,৫৩ বিলিয়ন[৩] (৫৭তম) |
• মাথাপিছু | $৮,১৯৪[৪] (১১৫তম) |
জিডিপি (মনোনীত) | ২০১৫ আনুমানিক |
• মোট | $১০৩.০৮ বিলিয়ন[৫] |
• মাথাপিছু | $৩, ০৭৭[৬] |
জিনি (২০০৭) | ৪০.৯[৭] মাধ্যম |
মানব উন্নয়ন সূচক (২০১৫) | ০.৬৪৭[৮] মধ্যম · ১২৩তম |
মুদ্রা | দিরহাম (MAD) |
সময় অঞ্চল | ইউটিসি+১ (UTC) |
কলিং কোড | +২১২ |
ইন্টারনেট টিএলডি | .ma |
| |
*সকল তথ্য থেকে পশ্চিম সাহারার উপাত্ত বাদ রাখা হয়েছে যদিও এর অধিকাংশ এলাকা কার্যত: মরোক্কোর প্রশাসনিক নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। |
মরক্কো (আরবি: المغرب; আমাজিগ: ⵍⵎⴰⵖⵔⵉⴱ; ফরাসি: Maroc) বা মরক্কো রাজ্য (আরবি: المملكة المغربية; আল-মামলাকাতুল মাগরিবিয়া ; আমাজিগ: ⵜⴰⴳⵍⴷⵉⵜ ⵏ ⵍⵎⴰⵖⵔⵉⴱ; ত্যাগেল্দিৎ ন্ ল্মেগ়্রিব্) উত্তর আফ্রিকার একটি মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ রাষ্ট্র। এর রাজধানীর নাম হলো রাবাত। এটি আটলান্টিক মহাসাগরের তীরবর্তী অঞ্চল জুড়ে এবং উত্তরে ভূমধ্যসাগরের জিব্রাল্টার প্রণালী পর্যন্ত বিস্তৃত। মরোক্কোর পূর্বে আলজেরিয়া, উত্তরে ভূমধ্যসাগর ও স্পেন ও পশ্চিমে আটলান্টিক মহাসাগর অবস্থিত। দেশটির দক্ষিণ দিকের সীমানাটি বিতর্কিত। মরোক্কো পশ্চিম সাহারার মালিকানা দাবী করে এবং দেশটি ১৯৭৫ সাল থেকে পশ্চিম সাহারার অধিকাংশ এলাকা নিজের দখলে রেখেছে।
মরক্কো একটি সাংবিধানিক রাজতন্ত্র। দেশটি একমাত্র আফ্রিকীয় দেশ, যা আফ্রিকান ইউনিয়নের সদস্য নয়। দেশটি আরব লীগ, আরব মাগরিব ইউনিয়ন, ওআইসি, গ্রুপ অফ ৭৭ ইত্যাদি জোটের সদস্য এবং আফ্রিকায় ন্যাটোর মিত্র দেশ।
নামকরণ
[সম্পাদনা]মরোক্কোর আরবি নামের অর্থ "পশ্চিমের রাজ্য"। ঐতিহাসিকভাবে এই অঞ্চলটি আলমাগরেব আল আক্বসা বা "দূরতম পশ্চিম" নামে পরিচিত ছিল। বর্তমানও মরক্কোর আরবি নাম হিসেবে মাগরিব লেখা হয়। অন্যান্য ভাষায় প্রচলিত মরোক্কো নামটি এসেছে দেশটির পূর্বের রাজধানী মারাক্কেশ হতে। আমাজিগ ভাষায় এর অর্থ হল 'স্রষ্টার দেশ'।
রাজনীতি
[সম্পাদনা]মরক্কো ফরাসি উপনিবেশ থেকে স্বাধীনতা লাভ করে ১৯৫৬ সালে। বাদশা দ্বিতীয় হাসান সিংহাসনে বসেন ১৯৬১ সালে এবং ১৯৯৯ সাল পর্যন্ত শাসনকার্য চালান। ১৯৯৯ সালে বাদশা ষষ্ঠ মুহাম্মদ ক্ষমতায় আসীন হন। তিনি তার আধুনিক চিন্তাধারার জন্য পরিচিত। ২০১০ সালের আরব বসন্ত দ্বারা প্রভাবিত হয়ে জনগণের চাপের মুখে একটি নতুন সংবিধানের সূচনা হয় যাতে সংসদ ও প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতা বাড়ানো হয়। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী সাদ ইদ্দিন এলওসমানি ২০১৭ সালে বাদশাকর্তৃক দায়িত্বপ্রাপ্ত হন এবং ৬ দলীয় কোয়ালিশন সরকার গঠন করেন। এর আগে তার পূর্বসূরী আবদেলিলাহ বেনকিরান সরকার গঠনে ব্যর্থ হন।[৯]
ভূগোল
[সম্পাদনা]মরোক্কো আটলান্টিক মহাসাগর তীরবর্তী একটি দেশ যার উত্তরে ভূমধ্যসাগর ও আটলান্টিক মহাসাগর সংযোগকারী জিব্রাল্টার প্রণালী অবস্থিত। এর উত্তরে স্পেনের জলসীমা, পূর্বে আলজেরিয়া এবং দক্ষিণে পশ্চিম সাহারা অবস্থিত। পশ্চিম সাহারা মরোক্কো ও মৌরিতানিয়ার একটি অমিমাংসিত সীমান্ত অঞ্চল যার পুরোটাই মরোক্কোর দখলে।
ইতিহাস
[সম্পাদনা]প্রাগৈতিহাসিক যুগ
[সম্পাদনা]বর্তমান মরক্কো অঞ্চলে অন্তত পুরা প্রস্তর যুগ থেকে জনবসতি রয়েছে বলে ধারণা করা হয়।[১০] সাম্প্রতিক একটি গবেষণা দাবি করে যে, এই অঞ্চলে সে যুগের আগেকার মানুষের বাসস্থানের প্রমাণ রয়েছে। [১১] পুরা প্রস্তর যুগের সময় মাগরেব আজকের তুলনায় অনেক বেশি উর্বর ছিল বলে ধারণা করা হয়। [১২] একটি গবেষণায় মাইটোকন্ড্রিয়াল ডিএনএর মাধ্যমে বার্বার ও স্ক্যান্ডিনেভিয়ার সামি জাতির মধ্যে একটি ঘনিষ্ঠ পূর্বপুরুষের লিঙ্ক আবিষ্কৃত হয়েছে। এই প্রমাণটি এই তত্ত্বকে সমর্থন করে যে, যারা দক্ষিণপশ্চিম ইউরোপের ফ্রাঙ্কো-ক্যান্টাব্রিয়ান শরণার্থী অঞ্চলে পূর্ব-হিমবাহের সময়কালে বসবাস করেছিল, তারা উত্তর ইউরোপে চলে গিয়েছিল এবং বরফ যুগের পরে এর জনসংখ্যায় অবদান রেখেছিল। [১৩] ধ্রুপদী সভ্যতার প্রথম ভাগে উত্তর-পশ্চিম আফ্রিকা ও মাগরেব অঞ্চল ধীরে ধীরে ফিনিশিয়ানদের নজর আকর্ষণ করে। তারা সেখানে বাণিজ্য উপনিবেশ ও বসতি স্থাপন করে। [১৪] খ্রিস্টপূর্ব ৬ষ্ঠ শতাব্দীতে মোগাদর একটি ফিনিশিয়ান উপনিবেশ হিসাবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। [১৫]
পরবর্তীতে মরক্কো প্রাচীন কার্থেজের উত্তর-পশ্চিম আফ্রিকীয় সভ্যতার একটি রাজ্যে পরিণত হয় এবং কার্থাজিনিয়ান সাম্রাজ্যের অংশ হয়। প্রাচীনতম রাজ্য হিসেবে পরিচিত স্বাধীন মরক্কো রাজ্য তৎকালীন রাজা বাগার অধীনে মৌরিতানিয়ার একটি বার্বার রাজ্য ছিল। [১৬] এই প্রাচীন রাজ্য খ্রিস্টপূর্ব ২২৫ সালের দিকে বিকাশ লাভ করেছিল। মৌরিতানিয়া খ্রিস্টপূর্ব ৩৩ সালে তৎকালীন রোমান সাম্রাজ্যের একটি ক্লায়েন্ট রাজ্যে পরিণত হয়েছিল। সম্রাট ক্লডিয়াস ৪৪ খ্রিস্টাব্দে সরাসরি মৌরিতানিয়া দখল করেন এবং এটিকে গভর্নর শাসিত একটি রোমান প্রদেশে পরিণত করেন।
তথাকথিত '৩য় শতাব্দীর সংকট' চলাকালীন বার্বাররা মৌরিতানিয়ার কিছু অংশ পুনরুদ্ধার করে। ফলস্বরূপ ৩য় শতাব্দীর শেষের দিকে প্রত্যক্ষ রোমান শাসন মাত্র কয়েকটি উপকূলীয় শহরে সীমাবদ্ধ হয়ে পড়ে। যেমন: সেউতা ও চেরচেল। ৪২৯ খ্রিস্টাব্দে রোমান সাম্রাজ্য মৌরিতানিয়ায় তার অবশিষ্ট প্রভাব ও ক্ষমতা হারায় এবং স্থানীয় মৌরো-রোমান রাজারা এর নিয়ন্ত্রণ গ্রহণ করেন। ৫৩০- এর দশকে পূর্ব রোমান সাম্রাজ্য সেপ্টাম ও টিংগিরে সাম্রাজ্যিক শাসন পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করে। তারা টিঙ্গিসকে সুরক্ষিত করে এবং সেখানে একটি গির্জা নির্মাণ করে।
ভিত্তি ও প্রাথমিক ইসলামি যুগ
[সম্পাদনা]মুসলিমদের মাগরেব বিজয় ৭ম শতাব্দীর মাঝামাঝি উমাইয়া খিলাফতের সময় সংঘটিত হয়। এই বিজয় মাগরেবে ইসলাম ও আরবি ভাষা উভয়ই নিয়ে আসে। তবে বৃহত্তর ইসলামী সাম্রাজ্যের অংশ হিসেবে মরক্কো প্রাথমিকভাবে ইফ্রিকিয়া প্রদেশ হিসাবে সংগঠিত হয় এবং সাম্রাজ্যের পক্ষ থেকে নির্ধারিত গভর্নর কর্তৃক শাসিত হয়।[১৭] ইসলাম আগমনের ফলে আদিবাসী বার্বার উপজাতিরা ইসলাম গ্রহণ করে। তারা মুসলিম প্রশাসনকে ইসলামি আর্থিক কর (জাকাত) ও শ্রদ্ধা প্রদান করত। [১৮] আধুনিক মরক্কো অঞ্চলে প্রথম স্বাধীন মুসলিম রাষ্ট্র ছিল নেকোর রাজ্য। এটি রিফ পার্বত্য অঞ্চলে প্রতিষ্ঠিত একটি আমিরাত ছিল। ৭৩৯ সালে বারবার বিদ্রোহের প্রাদুর্ভাবের পর বার্বাররা আরো কয়েকটি স্বাধীন রাজ্য গঠন করে।
মধ্যযুগীয় ইতিহাস মতে, আব্বাসীয় বাহিনী কর্তৃক পরিচালিত ইরাকে নিজ গোত্রের ওপর গণগত্যা থেকে পালিয়ে ইদ্রিস ইবনে আবদুল্লাহ মরক্কোতে পালিয়ে যান। তিনি আওরাবা বার্বার উপজাতিদের দূরবর্তী বাগদাদের আব্বাসীয় খলিফাদের প্রতি আনুগত্য ভঙ্গ করতে রাজি করান এবং ৭৮৮ সালে ইদ্রিসি রাজবংশ প্রতিষ্ঠা করেন। ইদ্রিসিরা ফেসকে তাদের রাজধানী হিসেবে প্রতিষ্ঠা করে এবং মরক্কোকে মুসলিম শিক্ষার কেন্দ্র ও একটি প্রধান আঞ্চলিক শক্তিতে পরিণত হয়। ৯২৭ সালে ফাতেমীয় খিলাফত তাদের মিকনাসা মিত্রদের মাধ্যমে ইদ্রিসিদের ক্ষমতাচ্যুত করে। কিন্তু মিকনাসারূ ৯৩২ সালে ফাতেমিদের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করে এবং ৯৮০ সালে তাদের ক্ষমতা থেকে অপসারণ করা হয়।
বার্বার সাম্রাজ্য ও রাজবংশ
[সম্পাদনা]১১ শতকের পর থেকে স্থানীয় বার্বার রাজবংশগুলির উদ্ভব শুরু হয়।[১৯][২০][২১] তখন মুরাবিতুন রাজবংশ ও মুওয়াহহিদিন রাজবংশ মরক্কো, মাগরিব, ইবেরীয় উপদ্বীপের আল-আন্দালুস ও পশ্চিম ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলে আধিপত্য বিস্তার করে।[২২] ১৩ শতকের পর থেকে দেশটিতে বনু হিলাল আরব উপজাতিরা ব্যাপক অভিবাসন গ্রহণ করে। মুরাবিতুন রাজবংশ ১০৪০ থেকে ১১৪৭ সাল পর্যন্ত মরক্কো শাসন করে। এরপর মুওয়াহহিদিনরা ১১২১ থেকে ১২৬৯ সাল পর্যন্ত শাসন পরিচালনা করে।
মুওয়াহহিদিনদের পতনের পর মারিনি, হাফসিসহ বিভিন্ন রাজবংশ মরক্কো তথা মাগরেবের ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত ছিল। ১৫৪৯ সাল থেকে ১৬৫৯ সাল পর্যন্ত সাদী রাজবংশ দেশটি শাসন করে। ১৬৬৭ সাল থেকে সামনের বছরগুলোতে আলবীয়রা মরক্কোর শাসক রাজবংশের অধিপতি ছিল। ১৫ শতকে আটলান্টিক সমুদ্র বাণিজ্য নিয়ন্ত্রণ করার উদ্দেশ্যে পর্তুগিজরা মরোক্কোর কিছু উপকূলীয় অঞ্চল দখল করে নিলেও তা দেশের অভ্যন্তরকে ব্যাপকভাবে প্রভাবিত করেনি।
আধুনিক যুগ
[সম্পাদনা]১৫৪৯ সাল এই অঞ্চলটি পুনরায় আরব রাজবংশের হাতে চলে যায়। তারা নিজেদের নবিজি মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বংশধর বলে দাবি করে। প্রথম সাদি রাজবংশ ১৫৪৯ থেকে ১৬৬৯ সাল পর্যন্ত শাসন করে এবং তাদের আলবীয় রাজবংশ ১৭ শতক থেকে ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়। তখন মরক্কো স্পেনীয় আগ্রাসনের মুখোমুখি হয় এবং উসমানীয় সাম্রাজের মিত্ররা তাদের পশ্চিম দিকে ঠেলে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে।
সাদি রাজবংশের অধীনে ১৫৭৮ সালে দেশটি আল কাসার কুইবিরের যুদ্ধে পর্তুগিজ আভিজ রাজবংশের অবসান ঘটায়। বিখ্যাত সাদি সুলতান আহমাদ আল-মনসুরের রাজত্বে সালতানাত প্রচুর নতুন সম্পদ ও প্রভাব-প্রতিপত্তি অর্জন করে এবং ১৫৯১ সালে পশ্চিম আফ্রিকায় একটি বড় অভিযান চালিয়ে সোংঘে রাজ্যে একটি বিপর্যয় ঘটায়। আহমদ মনসুরের ওফাতের পর দেশটি তার পুত্রদের মধ্যে ভাগ হয়ে যায়।
সাদি রাজবংশের পতনের সময় বহু রাজনৈতিক বিভক্তি ও সংঘাতের পর শেষ পর্যন্ত ১৬৬০ এর দশকের শেষের দিকে আলবীয় সুলতান আল-রশিদ গোটা মরক্কোকে পুনরায় একত্র করেন। তিনি ১৯৬৬ সালে ফেজ এবং ১৬৬৮ সালে মারাকেশ অধিগ্রহণ করেন।[২৩] এরপর আলবীয়রা তাদের অবস্থান স্থিতিশীল করতে সফল হয়। রাজ্যটি এই অঞ্চলে পূর্ববর্তীদের তুলনায় ছোট হলেও তা বেশ ধনী ছিল। স্থানীয় উপজাতিদের বিরোধিতার দমন করে আলবীয় শাসক ইসমাইল ইবনে শরীফ একটি ঐক্যবদ্ধ রাষ্ট্র তৈরি করতে শুরু করেন।[২৪] তার রিফিয়ান আর্মি ইংরেজদের থেকে ১৬৮৪ সালে টাঙ্গিয়া পুনরায় দখল করে নেয়। ১৬৮৯ সালে ইংরেজরা স্প্যানিশদের তাড়িয়ে দিয়ে এটি দখল করেছিল। ১৭৬৯ সালে পর্তুগিজরা মরক্কোতে তাদের শেষ অঞ্চলটি পরিত্যাগ করে চলে যায়।
মরক্কো ছিল প্রথম দেশ, যারা ১৭৭৭ সালে স্বাধীন হওয়া নতুন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে একটি স্বাধীন জাতি হিসেবে স্বীকৃতি দেয়।[২৫][২৬][২৭] আমেরিকান বিপ্লবের শুরুতে আটলান্টিক মহাসাগরে মার্কিন ব্যবসায়িক জাহাজগুলি বার্বার জলদস্যুদের দ্বারা আক্রমণের শিকার হয়। ১৭৭৭ সালের ২০ ডিসেম্বর মরক্কোর সুলতান তৃতীয় মোহাম্মদ ঘোষণা করেন যে, মার্কিন বণিক জাহাজগুলি সালতানাতের সুরক্ষার অধীনে থাকবে এবং এইভাবে তারা নিরাপদ পথ উপভোগ করতে পারবে। মরোক্কা-মার্কিন বন্ধুত্বের চুক্তি ১৭৮৬ সালে স্বাক্ষরিত হয় এবং এটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রাচীনতম নির্বিচ্ছিন্ন বন্ধুত্ব চুক্তি হিসাবে দাঁড়ায়। [২৮] [২৯]
ফরাসি ও স্প্যানিশ উপনিবেশবাদ: ১৯১২ থেকে ১৯৫৬
[সম্পাদনা]ইউরোপে শিল্পায়নের সাথে সাথে উত্তর-পশ্চিম আফ্রিকা উপনিবেশ স্থাপনের সম্ভাবনাময় আদর্শ অঞ্চল হয়ে ওঠে। ১৮৩০ সালের প্রথম দিকে ফ্রান্স মরক্কো দখলের দৃঢ় আগ্রহ দেখানো শুরু করে। এটি শুধুমাত্র তার আলজেরীয় ঔপনিবেশিক অঞ্চলের সীমানা রক্ষা করা জন্যই নয়; বরং ভূমধ্যসাগর ও উন্মুক্ত আটলান্টিক মহাসাগরের উপকূলসহ মরক্কোর কৌশলগত অবস্থানের কারণেও তারা মরক্কো দখলে মরিয়া ছিল।[৩০] ১৮৬০ সালে সেউতা ছিটমহল নিয়ে বিরোধের কারণে স্পেন মরক্কোর বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে। এতে স্পেন সেউতাসহ আরো একটি ছিটমহল বসতি দখল করে। ১৮৮৪ সালে স্পেন মরক্কোর উপকূলীয় অঞ্চলে একটি উপনিবেশ তৈরি করে।
১৯০৪ সালে ফ্রান্স ও স্পেন মরক্কোতে প্রভাব বিস্তার করতে শুরু করে। ফ্রান্সের প্রভাব বিস্তারে যুক্তরাজ্যের সম্মতি জার্মান সাম্রাজ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়ার জন্ম দেয় এবং ১৯০৫ সালে পরাশক্তিগুলির মাঝে একটি সংকট দেখা দেয়। ১৯০৬ সালে আলজিয়ার্স সম্মেলনে তা সমাধান করা হয়। ১৯১১ সালের আগাদির সংকট ইউরোপীয় শক্তিগুলির মধ্যে উত্তেজনা বাড়িয়ে তোলে। ১৯১২ সালের ফেজ-চুক্তি মরক্কোকে ফ্রান্সের একটি আশ্রিত রাজ্য করে তোলে এবং ফেজ-দাঙ্গার সূত্রপাত ঘটায়।[৩১] একই চুক্তির মাধ্যমে স্পেন উত্তর উপকূলীয় ও দক্ষিণ সাহারা অঞ্চলে ক্ষমতা রক্ষার ভূমিকা গ্রহণ করে। [৩২] তখন মরক্কো পরাশক্তিগুলির বাটোয়ারায় পরিণত হয়ে খণ্ড বিখণ্ড হয়ে যায়।
তখন কয়েক হাজার উপনিবেশবাদী মরক্কোতে প্রবেশ করে। তাদের কেউ প্রচুর পরিমাণে সমৃদ্ধ কৃষিজমি ক্রয় করে এবং অন্যরা খনি ও পোতাশ্রয়ের শোষণ ও আধুনিকায়নের আয়োজন করে। এই উপনিবেশবাদী স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠীগুলি ক্রমাগতভাবে ফ্রান্সকে মরক্কোর উপর তার নিয়ন্ত্রণ বাড়ানোর জন্য চাপ দেয়। মরক্কোর ঔপনিবেশিক ফরাসি প্রশাসক জেনারেল হুবার্ট লাউতে আন্তরিকভাবে মরক্কীয় ইসলামি সংস্কৃতির প্রশংসা করেন এবং একটি আধুনিক স্কুলব্যবস্থা তৈরি করার সময় একটি মরক্কো-ফরাসি যৌথ প্রশাসন আরোপ করতে সফল হন। মরক্কোর সৈন্যদের বেশ কয়েকটি বিভাগ প্রথম ও দ্বিতীয় উভয়ই বিশ্বযুদ্ধে ফরাসি সেনাবাহিনীতে ও স্প্যানিশ গৃহযুদ্ধে এবং এর পরে স্পেনীয় জাতীয় সেনাবাহিনীতে কাজ করেছিল। [৩৩] [৩৪]
১৯২১ ও ১৯২৬ সালের মধ্য আব্দুল কারিমের নেতৃত্বে রিফ পর্বতমালায় একটি বার্বার বিদ্রোহ রিফ প্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠার দিকে এগিয়ে যায়। তাদের ঠেকাতে ১৯২১ সালের জুলাই-আগস্ট মাসে স্প্যানিশরা ১৩,০০০ জনেরও বেশি সৈন্য হারায়। বিদ্রোহ শেষ পর্যন্ত ফরাসি এবং স্প্যানিশ সৈন্যদের যৌথ আক্রমণে দমন করা সম্ভব হয়।[৩৫] ১৯৪৩ সালে মরক্কোর পুরনো মিত্ররাষ্ট্র মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থনে মরক্কোর স্বাধীনতার জন্য ইস্তিকলাল পার্টি (স্বাধীনতা পার্টি) প্রতিষ্ঠিত হয়। এই দলটি পরবর্তীকালে জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের বেশিরভাগ ক্ষেত্রে নেতৃত্ব প্রদান করে।
১৯৫৩ সালে ফ্রান্স সুলতান মোহাম্মদ পঞ্চমকে মাদাগাস্কারে নির্বাসিত করে। তখন তার স্থলাভিষিক্ত মোহাম্মদ বিন আরাফা ফরাসি ও স্পেনীয় উপনিবেশের বিরোধিতা শুরু করে। তখন সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য সহিংসতা ওজদাতে ঘটে। মরক্কোর জনগণ রাস্তায় রাস্তায় ফরাসি ও অন্যান্য ইউরোপীয় বাসিন্দাদের আক্রমণ করে। ফলে ১৯৫৫ সালে ফ্রান্স মোহাম্মদ পঞ্চমকে ফিরে আসার অনুমতি দেয় এবং পরের বছর মরক্কোর স্বাধীনতার নিয়ে আলোচনা শুরু হয়। [৩৬] ১৯৫৬ সালের মার্চে ফরাসি উপনিবেশবাদের অবসান ঘটে এবং মরক্কো একটি রাষ্ট্র হিসাবে ফ্রান্সের কাছ থেকে তার স্বাধীনতা পুনরুদ্ধার করে। এক মাস পরে স্পেন উত্তর মরোক্কোতে তার দখলে থাকা অঞ্চল ছেড়ে চলে যায়। কিন্তু ভূমধ্যসাগরীয় উপকূলে তার দুটি উপকূলীয় ছিটমহল সেউতা ও মেলিলা দখলে রাখে। এই শহর দুটি একেবারে মরক্কোর উপকূল ঘেঁষে এবং অতীতে মরক্কোর অন্তর্ভুক্ত থাকার কারণে মরক্কো আজও এর সার্বভৌমত্ব দাবি করে। মরক্কো স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৫৭ সালে সুলতান মোহাম্মদ রাজা হন।
স্বাধীনতা-পরবর্তী
[সম্পাদনা]পঞ্চম মোহাম্মদ মৃত্যুর পর ১৯৬১ সালে দ্বিতীয় হাসান মরক্কোর রাজা হন। ১৯৬৩ সালে মরক্কোয় প্রথম সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ১৯৬৫ সালে বাদশাহ হাসান জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেন এবং সংসদ স্থগিত করেন। ১৯৭১ সালে রাজাকে ক্ষমতাচ্যুত করে প্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠার একটি ব্যর্থ প্রচেষ্টা করা হয়। ট্রুথ কমিশনের তথ্য অনুসারে হাসানের শাসনামলে বিভিন্ন সহিংসতায় প্রায় ৫৯২ জন মৃত্যুবরণ করেন।
১৯৬৯ সালে দক্ষিণে ইফনির স্পেনীয় ছিটমহল মরক্কোকে ফিরিয়ে দেওয়া হয়। ১৯৭৩ সালে স্প্যানিশ সাহারায় একটি স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে পলিসারিও আন্দোলন গঠিত হয়। ১৯৭৫ সালের ৬ নভেম্বর রাজা হাসান মরক্কোর স্বেচ্ছাসেবক বাহিনীকে স্প্যানিশ সাহারায় প্রবেশ করতে বলেন। তখন প্রায় ৩৫০,০০০ বেসামরিক নাগরিক এই বাহিনীর সাথে জড়িত ছিল বলে জানা গেছে।[৩৭] একমাস পরে স্পেন স্প্যানিশ সাহারা ছেড়ে দিয়ে এবং আলজেরিয়ার সামরিক হস্তক্ষেপের হুমকি সত্ত্বেও এটিকে যৌথভাবে মরক্কো-মোরিতানীয় নিয়ন্ত্রণে স্থানান্তর করতে সম্মত হয়। তখন মরক্কোর বাহিনী এলাকাটি দখল করে নেয়। [৩৮]
কিছুদিন পর পশ্চিম সাহারায় মরোক্কা ও আলজেরীয় সেনাদের মধ্যে সংঘর্ষ হয় শুরু। তখন মরক্কো এবং মৌরিতানিয়া পশ্চিম সাহারাকে বিভক্ত করে। মরক্কোর সামরিক বাহিনী ও পলিসারিও বাহিনীর মধ্যে লড়াই বহু বছর ধরে চলতে থাকে। দীর্ঘায়িত যুদ্ধ মরক্কোর জন্য একটি উল্লেখযোগ্য আর্থিক হুমকি ছিল। ১৯৮৩ সালে হাসান রাজনৈতিক অস্থিরতা ও অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যে পরিকল্পিত নির্বাচন বাতিল করেন। ১৯৮৪ সালে আংশিক স্বীকৃত সাহরাউই গণতান্ত্রিক আরব প্রজাতন্ত্রকে সমর্থন করার প্রতিবাদে মরক্কো আফ্রিকান ইউনিয়ন ত্যাগ করে। পলিসারিও বাহিনী ১৯৮২ থেকে ১৯৮৫ সালের মধ্যে ৫,০০০ ও বেশি মরক্কোর সৈন্য হত্যা করেছে বলে দাবি করেছে।
আলজেরিয়ার কর্তৃপক্ষ তাদের দেশে সাহারা অঞ্চলের শরণার্থীর সংখ্যা ১৬৫,০০০ বলে অনুমান করেছে। [৩৯] মরক্কো ও আলজেরিয়ার সাথে কূটনৈতিক সম্পর্ক ১৯৮৮ সালে পুনরায় স্থাপিত হয়। ১৯৯১ সালে পশ্চিম সাহারায় জাতিসংঘের নিরীক্ষণে একটি যুদ্ধবিরতি শুরু হয়। কিন্তু অঞ্চলটির অবস্থা অনিশ্চিত এবং প্রায় যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘনের রিপোর্ট করা হয়। পরের দশকে ভূখণ্ডটির ভবিষ্যৎ নিয়ে প্রস্তাবিত গণভোট বিষয়ে অনেক ঝগড়া হলেও এর অচলাবস্থা ভাঙা হয়নি। ১৯৯০ এর দশকে রাজনৈতিক সংস্কারের ফলে ১৯৯৭ সালে একটি দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট আইনসভা প্রতিষ্ঠিত হয় এবং মরক্কোর প্রথম বিরোধী নেতৃত্বাধীন সরকার ১৯৯৮ সালে ক্ষমতায় আসে।
রাজা দ্বিতীয় হাসান ১৯৯৯ সালে মারা যান এবং তার পুত্র ষষ্ঠ মোহাম্মদ তার স্থলাভিষিক্ত হন। তিনি অত্যন্ত সতর্ক ও একজন উন্নয়নকামী রাজা।[৪০] ২০০২ সালে ষষ্ঠ মোহাম্মদ পশ্চিম সাহারায় একটি বিতর্কিত সফর করেন। ২০০৭ সালে মরক্কো কর্তৃপক্ষ জাতিসংঘের কাছে পশ্চিম সাহারার জন্য একটি স্বায়ত্তশাসনের নীলনকশা উন্মোচন করে। পলিসারিও এই পরিকল্পনা প্রত্যাখ্যান করে এবং তার নিজস্ব প্রস্তাব পেশ করে। মরক্কো ও পলিসারিও ফ্রন্ট নিউইয়র্কে আলোচনা করে এবং কোনো চুক্তি ছাড়াই তা সমাপ্ত হয়। ২০১০ সালে নিরাপত্তা বাহিনী পশ্চিম সাহারার একটি প্রতিবাদ শিবিরে হামলা চালায় এবং এর ফলে আঞ্চলিক রাজধানী আল ঊয়ুনে সহিংস বিক্ষোভের সূত্রপাত ঘটে।
২০০২ সালে মরক্কো ও স্পেন বিতর্কিত দ্বীপ প্রেজিল নিয়ে মার্কিন মধ্যস্ততায় একটি প্রস্তাবে সম্মত হয়। মরক্কোর সৈন্যরা সেখানে অবতরণ করে এবং স্পেনীয় সৈন্যরা সাধারণভাবে জনবসতিহীন দ্বীপটি নিয়ে তাঁবু এবং একটি পতাকা স্থাপন করে। ২০০৫ সালে নতুন করে উত্তেজনা দেখা দেয়, যখন শত শত আফ্রিকান অভিবাসী স্প্যানিশ ছিটমহল মেলিলা ও সেউতার সীমান্তে জড়ো হয়। তখন মরক্কো শত শত অবৈধ অভিবাসীকে বিতাড়িত করে। ২০০৬ সালে স্প্যানিশ প্রিমিয়ার জাপাতেরো স্প্যানিশ ছিটমহল পরিদর্শন করেন। তিনি ২৫ বছরের মধ্যে প্রথম স্প্যানিশ নেতা, যিনি এসব অঞ্চলে সরকারী সফর করেন। পরের বছর স্প্যানিশ রাজা জুয়ান কার্লোস প্রথম সেউতা ও মেলিলা পরিদর্শন করেন, যা মরোক্কোকে আরো ক্ষুব্ধ করে এবং ছিটমহলগুলি নিয়ন্ত্রণের দাবিকে জোরদার করে।
২০১২-১২ মরোক্কায় বিক্ষোভের সময় হাজার হাজার মানুষ রাবাত ও দেশের অন্যান্য শহরে সমাবেশ করে রাজনৈতিক সংস্কার এবং রাজার ক্ষমতা রোধকারী একটি নতুন সংবিধানের আহ্বান জানায়। ২০১১ সালের জুলাই মাসে আরব বসন্তের প্রতিবাদকে শান্ত করার জন্য রাজা একটি সংস্কারকৃত সংবিধানের উপর গণভোটে বিজয় লাভ করেন। রাজা কর্তৃক সংস্কার করা সত্ত্বেও বিক্ষোভকারীরা আরো গভীর সংস্কারের জন্য আহ্বান জানাতে থাকে। ২০১২ সালের মে মাসে কাসাব্লাঙ্কায় একটি ট্রেড ইউনিয়ন সমাবেশে শত শত লোক অংশ নেয় এবং অংশগ্রহণকারীরা সরকারকে সংস্কারে ব্যর্থতার জন্য অভিযুক্ত করে।
অর্থনীতি
[সম্পাদনা]মরক্কোর অর্থনীতিকে একটি অপেক্ষাকৃত উদার অর্থনীতি হিসেবে বিবেচনা করা হয়, যা যোগান ও চাহিদার আইন দ্বারা পরিচালিত হয়। ১৯৯৩ সাল থেকে দেশটি কিছু অর্থনৈতিক খাতকে বেসরকারী করণের নীতি অনুসরণ করেছে, যা আগে সরকারের হাতে থাকত। [৪১] মরক্কো আফ্রিকার অর্থনৈতিক বিষয়ে একটি প্রধান শক্তি হয়ে উঠেছে [৪২] এবং জিডিপি (পিপিপি) অনুসারে আফ্রিকার পঞ্চম বৃহত্তম অর্থনীতি । ইকোনমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের জীবন মানের সূচকে দক্ষিণ আফ্রিকার চেয়ে মরক্কোকে প্রথম আফ্রিকীয় দেশ হিসেবে স্থান দেওয়া হয়েছে। [৪৩]
সরকারি সংস্কার ২০০০ থেকে ২০০৭ পর্যন্ত ৪-৫% অঞ্চলে আর্থিক বার্ষিক বৃদ্ধি, ২০০৩-২০০৭ সালে ৪.৯% বার্ষিক বৃদ্ধিসহ মরক্কোর অর্থনীতিকে কয়েক বছর আগের তুলনায় অনেক বেশি শক্তিশালী হতে সাহায্য করেছে। ২০১২ সালে বিশ্বব্যাংক মরক্কোর জন্যে ৪% এবং পরের বছর ২০১৩ -এর জন্য ৪.২% হার বৃদ্ধির পূর্বাভাস দিয়েছে। [৪৪] দেশটির পরিষেবা খাত জিডিপির অর্ধেকেরও বেশি এবং তা শিল্প, খনি, নির্মাণ ও উৎপাদন দ্বারা গঠিত। পর্যটন, টেলিকম, তথ্যপ্রযুক্তি এবং টেক্সটাইল শিল্পগুলি সর্বোচ্চ প্রবৃদ্ধির রেকর্ড করেছে।
পর্যটন
[সম্পাদনা]পর্যটন মরক্কোর অর্থনীতির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ খাত। এটি দেশের উপকূল, সংস্কৃতি ও ইতিহাসের উপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করে একটি শক্তিশালী পর্যটন শিল্প হিসেবে বিবেচিত। ২০১৯ সালে মরক্কো এক মিলিয়নেরও বেশি পর্যটক আকর্ষণ করেছে। ফসফেট শিল্পের পর পর্যটন মরক্কোতে দ্বিতীয় বৃহত্তম বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনকারী। মরোক্কা সরকার পর্যটন খাত উন্নয়নে ব্যাপকভাবে বিনিয়োগ করছে। ২০১০ সালে সরকার তার ভিশন ২০২০ চালু করে, যা মরক্কোকে বিশ্বের শীর্ষ ২০টি পর্যটন গন্তব্যে পরিণত করবে এবং ২০২০ সালের মধ্যে মিলিয়ন মিলিয়ন পর্যটক আগমনের ফলে পর্যটন জিডিপির ২০% এ উন্নীত হবে বলে আশা করা হয়। [৪৫]
মরোক্কোতে আসা বেশিরভাগ পর্যটক সাধারাণত ইউরোপীয় এবং সমস্ত পর্যটকের প্রায় ২০% ফরাসী নাগরিক। বেশিরভাগ ইউরোপীয় মরক্কোয় এপ্রিল থেকে আগস্টের মধ্যে ভ্রমণ করে। [৪৬] মরক্কোতে তুলনামূলকভাবে বেশি সংখ্যক পর্যটক আসা তার অবস্থানে কারণে হয়েছে; মরক্কো ইউরোপ মহাদেশের কাছাকাছি অবস্থিত এবং দেশটির দীর্ঘ সমুদ্র সৈকত রয়েছে। স্পেনের কাছাকাছি হওয়ার কারণে দক্ষিণ স্পেনের উপকূলীয় অঞ্চলের পর্যটকরা মরক্কোতে এক থেকে তিন দিনের ভ্রমণ করে। মরক্কো ও পার্শ্ববর্তী দেশ আলজেরিয়ার মধ্যে বিমানপরিষেবা প্রতিষ্ঠিত হওয়ার ফলে অনেক আলজেরীয় কেনাকাটা এবং পরিবার ও বন্ধুদের সাথে দেখা করতে মরক্কোতে যায়। দিনারের অবমূল্যায়ন ও স্পেনে হোটেলের দাম বৃদ্ধির কারণে আলজেরীয়দের জন্য মরক্কো তুলনামূলকভাবে সস্তা মনে হয়। মরক্কোর একটি চমৎকার সড়ক ও বিস্তৃত রেল অবকাঠামো রয়েছে, যা প্রধান শহর ও পর্যটন গন্তব্যগুলিকে বন্দর এবং শহরগুলির আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের সাথে সংযুক্ত করে। স্বল্পমূল্যের এয়ারলাইন্সগুলো দেশে সস্তায় ফ্লাইট অফার করে।
পর্যটন ক্রমবর্ধমানভাবে মরক্কোর সংস্কৃতির উপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করে। বিশেষ করে দেশটির প্রাচীন শহরগুলির প্রতি। আধুনিক পর্যটন শিল্প মরক্কোর প্রাচীন বার্বার, রোমান, ইসলামি ইতিহাস ও ইসলামের সাংস্কৃতিক ইতিহাসকে পুঁজি করে। মরক্কোর পর্যটকদের ৬০% এর সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের জন্য পরিদর্শন করে। এছাড়া উত্তর মরক্কোর উন্নত রিসোর্টগুলি পর্যটকদের কাছে খুবই জনপ্রিয়।[৪৭][৪৮] কাসাব্লাঙ্কা হল মরক্কোর প্রধান ক্রুজ বন্দর এবং এতে মরোক্কোর পর্যটকদের জন্য সবচেয়ে উন্নত বাজার রয়েছে। মধ্য মরক্কোর মারাকেশ একটি জনপ্রিয় পর্যটন গন্তব্য এবং এটি এক-দুই দিনের ভ্রমণের জন্য পর্যটকদের মধ্যে বেশি জনপ্রিয়, যা পর্যটকদের মরক্কোর ইতিহাস ও সংস্কৃতির স্বাদ প্রদান করে।[৪৯]
অবকাঠামো
[সম্পাদনা]২০১৯ সালের গ্লোবাল কম্পিটিটিভনেস রিপোর্ট অনুসারে, সড়কের দিক থেকে মরক্কো বিশ্বে ৩২তম, সমুদ্রে ১৬তম, আকাশে ৪৫তম এবং রেলওয়েতে ৬৪তম স্থানে রয়েছে। এটি মরক্কোকে আফ্রিকা মহাদেশের সেরা অবকাঠামোর র্যাঙ্কিং এনে দেয়। [৫০] আধুনিক অবকাঠামো উন্নয়ন; যেমন বন্দর, বিমানবন্দর ও রেল সংযোগ সরকারী বাজেটের একটি শীর্ষ অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত খাত হিসেবে বিবেচিত হয়। ক্রমবর্ধমান অভ্যন্তরীণ চাহিদা মেটাতে মরোক্কো সরকার ২০১০ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত তার মৌলিক অবকাঠামো উন্নত করার জন্য $১৫ বিলিয়নের বেশি বিনিয়োগ করেছে। [৫১]
মরক্কোতে আফ্রিকার অন্যতম সেরা রাস্তাব্যবস্থা রয়েছে। গত 20 বছরে সরকার প্রায় ১৭৭০ কি.মি. আধুনিক রাস্তা তৈরি করেছে, যা টোল এক্সপ্রেসওয়ের মাধ্যমে বেশিরভাগ প্রধান শহরগুলির সাথে সংযোগ স্থাপন করেছে। মরোক্কোর সরঞ্জাম, পরিবহন ও পানি মন্ত্রকের লক্ষ্য হল, ২০৩০ সালের মধ্যে অতিরিক্ত ৩৩৮০ কিমি এক্সপ্রেসওয়ে এবং ২১০০ কিলোমিটার হাইওয়ে তৈরি করা এবং এর প্রত্যাশিত ব্যয় ধরা হয়েছে $৯.৬ বিলিয়ন। ২০১৪ সালে মরক্কো আফ্রিকার প্রথম হাই-স্পিড রেলওয়ে সিস্টেমের নির্মাণ শুরু করে যা তানজাহ ও ক্যাসাব্লাঙ্কা শহরকে সংযুক্ত করে।মরোক্কোতে আফ্রিকা ও ভূমধ্যসাগরের সবচেয়ে বড় বন্দর রয়েছে, যার নাম হল তানজের-মেড। এটি ৯ মিলিয়নেরও বেশি কন্টেইনার হ্যান্ডলিং ক্ষমতাসহ বিশ্বের ১৮তম স্থানে রয়েছে। এটি তানজাহের মুক্ত অর্থনৈতিক অঞ্চলে অবস্থিত এবং আফ্রিকা ও বিশ্বের জন্য একটি লজিস্টিক হাব হিসাবে কাজ করে। [৫২]
শক্তি
[সম্পাদনা]২০০৮ সালে মরক্কোর প্রায় ৫৬% বিদ্যুৎ কয়লার দ্বারা সরবরাহ করা হয়েছিল। [৫৩] একটি পূর্বাভাস ইঙ্গিত দেয় যে, মরোক্কোতে শক্তির প্রয়োজনীয়তা ২০১২ ও ২০৫০ সালের মধ্যে প্রতি বছর ৬% বৃদ্ধি পাবে। [৫৪] মরক্কো সরকার একটি সৌর তাপশক্তি বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের জন্য একটি প্রকল্প চালু করেছে [৫৫] এবং মরক্কো সরকারের রাজস্বের একটি সম্ভাব্য উৎস হিসেবে প্রাকৃতিক গ্যাসের ব্যবহারও খতিয়ে দেখছে। [৫৪] মরক্কো জীবাশ্ম জ্বালানীর উপর নির্ভরতা কমাতে এবং ইউরোপে বিদ্যুৎ রপ্তানি করার জন্য একটি বৃহৎ সৌর শক্তি খামার নির্মাণের কাজ শুরু করেছে। [৫৬]
জল সরবরাহ ও স্যানিটেশন
[সম্পাদনা]মরক্কোতে জল সরবরাহ ও স্যানিটেশন একটি বিস্তৃত ইউটিলিটি দ্বারা সরবরাহ করা হয়। তারা বৃহত্তম শহর ক্যাসাব্লাঙ্কা, রাজধানী রাবাত ও অন্যান্য দুটি শহরের প্রাইভেট কোম্পানি থেকে শুরু করে ১৩টি শহরে পাবলিক পৌরসভার ইউটিলিটি এবং সেইসাথে একটি জাতীয় বিদ্যুৎ ও জল কোম্পানি (ONEE)। তারা প্রায় ৫০০টি ছোট শহরে জল বিতরণ সেইসাথে ৬০ শহরের পয়ঃনিষ্কাশন ও বর্জ্য নিষ্কাশনের দায়িত্বে রয়েছে।
গত পনের বছরে জল সরবরাহের অ্যাক্সেস ও স্যানিটেশনের ক্ষেত্রে যথেষ্ট উন্নতি হয়েছে। অবশিষ্ট চ্যালেঞ্জগুলির মধ্যে রয়েছে নিম্ন স্তরের বর্জ্য জল শোধন, দরিদ্রতম শহরে আশেপাশে বাড়ির সংযোগের অভাব এবং গ্রামীণ ব্যবস্থার সীমিত ব্যবস্থাপনা। ২০০৫ সালে একটি জাতীয় স্যানিটেশন প্রোগ্রাম অনুমোদিত হয়, যার লক্ষ্য ছিল ৬০% সংগৃহীত বর্জ্য জল শোধন করা এবং ২০২০ সালের মধ্যে ৮০% শহুরে পরিবারকে নর্দমায় সংযুক্ত করা। কিছু শহুরে দরিদ্রের জন্য জলের সংযোগের অভাবের সমস্যাটি জাতীয় মানব উন্নয়ন উদ্যোগের অংশ হিসাবে সমাধান করা হচ্ছে, যার অধীনে অনানুষ্ঠানিক বসতিগুলির বাসিন্দারা জমির কাগজপত্র পেয়েছে এবং তাদের ফি মওকুফ করা হয়েছে।
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
[সম্পাদনা]মরক্কোর সরকার শিক্ষার গুণগতমান উন্নত করতে এবং গবেষণাকে আর্থ-সামাজিক চাহিদার প্রতি আরো প্রতিক্রিয়াশীল করতে দেশে সংস্কার কার্যক্রম জারি রেখেছে। ২০০৯ সালের মে মাসে মরক্কোর প্রধানমন্ত্রী আব্বাস ফাসি ন্যাশনাল সেন্টার ফর সায়েন্টিফিক অ্যান্ড টেকনিক্যাল রিসার্চের এক বৈঠকে বিজ্ঞানের প্রতি আরো বেশি সমর্থন ঘোষণা করেন। তখন লক্ষ্য ছিল যে, সরকার থেকে বিশ্ববিদ্যালয়গুলিকে আরো বেশি আর্থিক স্বায়ত্তশাসন দেওয়া, যেন এতে তারা গবেষণার প্রয়োজনে আরো বেশি প্রতিক্রিয়াশীল হয় এবং বেসরকারি খাতের সাথে আরো ভালো সম্পর্ক তৈরি করতে সক্ষম হয় এবং এটি যেন একাডেমিয়ায় উদ্যোক্তার সংস্কৃতি লালন করে।
তখন তিনি ঘোষণা করেন যে, ২০০৮ সালের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির বিনিয়োগ ৬২০,০০০ মার্কিন ডলার থেকে বেড়ে ২০০৯ সালে ৮.৫ মিলিয়ন ডলার (৬৯ মিলিয়ন মরক্কোর দিরহাম) হবে, যাতে গবেষণাগারের সংস্কার ও নির্মাণ, আর্থিক ব্যবস্থাপনায় গবেষকদের প্রশিক্ষণ কোর্স ও একটি স্কলারশিপ প্রোগ্রাম অন্তর্ভুক্ত থাকবে। স্নাতকোত্তর গবেষণার জন্য ও গবেষণার অর্থায়নের জন্য প্রস্তুত কোম্পানিগুলির জন্য প্রণোদনামূলক ব্যবস্থাপনা করা হবে। যেমন: তাদের নতুন বৈজ্ঞানিক ফলাফলগুলিতে অ্যাক্সেস দেওয়া, যা তারা নতুন পণ্য বিকাশের জন্য ব্যবহার করতে পারে। [৫৭] ২০২১ সালে মরোক্কো বৈশ্বিক উদ্ভাবন সূচকে ৭৭তম স্থানে ছিল।এর আগে ২০১৯ সালে ৭৪তম স্থানে ছিল। [৫৮] [৫৯] [৬০] [৬১]
মরোক্কার উদ্ভাবন কৌশলটি শিল্প, বাণিজ্য, বিনিয়োগ ও ডিজিটাল অর্থনীতিমন্ত্রকের দ্বারা জুন ২০০৯ সালে দেশের প্রথম জাতীয় উদ্ভাবন শীর্ষ সম্মেলনে চালু করা হয়ে। মরোক্কান ইনোভেশন স্ট্র্যাটেজি ২০১৪ সালের মধ্যে ১,০০০ মরোক্কান পেটেন্ট তৈরি এবং ২০০টি উদ্ভাবনী স্টার্টাপ তৈরির লক্ষ্য নির্ধারণ করে। ২০১২ সালে মরক্কোর উদ্ভাবকরা ১৯৭টি পেটেন্টের জন্য আবেদন করে, যা দুই বছর আগে ১৫২টি ছিল।[৬২][৬৩] ২০১৫ সাল পর্যন্ত মরক্কোর তিনটি টেকনোপার্ক ছিল। ২০০৫ সালে রাবাতে প্রথম টেকনোপার্ক স্থাপিত হয়। এরপর দ্বিতীয়টি ক্যাসাব্লাঙ্কায় এবং তৃতীয়টি ২০১৫ সালে তানজাহয় স্থাপন করা হয়। টেকনোপার্কগুলি তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি), সবুজ প্রযুক্তি (যেমন: পরিবেশ বান্ধব প্রযুক্তি) ও সাংস্কৃতিক শিল্পে বিশেষজ্ঞ স্টার্ট-আপ এবং ছোট ও মাঝারি আকারের উদ্যোগগুলি হোস্ট করে। [৬২]
২০১২ সালে দ্বিতীয় হাসান একাডেমি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি বেশ কয়েকটি সেক্টর চিহ্নিত করে, যেখানে মরক্কোর তুলনামূলক সুবিধা ও দক্ষ মানব পুঁজি রয়েছে। যার মধ্যে রয়েছে খনি, মৎস্য, খাদ্য রসায়ন ও নতুন প্রযুক্তি। এটি ফোটোভোলটাইক, তাপীয় সৌরশক্তি, বায়ু ও জৈববস্তুর মত পুনর্নবীকরণ যোগ্য শক্তির উপর জোর দিয়ে শক্তির মত বেশ কয়েকটি কৌশলগত খাতকেও চিহ্নিত করে, সেইসাথে জল, পুষ্টি ও স্বাস্থ্যখাত, পরিবেশ ও ভূ-বিজ্ঞান।[৬২][৬৪] ২০১৫ সালের ২০ মে প্রতিষ্ঠার এক বছরেরও কম সময়ে উচ্চতর শিক্ষা, প্রশিক্ষণ ও বৈজ্ঞানিক গবেষণার জন্য মরোক্কো ২০১৫-২০৩০ এ শিক্ষার জন্য একটি দৃষ্টিভঙ্গি প্রস্তাব করে রাজার কাছে একটি প্রতিবেদন পেশ করে। প্রতিবেদনে শিক্ষাকে সমতাভিত্তিক করা এবং তা সবার কাছে গ্রহণযোগ্য করার পক্ষে কথা বলা হয়। যেহেতু শিক্ষার গুণগত মান উন্নয়ন গবেষণা ও উন্নয়নের সাথে হাত মেলায় তাই প্রতিবেদনে একটি সমন্বিত জাতীয় উদ্ভাবন ব্যবস্থা গড়ে তোলার সুপারিশ করা হয়, যা জিডিপির ০.৭৩% থেকে ধীরে ধীরে গবেষণা ও উন্নয়নে নিবেদিত জিডিপির অংশ বৃদ্ধি করে অর্থায়ন করা হবে। ২০১০ সালে স্বল্প মেয়াদে ১%, ২০২৫ এর মধ্যে ১.৫% এবং ২০৩০ সালের মধ্যে ২%। [৬২]
আরও দেখুন
[সম্পাদনা]তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ সংবিধান ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ২৫ অক্টোবর ২০০৭ তারিখে."Le Royaume du Maroc, État musulman souverain, dont la langue officielle est l'arabe, constitue une partie du Grand Maghreb Arabe."
- ↑ ক খ Haut-Commissariat Au Plan (2004). "Recensement général de la Population et de l'Habitat 2004". Retrieved on 2009-08-08. ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ২০০৮-০৮-২১ তারিখে "সংরক্ষণাগারভুক্ত অনুলিপি"। ২০০৮-০৮-২১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০০৯-১২-০৯।
- ↑ "Morocco - GDP (PPP based)"। Knoema।
- ↑ "Morocco - GDP per capita (PPP based)"। Knoema।
- ↑ "Morocco - GDP"। Knoema।
- ↑ "Morocco - GDP per capita"। Knoema।
- ↑ "World Bank GINI index"।
- ↑ "2016 Human Development Report" (পিডিএফ)। United Nations Development Programme। ২০১৬। সংগ্রহের তারিখ ৪ এপ্রিল ২০১৬।
- ↑ "Morocco country profile", BBC News,24 April 2018 retrieved on: December,2018।
- ↑ Field Projects – Jebel Irhoud ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ১২ জানুয়ারি ২০১৭ তারিখে.
- ↑ Oldest Homo sapiens fossil claim rewrites our species' history ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ১৬ নভেম্বর ২০১৭ তারিখে News.
- ↑ Rubella, D. (১৯৮৪)। "Environmentalism and Pi Paleolithic economies in the Maghreb (c. 20,000 to 5000 B.P.)"। From hunters to farmers the causes and consequences of food production in Africa। University of California Press। পৃষ্ঠা 41–56। আইএসবিএন 978-0520045743।
- ↑ Achilli, A.; Rengo, C. (২০০৫)। "Saami and Berbers—An Unexpected Mitochondrial DNA Link": 883–886। ডিওআই:10.1086/430073। পিএমআইডি 15791543। পিএমসি 1199377 ।
- ↑ The Megalithic Portal and Megalith Map। "C. Michael Hogan, Mogador: Promontory Fort, The Megalithic Portal, ed. Andy Burnham"। Megalithic.co.uk। সংগ্রহের তারিখ ২ জুন ২০১০।
- ↑ Moscati, Sabatino (2001) The Phoenicians, Tauris, আইএসবিএন ১-৮৫০৪৩-৫৩৩-২
- ↑ Livy Ab Urbe Condita Libri 29.30
- ↑ Abun-Nasr 1987, p.33
- ↑ Abun-Nasr 1987, pp. 33–34
- ↑ Ramirez-Faria, Carlos (২০০৭)। Concise Encyclopaedia of World History। আইএসবিএন 978-81-269-0775-5।
- ↑ Universalis Encyclopedia।
- ↑ Encyclopædia Britannica।
- ↑ Encyclopædia Britannica।
- ↑ Jamil M. Abun-Nasr (২০ আগস্ট ১৯৮৭)। A History of the Maghrib in the Islamic Period। Cambridge University Press। আইএসবিএন 978-0-521-33767-0।
- ↑ "Morocco (Page 8 of 9)".
- ↑ "Joint Statement by the United States of America and the Kingdom of Morocco"। whitehouse.gov। ২২ নভেম্বর ২০১৩ – National Archives-এর মাধ্যমে।
- ↑ USA (NA) International Business Publications (২০০৪)। Morocco Foreign Policy And Government Guide। Int'l Business Publications। পৃষ্ঠা 114–। আইএসবিএন 978-0-7397-6000-0।[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
- ↑ Kozaryn, Linda D.। "Cohen Renews U.S.-Morocco Ties"। U.S. Department of Defense। সংগ্রহের তারিখ ১২ মার্চ ২০০৯।
- ↑ Roberts, Priscilla H. and Richard S. Roberts, Thomas Barclay (1728–1793): Consul in France, Diplomat in Barbary, Lehigh University Press, 2008, pp. 206–223 আইএসবিএন ০৯৩৪২২৩৯৮X.
- ↑ "Milestones of American Diplomacy, Interesting Historical Notes, and Department of State History"। U.S. Department of State। সংগ্রহের তারিখ ১৭ ডিসেম্বর ২০০৭।
- ↑ Pennell, C. R. (২০০০)। Morocco since 1830: A History। New York University Press। পৃষ্ঠা 40। আইএসবিএন 978-0814766774।
- ↑ Hirschberg, H. Z (১৯৮১)। A history of the Jews in North Africa: From the Ottoman conquests to the present time / edited by Eliezer Bashan and Robert Attal। BRILL। পৃষ্ঠা 318। আইএসবিএন 978-90-04-06295-5।
- ↑ Furlong, Charles Wellington (১৯১১)। "The French Conquest Of Morocco: The Real Meaning Of The International Trouble": 14988–14999।
- ↑ "Morocco tackles painful role in Spain's past ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ১৭ আগস্ট ২০২১ তারিখে," Reuters 14 January 2009.
- ↑ Immigration and Refugee Board of Canada, Morocco: Date of the abolishment of slavery in Morocco; whether descendants of ex-slaves are singled out in any way; and fate of the Palace household and grounds staff when King Mohamed V was in exile ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ তারিখে, 13 August 1999, MAR32476.
- ↑ Porch, Douglas; Spain's African Nightmare; MHQ: Quarterly Journal of Military History; (2006); 18#2; pp. 28–37.
- ↑ "Morocco (Page 9 of 9)".
- ↑ "Morocco profile – Timeline"। BBC News। ১৯ সেপ্টেম্বর ২০১২। সংগ্রহের তারিখ ৯ জানুয়ারি ২০১৩।
- ↑ Encyclopædia Britannica।
- ↑ "Yahoo! Groups"। groups.yahoo.com। ১৮ এপ্রিল ২০০১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৯ নভেম্বর ২০২২।
- ↑ "Morocco's king pardons satirist"। BBC News। ৭ জানুয়ারি ২০০৪।
- ↑ Leonard, Thomas M. (২০০৬)। Encyclopedia of the Developing World। Taylor & Francis। পৃষ্ঠা 1085। আইএসবিএন 978-0-415-97663-3।
- ↑ Morocco major economic player in Africa, researcher ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ৪ মার্চ ২০১৬ তারিখে.
- ↑ "Democracy Index 2020"। Economist Intelligence Unit (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-০৫-১৭।
- ↑ "IMF Gives Morocco Positive Review. nuqudy.com (2012-02-09)."। ৩০ জুন ২০১৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১২ ফেব্রুয়ারি ২০১২।
- ↑ "Morocco sets the goal of attracting 20 million tourists by 2020"। India's leading B2B travel news website। ২৭ জুলাই ২০১৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৬ জুলাই ২০১৪।
- ↑ "Dashboards"। Kingdom of Morocco, Ministry of Tourism। ২৯ মার্চ ২০২০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৯ এপ্রিল ২০২০।
- ↑ The Middle East and North Africa 2003। Europa Publications, Routledge। ২০০২। পৃষ্ঠা 863। আইএসবিএন 978-1-85743-132-2।
- ↑ "Home"। Morocco berber trips (ইংরেজি ভাষায়)। ১১ আগস্ট ২০২০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০৮-০৫।
- ↑ Reuters (১১ জুন ২০০৮)। "Yves Saint Laurent's Ashes Scattered In Marrakesh"। The New York Times। সংগ্রহের তারিখ ১৪ জুন ২০০৮।
- ↑ "Economy Profiles"।
- ↑ "Morocco - Infrastructure | export.gov"। www.export.gov। ১৩ ডিসেম্বর ২০১৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৩০ নভেম্বর ২০২২।
- ↑ "Tanger Med Port Authority – Containers Activity"। ২ সেপ্টেম্বর ২০২১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২ সেপ্টেম্বর ২০২১।
- ↑ "Morocco – electricity production from coal sources"। সংগ্রহের তারিখ ১৮ মে ২০১১।
- ↑ ক খ "Natural Gas to Fuel Morocco. Nuqudy.com (2012-04-12)"। ৩০ জুন ২০১৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৫ এপ্রিল ২০১২।
- ↑ "Ain Beni Mathar, Morocco Solar Thermal Power Station Project"। ৬ এপ্রিল ২০১১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৮ মে ২০১১।
- ↑ Sschemm, Paul (৬ জুন ২০১২)। "Solar-powered plane lands in Morocco"। Associated Press।
- ↑ SciDev.Net। "Morocco to boost investment in science"।
- ↑ "Global Innovation Index 2021"। World Intellectual Property Organization (ইংরেজি ভাষায়)। United Nations। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-০৩-০৫।
- ↑ "Global Innovation Index 2019"। www.wipo.int (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৯-০২।
- ↑ "RTD – Item"। ec.europa.eu। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৯-০২।
- ↑ "Global Innovation Index"। INSEAD Knowledge (ইংরেজি ভাষায়)। ২০১৩-১০-২৮। ২ সেপ্টেম্বর ২০২১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৯-০২।
- ↑ ক খ গ ঘ Zou'bi, Moneef; Mohamed-Nour, Samia (২০১৫)। Arab States. In: UNESCO Science Report: towards 2030 (পিডিএফ)। UNESCO। পৃষ্ঠা 431–469। আইএসবিএন 978-92-3-100129-1।
- ↑ Agénor, P.R.; El-Aynaoui, K. (২০১৫)। Morocco: Growth Strategy for 2025 in an Evolving International Environment। Policy Centre of the Office chérifien des phosphates।
- ↑ Developing Scientific Research and Innovation to Win the Battle of Competitiveness: an Inventory and Key Recommendations.। Hassan II Academy of Science and Technology। ২০১২।
বহিঃসংযোগ
[সম্পাদনা]- সরকারী
- Kingdom of Morocco (official portal)
- (ফরাসি) (আরবি) Parliament of Morocco (official site)
- (ফরাসি) (আরবি) Public Services ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ১৩ মে ২০১১ তারিখে
- রাষ্ট্র প্রধান এবং মন্ত্রিপরিষদ সদসবৃন্দ
- সাধারণ তথ্য
- Morocco from Encyclopaedia Britannica
- সিআইএ প্রণীত দ্য ওয়ার্ল্ড ফ্যাক্টবুক-এ মরোক্কো-এর ভুক্তি
- Morocco from UCB Libraries GovPubs
- Morocco timeline from Worldstatesmen
- অন্যান্য
- Maroc Entrepreneurs Association dedicated to the Promotion of Entrepreneurship in Morocco
- (ফরাসি) Moroccans around the world
- Portal of Moroccans in the U.S.
- A Moroccan Community Online
- Online Community for Moroccan Arabic Learners ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ১ সেপ্টেম্বর ২০০৯ তারিখে
- Historical Background on United States - Morocco Relations
- সংবাদ মিডিয়া
- Maghreb Arabe Presse government news agency
- Morocco Board News Service
- পর্যটন
- Standard Moroccan Tamazight ভাষার লেখা থাকা নিবন্ধ
- পাকিস্তানে মরক্কী প্রবাসী
- আফ্রিকার রাষ্ট্র
- ইসলামি সহযোগিতা সংস্থার সদস্য রাষ্ট্র
- ইসলামি রাজতন্ত্র
- ১৯৫৬-এ প্রতিষ্ঠিত রাষ্ট্র ও অঞ্চল
- আরব লিগের সদস্য রাষ্ট্র
- জাতিসংঘের সদস্য রাষ্ট্র
- আফ্রিকান ইউনিয়নের সদস্য রাষ্ট্র
- আন্তর্জাতিক সংস্থা দে লা ফ্রাঙ্কোফোনির সদস্য রাষ্ট্র
- ভূমধ্যসাগরীয় ইউনিয়নের সদস্য রাষ্ট্র
- ফরাসি ভাষী দেশ ও অঞ্চল
- মরক্কো
- আরবিভাষী দেশ ও অঞ্চল
- সার্বভৌম রাষ্ট্র