জর্ডানের রাজনীতি
জর্দানের রাজনীতিতে সংসদীয় রাজতান্ত্রিক কাঠামো বিদ্যমান। জর্দানে বহুদলীয় ব্যবস্থা প্রচলিত এবং প্রধানমন্ত্রী সরকারপ্রধান হিসেবে বিবেচিত। ১৯৫২ সালের ৮ই জানুয়ারিতে ঘোষিত সংবিধান অনুযায়ী জর্দানে সাংবিধানিক রাজতন্ত্র স্বীকৃত। রাজা সরকারকে নিয়োগ দেন এবং এ সরকারের মাধ্যমে ক্ষমতার প্রয়োগ ঘটান। জর্দানের সরকার সংসদের কাছে দায়ী।
১৯৯৯ সালে পিতার মৃত্যুর পর থেকে রাজা আবদুল্লাহ সার্বভৌম ক্ষমতার অধিকারী হয়ে যান। ২০১৮ সালের ৪ঠা জুন থেকে ওমর রাজ্জাজ জর্দানের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করছেন।
নির্বাহী বিভাগ
[সম্পাদনা]দপ্তর | নাম | দল | দায়িত্বগ্রহণের সময় |
---|---|---|---|
রাজা | জর্দানের দ্বিতীয় আবদুল্লাহ | ৭ই ফেব্রুয়ারি ১৯৯৯ | |
প্রধানমন্ত্রী | ওমর রাজ্জাজ | স্বতন্ত্র | ৪ঠা জুন ২০১৮ |
জর্দানের সংবিধান অনুযায়ী নির্বাহী ক্ষমতা রাজা ও তার মন্ত্রিসভার হাতে ন্যস্ত। রাজা সকল ধরনের আইন প্রণয়ন, বাস্তবায়ন এবং বাতিল করে থাকেন। রাজা সংসদ স্থগিত বা ভেঙ্গে দিতে পারেন। তিনি অধিবেশনের সময় বাড়াতে বা কমাতে পারেন। রাজা কর্তৃক জারিকৃত যেকোনো ভেটো সংসদের উভয় পরিষদের দুই-তৃতীয়াংশ সদস্যদের ভোটে রাজার বিবেচনায় বাতিল করা যেতে পারে। সম্প্রতি ২০০৯ সালের নভেম্বরে এ নিয়ম চালু হয়।[১] রাজা বিচারকদের নিয়োগ দেন এবং ফরমান জারির মাধ্যমে তাদের বরখাস্তও করতে পারেন। তিনি সংসদের উভয় পরিষদে পাস করা সংবিধানের সংশোধনী অনুমোদন করেন। তার উপর সশস্ত্র বাহিনীর সর্বাধিনায়কত্ব ন্যস্ত এবং তিনি যুদ্ধ ঘোষণা করতে পারেন। মন্ত্রিসভার সিদ্ধান্তসমূহ, আদালতের রায় এবং জাতীয় মুদ্রা তার নামে প্রকাশিত হয়। প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে পরিচালিত মন্ত্রিসভা আগে রাজা কর্তৃক নিয়োগ দেওয়া হত। তবে ২০১১ সালের জর্দানি আন্দোলনের পর রাজা আবদুল্লাহ মন্ত্রিসভা নির্বাচন অনুষ্ঠানে সম্মত হন। মন্ত্রিসভা সাধারণ কর্মপন্থার জন্য নিম্নসভার (চেম্বার অব ডেপুটিস) নিকট দায়ী থাকে। নিম্নসভার দুই-তৃতীয়াংশ সদস্যদের অনাস্থা প্রস্তাবে মন্ত্রিসভা পদত্যাগে বাধ্য হতে পারে।
আইন বিভাগ
[সম্পাদনা]জর্দানের আইন সংক্রান্ত ক্ষমতা দ্বিকক্ষবিশিষ্ট জাতীয় পরিষদের হাতে ন্যস্ত থাকে। জাতীয় পরিষদের (মজলিশ আল-উম্মা) দুইটি কক্ষ রয়েছে। নিম্নসভায় (মজলিশ আল-নওয়াব) ১৩০ জন সদস্য রয়েছে, যারা চার বছরের মেয়াদে একক আসনে নির্বাচিত হন। ১৫টি আসন বিশেষ ইলেক্টোরাল কলেজ দ্বারা নারীদের জন্য সংরক্ষিত। এছাড়াও নয়টি আসন খ্রিষ্টানদের জন্য এবং তিনটি আসন চেচেনদের জন্য সংরক্ষিত। নিম্নসভা জনগণ কর্তৃক নির্বাচিত হলেও এর আইন সংক্রান্ত ক্ষমতা কেবল আইন সমর্থন, প্রত্যাখ্যান ও সংশোধনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ। নতুন আইন প্রবর্তনে নিম্নসভার ক্ষমতা নেই।[১] সিনেট আইনসভায় (মজলিশ আল-আয়ান) ৬৫ জন সদস্য রয়েছে যারা রাজা কর্তৃক চার বছরের মেয়াদে নির্বাচিত হন। সিনেট আইনসভা নিম্নসভা বা চেম্বার অব ডেপুটিসের নিকট দায়ী থাকে এবং নিম্নসভার অনাস্থা প্রস্তাবের মাধ্যমে সিনেট অপসারিত হতে পারে।
প্রত্যেক সংসদীয় নির্বাচনে জর্দানের আইনসভার রাজনৈতিক দল বা গোষ্ঠীর পরিবর্তন হয়। সাধারণত একটি গণতান্ত্রিক মার্কসবাদী/সমাজতান্ত্রিক দল, একটি মূলধারার উদারপন্থী দল, একটি মধ্যপন্থী-বাস্তববাদী দল, একটি মূলধারার রক্ষণশীল দল ও একটি কট্টর রক্ষণশীল দল (যেমন ইসলামিক অ্যাকশন ফ্রন্ট) আইনসভায় নিযুক্ত হয়।
জর্দানি চেম্বার অব ডেপুটিস সদস্যদের মধ্যে বিবাদ ও ঝগড়ার জন্য বিশেষভাবে পরিচিত। এমনকি চেম্বার অব ডেপুটিসে শারীরিক আক্রমণ ও অস্ত্র ব্যবহারেরও ঘটনা ঘটেছে। ২০১৩ সালের সেপ্টেম্বরে জনপ্রতিনিধি তালাল আল-শরিফ সংসদ প্রাঙ্গনে তার এক সহকর্মীকে আস্সাউলট রাইফেল দিয়ে গুলি করতে উদ্যত হয়েছিলেন।[২]
বিচার বিভাগ
[সম্পাদনা]বিচার বিভাগ সরকার অন্য দুইটি বিভাগ থেকে স্বতন্ত্র ও সম্পূর্ণরূপে স্বাধীন। সংবিধান অনুযায়ী তিন ধরনের আদালত রয়েছে- জন আদালত (নিয়মিত আদালত), ধর্মীয় আদালত এবং বিশেষ আদালত। নিয়মিত আদালতে দেওয়ানি ও ফৌজদারি উভয় ধরনের মামলার নিষ্পত্তি করা হয়। নিয়মিত আদালতে প্রাথমিকভাবে মীমাংসাকারী আদালত, আপিল আদালত ও রদকরণ আদালত- এই তিন ধরনের মাত্রা রয়েছে। রদকরণ আদালত জর্দানের সর্বোচ্চ বিচার বিষয়ক কর্তৃপক্ষ। জর্দানে দুই ধরনের ধর্মীয় আদালত রয়েছে। শরিয়া আদালত ইসলামিক আইন ও নাগরিকব্যবস্থার বিধানসমূহ প্রয়োগ করে। অন্যান্য ধর্মীয়গোষ্ঠীর ট্রাইব্যুনাল জর্দানে সরকারিভাবে স্বীকৃত।
রাজনৈতিক পরিস্থিতি
[সম্পাদনা]রাজা হুসেইন ১৯৫৩ থেকে ১৯৯৯ সাল পর্যন্ত জর্দান শাসন করেন। তিনি শাসন করার সময় বেশ কিছু বাধার সম্মুখীন হয়েও সেগুলোকে মোকাবিলা করেন। তিনি সশস্ত্র বাহিনীর আনুগত্য ও আস্থা অর্জন করেন। জর্দানি ও জর্দানের ফিলিস্তিনি জনগোষ্ঠীর নিকট একতা ও স্থিতিশীলতার প্রতীক হিসেবে তিনি গ্রহণযোগ্য হয়ে উঠেন। রাজা হুসেইন ১৯৮৯ সালে সামরিক আইন বন্ধ ঘোষণা করেন। পশ্চিম তীর ইসরাইলের নিকট হারানোর পর দেশের স্থিতিশীলতা রক্ষার্থে সব রাজনৈতিক দলের উপর নিষেধাজ্ঞা প্রদান করা হয়। রাজা হুসেইন রাজনৈতিক দলের উপরের এ নিষেধাজ্ঞা তুলে দেন। ১৯৮৯ ও ১৯৯৩ সালে জর্দান সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ সংসদীয় নির্বাচন অনুষ্ঠান করে। সাংবিধানিক আইনে বিতর্কিত পরিবর্তন আনার জন্য ইসলামবাদী দলগুলো ১৯৯৭, ২০১১ ও ২০১৩ সালের নির্বাচন প্রত্যাখ্যান করে।
বিকেন্দ্রীকরণ
[সম্পাদনা]রাজা দ্বিতীয় আবদুল্লাহ এবং জর্দানি সরকার পরীক্ষামূলক পরিকল্পনা হিসেবে মাদাবা গভর্নোরেটের মাধ্যমে বিকেন্দ্রীকরণের প্রক্রিয়া শুরু করে। প্রাদেশিকভাবে দেশটিকে তিনটি প্রদেশে ভাগ করা হয়ঃ উত্তর, মধ্য ও দক্ষিণ। বৃহত্তর আম্মান শহর এ পরিকল্পনার আওতায় না থাকলেও এখানেও একই ধরনের বিকেন্দ্রীকরণ প্রক্রিয়া শুরু হবে। প্রত্যেক প্রদেশের একটি নির্বাচিত কাউন্সিল থাকবে যা অত্র এলাকার রাজনৈতিক, সামাজিক, বৈধ ও অর্থনৈতিক বিষয় পরিচালনা করবে। এই বিকেন্দ্রীকরণ প্রক্রিয়া জর্দানের গণতন্ত্রীকরণ কার্যক্রমের অংশ।
দুর্নীতি
[সম্পাদনা]বিশ্বের ১৮০টি জাতির মধ্যে দুর্নীতি সূচকে জর্দানের অবস্থান ৪৭তম। জর্দানের সংবিধান অনুযায়ী কোনো সাংসদ সরকারের সাথে কোনো আর্থিক বা ব্যবসায়িক সম্পর্কে জড়াতে পারবে না এবং রাজবংশীয় পরিবারের কোনো সদস্য সরকারে থাকতে পারবে না জর্দানে অনেক উন্নতির পরেও দুর্নীতি একটি বড় সমস্যা। দুর্নীতি বিরোধী কমিশন দুর্নীতি বিষয়ক মামলাগুলো পরীক্ষা করেন এবং আইনগত ব্যবস্থার জন্য বিচার বিভাগে প্রেরণ করেন। জর্দানের দুর্নীতি স্বজনপ্রীতি, পক্ষপাতিত্ব ও ঘুষব্যবস্থার মধ্যে বিস্তৃত।
প্রশাসনিক বিভাগ
[সম্পাদনা]প্রশাসনিকভাবে, জর্দানের বারটি গভর্নরেট (মুহাফাজাত, একবচন-মুহাফাজাহ) মধ্যে বিভক্ত, প্রতিটি নেতৃত্বে রাজা দ্বারা নিযুক্ত গভর্নর।
তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ ক খ Freedomhouse.org http://www.freedomhouse.org/template.cfm?page=22&year=2010&country=7849 ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ২৩ ডিসেম্বর ২০১১ তারিখে
- ↑ Tamer al-Samadi (২৫ সেপ্টেম্বর ২০১৩)। "Jordan MP Fires Kalashnikov In Parliament"। Al-Monitor। সংগ্রহের তারিখ ১৩ অক্টোবর ২০১৩।