খ্রিষ্টপূর্ব ৫ম সহস্রাব্দ
সহস্রাব্দ: | |
---|---|
শতাব্দী: |
|
খ্রিষ্টপূর্ব পঞ্চম সহস্রাব্দ ৫০০০ খ্রিষ্টপূর্ব থেকে ৪০০১ খ্রিষ্টপূর্বাব্দ পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল। এই সহস্রাব্দের সময়কালে ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলোর তারিখ যথাযথভাবে বের করা অসম্ভব এবং এখানে উল্লিখিত সমস্ত তারিখ মূলত ভূতাত্ত্বিক এবং নৃতাত্ত্বিক বিশ্লেষণের ভিত্তিতে অনুমান করা হয়েছে।
সম্প্রদায়সমূহ
[সম্পাদনা]এ সহস্রাব্দে নিওলিথিক বিপ্লব দ্বারা সৃষ্ট পূর্ববর্তী সহস্রাব্দের দ্রুত বিশ্ব জনসংখ্যা বৃদ্ধি ধীর হয়ে গিয়েছিল এবং মোটামুটি স্থিতিশীল হয়ে উঠেছিল বলে মনে করা হয়। অনুমান করা হয় যে, ৫০০০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দে বিশ্বজুড়ে প্রায় ৪ কোটি লোক ছিল, ১৬০০ খ্রীস্টপূর্বাব্দে বা মধ্য ব্রোঞ্জ যুগে তা বেড়ে প্রায় ১০ কোটি হয়েছিল।[১]
ইউরোপ
[সম্পাদনা]কুকুতেণী–ত্রিপিলিয়া সংস্কৃতি (ওরফে ট্রিপলিয়ে সংস্কৃতি) আনুমানিক খ্রিষ্টপূর্ব ৪৮০০ সময়কালে শুরু হয়েছিল। এটি আধুনিক মলদোভা কেন্দ্রিক ছিল এবং ৩০০০ খ্রীস্টপূর্ব পর্যন্ত এবং তিনটি পর্যায়ক্রমিক ধাপে স্থিত হয়েছিল।[২][৩][৪]
প্রায় ৪৫০০ খ্রিষ্টপূর্ব থেকে ২৫০০ খ্রিষ্টপূর্ব অবধি, প্রত্ন-ইন্দো-ইউরোপীয় (পিআইই) নামে একটি একক ভাষা হিসাবে আধুনিক ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষার অগ্রদূত হিসাবে বিদ্যমান ছিল, তবে এটি কোনও লিখিত পাঠ্য রেখে যায় নি এবং এ ভাষার কাঠামোও অজানা।[৫]
চীন
[সম্পাদনা]খ্রিষ্টপূর্ব ৫০০০ সালের দিকে তিনটি স্বীকৃত সংস্কৃতির সূচনা দিয়ে চীনা সভ্যতা অগ্রসর হয়েছিল। ইয়াংশাও সংস্কৃতি হুয়াংহো নদীর (হলুদ নদী) অববাহিকায় অবস্থিত ছিল এবং প্রায় ২,০০০ বছর ধরে স্থায়ী ছিল। ধারণা করা হয় যে, এখানেই প্রথম শূকর গৃহপালিত হয়েছিল। এই সভ্যতাতেই প্রথম মৃৎশিল্প মাটি খুঁড়ে অগ্নিকুণ্ডে নিক্ষেপ করা হতো এবং তার পরে আঁকা হতো। বাজরার চাষ হত।[৬] ৪৭০০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দে আধুনিক সিয়ান, শাআনশি এর কাছাকাছি বানপোতে ইয়াংশাওর জন্য একটি এ-টাইপ বসতি স্থাপন করা হয়েছিল।[৭]
এছাড়াও খ্রিষ্টপূর্ব ৫০০০ সালের দিকে, হিমুডু সংস্কৃতি পূর্ব চীনে ধানের চাষ শুরু করেছিল,[৮] এবং মজিয়াবাং সংস্কৃতি আধুনিক সাংহাইয়ের কাছে ইয়াংটজে মোহনায় প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল, যেটি ৩৩০০ খ্রিষ্টাব্দ অবধি স্থায়ী ছিল।[৯]
অস্ট্রেলিয়া
[সম্পাদনা]অনুমান করা হয় যে, সিডনির নিকটে স্বতন্ত্র আদিম পাথরের খোদাইগুলো খ্রিষ্টপূর্ব ৫০০০ বা খ্রিষ্টপূর্ব ৩০০০ এর মধ্যে তৈরি হয়েছিল।[১০]
আফ্রিকা
[সম্পাদনা]অনুমান করা হয়ে থাকে যে, যাজক নিওলিথিকের সূচনা সবুজ সাহারার পরবর্তী পর্যায়ে ছিল, এবং এটি ছিল খ্রিষ্টপূর্ব ৬ষ্ঠ বা ৫ম সহস্রাব্দের দিকে। এটি ছিল আফ্রিকান আর্দ্র সময়কাল (খ্রিষ্টপূর্ব ৩৯০০ খ্রিষ্টাব্দ) শেষ হওয়ার এবং সবুজ সাহারার শুকিয়ে যাওয়ার আগে। এই সময়ে, সাব-সাহারান আফ্রিকা প্যালিওলিথিক রয়ে যায়। সাহারার তৃণভূমিগুলো খ্রিষ্টপূর্ব ৩৯০০ সালের পরে শুকাতে শুরু করলে, পালকরা নীল উপত্যকায় এবং খ্রিষ্টপূর্ব তৃতীয় সহস্রাব্দের মাঝামাঝি পূর্ব আফ্রিকাতে চলে এসেছিল।[১১]
বর্ষপঞ্জী এবং কালানুক্রম
[সম্পাদনা]পঞ্চম সহস্রাব্দ বর্ষপঞ্জী এবং কালপঞ্জীর জন্য একটি সূচনাবিন্দুতে পরিণত হয়েছে, যদিও বাস্তবে শুধুমাত্র একটির কোন ভিত্তি আছে। খ্রিষ্টপূর্ব ৪৭৫০ অব্দ আসিরীয় বর্ষপঞ্জীর একটি বিশেষ সূচনাকেন্দ্র, যা আসলে ২০০০ বছর আগের আশুর ভিত্তির ঐতিহ্যবাহী তারিখ চিহ্নিত করে।[১২]
আরেকটি ঐতিহ্যবাহী তারিখ ১৯ জুলাই ৪২৪১ খ্রিষ্টপূর্বাব্দ, যা মিশরীয় বর্ষপঞ্জীর অনুমিত সূচনাকে চিহ্নিত করে, যা এডুয়ার্ড মেয়ার দ্বারা পূর্ব নির্ধারিত। সম্ভাব্য সূচনাবিন্দু হল ১৯ জুলাই ২৭৮১ খ্রিষ্টপূর্বাব্দ, একটি পরবর্তী সোথিক চক্র। সাধারণত বিশ্বাস করা হয় যে বর্ষপঞ্জীটি সিরিয়াসের হেলিয়াকাল (ভোর) উত্থানের উপর ভিত্তি করে তৈরি করা হয়েছে, কিন্তু এখন সেই দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে প্রশ্ন তোলা হচ্ছে।[১৩] [১৪]
আশারের কালপঞ্জি অনুসারে, পৃথিবী রচনা ঘটে খ্রিষ্টপূর্ব ৪০০৪ অব্দের ২২/২৩ অক্টোবর। এই কালপঞ্জি ছিল জেমস আশারের কাজ, যার ভিত্তি ছিল বাইবেলের ওল্ড টেস্টামেন্টের তারিখ। তিনি অনুমান করেন যে ২২ তারিখ (ইহুদী বর্ষপঞ্জী) অথবা ২৩ তারিখে (আশার-লাইটফুট-কালপঞ্জি) রাত ১৮টায় ঈশ্বর এই মহাবিশ্ব সৃষ্টি করেছেন।[১৫]
পঞ্চম সহস্রাব্দের একমাত্র সঠিক তারিখ সোমবার, ১ জানুয়ারি ৪৭১৩ খ্রিষ্টপূর্বাব্দ, বর্তমান জুলিয়ান যুগের শুরু। ষোড়শ শতাব্দীতে জোসেফ জাস্টাস স্কেলিজার প্রথম বর্ণনা করেন। এই জুলীয় সময়কাল পরবর্তী সহস্রাব্দে ৩২৬৮ সাল পর্যন্ত ৭,৯৮০ বছর স্থায়ী হয়। এটি বিভিন্ন বর্ষপঞ্জীর মধ্যে তারিখ রূপান্তরের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ কৌশল। উৎপত্তির তারিখ জুলিয়ান ডে কাউন্টে শূন্যের পূর্ণসংখ্যা মান আছে: অর্থাৎ, জুলীয় বর্ষপঞ্জি; গ্রেগরীয় বর্ষপঞ্জির একটি সাধারণ বছর ২৪ নভেম্বর ৪৭১৪ খ্রিষ্টপূর্বাব্দ।[১৬]
তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ Jean-Noël Biraben, "Essai sur l'évolution du nombre des hommes", Population 34-1 (1979), pp. 13–25.
- ↑ Schmidt, Hubert (১৯৩২)। Cucuteni in der oberen Moldau, Rumanien: die befestigte Siedlung mit bemalter Keramik von der Steinkupferzeit bis in die vollentwickelte Bronzezeit (German ভাষায়)। W. de Gruyter। ওসিএলসি 4942033।
- ↑ Lazarovici, Cornelia-Magda (২০১০)। "New data regarding the chronology of the Pre-Cucuteni, Cucuteni and Horodistea–Erbiceni cultures": 71–94।
- ↑ Passek, Tatiana Sergeyevna (১৯৪৯)। "Periodizatsiia tripol'skikh poselenii, iii–ii tysiacheletie do n. e."। Materialy i issledovaniia po arkheologii SSSR (Russian ভাষায়)। Izd-vo Akademii nauk SSSR। ওসিএলসি 27000780।
- ↑ Powell, Eric A. (২০১৯)। "Telling Tales in Proto-Indo-European"। Archaeology। ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৩ নভেম্বর ২০১৯।
- ↑ Liu, Li; Chen, Xingcan (২০১২)। The Archaeology of China: From the Late Palaeolithic to the Early Bronze Age। Cambridge University Press। আইএসবিএন 978-0-521-64310-8।
- ↑ Yang, Xiaoping (২০১০)। "Climate Change and Desertification with Special Reference to the Cases in China"। Changing Climates, Earth Systems and Society। পৃষ্ঠা 177–187। আইএসবিএন 978-90-481-8715-7। ডিওআই:10.1007/978-90-481-8716-4_8।
- ↑ G. W. Crawford and C. Shen, "The Origins of rice agriculture: recent progress in East Asia", Antiquity 72(278):858-866 (December 1998), ডিওআই:10.1017/S0003598X00087494
- ↑ Chang, Kwang-chih (১৯৮৬)। The Archaeology of Ancient China। পৃষ্ঠা 206–209। আইএসবিএন 0-300-03784-8।
- ↑ Delaney, Brigid (২৩ জুলাই ২০১৫)। "Hidden in plain sight: Indigenous Australian rock art on Sydney's doorstep"। The Guardian। সংগ্রহের তারিখ ১ জুন ২০১৯।
- ↑ Gifford-Gonzalez, Diane. (2017) "Pastoralism in sub-Saharan Africa." In The Oxford Handbook of Zooarchaeology, pp. 396-413.
- ↑ Wozniak, Marta (২০১২)। "Far from Aram-Nahrin: The Suryoye Diaspora Experience"। Border Terrains: World Diasporas in the 21st Century। Inter-Disciplinary Press, Oxford। পৃষ্ঠা 78। আইএসবিএন 978-1-84888-117-4।
- ↑ Grimal, Nicolas (১৯৮৮)। A History of Ancient Egypt। Librairie Arthéme Fayard। পৃষ্ঠা 52।
- ↑ Kitchen, K. A. (অক্টোবর ১৯৯১)। "The Chronology of Ancient Egypt"। World Archaeology: 205।
- ↑ Bressan, David (২২ অক্টোবর ২০১৩)। "October 23, 4004 B.C.: Happy Birthday Earth!"। Scientific American। সংগ্রহের তারিখ ২ নভেম্বর ২০১৯।
- ↑ Seidelmann, P. Kenneth (২০১৩)। Introduction to Positional Astronomy। Explanatory Supplement to the Astronomical Almanac (3rd edition)। University Science Books। পৃষ্ঠা 15। আইএসবিএন 978-1-891389-85-6।