বিষয়বস্তুতে চলুন

কান

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
কান
মানবদেহের কান
বিস্তারিত
তন্ত্রশ্রবণ ও ভারসাম্য
শনাক্তকারী
লাতিনAuris
মে-এসএইচD004423
নিউরোলেক্স আইডিbirnlex_1062
টিএ৯৮A01.1.00.005
A15.3.00.001
টিএ২6861
এফএমএFMA:52780
শারীরস্থান পরিভাষা

কর্ণ বা কান প্রাণিদেহের শ্রবণ অঙ্গ, যা স্তন্যপায়ী প্রাণীদের ক্ষেত্রে ভারসাম্যও রক্ষা করার কাজ করে। এটি মানবদেহের একটি অঙ্গ, যা মাথার দুই দিকে অবস্থিত। এর দ্বারা মানুষ শ্রবণ করে।[] এর সাহায্যে আমরা শব্দ শুনি, তাই এটি একটি শ্রবণেন্দ্রিয়। কানকে আমরা শ্রুতি যন্ত্রও বলতে পারি। কর্ণছত্র বাইরে থাকে, কিন্তু কর্ণের অন্যান্য অংশ খুলির মধ্যে কর্ণ প্রকোষ্ঠে অবস্থান করে। মানুষের কর্ণ তিনটি অংশে বিভক্ত এগুলি হল যথাক্রমে; বহিঃকর্ণ, মধ্যকর্ণ এবং অন্তঃকর্ণ।

মানুষের কানের প্রধান তিনটি[] অংশ হল-

বহিঃকর্ণ

[সম্পাদনা]

কর্ণছত্র , কর্ণকুহর ও কর্ণপটহ দ্বারা গঠিত। এদের কাজ হল শব্দতরঙ্গকে বাইরের থেকে মধ্যকর্ণে প্রবাহিত করা...

মধ্যকর্ণ

[সম্পাদনা]

মেলিয়াস, ইনকাসস্টেপিস নামে তিনটি অস্থি দ্বারা গঠিত।এদের কাজ হল শব্দতরঙ্গকে কর্ণপটহ থেকে অন্তকর্ণে প্রবাহিত করা। স্টেপিস মানবদেহের সর্বাপেক্ষা ছোট অস্থি। স্টেপিস ত্রিকোণাকার অস্থি।

অন্তঃকর্ণঃ

[সম্পাদনা]

করোটির অডিটরি ক্যাপ্সুলের পেরিওটিক অস্থির অভ্যন্তরে অন্তঃকর্ণ অবস্থান করে। অন্তঃকর্ণের প্রধান অংশ হলো পাতলা পর্দা জাতীয় মেমব্রেনাস ল্যাবিরিন্থ নামক একটি জটিল  অঙ্গ। এ অঙ্গটি এন্ডোলিম্ফ নামক তরল পদার্থ দ্বারা পূর্ণ থাকে।  পেরিলিম্ফ নামক তরল পদার্থপূর্ন অস্থিময় ল্যাবিরিন্থ দ্বারা মেমব্রেনাস লেবিরিন্থ পরিবেষ্টিত থাকে। এন্ডোলিম্ফ ও পেরিলিম্ফ সম্পূর্নভাবে পৃথক থাকে।

মেমব্রেনাস ল্যাবিরিন্থ এর মূলদেহ ইউট্রিকুলাস ও স্যাকুলাস নামক দুটি প্রকোষ্ঠ নিয়ে গঠিত। ইউট্রিকুলাস আকারে বড় ও উপরে অবস্থান করে। স্যাকুলাস ছোট এবং নিচে অবস্থান করে। স্যাকুলোইউট্রিকুলার নামক একটি সংক্ষিপ্ত নালী  দ্বারা দুটি প্রকোষ্ঠ পরস্পর সংযুক্ত থাকে ।  প্রতিটি প্রকোষ্ঠের অভ্যন্তরে ম্যাকুলা নামের কতগুলো সংবেদি কোষ থাকে এবং এগুলো থেকে সংবেদী লোম বের হয়। লোমগুলো কানের পাথর বা অটোলিথ সমন্বিত জেলিতে ডুবে থাকে। এসব সংবেদি কোষ ও লোম মানুষের মাথার অবস্থান ঠিক রাখে।  

ইউট্রিকুলাস বা ভেস্টিবিউলার অ্যাপারেটাস কানের ভারসাম্য রক্ষাকারী অঙ্গ। এটি একটি ভেস্টিবিউল বা গোলাকার প্রকোষ্ঠ এবং তিনটি অর্ধবৃত্তাকার নালী নিয়ে গঠিত।  নালীগুলোর মধ্যে দুটি উলম্বিক এবং একটি আনুভূমিকভাবে অবস্থান করে। নালীগুলো পরস্পর সমকোণে অবস্থান করে। প্রতিটি নালীর একপ্রান্ত কিছুটা স্ফিত হয়ে অ্যাম্পুলা গঠন করে যার  অভ্যন্তরে ক্রিস্টি নামের সংবেদি লোমবাহী কতগুলো কোষ থাকে।  সংবেদী লোমগুলো চুনময় জেলীর মত অটোলিথ দ্বারা আবৃত থাকে।

কাজঃ  এটি দেহের ভারসাম্য রক্ষায় প্রধান ভূমিকা রাখে।

ককলিয়া ও ভেস্টিবিউলার যন্ত্র দ্বারা নির্মিত।ককলিয়ার মধ্যেই শ্রুতি-যন্ত্র অবস্থিত।

কিভাবে আমরা শুনতে পাই

[সম্পাদনা]

আমাদের কর্ণছত্র (Pinna) শব্দ-তরঙ্গকে সংগ্রহ ও কেন্দ্রীভূত করে কর্ণকুহরে পাঠায়। ঐ তরঙ্গ কর্ণপটহ (Tympanic Membrane)-কে আঘাত করায় তা কাঁপতে থাকে। তারপর এই কম্পন যথাক্রমে হাতুড়ি, নেহাই এবং রেকাবী অস্থির মাধ্যমে প্রবাহিত হয়ে অন্তঃকর্ণে পৌঁছায়। অন্ত্যকর্ণের ককলিয়ায় অবস্থিত তরলে কম্পনের সৃষ্টি হয়। এই কম্পনের ফলে গ্রাহক কোষ কটির অঙ্গ (Organs of Corti)-ও কাঁপতে থাকে। শব্দ- তরঙ্গ তথা কম্পনের অনুভূতি শ্রবণ-স্নায়ুর মাধ্যমে মস্তিষ্কে যায়, তারপর আমরা শুনতে পাই। সমগ্র ব্যাপারটিকে এভাবে দেখানো যেতে পারে।

বায়ুতে সৃষ্ট শব্দ-তরঙ্গ > কর্ণকুহর > কর্ণপটহ (পর্দা) > ম্যালিয়াস অস্থি > ইনকাস অস্থি > স্টেপিস অস্থি > ডিম্বাকার পর্দা > পেরিলিম্ফ > এন্ডোলিম্ফ >কর্টির অঙ্গ (ককলিয়া) > স্নায়বিক স্পন্দন > শ্রবণ-স্নায়ু > মস্তিষ্ক > শ্রবণ[]

ভারসাম্য রক্ষায় কানের ভূমিকা

[সম্পাদনা]

শ্রবণ ছাড়াও কান বা কর্ণ দেহের ভারসাম্য রক্ষায় সাহায্য করে। এ ব্যাপারে অন্তঃকর্ণের ভূমিকা আছে। অন্তঃকর্ণের মধ্যে অর্ধবৃত্তাকার নালীগুলি যুক্ত হয়ে একটি স্ফীত অংশ গঠন করে, একে অ্যামপুলা (Ampulla) বলে। অ্যামপুলাতে অনেকগুলি সংবেদন রোম (Sensory Hairs) দেখা যায়। বোমগুলি শঙ্কব আকারের জেলির মতো অংশে আবদ্ধ থাকে। মাথা ঘোরানো বা নাড়ানো হলে অর্ধবৃত্তাকার নালীর মধ্যের এন্ডোলিম্ফ ওই জেলির মতো অংশে চাপ সৃষ্টি করে। ফলে রোমগুলি বেঁকে তার স্পন্দন মস্তিষ্কে পাঠায়। মস্তিষ্ক সংশ্লিষ্ট পেশীতে নির্দেশ পাঠিয়ে তাকে সঙ্কুচিত করে। ফলে মাথা আগের অবস্থায় ফিরে আসে। অন্তঃকর্ণের মধ্যে থলির মতো অংশ ইউট্রিক্যুলাস (Utriculus) ও স্যাকুলাস (Sacculus)-ও দেহের ভারসাম্য রক্ষায় সাহায্য করে। এদের গহ্বরেও ছোট ছোট রোমযুক্ত সংবেদী কোষ গুচ্ছাকারে থাকে। গুচ্ছায়িত রোম জেলির মতো পদার্থের মধ্যে ডুবে থাকে। জেলির মতো পদার্থে ছোট ছোট ক্যালসিয়াম কার্বোনেট (Calcium Carbonate)-এর অসংখ্য দানা ছড়িয়ে থাকে। এই দানাগুলিকে ওটোলিথ(Otolith) বলে। মাথা কোন কারণে কাত হলে অভিকর্ষের প্রভাবে ওটোলিথগুলি সংবেদী রোমে চাপ দেয়। ফলে কোষগুলি উদ্দীপনা গ্রহণ করে শ্রবণ-স্নায়ুর মাধ্যমে স্পন্দন মস্তিষ্কে পাঠিয়ে দেয়। মস্তিষ্ক নির্দিষ্ট পেশীকে সঙ্কুচিত করার নির্দেশ দেয়। ফলে মাথা সোজা হয়। তাই দেখা যাচ্ছে আমাদের দেহের ভারসাম্য রক্ষায় কর্ণের বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা আছে।[]

তথ্যসূত্র

[সম্পাদনা]
  1. "Ear"Oxford Dictionary (ইংরেজি ভাষায়)। ৫ মার্চ ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ 
  2. Standring, Susan (২০০৮)। Borley, Neil R., সম্পাদক। Gray's Anatomy: The Anatomical Basis of Clinical Practice (40 সংস্করণ)। Edinburgh: Churchill Livingstone/Elsevier। পৃষ্ঠা Chapter 36. "External and middle ear", 615–631। আইএসবিএন 978-0-443-06684-9। ১০ মার্চ ২০১৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। 
  3. মাধ্যমিক জীবন বিজ্ঞান, দ্বিতীয় খণ্ড:তুষারকান্তি ষন্নিগ্রহী, শ্রীভূমি পাবলিশিং কোম্পানি, কলকাতা, বছর ১৯৮৬ পৃঃ ২৬
  4. মাধ্যমিক জীবন বিজ্ঞান, দ্বিতীয় খণ্ড:তুষারকান্তি ষন্নিগ্রহী, শ্রীভূমি পাবলিশিং কোম্পানি, কলকাতা, বছর ১৯৮৬, পৃঃ ২৬