আব্বাস ইবনে আব্দুল মুত্তালিব
আল-আব্বাস ইবন আব্দুল মুত্তালিব | |
---|---|
জন্ম | আনু. ৫৬৮ |
মৃত্যু | আনু. ৬৫৩ |
পরিচিতির কারণ | হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) এর চাচা |
দাম্পত্য সঙ্গী | লুবাবাহ বিনতুল হারিস |
সন্তান | আবদুল্লাহ বিন আব্বাস |
আল-আব্বাস ইবনে আব্দুল মুত্তালিব[ক] (আরবি: العباس بن عبد المطلب) (৫৬৮-৬৫৩) ছিলেন ইসলামের নবী হযরত মুহাম্মাদ (সা.) এর পিতৃকুলের সবচেয়ে ছোট চাচা এবং বিশিষ্ট সাহাবি। তিনি তার ভাতিজার চেয়ে মাত্র তিন বছর বড় ছিলেন। মক্কার একজন ধনী ব্যবসায়ী হিসেবে ইসলামের প্রথম দিকে তিনি মুহাম্মাদ (সা.) কে মক্কায় থাকাকালীন সময়ে রক্ষা করেছিলেন, কিন্তু তিনি ৬২৪ খ্রিস্টাব্দে বদরের যুদ্ধে (২ হিজরি) পর ইসলামে দীক্ষিত হন। মুহাম্মাদ এর ১১ জন চাচাদের মাঝে হামজা এবং তিনি ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন। ৬৫৩ খ্রিষ্টাব্দে তিনি মৃত্যুবরণ করেন এবং তাকে মদীনায় সমাহিত করা হয়। তার বংশধররা ৭৫০ খ্রিস্টাব্দে আব্বাসীয় খিলাফতের প্রতিষ্ঠা করেন।[১]
প্রাথমিক জীবন
[সম্পাদনা]আব্বাস আনুমানিক ৫৬৫ খ্রিস্টাব্দে জন্মগ্রহণ করেন এবং তিনি আব্দুল মুত্তালিবের ছোট পুত্রদের একজন ছিলেন। তার মা ছিলেন নামির গোত্রের নুতাইলা বিনত জানাব।[২] তার পিতার মৃত্যুর পর তিনি জমজম কূপের দায়িত্ব গ্রহণ করেন এবং হাজীদের জন্য পানি বিতরণ করতে থাকেন।[৩] তিনি মক্কায় একজন মসলার ব্যবসায়ী হন,[৪] যা তাকে ধনী করে তোলে।[৫] ব্যবসার উদ্দেশ্যে, তিনি সিরিয়া থেকে আসা-যাওয়া একটি কাফেলার পরিচালনা করতেন এবং এই ব্যবসায় মুহাম্মাদ (সা.) কে একজন শিষ্য হিসেবে প্রশিক্ষণ দিয়েছিলেন এবং তাকে উত্তর দিকের যাত্রার নেতৃত্ব দিতে নিয়োগ করেছিলেন।[৬]
ইসলাম গ্রহণ
[সম্পাদনা]যখন ইসলাম ধর্মের অনুসারী বৃদ্ধি হচ্ছিল (৬১০–৬২২ খ্রিস্টাব্দ), আব্বাস তার আত্মীয়ের সুরক্ষা দিতেন কিন্তু সেই সময়েও ইসলাম গ্রহণ করেননি। তিনি আকাবার দ্বিতীয় অঙ্গীকারের সময় একজন বক্তা হিসেবে কাজ করেছিলেন,[৭] কিন্তু তিনি মদিনায় হিজরতকারীদের মধ্যে ছিলেন না।
মুশরিকদের পক্ষে যুদ্ধ করে আব্বাস বদরের যুদ্ধে বন্দী হন। মুহাম্মাদ (সা.) তাকে এবং তার ভাতিজাকে মুক্তির জন্য হযরত আব্বাসকে মুক্তিপণ দিতে দেন।[৮]
ইবনে হিশাম বলেছেন যে, বদরের যুদ্ধের আগে আব্বাস গোপনে মুসলমান হয়ে গিয়েছিলেন;[৯] কিন্তু তাবারীর উদ্ধৃতিতে এই বিষয়ে স্পষ্ট কোনো বিবৃতি নেই।[১০][১১] কিছু বর্ণনায় বলা হয়েছে যে, তিনি বদরের যুদ্ধের কিছুদিন পর ইসলাম গ্রহণ করেন।[১২]
আরও কোথাও বলা হয়েছে যে, আব্বাস আনুষ্ঠানিকভাবে ৬৩০ খ্রিস্টাব্দের জানুয়ারিতে মক্কার পতনের ঠিক আগে ইসলাম গ্রহণ করেন, যখন তার স্ত্রী লুবাবা ২০ বছর আগে ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন।[১৩] মুহাম্মাদ (সা.) তখন তাকে "সর্বশেষ হিজরতকারী" (মুহাজির) বলে অভিহিত করেন, যা তাকে যুদ্ধের মালামালের আয় থেকে লাভবান হওয়ার অধিকার দিয়েছিল। তাকে হাজীদের জন্য জমজম পানি সরবরাহের অধিকার দেওয়া হয়েছিল, যা তার বংশধরদের মধ্যে প্রজন্মান্তরে চলে যায়।[১৪]
আব্বাস তৎক্ষণাৎ মুহাম্মাদ (সা.) এর সেনাবাহিনীতে যোগদান করেন এবং মক্কা বিজয়, হুনাইনের যুদ্ধ এবং তায়েফের যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। তিনি হুনাইনের যুদ্ধে মুহাম্মাদ (সা.) কে রক্ষা করেন যখন অন্য যোদ্ধারা তাঁকে রেখে চলে গিয়েছিল।[১৫] এই সকল সামরিক অভিযানের পর, আব্বাস তার পরিবারকে নিয়ে মদিনায় বসবাস করতে আসেন, যেখানে মুহাম্মাদ (সা.) প্রায়ই তাদের দেখতে যেতেন[১৬] এবং এমনকি তার মেয়েকে বিয়ের প্রস্তাবও দেন।[১৭]
পরবর্তীতে আব্বাস তাবুক যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন।[১৮]
পরিবার
[সম্পাদনা]আব্বাসের কমপক্ষে পাঁচজন স্ত্রী ছিলেন।
- লুবাবা বিনতে আল-হারিস (উম্ম আল-ফাদল নামেও পরিচিত) ছিলেন বনু হিলাল গোত্রের একজন নারী। উম্ম আল-ফাদল দাবি করেন যে তিনি মুহাম্মাদ (সা.) এর প্রথম স্ত্রী খাদিজার একই দিনে ইসলাম গ্রহণকারী দ্বিতীয় নারী। উম্ম আল-ফাদলের নবী সম্পর্কে বর্ণিত হাদিসসমূহ সকল প্রামাণ্য হাদিস সংগ্রহে পাওয়া যায়। তিনি অতিরিক্ত রোজা রেখে এবং মুসলমানদের শত্রু আবু লাহাবকে তাঁবুর খুঁটি দিয়ে আঘাত করে তার ধর্মীয় প্রজ্ঞা প্রদর্শন করেন।[১৯]
- ফাতিমা বিনতে জুনায়দ কুরাইশ গোত্রের আল-হারিস বংশের একজন নারী ছিলেন।[২০]
- হাজিলা বিনতে জুনদুব ইবনে রাবিয়া হিলাল গোত্রের একজন নারী ছিলেন।[২১]
- মুসলিয়া নামে একজন গ্রিক উপপত্নী ছিলেন।[২২][২৩]
- তুকানা নামে একজন ইহুদি নারী ছিলেন যিনি বনু কুরাইজা গোত্রের ছিলেন, যাকে আব্বাস ৬৩২ খ্রিস্টাব্দের পরে বিয়ে করেছিলেন।[২৪] তার কোনো সন্তান ছিল কিনা তা জানা যায়নি।
আব্বাসের পরিচিত সন্তানদের মধ্যে ছিলেন:
- আল-ফারাআ যিনি লুবাবার ভাই কাতন ইবনে আল-হারিসকে বিয়ে করেছিলেন। তার মায়ের নাম জানা যায়নি।[২৫]
লুবাবার সন্তানদের মধ্যে ছিলেন:[২৬]
- আল-ফাদল
- আবদুল্লাহ
- উবাইদুল্লাহ (যার মেয়ে লুবাবা আব্বাস ইবনে আলিকে বিয়ে করেছিলেন এবং তাদের উবাইদুল্লাহ নামে একটি পুত্র ছিল)
- কুথাম
- মা'বাদ
- আবদুর রহমান
- উম্ম হাবিব
অন্যান্য সন্তানদের মধ্যে ছিলেন:
- আল-হারিস, যার মা ফাতিমা[২৭] বা হাজিলা[২৮] ছিলেন বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
- আওন, যার মায়ের নাম জানা যায়নি।[২৯]
- মুশির, যার মায়ের নাম জানা যায়নি।[৩০]
- কাসির, মুসলিয়ার পুত্র।[৩১]
- আমিনা, সম্ভবত মুসলিয়ার কন্যা।[৩২][৩৩]
- সাফিয়া, সম্ভবত মুসলিয়ার কন্যা।[৩৪][৩৫]
- তামাম, সর্বকনিষ্ঠ সন্তান, মুসলিয়ার পুত্র।[৩৬]
ইন্তেকাল
[সম্পাদনা]আব্বাস ৬৫৩ খ্রিস্টাব্দের ফেব্রুয়ারিতে ৮৯ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন। তাকে সৌদি আরবের মদিনায় জান্নাতুল বাকি কবরস্থানে দাফন করা হয়।[৩৭][৩৮]
বংশধর
[সম্পাদনা]৭৫০ খ্রিস্টাব্দে আব্বাসের পুত্র আবদুল্লাহর বংশধর আবু আল-আব্বাস আবদুল্লাহ আস-সাফাহ আব্বাসীয় খিলাফত প্রতিষ্ঠা করেন এবং খলিফার (অর্থাৎ "উত্তরাধিকারী") উপাধি গ্রহণ করেন।[৩৯]
অন্যান্য অনেক পরিবার সরাসরি আব্বাসের বংশধর বলে দাবি করে, যেমন সিন্দের কালহোরাস, বাহাওয়ালপুরের দাউদপোতা, পাকিস্তানের মুরির আব্বাসি, আজাদ কাশ্মীরের বাঘের আব্বাসি, আমাজিগ জাতি,[৪০] ইয়েমেনের বাওয়াজির[৪১] এবং সুদানের শাইগিয়া এবং জা'আলিন।[৪২]
বংশতালিকা
[সম্পাদনা]কুরাইশ বংশ | |||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
Abd Manaf ibn Qusai | Ātikah bint Murrah | ||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
‘Abd Shams | Barra | Muṭṭalib | Hala | Hashim | Salma bint Amr | ||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
Umayya ibn Abd Shams | ‘Abd al-Muttalib | ||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
Harb | Abu al-'As | ʿĀminah | ʿAbd Allāh | Abî Ṭâlib | Hamza | Al-‘Abbas | |||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
ʾAbī Sufyān ibn Harb | Al-Hakam | Affan ibn Abi al-'As | MUHAMMAD (Family tree) | Khadija bint Khuwaylid | `Alî al-Mûrtdhā | Khawlah bint Ja'far | ʿAbd Allâh | ||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
Muʿāwiyah | Marwan I | Uthman ibn Affan | Ruqayyah | Fatima Zahra | Muhammad ibn al-Hanafiyyah | ʿAli bin ʿAbd Allâh | |||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
Umayyad Caliphate | Uthman ibn Abu-al-Aas | Hasan al-Mûjtabâ | Husayn bin Ali (Family tree) | al-Mukhtār ibn Abī ‘Ubayd Allah al-Thaqafī (Abû‘Amra`Kaysan’îyyah) | Muhammad "al-Imâm" (Abbasids) | ||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
আরা দেখুন
[সম্পাদনা]তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ Huston Smith, Cyril Glasse (২০০২), The new encyclopedia of Islam, Walnut Creek, CA: AltaMira Press, আইএসবিএন 0-7591-0190-6
- ↑ al-Tabari, Muhammad ibn Jarir (১৯৯৮)। Tarikh al-Rusul wa'l-Muluk: Biographies of the Prophet's Companions and Their Successors। 39। Albany: State University of New York Press। পৃষ্ঠা 24।
- ↑ Ibn Ishaq, Sirat Rasul Allah. Translated by Guillaume, A. (1955). The Life of Muhammad, p. 79. Oxford: Oxford University Press.
- ↑ Ibn Ishaq/Guillaume, p. 113.
- ↑ Ibn Ishaq (Guillaume) pp. 309–310.
- ↑ Armstrong, Karen (২০০৬)। Muhammad: A Prophet for Our Time। HarperCollins। পৃষ্ঠা 35। আইএসবিএন 9780062316837।
- ↑ Ibn Ishaq (Guillaume) p. 203.
- ↑ Wahba, al-Mawardi Translated by Wafaa H (২০০০), The ordinances of government = Al-Aḥkām al-sulṭāniyya w'al-wilāyāt al-Dīniyya, Reading: Garnet, আইএসবিএন 1-85964-140-7
- ↑ Ibn Ishaq (Guillaume) p. 309.
- ↑ Alfred Guillaume's footnote to Ibn Ishaq (1955) p. 309.
- ↑ Tabari, Tarikh al-Rusul wa'l-Muluk. Translated by McDonald, M. V. (1987). Volume 7: The Foundation of the Community, p. 68. Albany: State University of New York Press.
- ↑ Annotated (১৯৯৮), The history of al-Ṭabarī = (Taʼrīkh al-rusul wa'l mulūk), Albany: State University of New York Press, আইএসবিএন 0-7914-2820-6
- ↑ Ibn Ishaq (Guillaume) pp. 546–548.
- ↑ Huston Smith, Cyril Glasse (২০০২), The new encyclopedia of Islam, Walnut Creek, CA: AltaMira Press, আইএসবিএন 0-7591-0190-6
- ↑ Tabari (Landau-Tasseron) pp. 24–25.
- ↑ Ibn Saad, Tabaqat vol. 8. Translated by Bewley, A. (1995). The Women of Madina, p. 194. London: Ta-Ha Publishers.
- ↑ Ibn Ishaq (Guillaume) p. 311.
- ↑ Tabari (Landau-Tasseron) pp. 24–25.
- ↑ Roded, Ruth (১৯৯৪), Women in islamic biographical collections : from Ibn Saʻd to Who's who. P37-38, Boulder u.a.: Rienner, আইএসবিএন 1-55587-442-8
- ↑ Ibn Hajar, Isaba vol. 8 #11586.
- ↑ Ibn Hajar, Isaba vol. 2 #1904.
- ↑ Ibn Saad, Tabaqat vol. 4. “Al-Abbas ibn Abdalmuttalib.”
- ↑ Beheshti, M. (1967). Background of the Birth of Islam, chapter 5. Translated by Ayoub, M. M. (1985). Tehran: International Publishing Co.
- ↑ Majlisi, Hayat Al-Qulub vol. 2. Translated by Rizvi, A Detailed Biography of Prophet Muhammad (saww), p. 1180.
- ↑ Ibn Hajar, Isaba vol. 5 #7129.
- ↑ Tabari (Landau-Tasseron) p. 201.
- ↑ Ibn Hajar, Isaba vol. 8 #11586.
- ↑ Ibn Hajar, Isaba vol. 2 #1904.
- ↑ Ibn Hajar, Isaba vol. 5 #6279.
- ↑ Ibn Hajar, Isaba vol. 6 #8329.
- ↑ Tabari (Landau-Tasseron) vol. 39 pp. 75–76.
- ↑ Ibn Saad, Tabaqat vol. 4. “Al-Abbas ibn Abdalmuttalib.”
- ↑ See also Majlisi (Rizvi) p. 1208.
- ↑ Ibn Saad, Tabaqat vol. 4. “Al-Abbas ibn Abdalmuttalib.”
- ↑ See also Majlisi (Rizvi) p. 1208.
- ↑ Tabari (Landau-Tasseron) vol. 39 pp. 75–76.
- ↑ Tabari (Landau-Tasseron) vol. 39 p. 25.
- ↑ Faruk Aksoy, Omer Faruk Aksoy (২০০৭), The blessed cities of Islam, Makka-Madina, Somerset, NJ: Light Pub., আইএসবিএন 978-1-59784-061-3
- ↑ Ira Lapidus. A History of Islamic Societies. Cambridge University Press. 2002 আইএসবিএন ০-৫২১-৭৭০৫৬-৪ p.54
- ↑ Abbasis of Murree, Kahuta and Bahawalpur Brett, Michael Fentress (১৯৯৭), The Berbers, Oxford: Blackwell, আইএসবিএন 0-631-20767-8
- ↑ Web Site of the Bawazir Abbasid Hashimite Family
- ↑ Nicholls, W (১৯১৩), The Shaikiya: an Account of the Shaikiya Tribes, of the History of Dongola Province from the XIVth to the XIXth Century
উদ্ধৃতি ত্রুটি: "lower-alpha" নামক গ্রুপের জন্য <ref>
ট্যাগ রয়েছে, কিন্তু এর জন্য কোন সঙ্গতিপূর্ণ <references group="lower-alpha"/>
ট্যাগ পাওয়া যায়নি