গগণবেড়
গগণবেড় সময়গত পরিসীমা: অলিগোসিন-বর্তমান, ৩.০–০কোটি | |
---|---|
বড় ধলা গগণবেড়, নামিবিয়া | |
বৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস | |
জগৎ: | প্রাণী জগৎ |
পর্ব: | কর্ডাটা |
শ্রেণী: | পক্ষী |
বর্গ: | পেলিক্যানিফর্মিস |
পরিবার: | পেলিক্যানিডি Rafinesque, 1815 |
আদর্শ প্রজাতি | |
Pelecanus onocrotalus Linnaeus, 1758 | |
প্রজাতি | |
৮টি |
গগণবেড় একশ্রেণীর জলে বাসকারী বৃহৎ আকারের পাখি। গগণবেড় পেলিক্যানিডি (Pelicanidae) গোষ্ঠীর। এদের রয়েছে বেশ বড় একটি ঠোঁট। ঠোঁটটির নিচে একটি চামড়ার থলি থাকে। এটি দিয়েই মূলত তারা শিকার করে থাকে। শিকারের পর তারা এই থলির ভিতর খাবার জমিয়ে রাখে এবং খাদ্য গলাধঃকরণের আগে পানি ফেলে দেয়। গগণবেড়ের পালক সাধারণত ফ্যাকাশে রংয়ের হয়ে থাকে। তবে, পারস্য গগণবেড় ভিন্ন রংয়ের হয় এবং মাঝে মধ্যে বাদামী গগণবেড়েরও দেখা মেলে পরিবেশে। এদের পা ছোট, আঙুলগুলি পরস্পরের সাথে চামড়া দিয়ে জোড়া লাগানো।
প্রজননকালে এদের ঠোঁট, গলায় অবস্থিত চামড়ার থলি এবং পালক বেশ উজ্জ্বল রং ধারণ করে থাকে। বর্তমানে, গগণবেড় পাখিদের আটটি প্রজাতি দেখতে পাওয়া যায় যা গ্রীষ্মমণ্ডলীয় এবং নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চলে বিস্তৃত। তবে, দক্ষিণ আমেরিকা, মেরু অঞ্চল এবং মহাসাগরে এদের উপস্থিতির খোঁজ মেলে নি।
অনেক আগে থেকেই গগণবেড় বা পেলিক্যান পাখিদের করমোরান্ট [১] বা গ্রীষ্মমণ্ডলীয় পাখিদের সঙ্গে মিলিয়ে ফেলা হতো। তবে, গগণবেড় পাখিরা সম্পূর্ণ ভিন্ন একটি বর্গ, পেলিক্যানিফর্মিসের [২] অন্তর্ভুক্ত।
ইজিপ্ট থেকে পেলিক্যানের ফসিল উদ্ধারকরা হয় যা জানান দেয় গগবেড়দের প্রায় ৩৬ মিলিয়ন বছর পূর্বের উপস্থিতি। ধারণা করা হয়, পেলিক্যানের আদি বিস্তার ছিল আফ্রিকা এবং ইউরেশিয়া জুড়ে যা পরবর্তীতে আমেরিকায় গমন করে নতুনভাবে বিস্তৃতি ঘটিয়েছে।
গগণবেড় বা পেলিক্যান বিভিন্ন জলাশয় এবং উপকূলীয় অঞ্চলে দেখতে পাওয়া যায় মাছ এদের প্রধান খাদ্য। এরা দলবদ্ধ থাকতে পছন্দ করে। শিকার করতে এবং ভ্রমণ করতে দেখা যায় একসঙ্গে। প্রজননকালে একটি বিশাল এলাকা জুড়ে এরা বাস্থান স্থাপন করে এবং আলাদাভাবে বংশবৃদ্ধি করলেও এরা দলগত থাকে। সাদা রংয়ের পেলিক্যানদের ক্ষেত্রে দেখা যায়, তারা মাটিতে বাসা বাঁধে এবং বাদামী বা ধূসর পেলিক্যানদের দেখা যায় উঁচু গাছে বাসা বাঁধে।
সাদা রংয়ের পেলিক্যানদের ক্ষেত্রে দেখা যায়, তারা মাটিতে বাসা বাঁধে এবং বাদামী বা ধূসর পেলিক্যানদের দেখা যায় উঁচু গাছে বাসা বাঁধে।
পেলিক্যান বা গগণবেড় পাখিরা নিপীড়িত হয়ে বিলুপ্তির পথে যার নেপথ্যে রয়েছে এদের অর্থনৈতিক গুরুত্ব এবং মানুষের বিনোদনমূলক কর্মকান্ড।
ব্যুৎপত্তি শব্দের ইতিহাস
[সম্পাদনা]ব্যুৎপত্তি
[সম্পাদনা]পেলিক্যান শব্দটির উৎপত্তি হয়েছে প্রাচীন "পেলেকিজ" শব্দটি থেকে যার অর্থ "কুড়াল" বা "কুঠার"। পূর্বে এই শব্দটি দ্বারা কাঠঠোকরা এবং গগণবেড় দুটোকেই বোঝানো হতো।
পেলিক্যানাস গণটি সর্বপ্রথম ব্যবহার করেন বিজ্ঞানী কার্ল লিনিয়াস [৩]। তাঁর বই "সিস্টেমা ন্যাচুরি" ([৬] ) এর দশম মুদ্রণে উল্লিখিত হয়, সোজা ঠোঁট যা বাকানো সম্মুখ অংশে, সোজা নাক, চামড়াসহ জোরা লাগানো আঙ্গুল বিশিষ্ট যেসব পাখি রয়েছে, তারাই পেলিক্যান গণের অন্তর্ভুক্ত। তাই সেসময়ে ধরে নেয়া হতো, গ্যানেট, বুবি, করমোরান্ট এরাও পেলিক্যান গণের অন্তর্ভুক্ত।
শ্রেণিবিন্যাস
[সম্পাদনা]পেলিকেনিডি গোষ্ঠী সর্বপ্রথম পরিচিতি পায় পেলিক্যানিয়া নামে। এই নামটি ১৮১৫ সালে দেন বহুবিজ্ঞাতী কন্সট্যান্টাইন স্যামুয়েল র্যাফিনেস্ক। এবং এই পেলিক্যান নাম থেকেই পেলিক্যানিফর্মিস বর্গের নামকরণ হয়। ক্রান্তিয় পাখি, গয়ার, বুবি, গ্যানেট, করমোরান্ট এই পাখিদের পূর্বে পেলিক্যানিফর্মিস বর্গের অন্তর্ভুক্ত করা হতো। পরে এদের ভিন্ন বর্গ, ফিথোন্টিফোর্মিসের তালিকাভুক্ত করা হয়। কোদালী বক, আইবিস, হেরন এরা আবার পেলিক্যানিফর্মেস বর্গের অন্তুর্ভুক্ত। হ্যামারকপ এবং সুবিল পাখিরা এডেলফোট্যাক্সন পেলিক্যানদের সঙ্গে। যদিও, এখানেও কিছু সন্দেহ রয়েছে ব্যাপারে বিজ্ঞানীদের মধ্যে।
পেলিক্যানের যে প্রাচীন জীবাশ্ম পাওয়া যায় তা অনেকটাই বর্তমান বিলকেট কারুন হ্রদ তৈরির সময় পাওয়া কিছু জীবাশ্মের সঙ্গে মেলে। বিলকেট কারুন হ্রদ ইজিপ্টের ওয়াদি এল রিতান নামক জায়গায় অবস্থিত। ওয়াদি এল রিতান থেকে উদ্ধারকৃত জীবশ্ম ইওসিন যুগের, গণ ইওপেলিক্যানাস।
পেলিক্যানদের সঙ্গে মিল সম্পন্ন নিকটস্থ পাখি, হ্যামারকপ এবং সুবিল পাখি।
জীবিত প্রজাতি
[সম্পাদনা]পেলিক্যানদের যে আটটি জীবিত প্রজাতি রয়েছে, তাদের দুটি ভাগে বিভক্ত করা হয়ে থাকে। একদল, যারা মাটিতে বাসা বাঁধে এবং ধবধবে সাদা পালকের, যেমন, অস্ট্রেলিয়ান, ড্যালমাটিয়ান এবং আমেরিকান পেলিক্যান। আরেকটি দল, যারা উঁচু গাছে বাসা বাঁধে এবং বাদামী বা ধূসর পালকের, যেমন, পেরুভিয়ান পেলিক্যান। বাদামী এবং পেরুভিয়ান পেলিক্যান প্রজাতিদের সমজাতীর ধরে নেয়া হতো, তবে উপ- গণ, লেপ্টোপেলিক্যানাসের মাধ্যমে তাদের ভিন্নতা করা হয়। যদিও, দুটি প্রজাতির মিল রয়েছে তাদের বাহ্যিক বৈশিষ্ট্য এবং বাসা বাঁধার ক্ষেত্রে।
আমেরিকান পেলিক্যান তাদের পূর্ব পুরুষের চাইতে আকারের দিক থেকে ভিন্নতা প্রকাশ করে। এটি মূলত ধারণা করা হয় কারন, তারা পূর্বে ইউরেশিয়া এবং আফ্রিকা মহাদেশে যেভাবে বসতি স্থাপন করতো, তার চাইতে ভিন্নতা দেখা দেয় তাদের উঁচু বৃক্ষ বা মাটিতে বসতি স্থাপন করার দিক থেকে। যদিও আবার, কিছু বিজ্ঞানী ধারণা করে থাকেন, এরূপ বসতি স্থাপনের পেছনে জীনগত পার্থক্য দায়ী।
বিস্তারিত
[সম্পাদনা]গগণবেড় একটি বড় চঞ্চুযুক্ত পাখি যার উপরের চোয়ালে রয়েছে একটি হুকের মতো আকৃতি। এদের নিচের চোয়ালে রয়েছে একটি বিশাল থলে আকৃতি। এই সুগঠিত চোয়াল এবং তার সাথে যুক্ত পেশি তাদের সহজে খাদ্যগ্রহণে সহায়তা করে থাকে। খাবার সংগ্রহের পাশাপাশি তারা পানি সঞ্চিত রাখে এই থলেতে। এদের রয়েছে একটি সুউচ্চ গ্রীবা এবং সাতাঁরের উপযোগী পায়ের পাতা।
গগণবেড় বেশ ভারী একটি পাখি বলেই এরা সহজেই পানিতে ভেসে থাকতে সক্ষম। এদের শরীরে রয়েছে বায়ুথলি যা তাদের ভাসতে সহায়তা করে। এদের লেজটি ছোট এবং চৌকনা বিশিষ্ট। এদের ডানা বিশালাকৃতির যা তাদের দ্রুত শিকার ধরতে সহায়ক। তাছাড়া, এদের রয়েছে ৩০-৩৫টি বড় আকৃতির পালক যা তারা উঁড়ার সময় কাজে লাগায়।
গগণবেড়ের পুরুষ প্রজাতি আকারে বড় হয়ে থাকে এবং তাদের ঠোঁটটিও তুলনামূলক বড় হয়ে থাকে। বাদামী পেলিক্যান ক্ষুদ্র আকৃতির হয়ে থাকে। কমবয়সী পেলিক্যান গড়ে ২.৭৫ কেজি বা ৬.১ পাউন্ডের মতো হয়ে থাকে। তখন এদের গড় উচ্চতা হয় ১.০৬ মিটার বা সাড়ে তিন ফুট। ডানা হতে পারে ১.৮৩ মিটার বা ৬ ফুট। তবে এদের ডানা সর্বোচ্চ তিন মিটার পর্যন্ত লম্বা হতে পারে।
ধারণা করা হয়, ড্যালমাটিয়ান পেলিক্যান সবচেয়ে বড় গগণবেড়ের সব প্রজাতির মধ্যে। এদের ভর ১৫ কেজি, উচ্চতা ১.৮৩ মিটার এবং ডানা হতে পারে সর্বোচ্চ ৩ মিটার অবধি। অন্যদিকে, অস্ট্রেলিয়ান প্রজাতির পেলিক্যানের পুরুষ পাখিদের ঠোঁট ০.৫ পর্যন্ত লম্বা হতে পারে যা সব পাখিদের মধ্যে সর্বোচ্চ।
পেলিক্যান প্রজাতির পাখিদের সাধারণত পালক সাদা হয়ে থাকে তবে ব্যতিক্রম হলো বাদামি এবং পেরুভিয়ান গগণবেড় প্রজাতি। এদের চঞ্চুথলি, মুখমন্ডলীয় রং উজ্জ্বল রং ধারণ করে প্রজনন ঋতুর শুরুতে। ক্যালিফোর্নিয়ায় পেলিক্যানের একটি উপপ্রজাতি প্রজনন ঋতুতে এদের চঞ্চুথলির রং বাদামী থেকে উজ্জ্বল লাল রং ধারণ করে। ডিমপাড়ার পর এদের চঞ্চু ফ্যাকাশে হলদেটে রং ধারণ করে এবং পেরুভিয়ান গগণবেড়ের চঞ্চুথলি নীল রং ধারণ করে। আমেরিকান সাদা পেলিক্যান পাখিরা প্রজনন ঋতুতে এদের ঠোঁটে একটি স্ফীতি তৈরি করে যা ডিমপাড়ার পর ঝরে পড়ে।
জন্মের পর গগণবেড় ছানাদের পালক গাঢ় রংয়ের হয়ে থাকে। সদ্য জন্মানো গগণবেড় ছানাদের পালক থাকে না এবং গোলাপী বর্ণের শরীর হয়। ৪-১৪ দিনের মাথায় এদের গায়ের বর্ণ ধূসর থেকে কালো হতে পারে। ধীরে ধীরে তাদের শরীর সাদা বা ধূসর কচি পালকের সূচনা ঘটে।
বায়ু থলি
[সম্পাদনা]১৯৩৯ সালে বাদামী গগণবেড়ের শারীরবৃত্তীয় ব্যবচ্ছেদ করে জানা যায় গগণবেড়দের পালকের অঙ্কীয় তলে বায়ুথলি রয়েছে। এদের বায়ুথলি গলা, বুক এবং ডানাতে ও হাড্ডিতেও বিস্তার লাভ করেছে। বায়ুথলি শ্বাসতন্ত্রের পথের সঙ্গে যুক্ত রয়েছে। গগণবেড় তাদের বায়ুথলি প্রসারিত রাখে এপিগ্লটিসের মাধ্যমে বাতাসকে আটকে।
মূলত, গগণবেড়দের পানিতে ভেসে থাকতে সাহায্য করে বায়ুথলি। শিকার করার সময় বায়ুথলি পেলিক্যানের ভারসাম্য রক্ষায় সাহায্য করে। তাছাড়া, বায়ুথলি তাদের শরীরের তাপের তারতম্য বজায় রাখতে এবং উঁড়তে সাহায্য করে থাকে।
বিস্তার এবং বাসস্থান
[সম্পাদনা]পেলিক্যানদের এন্টার্টিকা ছাড়া পৃথিবীর প্রায় সব মহাদেশেই পাওয়া যায়। তারা প্রাথমিকভাবে গ্রীষ্মমণ্ডলীয় অঞ্চলে অবস্থান করে তবে প্রজননের জন্যে অক্ষ্যাংশের ৪৫° দক্ষিণ এবং ৬০° উত্তরে অবস্থান করতে পারে। এরা মূলত অন্তর্দেশীয় এবং উপকূল অঞ্চলে অবস্থান করে। মেরু অঞ্চল, গভীর সমুদ্র, মহাসাগরীয় দ্বীপ (গ্যালাপ্যগোস আইলেন্ড ব্যতীত), দক্ষিণ আমেরিকার অন্তর্দেশীয় জলাশয়, পূর্ব উপকূল এবং আমাজন নদীর দক্ষিণ অঞ্চলের দিকে পাওয়া যায় না।
নিউজিল্যান্ডের দক্ষিণ উপকূল থেকে পেলিক্যানের জীবাশ্ম পাওয়া গেছে যদিও বিজ্ঞানীদের ধারণা এগুলো "ভবঘুরে পেলিক্যান" প্রজাতির।
স্বভাব এবং বাস্তুসংস্থান
[সম্পাদনা]পেলিক্যান পাখি তাদের শক্তিশালী পা এবং যুক্ত পদাঙ্গুলীর মাধ্যমে সাঁতার কাটে। এদের দেহের পৃষ্ঠীয় অংশে রয়েছে বিশেষায়িত "তৈল গ্রন্থি" যার মাধ্যমে এরা তেল জাতীয় পদার্থ ক্ষরণ করে পালককে পানি থেকে রক্ষা করে। পেলিক্যান পাখি তাদের ডানা শরীরের বিপরীতে হালকা চাপে রাখে যার কারনে পানির নিচে এদের খুব বেশি অংশ থাকে না। এদের রয়েছে শরীরের অতিরিক্ত তাপ নিষ্কাষনের এক অদ্ভুত ক্ষমতা। তাদের গলার যে অংশে পালক নেই, সে অংশ গলা এবং চঞ্চুথলির সাহায্যে ঝাঁপটে শরীরের অতিরিক্ত তাপ বাষ্প আকারে নিষ্কাষন করে। এবং এরা দলবদ্ধভাবে সমুদ্রপাড়, সৈকত এবং অগভীর জলাশয়ের কাছে বসবাস করে থাকে।
তাদের বক্ষপেশির কাছে আঁশযুক্ত স্তর রয়েছে যা ডানা শক্ত করে আটকে রাখে এবং উঁড়তে ও শিকার ধরতে সহায়ক। তারা ডানা ঝাঁপটে বা ধীর গতি বজায় রেখে প্রায় ৩০০০ মিটার বা তার বেশি উচ্চতায় উঁড়তে সক্ষম হয়। তখন তাদের ডানা ইংরেজি "V" এর মতো দেখায় যা তারা দূর-দুরান্তে (প্রায় ১৫০মিটার অবধি) খাদ্যের সন্ধানে ভ্রমণ করতে কাজে দেয়। তারা উড়োজাহাজের মতো "গ্রাউন্ড এফেক্ট" ব্যবহার করে জলাশয় বা পানির উপরের স্তরে পা টেনে টেনে দিয়ে উঁড়তে পারে পাশাপাশি উর্ধ্বটানের মাধ্যমে উপরে উঠতে পারে। পানির উপরের স্তর এবং ডানার মাঝে সৃষ্ট বল জোরালো হয় বলে তা উর্ধ্বটানে সহায়তা করে সেই সুবাদে তাদের অনেকটা শক্তি সঞ্চিত থাকে।
প্রাপ্তবয়স্ক পেলিক্যান পাখিরা নিজেদের ডানা ঝাঁপটে এবং চঞ্চুথলির মাধ্যমে একে অপরের সঙ্গে ভাবের আদান প্রদান করে থাকে। তারা আক্রমনাত্নক ভাব প্রকাশ করে ডানার মাধ্যমে প্রতিপক্ষকে ধাক্কা দিয়ে, প্রতিপক্ষের চঞ্চু কামড়ে অথবা ডানা ঝাঁপটে।
প্রাপ্তবয়স্ক পেলিক্যান পাখিরা হট্টগোল করে শুধু যখন তারা একত্রে থাকে অন্যথায় তারা বেশ শান্ত প্রজাতির পাখি। প্রজনন ঋতুতেও তারা বেশ চুপচাপ থাকে।
প্রজনন এবং জীবনকাল
[সম্পাদনা]পেলিক্যান সঙ্গলিপ্সু এবং বাসা বাঁধে দলবদ্ধভাবে। তাদের যুগল প্রজননকালে একগামিতা প্রকাশ করে এবং সে বাঁধনের প্রকাশ ঘটে বাসস্থানের এলাকা পর্যন্ত। এর বাহিরে তারা স্বাধীন পাখি হিসেবে থাকে।
স্থলে বসবাসকারী পেলিক্যানদের মিলনের বিষয়টি বেশ কৌতূহলোদ্দীপক। একটি স্ত্রী পেলিক্যানের পেছনে কয়েকটা পুরুষ পেলিক্যান ছুঁটে বেড়ায় এবং তাদের প্রজনন বাসনা প্রকাশ করে ঠোঁটের মাধ্যমে বিভিন্ন আকার-ইঙ্গিতের মাধ্যমে। তাদের প্রজনন প্রক্রিয়া একদিনেই শেষ হতে পারে। অন্যদিকে, গাছে বাসা বাঁধা পেলিক্যান প্রজাতির প্রজনন পদ্ধতি বেশ সহজ। অপেক্ষারত পুরুষ পেলিক্যান নিজেদের প্রচার করে স্ত্রী পেলিক্যান পাখিদের কাছে। পেলিক্যান প্রজাতি সেখানেই আবাস গড়ে যেখানে পর্যাপ্ত পরিমাণ মাছের উৎস থাকে।
বিজ্ঞানীরা ধারণা করে থাকে, অস্ট্রেলিয়ান পেলিক্যান পাখিদের দুটি প্রজনন পদ্ধতি থাকে। দশ বা একশো পেলিক্যানের দল যা উপকূল বা উপকূলীয় দ্বীপে বসবাস করে, অনূকুল পরিবেশে নিয়মিতভাবে প্রজনন করে থাকে। অস্ট্রেলিয়ার অনুর্বর জমি বা বহিঃপ্রবাহহীন হ্রদ, লেইক এরিতে সুযোগসন্ধানী প্রায় ৫০,০০০ এর মতো পেলিক্যান বংশবৃদ্ধি করতে পারে যদি সেখানে অনিয়মিত বা আকস্মিক বন্যার কারনে প্রচুর পুষ্টির উৎস তৈরি হয়।
সব প্রজাতির পেলিক্যান পাখিই ডিম পাড়ার ৩-১০ দিন আগে মিলন সম্পন্ন করে থাকে। নীড় বাঁধার জন্যে পুরুষ পেলিক্যান উপাদান সংগ্রহ করে এবং স্ত্রী পেলিক্যান সেটিকে আকার দেয়।
ডিমগুলো উপবৃত্তাকার এবং রূক্ষ গঠনের হয়। পেলিক্যান পাখি একসঙ্গে কমপক্ষে দুটি ডিম দিয়ে থাকে এবং কদাচিৎ ছয়টি হতে পারে। পুরুষ এবং স্ত্রী পেলিক্যান মিলেই ডিমে তা' দেয়ার কাজ করে যা ৩০-৩৫ দিন পর্যন্ত হতে পারে। ডিম ফুঁটে বাচ্চা বেরোনো সাফল্য প্রায় ৯৫% থাকে তবে জন্মের পর পুষ্টি চাহিদা পূরণে বড় ছানা ছোট ছানাটিকে খেয়ে সাবাড় করে ফেলতে পারে কয়েক সপ্তাহের মধ্যে।
জন্মদাতা এবং জন্মদাত্রী দুজনেই ছানাদের দেখভাল করে থাকে। তাদের উগড়ে দেয়া অপাচিত খাবার খেয়ে ছানারা পুষ্টি চাহিদা পূরণ করে তবে প্রায় সপ্তাখানিকের মাথায় পেলিক্যান ছানারা পিতা মাতার চঞ্চুথলি থেকে নিজেরাই খাবার সংগ্রহ করতে পারে। পেলিক্যান ছানাদের বেশ মজার একটি ভঙ্গি আছে যার মাধ্যমে তারা ভাব প্রকাশ করে, তবে তা ক্রোধ বলে ধারণা করা হলেও, সত্যি তাই কিনা এখনও স্পষ্ট নয় বিষয়টি। খাবার গ্রহণের পর পেলিক্যান ছানারা বৃত্তাকার পথে কিছুক্ষণ দৌঁড়ে থাকে। তখন তারা খুব জোরে চিৎকার করে এবং নিজেদের মাথা মাটিতে বা সামনে থাকা শক্ত কোনো বস্তুতে ঠুঁকে দেয় যার জন্যে তারা সল্প সময়ের জন্য জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। এই উদ্ভট কান্ড প্রকাশ করে তারা বাকি ভাই বোনদের মা-বাবা থেকে খাদ্য গ্রহণ করা থেকে বিরত রাখতে চায়।
স্থলে অবস্থানরত পেলিক্যান পাখিরা তাদের ছানাদের ডানার মাধ্যমে কাছে টেনে নেয় খাবার দেয়ার জন্যে। প্রায় ২৫ দিনের মাথায় পেলিক্যান ছানারা অন্য পেলিক্যান ছানাদের সঙ্গে মিশে যেতে পারে তবে তখনও জন্মদাতা তাদের ছানাদের চিহ্ণিত করে খাবার দেয়। ৬-৮ সপ্তাহের মধ্যে পেলিক্যান ছানারা সাঁতার করতে পারে, নিজেদের মতো আশপাশে ঘুরে বেড়াতে পারে এবং নিজেরাই খাবার গ্রহণ করতে পারে। জন্মের ১০-১২ সপ্তাহের ভেতরেই পেলিক্যানের সব প্রজাতি উঁড়তে পারে। তখন তারা তাদের মা- বাবার সঙ্গেই থাকে তবে স্বাধীন হয়েই থাকে। তিন থেকে চার বছরের মধ্যেই একটি পেলিক্যান প্রজননে সক্ষম হতে পারে।
পেলিক্যান প্রজাতি গড়ে ১৫-২৫ বছর অবধি বাঁচতে পারে পরিবেশে। তবে বন্দিদশায় একটি পেলিক্যান ৫৪ বছর বেঁচে থাকার তথ্য পাওয়া গেছে।
পেলিক্যানদের প্রধান খাদ্য মূলত মাছ তবে মাঝে মাঝে তারা কিছু উভচর প্রাণী, কচ্ছপ, কবচর, পোকা, পাখি এবং কিছু ক্ষেত্রে স্তন্যপায়ী প্রাণীদেরও খেয়ে থাকে। আফ্রিকার গোলাপী পিঠের পেলিক্যান প্রজাতি মাছের পোনা থেকে প্রায় ৪০০ গ্রাম অবধি মাছ খেয়ে থাকে। সাদা পেলিক্যান বড় মাছ যা সাধারণত ৬০০ গ্রাম সেগুলো খেতে পছন্দ করে তবে ইউরোপের সাদা পেলিক্যান পাখি এক কেজির অধিক ভরের মাছ খেয়ে থাকে। উপকূলের কাছে যখন পানির উপরের স্তরে মাছ আসে তখন পেলিক্যান ছোঁ মেরে তাদের চঞ্চুথলির মাধ্যমে শিকার করে। ড্যালমাটিয়ান পেলিক্যান, চিতিঠুঁটি পেলিক্যান এবং গোলাপী পিঠের পেলিক্যান প্রজাতি একলা শিকার করতে পছন্দ করে। পেলিক্যানরা দলবদ্ধভাবে কাজ করে শিকার ধরার জন্যে। এমনকি, ড্যালমাটিয়ান পেলিক্যানরাও কর্মোরেন্টের সঙ্গে শিকার ধরে থাকে।
বড় মাছ শিকার করলে এরা প্রথমে মাছটিকে উর্ধ্বে ছুঁড়ে মারে এবং সরাসরি খাদ্যনালীতে মাছের মাথা নিক্ষেপ করে গলাধঃকরন করে। কিছু সময় দেখা যায়, শঙ্খচিল পেলিক্যানদের মাথা ঠুকরে খাবার নেয়ার চেষ্টা করছে। আবার যখন পেলিক্যান সুযোগ পায়, অন্য জলজ পাখিদের খাবার ছিনিয়ে নেয়।
বাদামী পেলিক্যান অনেক উঁচু থেকে (প্রায় ২০‐৩০ মিটার) ডুব দিয়ে শিকার ধরে। মূলত এরা অ্যাঙ্কোভি ও ম্যনহাটন মাছের জন্যে এরকম করে থাকে। পেরুভিয়ান পেলিক্যানরাও এরূপ ডুব দেয় তবে আরেকটু কম উচ্চতা থেকে। অস্ট্রেলিয়ান এবং আমেরিকান পেলিক্যানরা আরও কম উচ্চতা থেকে শিকার করে থাকে। যেহেতু পেলিক্যান জলজ পাখি, তারা সচরাচর পানিতে সাঁতার কাটার সময়েই শিকার করে।
মাছ শিকারের পাশাপাশি অস্ট্রেলিয়ান পেলিক্যান প্রজাতি প্রকৃতির ঝাড়ুদার বলা যায়। এরা স্থলে পচনশীল প্রাণীর মাংস, বিভিন্ন পোকামাকড়, হাঁসের বাচ্চা এবং ছোট কুকুরদেরও গলাধঃকরন করে থাকে। পেলিক্যানরা ওদের চঞ্চুথলিতে খাবার জমিয়ে রাখে বলে যে লোককাহিনী রয়েছে, তা সঠিক নয়।
পেলিক্যানরা পাখিও খেয়ে থাকে। দক্ষিণ আফ্রিকায় কালো কর্মোরান্টের ডিম এবং বাচ্চা গ্রেট হোয়াইট পেলিক্যানদের প্রধান খাদ্য। এছাড়াও, তারা গ্যানেট, ঝুঁটিওয়ালা কর্মোরান্ট, কেল্প শঙ্খচিল, বড়টিকি পানচিল এবং আফ্রিকান পেঙ্গুইন খেয়ে থাকে। অস্ট্রেলিয়ান পেলিক্যানদের খাদ্যতালিকাটিও বেশ বড়। তারা অস্ট্রেলিয়ান ধবল ইবিস পাখি, ছোট এবং প্রাপ্তবয়স্ক পানকৌড়ি, ধূসর শঙ্খচিল খেয়ে থাকে। বাদামী পেলিক্যানরা ক্যালিফোর্নিয়ান কমন মুরে, ইবিস পাখির ডিম এবং সদ্য জন্মানো ইবিস খেয়ে থাকে। পেরুভিয়ান পেলিক্যানদের খাদ্য তালিকায় রয়েছে গার্নট, ধূসর পানকৌড়ি পাখি।
কিছু ক্ষেত্রে অস্ট্রেলিয়ান, পেরুভিয়ান এবং বাদামী পেলিক্যান পাখিরা নিজেদের ছানাদেরকেই খেয়ে থাকে। ইংল্যান্ডের সেইন্ট জেম্স পার্কে অস্থানীয় কিছু গ্রেট হোয়াইট পেলিক্যান স্থানীয় কবুতর গলাধঃকরন করতে দেখা গিয়েছে।
বর্তমান অবস্থা এবং সংরক্ষণ
[সম্পাদনা]বিশ্বব্যাপী পেলিক্যান জনসংখ্যা কমে আসার মূল কারনগুলো হলো: নদী বা জলাশয়ে মাছের সংখ্যা কমে যাওয়া যা আমাদের অতিরিক্ত মাছ ধরার কারনে সৃষ্ট। এছাড়াও রয়েছে, পানি দূষণ, আবাসভূমি কমে যাওয়া, মানবসৃষ্ট কারনে পেলিক্যানদের আবাসস্থল বিপন্ন হওয়া, শিকার করা, শখের বসে নিজেদের সংগ্রহে রাখা, বাই ক্যাচ হিসেবে মাছের সঙ্গে জালে ধরা পড়া, ডিডিটি এবং এন্ড্রিনের মতো দূষিত পদার্থের মাধ্যমে ক্ষতিকর প্রভাব ফেলা। বেশিরভাগ প্রজাতির জনসংখ্যা কমবেশি এক থাকলেও, পেলিক্যান প্রজাতির তিনটি প্রজাতি বিপন্নপ্রায় প্রকৃতি সংরক্ষণের জন্য আন্তর্জাতিক ইউনিয়ন [৪] এর তথ্য অনুযায়ী। প্রায় সব পেলিক্যান প্রজাতি চিড়িয়াখানায় প্রজনন সম্পন্ন করতে সক্ষম যার মাধ্যমে আমরা এদের বিলুপ্তি রোধ করতে পারবো।
ধারণা করা হয়, বাদামী এবং পেরুভিয়ান পেলিক্যানের সংখ্যা একত্রে ৬,৫০,০০০ যার মধ্যে ২,৫০,০০০ আমেরিকা এবং ক্যারিবিয়ানে পাওয়া যায় এবং ৪,০০,০০০ প্রজাতি রয়েছে পেরুতে। [৫] -আমেরিকার তথ্য অনুযায়ী বাদামী পেলিক্যানের বর্তমান সংখ্যা ৩,০০,০০০ এর কাছে। বাদামী পেলিক্যানের সংখ্যা ১৯৫০-"৬০ এর দিকে নেমে আসে অতিরিক্ত ডিডিটি ব্যবহারের ফলে। ১৯৭০ এর দিকে আমেরিকার সরকার পেলিক্যান প্রজাতিকে হুমকির মুখে ঘোষণা করে। ১৯৭২ এর দিকে আমেরিকায় ডিডিটি ব্যবহারে নিষেধাঞ্জা জারি করার কারনে এদের সংখ্যা বৃদ্ধি শুরু করে এবং সবশেষ ২০০৯ এর দিকে পেলিক্যান প্রজাতিকে বিপন্ন প্রাণীর তালিকা থেকে বাদ দেয়া হয়।
পেরুভিয়ান পেলিক্যান প্রজাতিকে "প্রায় হুমকির মুখে" বলে ধারণা করা হয়। বার্ড লাইফ ইন্টারন্যাশনাল [৬] এর তথ্য অনুসারে, পেরুভিয়ান পেলিক্যানের বর্তমান সংখ্যা প্রায় ৫,০০,০০০ এর বেশি যা পূর্বে আরও অনেক বেশি ছিল। নাটকীয়ভাবেই এই পেলিক্যান প্রজাতির সংখ্যা কমে যায় ১৯৯৮ এর এল নিনো ([৭] ) এর কারনে যা ভবিষ্যতেও ঘটতে পারে। সংরক্ষণের ক্ষেত্রে নিয়মিত তত্ত্বাবধান প্রয়োজন বিচরণ পরিধি জুড়ে, বিশেষ করে এল নিনোর পরবর্তী সময় থেকে। তাছাড়া, পেলিক্যানের আবাসভূমিতে মানুষের অবাধ বিচরণ নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে, তার সঙ্গে মৎস শিকারের বিষয়ে মানুষের আরও সচেতন হতে হবে।
চিতিঠুঁটি পেলিক্যানের সংখ্যা ১৩,০০০ থেকে ১৮,০০০ এর মধ্যে এবং আইইউসিএন লাল তালিকা অনুযায়ী এই প্রজাতিটিকেও প্রায় বিপন্ন বলে চিহ্ণিত করা হয়েছে। উল্ল্যেখযোগ্যভাবে এই সংখ্যা কমে যায় বিংশ শতাব্দীর দিকে। এর মূল কারন হিসেবে ভাবা হয়, সিছুয়ান ভ্যালির (Sichuan [৮]) গাছ-পালা নির্বিচারে কেটে ফেলা। সিছুয়ান একটি প্রাকৃতিক প্রজনন ক্ষেত্র চিতিঠুঁটি পেলিক্যানদের জন্যে। এরূপ বনাঞ্চল ধ্বংস করায় তাদের প্রজননের পাশাপাশি খাদ্য চাহিদা পূরণেও বিপত্তি ঘটছে। তবে ভারত এবং কম্বোডিয়াতে রক্ষণাবেক্ষণের উদ্যোগ নেয়ায় বর্তমানে এদের সংখ্যা স্থিতিশীল রয়েছে।
গোলাপী পৃষ্ঠের পেলিক্যান প্রজাতির সংখ্যা সর্বোচ্চ রয়েছে সাহারা-নিম্ন আফ্রিকা [৯] জুড়ে। উল্ল্যেখযোগ্য পরিবেশ দূষণ বা হুমকি না থাকায় এদের সংখ্যা হ্রাস পায় নি। যদিও, হুমকি হতে পারে আফ্রিকার জলাবদ্ধতা এবং বাড়ন্ত অস্থিতিশীলতা। এই গোলাপী পৃষ্ঠের পেলিক্যান প্রজাতি স্থায়ী বিষক্রিয়া সহ্য করতে সক্ষম এবং গাছে বাসা বেঁধে জলাবদ্ধতা থেকে নিজেদের রক্ষা করতে পারে।
আমেরিকান সাদা পেলিক্যানের সংখ্যা ২০০৫ সালে ছিল ১,৫৭,০০০ যা বর্তমানে তুলনামূলক অনেকটাই বৃদ্ধি পেয়েছে পূর্ব আমেরিকায় এবং হ্রাস পেয়েছে পশ্চিম আমেরিকায়। হ্রাস পাবার কারন হিসেবে ধরা হয় জলাভূমির নিষ্কাশন এবং বিনোদনমূলক উদ্দেশ্যে হ্রদ এবং নদীতে ব্যবহার।
বড় ধলা গগণবেড় প্রজাতির জনসংখ্যা সবচেয়ে বেশি আফ্রিকা এবং দক্ষিণ এশিয়া জুড়ে। সঠিক হিসেব জানা না গেলেও দ্রুত বেগে এদের জনসংখ্যা হ্রাসের কোনো তথ্য পাওয়া যায় নি। তাই, তারা নূন্যতম বিপগ্রস্থ বলে ধারণা করা হয়। তবে এদের সংখ্যা কমতে পারে জলাভূমি নিষ্কাশন, পরিবেশ দূষণ, মানুষের বিনোদনমূলক চাহিদা পূরণ এবং প্রজনন ক্ষেত্র বিনাসের মাধ্যমে।
ড্যালমাটিয়ান পেলিক্যানদের সংখ্যা ১৯ এবং ২০ শতকে প্রকটভাবে কমে দাঁড়ায় ১০,০০০ থেকে ২০,০০০ এর মধ্যে। মূখ্য হুমকি হলো শিকার, বিশেষ করে পূর্ব এশিয়াতে। এছাড়াও রয়েছে, এদের বিচরণক্ষেত্র ধ্বংস করে উপকূলবর্তী এলাকার "উন্নয়ন", বৈদ্যুতিক তাড়ে লেগে মৃত্যুবরণ, অতিরিক্ত মাছ ধরার ফলে খাদ্যশূণ্যতা সৃষ্টি। আইইউসিএন লাল তালিকা [১০] অনুযায়ী এরা হুমকির মুখে। বর্তমানে, মঙ্গোলিয়াতে ড্যালমাটিয়ান পেলিক্যান প্রায় বিপন্ন। আশার বাণী হলো, বর্তমানে, ইউরোপে ড্যালমাটিয়ান পেলিক্যান প্রজাতির বেশ কিছু উপনিবেশ বৃদ্ধি পেয়েছে এবং সবচেয়ে বড় উপনিবেশ রয়েছে গ্রিসের লেক প্রেসপাতে [১১] সেখানে, সংরক্ষণের মাধ্যমে প্রজনন জোড়া বৃদ্ধি পেয়ে প্রায় ১৪০০ হয়েছে।
অস্ট্রেলিয়ান পেলিক্যানদের সংখ্যা ধারণা করা হয় প্রায় ৩,০০,০০০ থেকে ৫,০০,০০০ এর মতো। সার্বিকভাবে এদের সংখ্যা নির্ভর করে জলাভূমির অবস্থা এবং প্রজননের সফলতার উপর।
সংখ্যা নিয়ন্ত্রণ এবং বিঘ্নতা
[সম্পাদনা]পূরাচীনকাল থেকেই মানুষের ধারণা, পেলিক্যান পাখি মানুষের মৎস চাহিদা পূরণে বিঘ্ন ঘটায় যে কারনে তারা বহু আগে থেকেই নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। ১৮৮০ সালে আমেরিকান ধলা পেলিক্যান (সাদা পেলিক্যান)-দের গদাঘাত করে বা গুলি করে ডিম এবং অল্পবয়সের পেলিক্যানদের নির্বিচারে হত্যা করা হয় পানি ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনা এবং জলাভূমি নিষ্কাষণের জন্যে। এমনকি, একবিংশ শতকে আবারও পেলিক্যানদের হত্যা করা হয় কাটথ্রট ট্রাউট নামের এক প্রজাতি স্যালমন মাছ সংরক্ষণের উদ্দ্যেশ্যে।[১২]
উনিশ শতকে বড় ধলা গগনবেড় প্রজাতি সামুদ্রিক পাখিদের ডিম এবং ছানা খেয়ে ফেলে যে কারনে পক্ষিমলসার তৈরিতে বিঘ্ন ঘটে তাই পক্ষিমলসার তৈরির ব্যবসায়ীরা বাধ্য হয় এদের বংশ নিয়ন্ত্রন করতে। এছাড়াও, গগনবেড়ের খাদ্যে পরিণত হবার কারনে দক্ষিণ আফ্রিকার সামুদ্রিক পাখি যথা ঝুঁটিওয়ালা গগনবেড় এবং উপকূলীয় গগনবেড় প্রজাতি হুমকির মুখে পড়ে গিয়েছে যে কারনে পেলিক্যানদের সংখ্যা নিয়ন্ত্রন করা জরুরি হয়ে পড়ে।
এর বাহিরে, মানবসৃষ্ট কারন বা আলোচিত্রদের উপস্থিতি পেলিক্যানদের বাসস্থানে অস্থিরতা সৃষ্টি করতে পারে যা তাদের উপনিবেশে বিরূপ প্রভাব ফেলে থাকে।
বিষক্রিয়া এবং দূষণ
[সম্পাদনা]১৯৫০ এবং ১৯৬০ এর দিকে উত্তর আমেরিকায় ডিডিটি ব্যবহারের কারনে বাদামী পেলিক্যানদের সংখ্যা তীব্রভাবে হ্রাস পায়। ডিডিটি ( [১৩]) এর বিপাক বা মেটাবলাইট ডিডিই খাদ্যচক্রে প্রবেশ করে যার জন্য পেলিক্যানসহ অনেক সামুদ্রিক পাখির ডিমের আস্তরন পাতলা হয়ে পড়ে এবং প্রজননে বিঘ্ন ঘটে। ১৯৭২ এর দিকে আমেরিকার সরকার ডিডিটি ব্যবসারে নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগ করে যা পেলিক্যানসহ অন্য পাখিদের সংখ্যা বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখে।
১৯৬০ এর দিকে লুজিয়ানায় বাদামী পেলিক্যানের সংখ্যা হ্রাস পাওয়ায় ফ্লোরিডা থেকে ৫০০ পেলিক্যান আনা হয় পেলিক্যানের সংখ্যা নিয়ন্ত্রণের জন্যে। তবে, ১৯৭৫ এর এপ্রিল এবং মে মাসের মধ্যে তিনশতাধিক পেলিক্যান মারা যায় ক্ষতিকর কীটনাশক এনড্রিনের কারনে। ১৯৯০ সালে সালটন সী'র মাছ খেয়ে বটুলিজমে আক্রান্ত হয় প্রায় ১৪,০০০ পেলিক্যান যার মধ্যে ৭৫০০ ছিল আমেরিকান ধলা পেলিক্যান। ১৯৯১ সালে, ডায়াটম সিউডো নিশ্চিয়া [১৪] সৃষ্ট নিউরোটক্সিক ডমোয়িক এসিড হেরিং জাতীয় মাছ এনকোভিতে জীবাণু ছড়ায় যা খেয়ে বাদামী পেলিক্যান এবং ব্রান্টস করমোরান্ট [১৫] এর সংখ্যা উল্ল্যেখযোগ্যভাবে হ্রাস পায়।
জলচর পাখিরা তেল ক্ষরিত দূষণে অত্যন্ত সংবেদনশীল। ক্যালিফোর্নিয়া ফিশ এন্ড গেইম কমিশন (২০০৭ এ) ধারণা করে, বিগত বিশ বছরে তেল দূষণের কারনে প্রায় ৫০০-১০০০ বাদামী পেলিক্যান বিরূপভাবে প্রভাবিত হয়। সেন্টার ফর বায়োলজিক্যাল ডাইভারসিটি এপ্রিল ২০১০ এ ডিপ ওয়াটার হরাইজন তেলকূপ দূর্ঘটায় ক্ষতিগ্রস্থ প্রায় ৯৩২টি বাদামী পেলিক্যান উদ্ধার করা হয় যার সংখ্যা ধারণা করা হয় এর চেয়ে দশগুণ বেশি।
তাছাড়া, মাছ ধরার কাজে ব্যবহৃত হুক বা জালে আটকা পড়েও পেলিক্যান পাখিরা আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে থাকে। মাছ ধরার বড়শি গিলে কিংবা বিভিন্ন ফিশিং লাইনের মাধ্যমে পেলিক্যানের গলা, চঞ্চুথলি কিংবা ডানা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে যার ফলে ক্রমান্বয়ে তারা খোঁড়া হতে পারে বা মৃত্যু ঘটতে পারে। উত্তর আমেরিকা এবং অস্ট্রেলিয়াতে বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবীদের সংস্থা রয়েছে যা পেলিক্যানদের নিরাময় এবং পূর্ণবাসন করে থাকে।
পরজীবী এবং রোগ
[সম্পাদনা]অন্যান্য জলচর পাখিদের মতো পেলিক্যান প্রজাতিও পানি বাহিত রোগের প্রতি সংবেদনশীল। এভিয়াল ম্যালেরিয়া যা কিউলেক্স পিপিয়েন (Culex pipien) মশকী দ্বারা ছড়িয়ে থাকে, তা নিমিষেই পেলিক্যানদের আবাসস্থল বিনাশ করতে সক্ষম। তাছাড়াও রয়েছে বিভিন্ন জোঁক, কৃমি, কীট, মাছি, গোলকৃমি, পরজীবী ইত্যাদি পেলিক্যানদের ক্ষতিসাধন করে থাকে। আমেরিকান সাদা পেলিক্যানের উপর করা একটি গবেষণায় পাওয়া গেছে প্রায় ৭৫ ধরণের পরজীবী যার মধ্যে রয়েছে ফিতাকৃমি, কীট, পতঙ্গ, উইপোকা, গোলকৃমি।
বাদামী পেলিক্যানের রোগসৃষ্টিকারী পরজীবী অসংখ্যা। গোলকৃমি কনট্রাসিকাম মাল্টিপ্যাপিলেটাম (Centracaecum multipapillatum) এবং কনট্রাসিকাম মেক্সিক্যানাম (C. maxicanum) এবং পরজীবী ট্রেমাটোড রিবেইরোইয়া অনডাট্রি (Ribeiroia ondatrae) পুয়ের্তো রিকার বাদামী পেলিক্যানদের সংখ্যা হ্রাসের মূল কারন।
কিছু পরজীবী রয়েছে যা পোষক নির্দিষ্ট। অসুস্থ পেলিক্যান সুস্থ পেলিক্যানদের আক্রান্ত করতে পারে উকুনের মাধ্যমে। পেলিক্যানদের চঞ্চুথলির উকুন, পায়াজিটেল্লা পেরালিস চঞ্চুথলির ভেতর দিকে অবস্থান করে প্রদাহ এবং রক্তক্ষরণ করাতে পারে।
২০১২ এর মে মাসে পেরুভিয়ান পেলিক্যানের প্রায় শতাধিক প্রজতাতিতে অনাহার এবং গোলকৃমির উপদ্রপের তথ্য পাওয়া যায়।
ধর্ম, পুরাণ এবং সংস্কৃতি
[সম্পাদনা]প্রাচীন মিশরে পেলিক্যানদের মৃত্যু এবং পরকালের যোগসূত্র ভাবা হতো। সমাধি পূরাচীর এবং শবানুগমনে পেলিক্যানের চিত্র ব্যবহৃত হতো যাতে সাপ থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। প্রাচীন মিশরে পেলিক্যানদের "হেনেট" বলতো এবং তাদের দেবী ভাবা হতো।
ইহুদি ধর্মে অন্য সামুদ্রিক পাখিদের মতো পেলিক্যানদের খাওয়া হয় না। পেলিক্যান খাদ্য হিসেবে গ্রহণ তাদের ধর্মে নিষিদ্ধ।
এন্ড্রিউ ল্যাং [১৬] উদ্ধৃত একটি পুরাণ রয়েছে যেখানে অস্ট্রেলিয়ান পেলিক্যানদের সাদা এবং কালো পালকের কারন বর্ণিত করা হয়। ধারণা করা হতো, অস্ট্রেলিয়ান পেলিক্যানদের পালক আগে কালো রংয়ের ছিল। বন্যা থেকে মানুষদের রক্ষা করতে তারা একটি ডিঙ্গি নৌকা বানায়। তখন একটি কালো পেলিক্যান সাদা পেলিক্যানের প্রেমে পড়ে যায় যে তাকে এড়িয়ে পালিয়ে যায়। প্রতিশোধ নিতে সে যুদ্ধ ঘোষণা করে। সংখ্যায় দ্বিগুন হয়ে সাদা রং মেখে কালো পেলিক্যানের দল যখন যুদ্ধে যায়, অন্য পেলিক্যানরা এমন বিচিত্র সাদা-কালো বর্ণের পাখি দেখে তাদের মেরে ফেলে। ধারণা করা হয়, তার পর থেকেই সব পেলিক্যান প্রজাতিতে সাদা এবং কালো রংয়ের পালক সৃষ্টি হয়ে আসছে।
পেরুর মোশে সম্প্রদায় [১৭] প্রকৃতিকে পূজা করতো এবং তাদের ধর্মীয় অনুশাসনের কারনে পশু পাখিদের সঙ্গে পেলিক্যানদের চিত্রে গুরুত্ব আরোপ করতো।
বাদামী পেলিক্যানের সংখ্যা বেশি থাকায় আলকাট্রাজ আইল্যান্ড [১৮] নাম দেয় স্প্যানিশরা। আলকাট্রাজ শব্দটি এসেছে আরবি আল- কুদোস থেকে। এর অর্থ পানি বহনকারী নৌযান যা মূলত পেলিক্যানদের চঞ্চুথলিকে বোঝায়।
খ্রিস্টধর্ম
[সম্পাদনা]তেসরা বা চতুর্থ শতাব্দীর খ্রিস্টীয় উপদেশমূলক পাঠ্য দ্য ফিজিওলগাস [১৯] অনুযায়ী, পেলিক্যানেরা নিজেদের পোষ্য বড় হলে তাদের হত্যা করে এবং তিনদিন বিলাপ করে। এরপর, মা পেলিক্যান নিজের একাংশ আঘাত করে মৃত পোষ্যদের জীবন ফিরিয়ে আনে। তেমনি, ভারতে একটি লোককথা শোনা যায়। এক মা পেলিক্যান একদা তার পোষ্য হত্যা করে অনুতপ্ত হয়। তাই নিজের রক্ত দিয়ে সে পোষ্যদের জীবন পুনরুত্থিত করে।
মধ্যযুগের ইউরোপীয় পুরাণ অনুযায়ী, পেলিক্যান পোষ্যদের প্রতি খুবই যত্নশীল। খাদ্য সংকটে থাকলে তারা নিজেদের স্তনে ক্ষত সৃষ্টি করে পোষ্যদের খাদ্যের যোগান দিত।
খ্রিস্ট ধর্মীয় সংগীত, আদোরো তে ডিভোট [২০] এর অন্তিম চরণে যিশুকে পেলিক্যান বলে অ্যাখায়িত করা হয় যার এক বিন্দু রক্ত পৃথিবী রক্ষা করতে পারবে।
লোককাহিনী প্রচলনের কারন
[সম্পাদনা]পেলিক্যান নিজেদের আঘাত করার কিছু কারন প্রকৃতিতে খুঁজে পাওয়া যায়। মূলত এরা নিজেদের চঞ্চুথলি সম্পূর্ণ খালি করতে নিজেদের আঘাত করে থাকে। আরও একটি কারন হলো, এরা বিশ্রাম নেবার সময় চঞ্চুথলি নিজেদের গায়ে রেখে থাকে। ড্যালমাটিয়ান পেলিক্যানদের চঞ্চুথলি প্রজননকালে রক্ত লাল বর্ণ ধারণ করে এটিও একটি কারন হতে পারে পুরাণ জন্ম দেয়ার।
ঘোষকতা
[সম্পাদনা]পেলিক্যান আভিজাতিক চিহ্ন হিসেবে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। খ্রিস্টান ধর্ম মতে, পেলিক্যান যত্নশীল এবং আত্নত্যাগী এক অভিভাবকের প্রতীক। "পেলিক্যান ভালনিং" (পেলিক্যেনের ক্ষত) প্রতীক মূলত পেলিক্যানের বুকে ক্ষত সৃষ্টি করার ঘটনা তুলে ধরে এবং "পেলিক্যান ইন হার পিটি" ( পেলিক্যানের ধর্ম) প্রতীক একটি স্ত্রী পেলিক্যানকে বোঝায় যে তার সন্তানদের খাদ্যাভাব পূরণ করে নিজের রক্ত দিয়ে।
পর্তুগালের রাজা জন ২ [২১] পেলিক্যানের প্রতীক ব্যবহার করতো নিজ রাজত্বের সময় যা দিয়ে তিনি বোঝাতে চাইতেন, রাষ্ট্রের জন্যে তিনি প্রাণ দিতে পিছপা নন। তাছাড়া, পেলিক্যানের প্রতীক নানা দাতব্য সংস্থাতেও ব্যবহৃত হয়ে থাকে যেমন, কালদাস দা রাইহা হাসপাতাল [২২] এবং রিয়েল দি তদোস অস সান্তোস হাসপাতাল [২৩], পর্তুগাল।
পেলিক্যানের প্রতীক মধ্যযুগের ধর্মীয় উৎসব 'ফিস্ট অফ কর্পাস ক্রিস্টি' [২৪] এর সঙ্গে সম্পৃক্ত। ক্যামব্রিজ এবং অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় তাদের কলেজের নাম রাখে নিজেদের এবং ধর্মীয় এই উৎসবের নাম ঘিরে। যেমন, কর্পাস ক্রিস্টি কলেজ, ক্যামব্রিজ [২৫] এবং কর্পাস ক্রিস্টি কলেজ, অক্সফোর্ড [২৬] যেখানে, তাদের আনুষ্ঠানিক পোষাকে পেলিক্যানের প্রতীক রয়েছে।
বর্তমান চল
[সম্পাদনা]পেলিক্যান রোমানিয়ার জাতীয় পাখি। বাদামী পেলিক্যান তিনটি ক্যারিবিয় দেশের জাতীয় পাখি যেগুলো হলো, সেইন্ট কিট্স এন্ড নেভিস, বার্বাডোজ এবং সিন্ট মার্টিন। আমেরিকার লুসিয়ানা রাষ্ট্রের জাতীয় পাখি পেলিক্যান। রাষ্ট্রের পতাকা এবং রাষ্ট্রীয় সিলমোহরে লুসিয়ানায় পেলিক্যানের প্রতীক ব্যবহৃত হয় বিধায় লুসিয়ানাকে পেলিক্যান রাষ্ট্র বলা হয়ে থাকে। পর্তুগালের একটি ব্যাংক, মনটেপিয় [২৭] সাদা পেলিক্যানের প্রতীক ব্যবহার করে থাকে।
১৯৯৬ সালে মুদ্রিত আলবেনিয়ার ১ লেকের কয়েনে পেলিক্যানের ছাপ দেখতে পাওয়া যায়। প্রকৃত তথ্য ভিত্তিক সাহিত্যের বই পেলিক্যান বুক্স [২৮] এ পেলিক্যানের নাম এবং ছবি ব্যবহৃত হয় যা পেঙ্গুইন বুক্স [২৯] প্রকাশিত ছিল। প্যাকার কলেজিয়েট ইন্সটিটিউট [৩০] তাদের সিলমোহরে রয়েছে একটি মা পেলিক্যান যা তার ছানাদের খাইয়ে দিচ্ছে। এই সিলমোহর তারা ১৮৮৫ সাল থেকে ব্যবহার করে আসছে।