সতী (দেবী)
দাক্ষায়ণী (সতী) | |
---|---|
বৈবাহিক সুখ ও দীর্ঘ দাম্পত্যজীবন, মহা শক্তি, সৃষ্টি, স্থিতি, সংহার, অসুর বিজয় | |
দেবনাগরী | दाक्षायणी (सती) |
আবাস | কৈলাশ |
অস্ত্র | সকল অস্ত্র , বিশেষ করে ত্রিশূল |
বাহন | সিংহ, নন্দী |
মাতাপিতা | দক্ষ(পিতা) প্রসূতি(মাতা) |
সঙ্গী | শিব |
দাক্ষায়ণী (সংস্কৃত: दाक्षायणी) বা সতী (সংস্কৃত: सती) হিন্দুধর্মে বৈবাহিক সুখ ও দীর্ঘ দাম্পত্য জীবনের দেবী। হিন্দুনারীরা সাধারণত স্বামীর দীর্ঘায়ু কামনায় সতীর পূজা করে থাকেন। সতী দেবী আদ্যাশক্তি মহামায়া। দক্ষ দেবী আদি পরাশক্তি জননীকে নিজের কন্যা রূপে প্রার্থনা করেন। দেবী সতী ছিলেন শিবের প্রথমা স্ত্রী। হিন্দু পুরাণ অনুসারে তিনি তপস্বীর জীবনযাত্রা থেকে শিবকে বের করে আনেন এবং গৃহী করেন।[১] দক্ষযজ্ঞের সময় পিতা দক্ষ প্রজাপতি কর্তৃক স্বামীর ও নিজের অসম্মান সহ্য করতে না পেরে তিনি প্রাণত্যাগ করেন দেবী মহামায়া দক্ষ কে বলেছিলেন যদি তার গৃহে দেবীর অযত্ন হয় তবে দেবী তাকে ত্যাগ করবেন এবং তাই হয়। পরে হিমালয়ের গৃহে কন্যা পার্বতীর রূপে জন্ম নিয়ে পুনরায় শিবকে বিবাহ করেন । ললিতা সহস্রনাম স্তোত্রে পার্বতীর এক সহস্র নাম লিখিত।
সতীর আত্মত্যাগের অনুকরণে হিন্দুধর্মে সতীদাহ প্রথা প্রবর্তিত হয়েছিল। এই প্রথানুসারে স্বামীর মৃত্যুর পর হিন্দু বিধবারা স্বামীর চিতায় আরোহণ করে প্রাণ বিসর্জন দিতেন।[২] যদিও এই বিষয়ে দ্বিমত আছে, কারণ সতী নিজের ইচ্ছেতে স্বামীর নিন্দা সহ্য করতে না পেরে দেহত্যাগ করেন, এতে স্বামী শিবের মৃত্যুর কোনো বিষয় নেই। কিন্তু ভারতে সতীদাহ প্রথা স্বামীর মৃত্যুর পর হতো এবং তাতে স্ত্রীর ইচ্ছের উপর সেটা নির্ভর করত না। শাস্ত্রে বিধবাদের জোরপূর্বক সতী দাহের কোনো বিধান নেই।
পৌরাণিক কাহিনি
[সম্পাদনা]ব্রহ্মাপুরাণ অনুযায়ী, প্রজা সৃষ্টির অভিপ্রায়ে সৃষ্টিকর্তা ব্রহ্মা ধর্ম, রুদ্র, মনু, সনক ভৃগু প্রমুখ কয়েকজন মানস পুত্রের সৃষ্টি করেন। তার দক্ষিণ অঙ্গ থেকে উৎপত্তি হয়েছিল প্রজাপতি দক্ষের। দক্ষের কনিষ্ঠা কন্যারূপে জন্মগ্রহণ করেন দেবী সতী, যিনি পতিরূপে গ্রহণ করেছিলেন দেবাদিদেব মহাদেবকে।
মহাদেবের প্রতি প্রজাপতি দক্ষ ছিলেন অত্যন্ত বিরূপ। ভৃগু ঋষি এবং অন্যান্য প্রজাপতি কর্তৃক অনুষ্ঠিত মহাযজ্ঞে একমাত্র শিব ও ব্রহ্মা ছাড়া অন্য দেবতারা প্রজাপতি দক্ষের প্রতি যথাযথ সম্মান প্রদর্শন করেছিলেন; এর ফলে মহাদেবের উপর ক্রুদ্ধ হয়ে প্রজাপতি দক্ষ এই অভিসম্পাত দেন যে, শিব অন্যান্য দেবতার মতো যজ্ঞভাগের অধিকারী হবেন না।
পরবর্তী সময়ে ব্রহ্মা কর্তৃক দক্ষ সকল প্রজাপতির রাজা নির্বাচিত হওয়ার আনন্দে ও গর্বে দক্ষ আয়োজন করেন এক মহাযজ্ঞের। ত্রিভুবনের সকলেই এই মহাযজ্ঞে আমন্ত্রিত হয়েছিলেন, শুধু কন্যা সতী ও কন্যা জামাতা শিব ছিলেন নিমন্ত্রণের বাইরে। বিনা আমন্ত্রণেই সতী উপস্থিত হন যজ্ঞস্থলে; সেখানে পিতার মুখে পতি শিবের নিন্দাবাণী ও কটূক্তি শুনে প্রজাপতি দক্ষের নেতৃত্বে অসুররাজ ধর্ষণ ফলে ক্রোধে ও ক্ষোভে সতী দেহত্যাগ করেছিলেন এবং শিবকে আবার পতিরূপে পাওয়ার আকাঙ্খায় গিরিরাজ হিমালয়ের কন্যা পার্বতীরূপে আবির্ভূত হয়েছিলেন।
সতীর দেহত্যাগের সংবাদ পেয়ে ক্রোধে উন্মত্ত শিব নিজ অনুগামীদের নিয়ে দক্ষযজ্ঞ লণ্ডভণ্ড করেন এবং সতীর নিথর দেহ নিজের কাঁধে তুলে প্রলয় নৃত্য শুরু করেন। এতে জগৎ ধ্বংস হওয়ার উপক্রম হলে সমস্ত দেবতাদের অনুরোধে জগৎপালক বিষ্ণু নিজ সুদর্শন চক্র দ্বারা সতীর দেহ ছিন্নবিচ্ছিন্ন করে দেন; সেই খণ্ডিত দেহ যেসব জায়গায় পতিত হয়েছিল, সেখানেই গড়ে ওঠে শক্তিপীঠ। শাক্ত ধর্মের অনুসারীদের কাছে এই শক্তিপীঠগুলি পবিত্র তীর্থস্থানরূপে গণ্য হয়।