নীলরতন সরকার
নীলরতন সরকার | |
---|---|
জন্ম | |
মৃত্যু | ১৮ মে ১৯৪৩ | (বয়স ৮১)
নাগরিকত্ব | ব্রিটিশ ভারতীয় |
মাতৃশিক্ষায়তন | ক্যাম্পবেল মেডিকেল স্কুল, কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ |
পেশা | চিকিৎসক |
দাম্পত্য সঙ্গী | নির্মলা দেবী |
স্যার নীলরতন সরকার (১ অক্টোবর ১৮৬১ - ১৮ মে ১৯৪৩ ) একজন বিখ্যাত চিকিৎসক ও শিক্ষাবিদ । তিনি বহু শিক্ষাসংস্থা এবং গবেষণামূলক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে জড়িত ছিলেন এবং এগুলি স্থাপনে সহযোগিতা করেছিলেন । তিনি একজন সক্রিয় রাজনীতিবিদ ছিলেন এবং শিল্পস্থাপনে উল্লেখযোগ্য অবদান রেখেছিলেন । ১৮৮৮ খ্রিষ্টাব্দে নীলরতন পূর্ববঙ্গের এক ব্রাহ্ম ধর্মপ্রচারক গিরিশচন্দ্র মজুমদারের মেয়ে নির্মলাকে বিবাহ করেন। তিনি অস্থি সংক্রান্ত চিকিৎসায় ভারতে প্রথম এক্স রশ্মির ব্যবহার করেন। কলকাতার বুকে মেডিকেল কলেজ স্থাপনের ক্ষেত্রে তিনি অগ্রণী ভূমিকা নিয়েছিলেন। ১৯১৯ থেকে ১৯২১ খ্রিস্টাব্দে নীলরতন সরকার কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ছিলেন। এছাড়া তিনি বিশ্বভারতীর ট্রাস্টি বোর্ড এবং বসু বিজ্ঞান মন্দিরের আজীবন সদস্য ছিলেন।
জন্ম ও পরিবার
[সম্পাদনা]দক্ষিণ চব্বিশ পরগণার নেতড়াতে ১৮৬১ খ্রিষ্টাব্দের ১ অক্টোবর তিনি জন্মগ্রহণ করেন। তার আদি নিবাস যশোহর। তার পিতার নাম নন্দলাল সরকার। নন্দলাল সরকার যশোরের একটি দরিদ্র কায়স্থ পরিবারের মানুষ ছিলেন। তিনি পরবর্তী কালে দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা জেলার জয়নগরে থাকতে আরম্ভ করেন। বিখ্যাত শিশুসাহিত্যিক যোগীন্দ্রনাথ সরকার নীলরতন সরকারের ভাই।[১]
শিক্ষা
[সম্পাদনা]নীলরতন সরকার ১৮৭৬ খ্রিষ্টাব্দে জয়নগর থেকে এন্ট্রান্স ও ক্যাম্পবেল মেডিকেল স্কুল থেকে ডাক্তারি পাশ করেন। এর পর তিনি মেট্রোপলিটান কলেজ থেকে এলএ ও বিএ পাস করেন। ১৮৮৫ খ্রিষ্টাব্দে কলকাতা মেডিকেল কলেজে প্রবেশ করে তিনি ১৮৮৮ খ্রিষ্টাব্দে এমবি হন। এরপর ১৮৮৯ খ্রিষ্টাব্দ এমএ এবং এমডি উপাধি পান। [১][২][৩]
কর্মজীবন
[সম্পাদনা]মেট্রোপলিটান কলেজ থেকে এলএ ও বিএ পাস করে কিছুদিন তিনি চাতরা উচ্চ বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করেন। কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে থেকে এমবি হয়ে তিনি মেয়ো নেটিভ হাসপাতালে হাউস সার্জেনের পদে যোগ দেন। নীলরতন সরকার অল্প সময়ের মধ্যেই চিকিৎসক হিসাবে বিখ্যাত হন। তার পারিশ্রমিক দুই টাকায় আরম্ভ হয়ে আস্তে আস্তে ৬৪ টাকা অবধি হয়।[১][৩] তিনি দরিদ্র রোগীদের বিনা পয়সায় চিকিৎসা করতেন এবং তাদের বিনামূল্যে ওষুধ ও খাবার দিতেন। ১৮৯৩ খ্রিষ্টাব্দে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফেলো এবং এরপর ফ্যাকাল্টি অফ সায়েন্স ও ফ্যাকাল্টি অফ মেডিসিনের ডিন হন। তিনি স্নাতকোত্তর কলা (১৯২৪ থেকে ১৯২৭ পর্যন্ত) ও বিজ্ঞান শিক্ষা বিভাগের (১৯২৪ থেকে ১৯৪৩ পর্যন্ত) সভাপতিও হয়েছিলেন।
১৮৯৫ সালে তিনি একটি বেসরকারী মেডিক্যাল কলেজ স্থাপন করেন। ১৯১৬ সালে কলেজের নাম হয় কারমাইকেল মেডিকেল কলেজ যা পরবর্তীতে আর জি কর মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল নামাঙ্কিত হয়। ১৯১৮ সালে মেডিকেল এডুকেশন সোসাইটি গঠিত হয় কারমাইকেল মেডিকেল কলেজের বিভিন্ন বিষয় দেখাশোনা করার জন্য। নীলরতন ১৯২২ সালে এর সভাপতি হন। এবং ১৯৪১ সাল পর্যন্ত এই পদে ছিলেন।
নীলরতন ১৯০৮ সালে বুট অ্যান্ড ইকুইপমেন্ট এর নির্দেশক হয়েছিলেন। বসু বিজ্ঞান মন্দির, বিশ্বভারতী এবং ভারতীয় জাদুঘরের ট্রাস্টি ছিলেন । ১৯১২ থেকে ১৯২৭ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত তিনি বঙ্গীয় ব্যবস্থাপক সভার সদস্য ছিলেন।
তিনি সায়েন্স কলেজ অফ দ্য ক্যালকাটা ইউনিভার্সিটি এবং ন্যাশন্যাল কাউন্সিল অফ এডুকেশনের (জাতীয় শিক্ষা পরিষদ) স্থপতিদের মধ্যে ছিলেন। তিনি ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন ফর দ্য কাল্টিভেশন অফ সায়েন্স এর সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে যুক্ত ছিলেন। জাতীয় শিক্ষা পরিষদের সম্পাদক হিসাবে তিনি এদেশে বৃত্তিগত প্রশিক্ষনের চেষ্টা করেছিলেন। বেঙ্গল টেকনিক্যাল স্কুল, যাদবপুর ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ প্রভৃতি স্থাপনেও তার ভূমিকা ছিল। যাদবপুর যক্ষ্মা হাসপাতাল (বর্তমানে কুমুদশঙ্কর রায় যক্ষ্মা হাসপাতাল) প্রতিষ্ঠায় তিনি সহযোগিতা করেছিলেন।
১৯১৯ খ্রিষ্টাব্দ থেকে ১৯২১ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস-চ্যান্সেলর ছিলেন। ১৯২০ খ্রিষ্টাব্দে তিনি লন্ডনে ব্রিটিশ সাম্রাজ্য বিশ্ববিদ্যালয় সম্মেলনে যোগদান করেন। অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় তাঁকে ডিসিএল এবং কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় তাঁকে এলএলডি উপাধি প্রধান করেছিল। [১][৩]
নীলরতন সরকারের দেশের সামগ্রিক উন্নতির প্রতি আগ্রহ তাঁকে বিভিন্ন শিল্প স্থাপনের দিকে উৎসাহিত করেছিল। তিনি রাঙামাটি চা কম্পানি (পরবর্তী কালে ইস্টার্ন টি কম্পানি), ন্যাশন্যাল সোপ ফ্যাক্টরি এবং ন্যাশন্যাল ট্যানারি কম্পানিতে তার টাকা নিয়োগ করেছিলেন। নীলরতন সরকার রাজনৈতিক ভাবে সক্রিয় ছিলেন। তিনি ১৮৯০ খ্রিষ্টাব্দ থেকে ১৯১৯ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত ভারতের জাতীয় কংগ্রেসের সদস্য ছিলেন। [৩]
১৯৪৩ খ্রিষ্টাব্দের ১৮ই মে গিরিডিতে তার মৃত্যু হয়।
নীলরতন সরকার এবং রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর পরম বন্ধু ছিলেন। রবীন্দ্রনাথের পারিবারিক চিকিৎসক ও উপদেষ্টাও ছিলেন তিনি। কবি স্নেহভরে তাকে "নীলু" নামে ডাকতেন। তিনি 'সেঁজুতি' কাব্যগ্রন্থটি নীলরতন সরকারকে উৎসর্গ করেছিলেন।ক্যাম্বেল মেডিকেল স্কুল কলেজে রূপান্তরিত হয়ে তার নামে নীলরতন সরকার মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল নামাঙ্কিত হয়।
তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ ক খ গ ঘ সংসদ বাঙালি চরিতাভিধান - প্রথম খণ্ড - সাহিত্য সংসদ আইএসবিএন ৮১-৮৫৬২৬-৬৫-০
- ↑ চিকিৎসাবিজ্ঞানের ইতিহাস - উনিশ শতকে বাংলায় পাশ্চাত্য শিক্ষার প্রভাব - বিনয় ভুষণ রায়, প্রথম সম্পাদনা, আইএসবিএন ৮১-৮৯৬৪৬-০০-৪ {{আইএসবিএন}} এ প্যারামিটার ত্রুটি: চেকসাম
- ↑ ক খ গ ঘ বাংলাপিডিয়ায় নীলরতন সরকার
- বাঙালি চিকিৎসক
- বাঙালি শিক্ষাবিদ
- বাংলার নবজাগরণ
- ১৮৬১-এ জন্ম
- ১৯৪৩-এ মৃত্যু
- দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা জেলার ব্যক্তি
- কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য
- ভারতীয় শিক্ষায়তনিক
- ভারতীয় চিকিৎসক
- ২০শ শতাব্দীর ভারতীয় চিকিৎসক
- কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থী
- কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক
- বাঙালি হিন্দু
- ২০শ শতাব্দীর বাঙালি
- ১৯শ শতাব্দীর বাঙালি
- ব্রাহ্ম
- নাইটস ব্যাচেলর
- ভারতীয় শিক্ষাবিদ
- ভারতীয় জনহিতৈষী
- বাঙালি বিজ্ঞানী
- পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতিবিদ
- ১৯শ শতাব্দীর ভারতীয় চিকিৎসক
- জয়নগর মজিলপুরের ব্যক্তি