মুহাম্মদ আলি জওহর
মাওলানা মুহাম্মদ আলি জওহর (/ɑːˈliː/;[১] ১০ ডিসেম্বর ১৮৭৮ – ৪ জানুয়ারি ১৯৩১) ছিলেন একজন ভারতীয় মুসলিম নেতা, আন্দোলনকারী, পণ্ডিত, সাংবাদিক ও কবি। তিনি খিলাফত আন্দোলনের মূল নেতৃবৃন্দের অন্যতম ছিলেন।
মাওলানা মুহাম্মদ আলি | |
---|---|
৩৪ তম সভাপতি, ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস | |
কাজের মেয়াদ 1923–1923 | |
পূর্বসূরী | চিত্তরঞ্জন দাস |
উত্তরসূরী | আবুল কালাম আজাদ |
ব্যক্তিগত তথ্য | |
জন্ম | |
মৃত্যু | ৪ জানুয়ারি ১৯৩১ | (বয়স ৫২)
সমাধিস্থল | জেরুজালেম, Palestine |
ধর্ম | ইসলাম |
দাম্পত্য সঙ্গী | আমজাদী বানু বেগম (বি. ১৯০২–১৯৩১) |
পিতামাতা | বাবাঃ আব্দুল আলী খান আবাদী বানু বেগম (মা) |
রাজনৈতিক দল | সর্বভারতীয় মুসলিম লীগ ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস |
যে জন্য পরিচিত | খিলাফত আন্দোলন |
কাজ | Journalist, scholar, political activist, poet |
এর প্রতিষ্ঠাতা | জামিয়া মিল্লিয়া ইসলামিয়া |
ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের মুসলিম প্রেসিডেন্টদের মধ্যে তিনি ষষ্ঠতম। তিনি কয়েকমাস এ পদে ছিলেন। তিনি নিখিল ভারত মুসলিম লীগের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা এবং সাবেক প্রেসিডেন্ট।
প্রথম জীবন
সম্পাদনামুহাম্মদ আলি ১৮৭৮ সালে ভারতের রামপুরে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি মাওলানা শওকত আলি ও জুলফিকার আলির ভাই। পিতার অকালমৃত্যুর পর তিনি দারুল উলুম দেওবন্দ, আলিগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয় ও ১৮৯৮ সালে অক্সফোর্ডের লিঙ্কন কলেজে আধুনিক ইতিহাস অধ্যয়ন করেন।
ভারত ফিরে মুহাম্মদ আলি রামপুর রাজ্যের শিক্ষা নির্দেশক হিসেবে দায়িত্বপালন করেন। পরে তিনি বড়োদরা সিভিল সার্ভিসে যোগ দেন। তিনি একজন লেখক ও বক্তা হয়ে উঠেন। ইংরেজি ও উর্দু ভাষায় প্রধান ইংরেজি ও ভারতীয় সংবাদপত্রে তিনি অবদান রাখেন। ১৯১১ সালে তিনি উর্দুতে হামদর্দ ও ইংরেজিতে দ্য কমরেড নামক সাপ্তাহিক চালু করেন। ১৯১৩ মুহাম্মদ আলি দিল্লী ফিরে আসেন।
আলিগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্প্রসারণের জন্য মুহাম্মদ আলি কাজ করেছেন। এসময় তার নাম ছিল মোহামেডান এংলো-ওরিয়েন্টাল কলেজ। তিনি ১৯২০ সালে প্রতিষ্ঠিত জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়ার একজন সহপ্রতিষ্ঠাতা। এটি পরে দিল্লীতে স্থানান্তর করা হয়।
খিলাফত ও রাজনৈতিক আন্দোলন
সম্পাদনা১৯০৬ সালে ঢাকায় অনুষ্ঠিত নিখিল ভারত মুসলিম লীগের প্রতিষ্ঠা বৈঠকে মুহাম্মদ আলি অংশগ্রহণ করেন। ১৯১৮ সালে তিনি এই দলের প্রেসিডেন্টের দায়িত্বপালন করেন। ১৯২৮ সাল পর্যন্ত তিনি লীগে সক্রিয় ভূমিকা রাখেন।
১৯১৯ সালে ইংল্যান্ডে মুসলিম প্রতিনিধিদলে তিনি প্রতিনিধিত্ব করেন। এ দলের উদ্দেশ্য ছিল তুরস্কের সুলতান ও মুসলিমদের খলিফাকে যাতে মোস্তফা কামাল আতাতুর্ক ক্ষমতাচ্যুত না করেন সে বিষয়ে প্রভাবিত করার জন্য ব্রিটিশ সরকারকে রাজি করানো। ব্রিটিশরা তাদের আবেদন প্রত্যাখ্যান করে। ফলে খিলাফত কমিটি গঠিত হয়। এ কমিটি ভারতের মুসলিমদের সরকারের প্রতিবাদ ও বয়কটে নেতৃত্ব দেয়।
এসময় মাওলানা মুহাম্মদ আলি ১৯২১ সালে মুসলিম জাতীয়তাবাদিদের নিয়ে একটি বোর্ড গঠন করেন এতে ছিলেন মাওলানা শওকত আলি, মাওলানা আবুল কালাম আজাদ, হাকিম আজমল খান, মুখতার আহমেদ আনসারি। এছাড়া মহাত্মা গান্ধীও এতে ছিলেন। গান্ধী মুসলিমদের সাথে ঐক্যের নিদর্শন হিসেবে ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস ও হাজার হাজার হিন্দুর সমর্থন অর্জন করেন। একইসাথে মুহাম্মদ আলি গান্ধীর অসহযোগ আন্দোলনে সমর্থন দেন এবং ভারতজুড়ে কয়েকশত প্রতিবাদে উৎসাহ দেন। ব্রিটিশ সরকার তাকে গ্রেপ্তার করে। খিলাফত সম্মেলনের সময় রাজদ্রোহী বক্তৃতার দায়ে তিনি দুইবছরের জন্য কারারুদ্ধ হন।
১৯২৩ সালে মাওলানা মুহাম্মদ আলি ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন।
কংগ্রেস থেকে বিচ্ছিন্ন
সম্পাদনাখিলাফত আন্দোলনের ব্যর্থতা ও চৌরি-চৌরা ঘটনার পর মহাত্মা গান্ধীর অসহযোগ প্রত্যাহার করে নেয়ার ফলে মুহাম্মদ আলি মনঃক্ষুণ্ণ ছিলেন। তিনি তার সাপ্তাহিক হামদর্দ পুনরায় চালু করেন এবং কংগ্রেস ত্যাগ করেন। তিনি নেহেরু রিপোর্টের বিরোধিতা করে। এতে সাংবিধানিক সংস্কার এবং ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের অধীনে স্বাধীন জাতি হিসেবে ডমিনিয়ন স্ট্যাটাসের প্রস্তাব করা হয়। মোতিলাল নেহরুর নেতৃত্বে কংগ্রেসের হিন্দু ও মুসলিম সদস্যদের একটি কমিটি এই রিপোর্ট লেখে। সাইমন কমিশনের বিরুদ্ধে এটি একটি প্রধান প্রতিবাদ ছিল। কমিশন সংস্কার প্রস্তাবের জন্য ভারতে আসে কিন্তু তাতে ভারতের দাবির প্রতি কর্ণপাত করা হয়নি। এসময় মুহাম্মদ আলি কারাগারে ছিলেন। তাই সর্বদলীয় সম্মেলনে নেহেরু রিপোর্ট শওকত আলি, বেগম মুহাম্মদ আলি ও কেন্দ্রীয় খিলাফত কমিটির ৩০ জন অন্যান্য সদস্য কর্তৃক নেহরু রিপোর্ট উত্থাপিত হয়। অন্যান্য সদস্যদের মধ্যে ছিলেন আবদুল মজিদ দরিয়াবাদি, আজাদ সোবহানি, মাগফুর আহমেদ আজাজি, আবুল মহসিন মুহাম্মদ সাজ্জাদ ও অন্যান্যরা। মুহাম্মদ আলি নেহেরু রিপোর্টের মুসলিমদের পৃথক নির্বাচনের বিরোধিতা করেন এবং মুহাম্মদ আলি জিন্নাহ ও লীগের ১৪ দফার প্রতি সমর্থন জানান। অন্যান্য মুসলিম নেতা মাওলানা আবুল কালাম আজাদ, হাকিম আজমল খান ও মুখতার আহমেদ আনসারির বিপরীতে গিয়ে তিনি গান্ধীর সমালোচনা করেন। তারা গান্ধী ও ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসকে সমর্থন করতেন।
তৃতীয় আগা খানকে চেয়ারম্যান করে অনুষ্ঠিত গোলটেবিল বৈঠকে মাওলানা মুহাম্মদ আলি অংশগ্রহণ করেন। ১৯২১ সালে ব্রিটিশ সরকার করাচির খালিকদিনা হলে আদালত স্থাপন করে। এতে তাকে আড়াই বছরের কারাদন্ড দেয়া হয়। ১৯৩১ সালের ৩ জানুয়ারি মুহাম্মদ আলি মৃত্যুবরণ করেন। তার ইচ্ছানুযায়ী তাকে জেরুজালেমে দাফন করা হয়। কুব্বাত আস সাখরার কাছে তার কবরে উৎকীর্ণ রয়েছে, “এখানে শায়িত আছে সাইয়িদ মুহাম্মদ আলি আল হিন্দি”।[২]
নামকরণ
সম্পাদনাবেশ কিছু স্থানের নাম মাওলানা মুহাম্মদ আলির নামে করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে,
- মাওলানা মুহাম্মদ আলি (এমএমএ) হোস্টেল, মহসিনুল মুলক হল, আলিগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়, আলিগড়, ভারত
- মহম্মদ আলী পার্ক, কলকাতা, ভারত
- মাওলানা মুহাম্মদ আলি মার্গ, নয়াদিল্লী, ভারত [৩]
- সাদায়ে জওহর ম্যাগাজিন, ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ, জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়া, নয়াদিল্লী
- মুহাম্মদ আলি রোড, দক্ষিণ মুম্বাই, ভারত
- গুলিস্তানে জওহর, করাচির নিকটে, পাকিস্তান
- মুহাম্মদ আলি কোঅপারেটিভ হাউসিং সোসাইটি, করাচি
- জওহর টাউন, লাহোর, পাকিস্তান
- জওহরাবাদ, পাঞ্জাবের একটি শহর, পাকিস্তান
- করাচির জওহরাবাদ এলাকা
- মাওলানা মুহাম্মদ আলি মসজিদ, সিঙ্গাপুর[৪]
- গান্ধী মুহাম্মদ আলি মেমোরিয়াল ইন্টার কলেজ, উত্তর প্রদেশ, ভারত
- মুহাম্মদ আলি জওহর বিশ্ববিদ্যালয়
- মাওলানা মুহাম্মদ আলি জওহর একাডেমি অব ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজ, জামিয়া মিল্লিয়া ইসলামিয়া, নয়াদিল্লী, ভারত
- তার ইংরেজি সাংবাদিকতা দ্বারা উদ্বুদ্ধ হয়ে দারুল উলুম নাদওয়াতুল উলামায় একটি পৃথক ইংরেজি গ্রন্থাগার স্থাপিত হয়েছে, লখনৌ, ভারত
- জওহর হোস্টেল, সিন্ধ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় টানডো জাম, সিন্ধ, পাকিস্তান
- মুহাম্মদ আলি জওহর উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয়, কালিকট জেলা, কেরালা, ভারত
- মওলানা মুহম্মদ আলি সড়ক, দামপাড়া, চট্টগ্রাম, বাংলাদেশ
- সরকারি মাওলানা মোহাম্মদ আলী কলেজ, টাঙ্গাইল, বাংলাদেশ
উদ্ধৃতি
সম্পাদনা"I had long been convinced that here in this Country of hundreds of millions of human beings, intensely attached to religion, and yet infinitely split up into communities, sects and denominations, Providence had created for us the mission of solving a unique problem and working out a new synthesis, which was nothing low than a Federation of Faiths... For more than twenty years I have dreamed the dream of a federation, grander, nobler and infinitely more spiritual than the United States of America, and today when many a political Cassandra prophesies a return to the bad old days of Hindu-Muslim dissensions I still dream that old dream of "United Faiths of India." — মুহাম্মদ আলি; প্রেসিডেন্সিয়াল ভাষণ, ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস সেশন, ১৯২৩, কোকানডা (বর্তমান কাকিনাডা)।
আরও দেখুন
সম্পাদনাতথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ "Ali". Random House Webster's Unabridged Dictionary.
- ↑ "সংরক্ষণাগারভুক্ত অনুলিপি"। ৮ অক্টোবর ২০০৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৫।
- ↑ https://www.google.co.in/maps/place/MMA+Rd,+New+Delhi,+Delhi/@28.5612254,77.2800068,17z/data=!4m2!3m1!1s0x390ce38d74dec5bd:0x3103cd044665df58
- ↑ "Moulana Mohd Ali Masjid, MUIS, Singapore"। Muis.gov.sg। ৫ মার্চ ২০১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৬ জুন ২০১২।
বহিঃসংযোগ
সম্পাদনা- Biographical pages
- "Muhammad Ali Jauhar and the Mutiny Trial (محمد علی جوہر ۱ور مقدمہِ بغاوت) in Urdu"। Rehmat Farrukhabadi Oxford University Press, 2005; আইএসবিএন ৯৭৮০১৯৫৯৭৮৯৪০)। ২৯ অক্টোবর ২০১৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৫।
- "Maulana Muhammad Ali Jouhar (1878–1931)"। Story of Pakistan।
- "Maulana Mohammad Ali Jauhar"। Pioneers of freedom। ২৯ জুলাই ২০১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৫।
- "Ali brothers"। Nazaripak.info। Archived from the original on ১৬ সেপ্টেম্বর ২০০৪। সংগ্রহের তারিখ ৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৫।
- "Presidents of Indian national Congress"।