জাহ্নবী গোস্বামী
জাহ্নবী গোস্বামী (অসমীয়া: জাহ্নৱী গোস্বামী) এইডস রোগের বিষয়ে সজাগতা সৃষ্টি করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা বহনকারী অসমের একজন সমাজকর্মী মহিলা। এইডস রোগে আক্রান্ত ঘোষণা করা তিনিই উত্তর-পূর্বাঞ্চলের প্রথম মহিলা।[১] ১৯৯৬ সনে তার দেহে এইডস রোগ ধরা পরার পর পনের বৎসর জুড়ে তিনি এইডস মুক্ত সমাজ গঢ়ে তুলার চেষ্টা করেন। ২০০২ সনে তিনি অসমে এইডস রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের জীবন ধারনের মান উন্নত করার উদ্দেশ্যে দা অসম নেটওয়ার্ক অফ পজেটিভ গঠন করেন।
জাহ্নবী গোস্বামী | |
---|---|
জন্ম | ১৯৭৬ |
পেশা | সক্রিয় সমাজকর্মী, The Assam Network of Positive People (ANP+) সভানেত্রী, Assam State AIDS Control Society (ASACS) সদস্য |
কর্মজীবন | ১৯৯৭-বরত্তমান |
প্রারম্ভিক জীবন
সম্পাদনা১৯৭৬ সনে অসমের নগাঁও জেলার কামপুর নামক স্থানে জাহ্নবী গোস্বামীর জন্ম হয়। চারজন ভাই-বোনের মধ্যে তিনি ছিলেন জেষ্ঠ। সপ্তম শ্রেনীতে অধ্যয়ন করার সময় তার পিতৃবিয়োগ হয়। ১৯৯৪ সনে মাত্র ১৮ বৎসরে গুয়াহাটির পংকজ শর্মা নামক একজন ব্যবসায়ীর সহিত তার বিবাহ হয়। ১৯৯৫ সনে তাদের কন্যা সন্তান কস্তুরিকার তিন মাস সময়ে পংকজ শর্মার অকস্মাৎ মৃত্যু হয়। জাহ্নবি গোস্বামীর শ্বশুর তাকে ঘর থেকে বের করে দেন। তিনি খালি হাতে নগাঁও ফিরে আসেন।
এইডস রোগের সহিত যুদ্ধ
সম্পাদনাগুয়াহাটি চিকিৎসা মহাবিদ্যালয়ে ভর্ত্তি করার পর তার দেহে এইডস রোগ ধরা পরে। তার পুত্রী কস্তুরিকাও এই রোগে আক্রান্ত বলে চিকিৎসকেরা ঘোষণা করেন। তখন এই কথা স্পষ্ট হয় যে তার স্বামী এই রোগে ভুগে মৃত্যুবরণ করেছেন ও তার পরিবারের সদস্যেরা কথাটি গোপন রেখেছিলেন। মৃত্যু আসন্ন জেনেও তিনি নিজ গৃহ কামপুরে এসে উচ্চ শিক্ষা গ্রহণের সংকল্প নেন। তার দীর্ঘ প্রেচেষ্টার ফলে ১৯৯৭ সনে ন্যায়ালয় থেকে ঘোষণা করা হয় যে এইডস আক্রান্ত রোগীদের সহিত কোন ভেদভাব করা হবেনা ও সাধারণ রোগীর ন্যায় তাদের সমান সুবিধা প্রদান করা হবে। কন্যার মৃত্যুর পর তিনি এইডসের বিরুদ্ধে সজাগতা সৃষ্টি করাকে জীবনের পথ রুপে বেছে নেন। ১৯৯৮ সনে তিনি নিজেকে এইডস আক্রান্ত বলে ঘোষণা করেন।
অনুষ্ঠান-প্রতিষ্ঠান
সম্পাদনা১৯৯৯ সনে জাহ্নবী গোস্বামী গুয়াহাটিতে অসম রাজ্যিক এইডস নিয়ন্ত্রণ সমিতি যোগদান করেন। লোকের ঘৃনার জন্য তিনি বাসস্থান খুঁজে পেতে অসুবিধার সন্মুখীন হন। কিছুদিন সমিতি ব্যবস্থা করা রুমে বাস করার পর ২০০৩ সনে অসম সরকার তাকে গৃহ প্রদান করেন। এই ধরনের বৈষম্যের তিনি ২০০৬ সনে অসম বিধান সভার নির্বাচন থেকে তিনি অবতীর্ণ হন। ২০০২ সনে অসমের অন্যান্য এইডস আক্রান্ত ব্যক্তিদের সহিত একত্রিত হয়ে Assam Network of Positive People" (ANP+) গঠন করেন। এর উদ্দেশ্য ছিল এইডস আক্রান্ত ব্যক্তিদের সক্ষমতা বৃদ্ধি করা ও তাদের সমাজে উচিত স্থান দেওয়া। সংগঠনটি একটি পরামর্শ কেন্দ্র স্থাপন করে যেখানে ঔষধ ও স্বাস্থ্য পরিক্ষার সুবিধা দেওয়া হয়। ২০০৯ সনে তিনি Assam Network of Positive People" (ANP+)-এর সভানেত্রী নির্বাচিত হন। সংগঠনটি সমাজ থেকে এইডস আক্রান্ত ব্যক্তিদের প্রতি ভয়, ঘৃনা ও বৈষম্যভাব দূর করতে যথেষ্ট ভূমিকা পালন করে আসছে। অসম রাজ্যিক এইডস নিয়ন্ত্রণ সমিতির একজন মূল সদস্যরুপে তিনি চিকিৎসক, নার্স ও পারামেডিকেল কর্মীদের প্রশিক্ষন প্রদানে অব্যহত আছেন। তদুপরি তিনি সমগ্র দেশজুড়ে কথোপকথন,আলোচনা চক্র, বক্তৃতা ইত্যাদিতে অংশগ্রহণ করে এইডস রোগের প্রতি সজাগতা বৃদ্ধি করতে যথেষ্ট অবদান রেখেছেন।
তথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ "সংরক্ষণাগারভুক্ত অনুলিপি"। ১২ আগস্ট ২০১৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৮ আগস্ট ২০১৪।