আব্দুল মোতালেব মালিক

পাকিস্তানি রাজনীতিবিদ

আবদুল মুতালিব মালেক যিনি এ এম মালিক নামেও পরিচিত ছিলেন। (১৯০৫-১৯৭৭) চক্ষু চিকিৎসক, রাজনৈতিককূটনীতিক ছিলেন। তিনি বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ চলাকালে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নর ছিলেন।[][][]

ডাক্তার
আবদুল মুতালিব মালেক
পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নর
কাজের মেয়াদ
৩১ আগস্ট ১৯৭১ – ১৪ ডিসেম্বর ১৯৭১
পূর্বসূরীটিক্কা খান
উত্তরসূরীআমির আবদুল্লাহ খান নিয়াজী
পাকিস্তানের শ্রম, স্বাস্থ্য ও কর্ম মন্ত্রী
কাজের মেয়াদ
২৪ অক্টোবর ১৯৫১ – ২৪ অক্টোবর ১৯৫৪
পাকিস্তানের শ্রম, স্বাস্থ্য ও বাণিজ্য মন্ত্রী
কাজের মেয়াদ
২৪ অক্টোবর ১৯৫৪ – ১১ আগস্ট ১৯৫৫
স্বাস্থ্য, শ্রম,
পরিবার পরিকল্পনা ও যোগাযোগ মন্ত্রী
কাজের মেয়াদ
১৫ আগস্ট ১৯৬৯ – ৭ অক্টোবর ১৯৬৯
ব্যক্তিগত বিবরণ
জন্মআব্দুল মোতালেব মালিক
১৯০৫
চুয়াডাঙ্গা জেলা, বেঙ্গল প্রেসিডেন্সি, ব্রিটিশ ভারত
মৃত্যু১৯৭৭
রাজনৈতিক দলপাকিস্তান মুসলিম লীগ
কনভেনশন মুসলিম লীগ
প্রাক্তন শিক্ষার্থীবিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়
ডাকনামএ এম মালিক

প্রাথমিক জীবন

সম্পাদনা

মালেক ১৯০৫ সালে ব্রিটিশ ভারতের বেঙ্গল প্রেসিডেন্সির চুয়াডাঙ্গায় জন্মগ্রহণ করেন।[]

তিনি বগুড়া, বাঁকুড়া ও কলকাতায় পড়াশোনা করেন। তিনি শান্তিনিকেতনে বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়েও অধ্যয়ন করেন। তিনি ১৯৩১ সালে চক্ষু চিকিৎসার ওপর ভিয়েনা থেকে উচ্চতর ডিগ্রি লাভ করেন।[]

কর্মজীবন

সম্পাদনা

এ এম মালিক কলকাতায় চক্ষু চিকিৎসক হিসেবে কর্মজীবন শুরু করে তিনি একাধিক মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য ছিলেন। তিনি ১৯৩৬ সালে ট্রেড ইউনিয়ন আন্দোলনের সাথে যুক্ত হয়ে লেবার কনফেডারেশনের নির্বাহি কমিটির সদস্য ছিলেন। এর আগে তিনি কলকাতার কোয়ার্টারমাস্টার ইউনিয়ন ও ভারতীয় সেইলর্স ইউনিয়নের সভাপতি ছিলেন। তিনি প্রেস এমপ্লয়িজ ইউনিয়ন, ডকার্স ইউনিয়ন, পোর্ট কমিশনার্স ইউনিয়নের সঙ্গে জড়িত ছিলেন।[]

তিনি সর্বভারতীয় সি-ফেয়ারার্স ফেডারেশনের প্রতিষ্ঠাতা সেক্রেটারি এবং বেঙ্গল প্রভিন্সিয়াল ট্রেড ইউনিয়ন কংগ্রেসের ভাইস প্রেসিডেন্ট ছিলেন।[]

তিনি সর্বভারতীয় ট্রেড ইউনিয়ন কংগ্রেস নির্বাহি কমিটির সদস্য ছিলেন।[]

দেশ বিভাগের পর তিনি নিখিল পাকিস্তান ট্রেড ইউনিয়ন ফেডারেশনের প্রথম প্রেসিডেন্ট ও লেবার কনফেডারেশনের নির্বাহি কমিটির সদস্য ছিলেন।[]

কূটনীতিক জীবন

সম্পাদনা

এ এম মালিক ১৯৫৫ সালের আগস্ট মাসে তাঁকে সুইজারল্যান্ডে পাকিস্তানের রাষ্ট্রদূত নিয়োগ করা হয়। একই সাথে তাঁকে অস্ট্রিয়া ও যুগোস্লাভিয়ায় পাকিস্তানের রাষ্ট্রদূত করা হয়। তিনি ১৯৫৮-৬১ সালে গণপ্রজাতন্ত্রী চীন এবং ১৯৬১-৬৫ সালে ফিলিপাইনে পাকিস্তানের রাষ্ট্রদূত ছিলেন। তিনি ১৯৬৫-৬৬ সালে অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডে পাকিস্তানের হাইকমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এ.এম মালিক ১৯৬৭ সালে কূটনৈতিক চাকরি থেকে অবসর গ্রহণ করেন।[]

রাজনৈতিক জীবন

সম্পাদনা

এ এম মালিক ১৯৪০ এবং ১৯৪৬ সালে তৎকালীন ব্রিটিশ ভারতের বঙ্গীয় আইন পরিষদে সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি ১৯৪৬ সালে বঙ্গীয় আইন পরিষদের অতিরিক্ত চীফ হুইপ ছিলেন। ১৯৪৭ সালে তিনি পূর্ব বাংলা প্রাদেশিক সরকারের কৃষি ও মৎস্য মন্ত্রী নিযুক্ত হন।[]

১৯৪৯ সালে তিনি তৎকালীন পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভায় প্রথমে সংখ্যালঘু বিষয়ক এবং পরে স্বাস্থ্য, শ্রম ও পূর্তমন্ত্রী নিযুক্ত হন।[]

তিনি সংবিধান পরিষদের সদস্য ছিলেন। শ্রমমন্ত্রী হিসেবে তিনি আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থায় (আই.এল.ও) একাধিকবার প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেন। তিনি ১৯৫৩-৫৪ সালে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার গভর্নিং বডির চেয়ারম্যান ছিলেন। এই সংস্থার উদ্যোগে এশিয়া ও ইউরোপে অনুষ্ঠিত একাধিক সম্মেলনের তিনি উদ্বোধন করেন।[]

তিনি ২৪ অক্টোবর ১৯৫১ থেকে ২৪ অক্টোবর ১৯৫৪ পর্যন্ত তৎকালীন পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভায় শ্রম, স্বাস্থ্য ও কর্ম মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।[]

২৪ অক্টোবর ১৯৫৪ থেকে ১১ আগস্ট ১৯৫৫ পর্যন্ত তিনি পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভায় শ্রম, স্বাস্থ্য ও বাণিজ্য মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।[]

১৯৬৯ সালের আগস্ট মাসে স্বাস্থ্য, শ্রম, পূর্ত ও সমাজকল্যাণ মন্ত্রী নিয়োগ করা হয়। ১৯৭১ সালের ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত তিনি এ পদে বহাল ছিলেন।[][]

১৪ জুলাই ১৯৭১ সালে তাকে ক্যাবিনেট মন্ত্রীর মর্যাদায় পাকিস্তানের তৎকালীন রাষ্ট্রপতি ইয়াহিয়ার ত্রাণ বিষয়ক বিশেষ সহকারী নিয়োগ করা হয়। এ সময় তিনি উদ্ভাস্তুদের জন্য ত্রাণ তত্ত্বাবধান, সমন্বয় ও পুনর্বাসনের দায়িত্ব পালন করেন।[][]

৩১ আগস্ট ১৯৭১ সালে পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নর নিযুক্ত হন এবং ৩ সেপ্টেম্বর ১৯৭১ সালে শপথ গ্রহণ করে ১৪ ডিসেম্বর ১৯৭১ সালে মিত্রবাহিনীর বিমান হামলায় গভর্নর হাউজ (বর্তমান বঙ্গভবন) আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ঐ দিন তিনি ও তার মন্ত্রিসভার সদস্যগণ পদত্যাগ করেন এবং আন্তর্জাতিক রেডক্রস কর্তৃক ঘোষিত ‘নো ওয়ার জোন’ হিসেবে হোটেল ইন্টার কন্টিনেন্টালে (বর্তমান ইন্টারকন্টিনেন্টাল ঢাকা) আশ্রয় গ্রহণ করেন।[][][][][১০]

স্বাধীনতার পর তাকে গ্রেফতার ও কারারুদ্ধ করা হয়।[]

মৃত্যু

সম্পাদনা

আব্দুল মোতালেব মালিক ১৯৭৭ সালে মৃত্যুবরণ করেন।[]

তথ্যসূত্র

সম্পাদনা
  1. Times, Special To The New York (৯ অক্টোবর ১৯৭১)। "AIRLIFT OF REFUGEES TO PAKISTAN URGED"nytimes.com। The New York Times। সংগ্রহের তারিখ ১৫ নভেম্বর ২০১৬ 
  2. "মালিক, এ.এম"বাংলাপিডিয়া। ৪ মার্চ ২০১৫। ৭ অক্টোবর ২০২৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৭ অক্টোবর ২০২৩ 
  3. আহমাদ ইশতিয়াক (২৪ ডিসেম্বর ২০২১)। "২৪ ডিসেম্বর ১৯৭১: সাবেক গভর্নর ডা. এ এম মালিকসহ মন্ত্রিসভার সদস্যরা আটক"ডেইলি স্টার। ৭ অক্টোবর ২০২৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৭ অক্টোবর ২০২৩ 
  4. "পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় মন্ত্রিপরিষদ ১৫ আগস্ট, ১৯৪৭ হতে ২০ ডিসেম্বর, ১৯৭১ পর্যন্ত"সংগ্রামের নোটবুক। ২৯ আগস্ট ২০২৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৭ অক্টোবর ২০২৩ 
  5. "এ এম মালিক ইয়াহিয়ার সহকারী নিযুক্ত"সংগ্রামের নোটবুক। ৭ অক্টোবর ২০২৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৭ অক্টোবর ২০২৩ 
  6. দৈনিক যুগান্তর, ২৫ ডিসেম্বর ১৯৭১
  7. দৈনিক ইত্তেফাক, ২৫ ডিসেম্বর ১৯৭১
  8. আনন্দবাজার পত্রিকা, ২৫ ডিসেম্বর ১৯৭১
  9. টাইমস অব ইন্ডিয়া, ২৫ ডিসেম্বর ১৯৭১
  10. জিডি বকশি (১৬ ডিসেম্বর ২০২২)। "পাকিস্তানিদের পরাজয় নির্ধারণ করে দেয় যে হামলা"দৈনিক প্রথম আলো। ৭ অক্টোবর ২০২৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৭ অক্টোবর ২০২৩