বলিয়া আকাশের চাঁদকে সাদর-সম্ভাষণে- আবাহন করে। বড় লোকে সত্য সত্যই হাতী ঘোড়া কিনিয়া দেয়, চাঁদ ধরিবার জন্য লোক লস্করের উপর হুকুম জারি করে;—শিশু ভবিষ্যতে চাঁদ হাতে পাইবার আশায় আশ্বস্ত হয়। এ সকলই অতি তুচ্ছ বিষয়; কিন্তু এই সকল তুচ্ছ বিষয় হইতেই শিশুর একটি প্রবল কুশিক্ষার আরম্ভ হয় এবং একটি প্রয়োজনীয় সুশিক্ষার অভাব জন্মে। সে প্রবৃত্তি দমন করিতে শিখে না; ইচ্ছামাত্রে বাঞ্ছিত বস্তু হাতের কাছে না পাইলে ধৈর্য্যধারণ করিতে পারে না। মাতামহের আদরে সিরাজের তরল হৃদয়ে এইরূপে অনেক কুশিক্ষার বীজ পতিত হইতে আরম্ভ করিল। বালক সিরাজদ্দৌলা প্রবৃত্তি-দমনের শিক্ষা পাইলেন না; বাল্যকাল হইতেই মনোবৃত্তির বেগ দুর্দ্দমনীয় হইয়া উঠিতে লাগিল।
এই বালক যে একদিন বাঙ্গালা, বিহার, উড়িষ্যার “মসনদে” উপবেশন করিবে, সে কথা লোকের কাছে বেশি দিন গোপন রহিল না। দাসদাসী এবং আত্মীয় বন্ধুদিগের শিষ্টাচারে এবং কথোপকথনে বালক সিরাজদ্দৌলাও বুঝলেন যে, তিনি একটি ক্ষুদ্র নবাব! শৈশব জীবনেই বিলাসের বীজ পতিত হইল; পার্শ্বচরেরা প্রাণপণ যত্নে তাহাকে অঙ্কুরিত ও ফলফুলে সুশোভিত করিয়া তুলিতে লাগিলেন।
রাজপ্রাসাদের আশে পাশে যাহাদের গতিবিধি, তাহারা একেবারে স্বার্থশূন্য নহে। কেহ পরের খরচে বাবুগিরি চালাইবার আশায়, কেহবা পরের ঘাড়ে সকল দোষ চাপাইয়া ডুব্ দিয়া জল খাইবার ভরসায়, রাজকুমারদিগের সহবাসে মিলিত হইতে আরম্ভ করে। আলিবর্দ্দীর ধর্ম্মজীবন এই শ্রেণীর লোকের নিকট চক্ষুঃশূল হইয়া উঠিয়াছিল। আলিবর্দ্দী কর্ত্তব্য-পরায়ণ;—কর্ত্তব্য পালনে ধর্ম্ম আছে, পুণ্য আছে,