বিষয়বস্তুতে চলুন

গাজি (যোদ্ধা)

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
(গাজী (যোদ্ধা) থেকে পুনর্নির্দেশিত)

গাজী ( غازي‎) শব্দটি আরবি ভাষা থেকে অনুসৃত যা মুলত নির্দেশ করে সে সকল বাক্তি যারা গাজয় (غزو: সামরিক অভিযান বা হামলায় ) অংশ গ্রহণ করেছিলেন । আক্ষরিক পরিভাষাটি প্রাথমিক ইসলামী সাহিত্যে মহানবী মুহাম্মাদের নেতৃত্বে সংগঠিত যুদ্ধযাত্রা বোঝাতে এবং পরবর্তীতে তুর্কি সামরিক বাহিনী তাদের রণজয় প্রকাশে শব্দটি ব্যবহার করেছিল []রাশিয়া এবং ককেশাস মুসলমান জনগণের মধ্যকার যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে , আঠেরো শতকের অন্তিমলগ্নে শেখ মনসুরের রাশিয়ার সম্রাজ্য বিস্তার যথাশীঘ্র দমনে , শব্দটি স্বভাবতই গাজাভাত রুপে প্রতিভাত হয় []। এই পরিভাষার অন্যান্য রূপভেদসমূহ সাম্প্রতিক কালে জিহাদি গোষ্ঠীগুল দ্বারা ব্যবহৃত হয়েছে ।

ইংরেজি ভাষা সাহিত্যে শব্দটি প্রায়শ razzia নামে আবির্ভূত হয় , যা ফ্রেঞ্চ ভাষার মাগরিবি এরাবিক উপভাষা থেকে গৃহীত হয় । আধুনিক তুরস্কে যুদ্ধাহত সৈনিকদের এবং আরতুগরুল , উসমান গাজী, মোস্তফা কামাল আতাতুর্ক,প্রমুখ বিজেতার উপাধি এটি প্রচলিত []

হামলাকারি গাজী- লুণ্ঠনকারী

[সম্পাদনা]

প্রাক ইসলামি বেদুঈন সংস্কৃতিতে , গায্বা ছিল দস্যুবৃত্তির অভিপ্রায়ে সীমিত পরিসরে যুদ্ধবিগ্রহ যাতে মুখোমুখি মোকাবিলার পরিবর্তে জবরদস্তি উপদ্রব এবং লুণ্ঠন করা হত , সাধারণত প্রানিসম্পদ( গবাদিপশুহরণ) ।উমায়াদ শাসনকালে বেদুঈন কবি আল কুতামি এই চরণটি বহুবার লিখেছেন " আমাদের বাণিজ্য হল প্রতিপক্ষ , আমাদের প্রতিবেশী , এবং আমাদের ভ্রাতার ওপর হামলা করা ফলশ্রুতিতে আমরা একজন ভাই ছাড়া কিছুই আক্রমণ করবার জন্নে পাইনা"[][]( আধা-প্রাতিষ্ঠানিক প্রানিসম্পদ হরণ কেবল বেদুঈনদের স্বকীয় বৈশিষ্ট্য ছিলনা ; সোভিয়েত নৃবিজ্ঞানীগণ কাজাক শব্দ বারিমতা অবলম্বনে ইউরাসিয়ান প্রান্তরের যাযাবর জাতির সদৃশ আচরণের বর্ণনা দিয়েছিলেন [],এবং তদ্রূপ পরিক্রমা আদি সামন্ততান্ত্রিক আয়ারল্যান্ডে সর্বত্র পরিব্যাপ্ত হয়েছিল ।)উইলিয়াম মন্তগমেরি ওয়াট অনুমান করেছিলেন যে এটাকে তার রণকৌশলের ভিতে পরিণত করে , মুহাম্মাদ নিরন্তর বিভীষিকাময় যুদ্ধবিগ্রহে প্রতিপক্ষকে বিমুখ করবার ফলপ্রদ উপায় বাতলেছিলেন;[] ওয়াটের মতানুসারে , যশস্বী বদরের যুদ্ধ লুণ্ঠন অভিযানের অন্যতম সূচনা করেছিল ।[] একটি যুদ্ধের শৈলী হিসেবে তৎকালীন ইবেরিয়ার খ্রিস্টান অধ্যুষিত দেশসমূহ তায়েফের দেশগুলর সঙ্গে সন্ধি করে ;[] রুঢ় বচন এবং তদৃশ আচরণ ছিল ইবেরিয়ান এবং এংল ফ্রেঞ্চ -অশ্বারোহীদের সহজাত ।[১০]

Razzia (লুণ্ঠনকারী )শব্দটি ফ্রেঞ্চ ঔপনিবেশিক সময়কালে সুনির্দিষ্টভাবে লুণ্ঠন এবং পশ্চিম আফ্রিকামধ্য আফ্রিকার ক্রীতদাসদের অপহরণ প্রসঙ্গে প্রচলিত ছিল , যা rezzou ( ধান ) নামেও অভিহিত হয়েছিল যখন এই কাজ Tuareg( তুয়ারেগ ) সম্প্রদায় করেছিল । শব্দটি আলজেরিয়ার আরবির স্বদেশী গাজিয়া থেকে গৃহীত এবং পরবর্তীতে যেকোন প্রকার লুঠতরাজ নির্দেশে এটি একটি গালভরা শব্দে পরিণত হয়েছিল যার ক্রিয়াপদ হল razzier (হরণ )।

ঐতিহাসিক ক্রমবিকাশ

[সম্পাদনা]

গাজী (আরবি: غازي ) একটি আরবি শব্দ , যার সক্রিয় কৃদন্ত পদের ক্রিয়া গাজা যার অর্থ ' সামরিক অভিযান বা আক্রমণ পরিচালনা করা ' এই অভিন্ন ক্রিয়াপদটির আরেকটি অর্থ হল ' কোন কিছুর জন্য লড়াই করা ' এবং একই ভাবে গাজী মুজাহিদের অর্থ বিনিময় করতে পারে যার অর্থ ' একজন যে সংগ্রাম করে' । গাজা শব্দের ভাব বিশেষণ হল গাঁজও অথবা গাজাওয়ান যার অর্থ 'অভিযান করা হয় '। গাজওয়া শব্দের উদ্ভূত একবচনে একটি অর্থ একক যুদ্ধ বা আক্রমণ । গাজী পরিভাষাটি সামানাইদ শাসনকাল অবধি প্রচলিত হয় , যেখানে সে খোরাসান এবং ট্রান্সোজিয়ানায় একজন বেতনভোগী সীমান্তযোদ্ধা রুপে আবির্ভূত হয় । পরবর্তীতে তাদের ২০,০০০ চাইতে বেশি গজনীর মাহমুদের ভারত অভিযানে অংশ নিয়েছিলেন ।

গাজী যোদ্ধারা তাদের জীবিকা নির্বাহের জন্য অপহরণ করত, এবং অনুকূল সময়ে তারা দস্যুবৃত্তি এবং রাষ্ট্রদ্রোহ প্রবণ হয়ে উঠতেন । হঠকারী, উগ্র , এবং সকল জাতের ধর্মীয় ও রাজনৈতিক বিদ্রোহীদের দমনে তারা তাদের নিগমগুলতে সংঘবদ্ধ করেছিল । এই সময়ে , যদিও তুর্কী সৈন্যসামন্ত ছিল প্রভাবশালী , তবে মামলুকদের স্থলাভিষিক্ত হবার পর , খলিফা ও আমির গণের এবং গাজী নিগমের বিভিন্নপদে , মামলুক অনুচর এবং প্রহরী সৈন্যদলে তুর্কী ক্রীতদাসেরা অন্তর্ভুক্ত ছিলেন, ফলশ্রুতিতে তাদের মধ্যে কিছু লোকজন অন্যান্য মুসলমান অধ্যুষিত রাষ্ট্রে নিজেরদের সামরিক এবং রাজনৈতিক প্রতাপ খাটাতে পারত।

তথ্যসূত্র

[সম্পাদনা]
  1. Aboul-Enein, Youssef H.; Zuhur, Sherifa (২০০৪)। Islamic Rulings on Warfare (ইংরেজি ভাষায়)। DIANE Publishing। আইএসবিএন 9781428910393 
  2. "The Background of Chechen Independence Movement II: The Sufi Resistance"users.jyu.fi। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-০৭-১৭ 
  3. "Şehit ve Gazi farkı nedir"Arasındaki Fark (তুর্কি ভাষায়)। ২০১৪-১১-১৯। ২০১৯-০৭-১৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-০৭-১৭ 
  4. Wheatley, Paul (২০০১)। The Places Where Men Pray Together: Cities in Islamic Lands, Seventh Through the Tenth Centuries (ইংরেজি ভাষায়)। University of Chicago Press। আইএসবিএন 9780226894287 
  5. Cameron, A. J. (১৯৭৩)। Abû Dharr Al-Ghifârî: An Examination of His Image in the Hagiography of Islam (ইংরেজি ভাষায়)। Royal Asiatic Society : [distributed] by Luzac। আইএসবিএন 9780718909628 
  6. Khazanov, Anatoly Michailovich; Gellner, Ernest (১৯৯৪)। Nomads and the Outside World (ইংরেজি ভাষায়)। University of Wisconsin Press। আইএসবিএন 9780299142841 
  7. Watt, William Montgomery; Cachia, Pierre; Cachia, Professor of Arabic Language and Literature Pierre (১৯৬৫)। A History of Islamic Spain (ইংরেজি ভাষায়)। Edinburgh University Press। আইএসবিএন 9780748608478 
  8. Lambton, Ann Katherine Swynford; Lewis, Bernard (১৯৭৭)। The Cambridge History of Islam: The central Islamic lands since 1918. Vol. 1B (ইংরেজি ভাষায়)। Cambridge University Press। আইএসবিএন 9780521291354 
  9. Nolan, Cathal J. (২০০৬)। The Age of Wars of Religion, 1000-1650: An Encyclopedia of Global Warfare and Civilization (ইংরেজি ভাষায়)। Greenwood Publishing Group। আইএসবিএন 9780313337345 
  10. Nolan, Cathal J. (২০০৬)। The Age of Wars of Religion, 1000-1650: An Encyclopedia of Global Warfare and Civilization (ইংরেজি ভাষায়)। Greenwood Publishing Group। আইএসবিএন 9780313337345