উত্তর কাট্টলী
উত্তর কাট্টলী বাংলাদেশের চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন ১০ নং উত্তর কাট্টলী ওয়ার্ডের অন্তর্গত একটি গ্রাম। এর পশ্চিম পাশে বঙ্গোপসাগর ও পূর্ব পাশে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবস্থিত।
শব্দতত্ত্ব
[সম্পাদনা]"কাট্টলী" এই নামটি নিয়ে মতান্তর দেখা যায়।
- শেখ মরহামত আলীর মতে, "কাতেব" অর্থাৎ লেখক নাম থেকে কাট্টলী নামের উৎপত্তি।
- মাওলানা তমিজুর রহমানের মতে, "কায়েদ টুলি" (বা শিক্ষিত পন্ডিত ব্যক্তিদের বাসস্থল) নামটি বিকৃত হয়ে কাট্টলী নামটি উদ্ভব হয়েছে।
- হেড মাস্টার মোহাম্মদ জামানের মতে, কায়স্থদের বাসভূমি হিসাবে কায়স্থলী থেকে কাট্টলী নামের উদ্ভব।[১]
ইতিহাস
[সম্পাদনা]কাজী নজরুল ইসলামের আগমন
[সম্পাদনা]বাংলাদেশের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম মুসলিম এডুকেশন সোসাইটির ৩০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে অংশ নিতে ১৯২৯ সালের ৬ জানুয়ারি দ্বিতীয়বারের মত চট্টগ্রাম ভ্রমণ করেন। এসময় তিনি তামাকুমন্ডি লেনের হাবিব উল্লাহ বাহার ও শামসুন নাহার এর বাড়িতে অবস্থান করেন। জনশ্রুতি আছে মুসলিম এডুকেশন সোসাইটির সাথে সমাজসেবক ও শিক্ষানুরাগী নজির আহমদ চৌধুরীর শখ্যতা ছিল। তিনি এবং কাজী নজরুল ইসলামের বন্ধু হাবিব উল্লাহ বাহারের ঘনিষ্ঠজন জয়নাল আবেদিন চৌধুরী নজরুল ইসলামকে উত্তর কাট্টলীতে আতিথ্য গ্রহনের আমন্ত্রন জানান। নজরুল ইসলাম উত্তর কাট্টলীর প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের কথা শুনে এই আমন্ত্রন গ্রহণ করেন এবং নাজির বাড়ির বাংলো ঘরে কিছুদিন অবস্থান করেন। এসময় নজরুল ইসলাম সকালে বিকেলে উত্তর কাট্টলী সংলগ্ন সমুদ্র সৈকতে বেড়াতে যেতেন, নৌকায় চড়তেন, জেলেদের মাছ ধরা পর্যবেক্ষণ করতেন। ঘোড়ায় চড়ে কুমিরা, পাহাড়তলী ও সীতাকুণ্ড অঞ্চলে গিয়েছিলেন। বিশেষত সীতাকুণ্ড অঞ্চলের বিভিন্ন পাহাড় তিনি ঘুরে দেখেছিলেন।
১৯২৯ সালের ১১ই জানুয়ারি কাট্টলী ইউনিয়ন ক্লাব গ্রামবাসীর পক্ষ থেকে নজরুল ইসলামে সংবর্ধনা জ্ঞাপন করে। জনশ্রুতি হল, নাজির বাড়ির সামনে কাট্টলী ইউনিয়ন ক্লাবের মাঠে অথবা মৌলানা তমিজুর রহমান বাড়ির সামনে খোলা বিলে এই সংবর্ধনা সভার আয়োজন করা হয়। এই সভায় "অগ্নি-কবি কাজী নজরুল ইসলামের খায়রে-মখদম উপলক্ষে" শিরোনামে মৌলানা তমিজুর রহমান কর্তৃক লিখিত ২৬ লাইনের একটি কবিতা মানপত্র আকারে প্রকাশিত হয়। সংবর্ধনা সভায় সভাপতিত্ব করেছিলেন কাট্টলী ইউনিয়ন ক্লাবের সভাপতি মৌলানা তমিজুর রহমান। তিনি উক্ত মানপত্রটি কবি নজরুল ইসলামকে পাঠ করে শোনান। মানপত্রের এক পর্যায়ে উল্লেখ ছিল, "আগমনীর নায্রানা দে, বিশ্ব-কবি নজরু গলে, গরীব দেশে আর কি আছে তোহফা দিতে চরণ তলে।" তোহফা ও চরণ শব্দ দুটি উচ্চারিত হবার পর নজরুল ইসলাম আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েন। তিনি তার প্রতিক্রিয়ায় বলেছিলেন,
যেখানে পুরো ভারত আমাকে কাফের বলছে সেখানে কায়েদ টুলির মানুষরা আমাকে সম্মান দিচ্ছেন, তোহ্ফা দিচ্ছেন।
— কাজী নজরুল ইসলাম
এ কথা বলে তিনি ইসলামি সঙ্গীত পরিবেশন শুরু করেন এবং বাংলায় মিলাদ পড়েন। শিক্ষা ও সভ্যতার উপর বক্তব্য রাখেন এবং গ্রামবাসীর উদ্দেশ্যে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির কথা বলে বক্তব্য শেষ করেন।[২]
ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলন
[সম্পাদনা]ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনে মাস্টারদা সূর্য সেন উত্তর কাট্টলী সংলগ্ন সমুদ্রতটকে অস্ত্রচালনা প্রশিক্ষণস্থল হিসেবে ব্যবহার করেছিলেন। ১৯৩২ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদারের নেতৃত্বে দ্বিতীয় পাহাড়তলী ইউরোপিয়ান ক্লাব আক্রমণের পরিকল্পনা, প্রশিক্ষণ ও যোদ্ধাদের আবাসন ব্যবস্থা এ গ্রামে করা হয়েছিল। পাহাড়তলী ইউরোপিয়ান ক্লাবে আক্রমণের পর প্রীতিলতা আত্নহত্যা করেছিলেন এবং উত্তর কাট্টলীর প্রফুল্ল দাস এই অভিযানে অংশ নেন।
উত্তর কাট্টলীর তালুকদার বাড়ি কমিউনিস্ট পার্টির কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছিল।[৩]
পাড়া/মহল্লা
[সম্পাদনা]- মুন্সিপাড়া
- বিশ্বাসপাড়া
- উত্তর পাড়া
- আচার্য্য পাড়া
- ধোপা পাড়া
- আগ্রাপাড়া
- খেজুরতলি
- চৌধুরী পাড়া
- আমানত উল্লাহ শাহ পাড়া
- নূর আহমদ সওদাগর বাড়ি
- নুর আলম মেম্বার বাড়ি
- সৈয়দ সওদাগর বাড়ি
- ইসমত উল্লাহ মিস্ত্রী বাড়ি
- তিনটি বাড়ির সমন্বয়ে মজুমদার পাড়া
- নাজির বাড়ি
- মুন্সি পাড়া/বাড়ি
- মৌলানা তমিজুর রহমান বাড়ি
- মোহররম আলী সওদাগর বাড়ি
- আজিম তালুকদার বাড়ি
- মোবারক আলী তালুকদার বাড়ি
- সেন বাড়ি
- আলী চাঁদ বাড়ি
- ঈশান বলীর বাড়ি
- মুকিম তালুকদার বাড়ি
- শায়ের মোহাম্মদ তালুকদার বাড়ি
- ছমিয়ত আলীর বাড়ি
- কুতুব বাড়ি
- মদিনুল্লাহ মিয়াজী বাড়ি
- মনু মিয়াজী বাড়ি
- হাজী নূরুজ্জামার বাড়ি
- আব্দুর রহমান সারেং বাড়ি
- মহব্বত আলীর বাড়ি
- জামান হেড মাস্টার বাড়ি
- চৌধুরী বাড়ি
- পাঁজার বাড়ি
- শান্তনীড় চৌধুরী বাড়ি
- নিজামত চৌকিদার বাড়ি
- বিশ্বাস পাড়া/বাড়ি
- আছদ আলী শাহ বাড়ি
- পন্ডিত বাড়ি
- মুরাদ বাড়ি
- ফতেহ মোহাম্মদ চৌধুরী বাড়ি
- মৌলভী আমানত উল্ল্যাহ সাহেবের বাড়ি
- সুলতান চেয়ারম্যান বাড়ি
- দারোগা বাড়ি
- জব্বার আলী বাড়ি
- ফতেহ মোহাম্মদ চৌধুরী নতুন বাড়ি
- মোশাররফ আলী সারেং বাড়ি
- মোখলেছ উদ্দিন সারেং বাড়ি
- আসাদ আলী টেন্ডল বাড়ি
- আশরাফ আলী টেন্ডল বাড়ি
- খলিল দফাদার বাড়ি
- সিরাজ উদ্দিন হাজীর বাড়ি
- আশরাফ আলী চৌধুরী বাড়ি
- আব্দুল মান্নান সওদাগর বাড়ি
- এহসান আলীর বাড়ি
- ইনাগাজীর বাড়ি
- আব্দুল হাকিম কন্ট্রাক্টর বাড়ি
- গোলার বাড়ি
- বশির মোহাম্মদ বাড়ি
- চাঁন্দ মিয়া ডাক্তার বাড়ি
- দত্ত বাড়ি
- মিত্র বাড়ি
- দে বাড়ি
- বণিক বাড়ি
- দাশ বাড়ি
- ঘোষ বাড়ি
- তালুকদার বাড়ি
- বিশ্বাস বাড়ি
- আচার্য্য পাড়া/বাড়ি
- জুরামনি অধিকারী ধোপীর বাড়ি
- হরিমোহন ধোপীর বাড়ি
- খাজুরতলী জেলে পাড়া/বাড়ি
শিক্ষা
[সম্পাদনা]প্রাথমিক বিদ্যালয়
[সম্পাদনা]- উত্তর কাট্টলী জয়তারা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়
- উত্তর কাট্টলী নুরুল হক চৌধুরী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়
- মুন্সিপাড়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়
- উত্তর কাট্টলী বিশ্বাসপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়
- উত্তর কাট্টলী হাজী দাউদ আহমদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়
- পেয়ারী মোহন রেজিস্টার্ড বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়
- হাজী দাউদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়
- মাধ্যমিক বিদ্যালয়
- ইসলামী সমাজ কল্যাণ পরিষদ উচ্চ বিদ্যালয়
- উত্তর কাট্টলী আলহাজ্ব মোস্তফা হাকিম উচ্চ বিদ্যালয়
- একাডেমী ল্যাবরেটরী স্কুল
- কাট্টলী নুরুল হক চৌধুরী উচ্চ বিদ্যালয়
- জামান-আনোয়ার ইনস্টিটিউট
- কাট্টলী আইডিয়াল স্কুল
- ইউনিয়ন পাবলিক স্কুল
- লুসেন্ট লায়ন টিউটরিয়াল স্কুল
- মহাবিদ্যালয়
- মাদ্রাসা
- কাট্টলী জাকেরুল উলুম ফাজিল মাদ্রাসা
- মইনুদ্দিন শাহ মাদ্রাসা ও এতিমখানা
- তাজবীদুল কুরআন আইডিয়াল মাদ্রাসা
- তাহেরিয়া হাফিজিয়া মাদ্রাসা
রাজনীতি
[সম্পাদনা]এই অনুচ্ছেদটি খালি। আপনি এখানে যোগ করে সাহায্য করতে পারেন। |
অর্থনীতি
[সম্পাদনা]এই অনুচ্ছেদটি খালি। আপনি এখানে যোগ করে সাহায্য করতে পারেন। |
সামাজিক সংগঠনসমূহ
[সম্পাদনা]- কাট্টলী ইয়ুথ কাউন্সিল[৪]
- কাট্টলী ফ্রেন্ডস সোসাইটি
- তরুনদের জয়গান
দর্শনীয় স্থান
[সম্পাদনা]- সমুদ্র সৈকত
- বাবুল দত্ত বাড়ি
উল্লেখযোগ্য ব্যক্তিত্ব
[সম্পাদনা]- জহুর আহমদ চৌধুরী –– রাজনীতিবিদ, সাবেক শ্রম, সমাজকল্যান, স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা মন্ত্রী। [৫]
- আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী –– রাজনীতিবিদ, সাবেক বাণিজ্য মন্ত্রী। [৬]
- মাহমুদুন্নবী চৌধুরী — ব্যবসায়ী, রাজনীতিবিদ, সাবেক গণ-যোগাযোগ, ত্রাণ ও পুনর্বাসন মন্ত্রী। [৭]
- মোহাম্মদ মনজুর আলম –– রাজনীতিবিদ, সাবেক চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন মেয়র। [৮]
- খোরশেদ আলম সুজন — রাজনীতিবিদ, চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন প্রশাসক। [৯]
- ইরফান রনি — অভিনেতা। [১০]
তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ ক খ বই উদ্ধৃতি; বইয়ের নাম:আমরা তোমাদের ভুলবো না। লেখক:অ্যাডভোকেট নাজিম উদ্দিন চৌধুরী
- ↑ "চট্টগ্রামে কাজী নজরুল"। দৈনিক পূর্বকোণ। সংগ্রহের তারিখ ৬ আগস্ট ২০২৪।
- ↑ গণমানুষের নেতা, জহুর আহমদ চৌধুরী (এপ্রিল ২০১৩)। গণমানুষের নেতা জহুর আহমদ চৌধুরী। কদম মোবারক এতিমখানা মার্কেট (২য় তলা), ৪০ মোমিন রোড, চট্টগ্রাম: বেহেনা চৌধুরী, প্রজ্ঞালোক প্রকাশনী। পৃষ্ঠা ৩৩, ৩৪। আইএসবিএন 98460220016
|আইএসবিএন=
এর মান পরীক্ষা করুন: length (সাহায্য)। - ↑ Sangbad, Ctg। "চট্টগ্রামে শিশুদের যৌন হয়রানির বিরুদ্ধে সচেতনতা গড়ে তুলছে কাট্টলী ইয়ুথ কাউন্সিল"। CTG Sangbad। সংগ্রহের তারিখ ২০ মে ২০২০।
- ↑ "৩ জানুয়ারী ১৯৭২ঃ জহুর আহমেদ চৌধুরী"। সংগ্রামের নোটবুক (ইংরেজি ভাষায়)। ৪ জানুয়ারি ২০২০। সংগ্রহের তারিখ ১১ আগস্ট ২০২০।
- ↑ "ভারতকে ট্রানজিট দেওয়া চলবে না-আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী"। banglanews24.com। সংগ্রহের তারিখ ১১ আগস্ট ২০২০।
- ↑ "চৌধুরী, মাহমুদুন্নবী"। bn.banglapedia.org। সংগ্রহের তারিখ ১১ আগস্ট ২০২০।
- ↑ "চট্টগ্রামের নতুন মেয়র মঞ্জুর আলম"। বিবিসি বাংলা। ২৪ জুন ২০১০। সংগ্রহের তারিখ ১১ আগস্ট ২০২০।
- ↑ "চসিক প্রশাসক হলেন খোরশেদ আলম সুজন"। চসিক প্রশাসক হলেন খোরশেদ আলম সুজন (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ১১ আগস্ট ২০২০।
- ↑ ডেস্ক, বিনোদন (২০২৪-০৫-২২)। "' বাবা আমাদের ভাইবোনকে ডেকে নিয়ে অনুষ্ঠান দেখাতে বসাতেন'"। Prothomalo। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-০৬-২৬।