বাংলা কাঠঠোকরা
বাংলা কাঠঠোকরা Dinopium benghalense | |
---|---|
বাংলা কাঠঠোকরা (Dinopium benghalense), হায়দ্রাবাদ, ভারত | |
বৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস | |
জগৎ: | Animalia |
পর্ব: | কর্ডাটা |
শ্রেণী: | পক্ষী |
বর্গ: | Piciformes |
পরিবার: | Picidae |
গণ: | Dinopium |
প্রজাতি: | D. benghalense |
দ্বিপদী নাম | |
Dinopium benghalense (Linnaeus, 1758) | |
উপপ্রজাতি | |
| |
প্রতিশব্দ | |
|
বাংলা কাঠঠোকরা (বৈজ্ঞানিক নাম: Dinopium benghalense) বা কােলােকামর কাঠঠোকরা হলোPicidae (পিসিডি) গোত্র বা পরিবারের অন্তর্গত Dinopium (ডাইনোপিয়াম) গণের অন্তর্ভুক্ত এক প্রজাতির অতি পরিচিত পাখি ।[২][৩] পাখিটি বাংলাদেশ, ভারত ছাড়াও দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন দেশে দেখা যায়। বাংলা কাঠঠোকরার বৈজ্ঞানিক নামের অর্থ বাংলার বলীয়ান (গ্রিক: denios = শক্তিমান, opos = চেহারা; লাতিন: benghalense = বাংলার)।[৩] সারা পৃথিবীতে এক সীমিত এলাকা জুড়ে এরা বিস্তৃত, প্রায় ৩০ লক্ষ ১০ হাজার বর্গ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে এদের আবাস।[৪] বিগত কয়েক দশক ধরে এদের সংখ্যা অপরিবর্তিত রয়েছে, আশঙ্কাজনক পর্যায়ে যেয়ে পৌঁছেনি। সেকারণে আই. ইউ. সি. এন. এই প্রজাতিটিকে ন্যূনতম বিপদগ্রস্ত বলে ঘোষণা করেছে।[১] বাংলাদেশের বন্যপ্রাণী আইনে এ প্রজাতিটি সংরক্ষিত।[৩]
শহুরে এলাকায় বসবাস করে এমন অল্পসংখ্যক কাঠঠোকরার মধ্যে বাংলা কাঠঠোকরা একটি। তীক্ষ্ণ করকরে ডাক আর ঢেউয়ের মত উড্ডয়ন প্রক্রিয়া এ প্রজাতিটির বিশেষ বৈশিষ্ট্য। ডাইনোপিয়াম গণের সদস্যদের মধ্যে একমাত্র এরই গলা ও কোমর কালো। [৫]
বিবরণ
বাংলা কাঠঠোকরা দৈর্ঘ্যে বেশ বড়সড়; প্রায় ২৬–২৯ সেমি। ওজন ১০০ গ্রাম, ডানা ১৪.২ সেমি, ঠোঁট ৩.৭ সেমি, পা ২.৫ সেমি ও লেজ ৯ সেমি।[৩]
এরা আকৃতিতে অন্যসব সাধারণ কাঠঠোকরার মতোই, কেবল ডানা-ঢাকনি উজ্জ্বল হলদে-সোনালি। কোমর বড় কাঠঠোকরার মতো লাল নয়, কালো। দেহতল সাদা ও তাতে কালো আঁশের মত দাগ থাকে। গলা ও থুতনি কালো এবং তাতে অস্পষ্ট সাদা ডোরা দেখা যায় যা দেখে একই অঞ্চলের পাতি কাঠঠোকরা থেকে এদের আলাদা করা যায়। ঘাড় সাদা ও পাশে কালো দাগ থাকে। বড় কাঠঠোকরার মতো এর মুখে গোঁফের মতো লম্বা দাগ থাকে না।[৫][৬] তবে বুকে আঁশের মতো দাগ মোটা ও কালো। চোখে কালো ডোরা থাকে। ডানার গোড়া ও মধ্য পালক-ঢাকনিতে দুই সারি সাদা বা ফিকে ফুটকি স্পষ্ট। পিঠ ও ডানার অবশেষ সোনালি। চোখ লালচে বাদামি ও চোখের চারিদিকের রিং সবুজ। পা ও পায়ের পাতা ধূসরাভ সবুজ। ঠোঁটের রঙ শিং-রঙা ও কালোর মিশ্রণ।[৩]
পুরুষ ও স্ত্রীপাখির চেহারার পার্থক্য তাদের চাঁদি ও ঝুঁটির রঙে। পুরুষ কাঠঠোকরার চাঁদি ও ঝুঁটি টকটকে লাল। স্ত্রী কাঠঠোকরার ঝুঁটি লাল কিন্তু চাঁদি কালো ও সাদা ফুটকিযুক্ত। অপ্রাপ্তবয়স্ক পাখির দেহ অনুজ্জ্বল, বাকি সব স্ত্রী পাখির মতো। তবে স্ত্রী পাখির মতো চাঁদির কালো অংশ থাকে না।[৩][৫]
অন্যান্য কাঠঠোকরার মতো বাংলা কাঠঠোকরার ঠোঁট মজবুত ও চোখা। লেজও খাটো, দৃঢ় ও গাছের ডালে ঠেস দিয়ে রাখার উপযোগী। পা জাইগোডেক্টাইল, অর্থাৎ দু'টি আঙ্গুল সম্মুখমুখী ও দু'টি পশ্চাৎমুখী। এর জিভ লম্বা ও গর্ত থেকে পোকামাকড় টেনে বের করার উপযোগী।[৭]
এ পাখির শ্বেতপ্রকরণ রয়েছে বলে রেকর্ড করা হয়েছে।[৮] ওয়েস্টার্ন ঘাটসে প্রাপ্ত দু'টি পুরুষ নমুনার থুতনিতে লাল ছোপ দেখা গেছে। লক্ষ্ণৌতে একটি স্ত্রী কাঠঠোকরার নমুনা পাওয়া গেছে যার ঠোঁটের মাথা মোহনচূড়ার মত বাঁকা।[৯]
উপপ্রজাতি
পাকিস্তান ও উত্তরপশ্চিম ভারতের উপপ্রজাতি dilutum দেহতল ফ্যাকাসে হলুদ রঙের। এর ঝুঁটি বেশ লম্বা ও গাঙ্গেয় সমভূমির মনোনিত উপপ্রজাতির তুলনায় এর দেহতল বেশি সাদাটে। দেহের উপরিভাগে ছিটের পরিমাণ কম। বয়স্ক অ্যাকাশিয়া বা শিশু গাছে বাসা বানাতে এরা বেশি পছন্দ করে। মনোনিত উপপ্রজাতিকে প্রায় সমগ্র উত্তর ভারত, বাংলাদেশ ও মায়ানমার জুড়ে দেখা যায়। নিম্ন সমভূমি থেকে এক হাজার মিটার উঁচুতেও এদের দেখা মেলে। দক্ষিণ ভারতের puncticolle উপপ্রজাতির কালো থুতনিতে চারকোণা সাদা সাদা দাগ থাকে। এছাড়া এর দেহের উপরিভাগ উজ্জ্বল হলদে-সোনালি। ওয়েস্টার্ন ঘাটসে প্রাপ্ত আরেকটি উপপ্রজাতি tehminae-এর (অনেকসময় পূর্ণাঙ্গ প্রজাতি হিসেবে পরিগণিত; প্রখ্যাত পক্ষীবিদ সালিম আলীর স্ত্রী তাহমিনার স্মরণে) উপরিভাগে জলপাই রঙের আধিক্য রয়েছে। এর কালো থুতনিতে সাদা ছোপগুলো স্পষ্ট এবং ডানা-ঢাকনির সাদা দাগগুলো অস্পষ্টভাবে পরস্পরের সাথে যুক্ত। শ্রীলঙ্কার দক্ষিণে প্রাপ্ত উপপ্রজাতি D. b. psarodes-এর পিঠ ও ডানা লালচে এবং দেহের কালো ভাগগুলো বেশ ঘন ও বিস্তৃত।
তথ্যসূত্র
- ↑ ক খ "Dinopium benghalense"। The IUCN Red List of Threatened Species। ১১ নভেম্বর ২০১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৫ অক্টোবর ২০১৩।
- ↑ রেজা খান (২০০৮)। বাংলাদেশের পাখি। ঢাকা: বাংলা একাডেমী। পৃষ্ঠা ১২২। আইএসবিএন 9840746901।
- ↑ ক খ গ ঘ ঙ চ জিয়া উদ্দিন আহমেদ (সম্পা.) (২০০৯)। বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষ: পাখি, খণ্ড: ২৬। ঢাকা: বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি। পৃষ্ঠা ৫১–২।
- ↑ "Black-rumped Flameback, Dinopium benghalense"। BirdLife International। ২০১৬-০৩-০৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৩-০৯-১৮।
- ↑ ক খ গ Rasmussen, PC & JC Anderton (২০০৫)। Birds of South Asia: The Ripley Guide. Volume 2। Smithsonian Institution and Lynx Edicions। পৃষ্ঠা 289।
- ↑ Blanford, WT (১৮৯৫)। The Fauna of British India, Including Ceylon and Burma. Birds. Volume 3। Taylor and Francis, London। পৃষ্ঠা 58–60।
- ↑ Whistler, Hugh (১৯৪৯)। Popular handbook of Indian birds (4 সংস্করণ)। Gurney and Jackson, London। পৃষ্ঠা 285–287। আইএসবিএন 1-4067-4576-6।
- ↑ Khacher,Lavkumar (১৯৮৯)। "An interesting colour phase of the Lesser Goldenbacked Woodpecker (Dinopium benghalense)"। J. Bombay Nat. Hist. Soc.। 86 (1): 97।
- ↑ Goodwin, Derek (১৯৭৩)। "Notes on woodpeckers (Picidae)"। Bulletin of the British Museum (Natural History)। 17 (1): 1–44।
বহিঃসংযোগ
- আলোকচিত্র ও ভিডিও ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ৬ অক্টোবর ২০১০ তারিখে