এম এম হাফিজ মেমোরিয়াল পাবলিক লাইব্রেরি
দেশ | বাংলাদেশ |
---|---|
ধরন | স্বায়ত্তশাসিত বেসরকারি গণগ্রন্থাগার |
প্রতিষ্ঠিত | ১৯৫০ |
অবস্থান | প্রধান সড়ক, মাদারিপুর ৭৯০০ |
স্থানাঙ্ক | ২৩°১০′২০″ উত্তর ৯০°১২′২৯″ পূর্ব / ২৩.১৭২২৫৪৩° উত্তর ৯০.২০৮১৫০৯° পূর্ব |
সংগ্রহ | |
সংগৃহীত আইটেম | বই, সংবাদপত্র, সাহিত্য পত্রিকা, ম্যাগাজিন, জার্নাল |
আকার | ১৫,০০০ বই |
প্রবেশাধিকার ও ব্যবহার | |
প্রবেশাধিকার | পাঠকক্ষ - উন্মুক্ত (বিনামূল্যে)। বই প্রপ্তি - সাধারণ ও আজীবন সদস্য |
জনসংখ্যা পরিসেবা | মাদারীপুর জেলা |
সদস্য | ২৬০ |
অন্যান্য তথ্য | |
পরিচালক | নির্বাচিত কার্যনির্বাহী পরিষদ |
কর্মচারী | ৪ জন |
অধিভুক্তি | সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয় জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্র কেন্দ্রীয় গণগ্রন্থাগার সমাজসেবা অধিদফতর |
ওয়েবসাইট | দাপ্তরিক ওয়েবসাইট |
মানচিত্র | |
এম এম হাফিজ মেমোরিয়াল পাবলিক লাইব্রেরি বাংলাদেশের অন্যতম প্রাচীন গণগ্রন্থাগার। এই গ্রন্থাগারের আদি নাম ছিলো মাদারিপুর পাবলিক লাইব্রেরি। মাদারিপুর শহরের প্রানকেন্দ্রে অবস্থিত এই গ্রন্থাগারটি ১৯৫০ খ্রিষ্টাব্দে প্রতিষ্ঠিত হয়।[১] ১৯৬৮ খ্রিষ্টাব্দে গঠনতন্ত্র সংশোধনীর মাধ্যমে এর নামকরণ হয় এম এম হাফিজ মেমোরিয়াল পাবলিক লাইব্রেরি।[২] গ্রন্থাগারটি সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের নিয়ন্ত্রণে জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্র ও কেন্দ্রীয় গণগ্রন্থাগার এবং সমাজসেবা অধিদফতর এর অধিভুক্ত। গ্রন্থাগারটি সর্ব-সাধারণে জন্য উন্মুক্ত।
পটভূমি
মাদারিপুর টাউন ক্লাবে ১৯৫০ খ্রিষ্টাব্দে মাদারিপুর পাবলিক লাইব্রেরি মাদারিপুর শহরের কেন্দ্রীয় অবস্থানে প্রতিষ্ঠিত হয়।[১] প্রতিষ্ঠার পর গ্রন্থাগারটি মাদারিপুরের সামাজিক ও সাহিত্য সমাবেশের কেন্দ্রে পরিণত হয়। গ্রন্থাগারটিতে একটি মিলনায়তন বা হল রুম ছিল, যা তৎকালীন মাদারিপুরের সাহিত্য, সংস্কৃতি ও বিনোদনের প্রানকেন্দ্র ছিল।
১৯৬৭ খ্রিষ্টাব্দে এম এম হাফিজ তৎকালীন মাদারিপুরের মহকুমা প্রশাসক ছিলেন, যিনি সে সময় সংঘটিত প্রলয়ঙ্কারী ঘুর্ণিঝড়ে বিপর্যস্ত ও বিধ্বস্ত এলাকায় ত্রাণ বিতরণকালে গুরুতর আহত হয়ে পরে মৃত্যুবরণ করেন।[৩] তার স্মৃতি স্মরণে লাইব্রেরিটির নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় এম এম হাফিজ মেমোরিয়াল পাবলিক লাইব্রেরি।[১] ১৯৬৯ খ্রিষ্টাব্দের ২১ জুন গ্রন্থাগারের নবনির্মিত ভবনের উদ্বোধন করেন এম এম হাফিজের পিতা জনাব হাফিজুল ইসলাম চৌধুরী।[৩]
২০১২ খ্রিষ্টাব্দে জেলা সরকারি গণগ্রন্থাগারের ভবন নির্মানের পূর্ব পর্যন্ত এই গ্রন্থাগারের একটি কক্ষে ১৯৬৫ খ্রিষ্টাব্দ থেকে সরকারি গণগ্রন্থাগারের কার্যক্রম পরিচালিত হত।[৪] মাদারিপুর মুক্তিযোদ্ধা মিলনায়তন এবং ২০১৭ খ্রিষ্টাব্দে মাদারীপুর জেলা শিল্পকলা একাডেমির নতুন ভবন নির্মানের পূর্ব পর্যন্ত মঞ্চ নাটক সহ সকল ধরনের সাংকৃতিক কর্মকান্ড এই গ্রন্থাগারের মিলনায়তনেই অনুষ্ঠিত হত।[৫][৬] বর্তমানে বিভিন্ন সরকারি, বেসরকারি কর্মসূচী এই গ্রন্থাগার মিলনায়তনে আয়োজন করা হয়।[৭][৮][৯][১০][১১][১২]
পরিচালনা
এই গ্রন্থাগার পরিচালনা করে একটি নির্বাচিত কার্যনির্বাহী পরিষদ। বর্তমানে এখানে আছে ১৯ সদস্য বিশিষ্ঠ কেন্দ্রীয় কমিটি। জেলা প্রশাসক পদাধিকার বলে এই কমিটির সভাপতি। কমিটির অন্যান্য সবাই সাধারণ ও আজীবন সদস্যগণের প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচিত হন। কমিটির সাধারণ সম্পাদক হলেন এই গ্রন্থাগারের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা। ১৯৭৯ খ্রিষ্টাব্দে এটিএম কামালুজ্জামান সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন যিনি ২০১২ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত আমৃত্য এ পদে আসীন ছিলেন।[২] একমাত্র তিনিই দীর্ঘ সময় অর্থাৎ একটানা ৩৪ বছর এই দায়িত্ব পালন করেছেন এবং তাকেই এই গ্রন্থাগারের সফল সাধারণ সম্পাদক বলা হয়ে থাকে। তার প্রচেষ্টাতেই গ্রন্থাগারটি পূর্ণাঙ্গ রূপ পায়। পরবর্তীতে সাংবাদিক শাহজাহান খান সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছেন[১৩][১১] এবং ২০১৬ খ্রিস্টাব্দে পরিষদের মেয়াদ শেষ হলে তিনি বৈধতা হারান ও অব্যবস্থাপনা দেখা দেয়। ২০২১ খ্রিস্টাব্দ থেকে প্রকৌশলী লিখন মাহমুদ তূর্য সমন্বয়ক হিসেবে কার্যক্রম পরিচালনা করছেন।
কার্যক্রম
গ্রন্থাগারটিতে নিয়োমিত পাঠ কার্যক্রমের পাশাপাশি সৃজনশীল প্রকাশনাকে উৎসাহিত করা, পাঠক সৃষ্টি করা, জনসাধারনের মধ্যে পাঠ সচেতনতা সৃষ্টি করা এবং বিভিন্ন সাংস্কৃতিক কর্মকান্ড পরিচালনা ও প্রতিযোগীতার আয়োজন করে থাকে। বিভিন্ন কর্মসূচী বাস্তবায়নের জন্য এই গ্রন্থাগার অধিভুক্ত কিছু সহ-প্রতিষ্ঠান রয়েছে। সঙ্গীত চর্চা ও পরিবেশনার জন্য রয়েছে নন্দন, কবিতা আবৃতি প্রশিক্ষনের জন্য ভাস্বর, মননশীল গল্প প্রতিযোগীতায় রয়েছে সুনীল সাহিত্য পুরস্কার।[১৪] এছাড়া জাতীয় ভিত্তিক প্রতিষ্ঠান বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের মাদারিপুর জেলা শাখা ১৯৮৯ খ্রিষ্টাব্দ থেকে এই গ্রন্থাগারে পরিচালিত হয়।[১১][১৫]
সংগ্রহ
গ্রন্থাগারের শতকরা ৫০ ভাগ বই দুষ্প্রাপ্য ও দুর্লভ। গ্রন্থাগারের বয়স ৭৫ বছর হলেও এখানে ২০০ বছরের পুরনো বইও আছে। এই গ্রন্থাগারে সর্বমোট ১৫,০০০ বই রয়েছে, এর মধ্যে দূর্লভ ও ঐতিহাসিক মূল্যমানের প্রায় ৫,৭৫০ বই রয়েছে। বইগুলোর বেশিরভাগের ভাষা বাংলা কিংবা ইংরেজি, তবে হিন্দি, উর্দু, আরবি ও ফারসি ভাষারও কিছু বই রয়েছে। এখানে পাঠকক্ষে বসে বই পড়া যায়, আজীবন সদস্য অথবা সাধারণ (বার্ষিক) সদস্য হয়ে বই নেয়াও যায়।
দেশের বেশির ভাগ দৈনিক পত্রিকা ও সাময়িকীর কপি এখানকার সংগ্রহে রয়েছে। দৈনিকের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল- ইত্তেফাক, জনকন্ঠ, যুগান্তর, প্রথম আলো, সমকাল, ভোরের কাগজ, কালের কন্ঠ, বাংলাদেশ প্রতিদিন, মানবজমিন, যায়যায়দিন, দ্য ডেইলি স্টার ইত্যাদি। এছাড়া সাপ্তাহিক চাকুরীর খবর, রোববার, সাপ্তাহিক ২০০০, সাপ্তাহিক, ক্রীড়ালোক, ক্রীড়া জগৎ, অনন্যা, দেশ, সানন্দা, নবারুণ, শিশু, বই, ঊষা, কথন, সন্দীপন, উত্তরাধিকার, সরগম, নিউজ লেটার, কালি ও কলম, কম্পিউটার জগৎ সাময়িকী উল্লেখযোগ্য। এখানে অনেক পুরাতন বাঁধাইকৃত পত্রিকাও পাওয়া যায়। অনুমতি সাপেক্ষে সেগুলো দেখা ও ফটোকপি করা যায়।
সময়সূচি
গ্রন্থাগারটি শুক্রবার ও সরকারি ছুটির দিন বাদে প্রতিদিনই খোলা থাকে।
সাধারণ পাঠকক্ষের সময়সূচি: শনিবার থেকে বৃহস্পতিবার বিকাল ৫:০০ টা থেকে রাত ৮:০০ টা পর্যন্ত।
তবে যে কোনো কার্যক্রম বা অনুষ্ঠান থাকলে সকাল ৯:০০ টা থেকে রাত ৮:০০ টা পর্যন্ত খোলা থাকে।
আরও দেখুন
- বাংলাদেশে গ্রন্থাগারের তালিকা
- জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্র
- বাংলাদেশ জাতীয় গ্রন্থাগার
- কেন্দ্রীয় গণগ্রন্থাগার
তথ্যসূত্র
- ↑ ক খ গ লিখন মাহমুদ (২০১২-১২-১০)। মাদারিপুর ইতিবৃত্ত। বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র মাদারিপুর। পৃষ্ঠা ২১। আইএসবিএন 978-984-35-3208-4।
- ↑ ক খ মাসুদ সুমন (২০১৪)। "স্মরণ"। কথন (সংখ্যা ২, বর্ষ ২)। পৃষ্ঠা ৬,৭।
- ↑ ক খ "যার নামে এম এম হাফিজ মেমোরিয়াল পাবলিক লাইব্রেরি"। আদর্শ লিখন। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-০৪-০৫।
- ↑ "এক নজরে জেলা সর গণগ্রন্থাগার, মাদারীপুর" (পিডিএফ)। গণগ্রন্থাগার অধিদপ্তর। ২০২৪-০৪-০১। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-০৪-০৫।
- ↑ "মাদারীপুরে নজরুল সংগীত সম্মেলন অনুষ্ঠিত"। কালের কণ্ঠ। ২০১৫-০৬-০৬। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-০৪-০৫।
- ↑ "সন্তানদের মানুষ না করতে পারলে জঙ্গিবাদীরা সুযোগ নেবে"। এনটিভি। ২০১৭-০১-২৮। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-০৪-০৫।
- ↑ "নানা কর্মসূচিতে জাতীয় নিরাপদ খাদ্য দিবস পালিত"। ইত্তেফাক। ২০১৯-০২-০৩। পৃষ্ঠা ৬। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-০৪-০৫।
- ↑ "Iftar, Doa Mahfil held in Madaripur" [মাদারীপুরে ইফতার, দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত]। দ্য ডেইলি অবজার্ভার (ইংরেজি ভাষায়)। ২০২২-০৪-২৬। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-০৪-০৫।
- ↑ "মাদারীপুরে ৪ দিনব্যাপী আয়কর মেলা শুরু"। বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম। ২০১৪-০৯-১৬। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-০৪-০৫।
- ↑ প্রতিবেদক, নিজস্ব (২০১৩-০৯-২৪)। "দেশের কাজ করতে হবে"। দৈনিক প্রথম আলো। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-০৪-০৫।
- ↑ ক খ গ "স্বাধীনতা দিবস: মাদারীপুরে ভ্রাম্যমাণ বইমেলা শুরু"। বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম। ২০১৯-০৩-২৬। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-০৪-০৫।
- ↑ "কবিতা উৎসব"। দৈনিক জনকণ্ঠ। ২০২২-০৫-১৪। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-০৪-০৫।
- ↑ "হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি" (পিডিএফ)। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-০৪-০৫।
- ↑ "কবি মফিজুল ইসলামের জন্মবার্ষিকী আজ"। জাগো নিউজ। ২০২৪-০১-১৫। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-০৪-০৫।
- ↑ "বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র মাদারিপুর এবং আমি"। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-০৪-০৫।