বিষয়বস্তুতে চলুন

জামিয়া ইসলামিয়া ওবাইদিয়া নানুপুর

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে

এটি এই পাতার একটি পুরনো সংস্করণ, যা Owais Al Qarni (আলোচনা | অবদান) কর্তৃক ১৯:৪৫, ২০ মে ২০২৪ তারিখে সম্পাদিত হয়েছিল। উপস্থিত ঠিকানাটি (ইউআরএল) এই সংস্করণের একটি স্থায়ী লিঙ্ক, যা বর্তমান সংস্করণ থেকে ব্যাপকভাবে ভিন্ন হতে পারে।

জামিয়া ইসলামিয়া ওবাইদিয়া নানুপুর (আরবি বিশ্ববিদ্যালয়)
الجامعة الاسلامية العبيدية النانوفور
উত্তর দিক হতে নানুপুর মাদ্রাসা
প্রাক্তন নাম
ওবাইদিয়া হাফেজুল উলুম
নীতিবাক্যاقْرَأْ بِاسْمِ رَبِّكَ
পড় তোমার প্রভুর নামে
ধরনকওমি মাদ্রাসা
স্থাপিত১৯৫৮ ইং
১৩৭৯ হিজরি
অধিভুক্তিবেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশ
ধর্মীয় অধিভুক্তি
দেওবন্দি
বাজেট২০,০০,০০,০০০ (১৯-২০)
আচার্যসালাহ উদ্দিন নানুপুরী[]
শিক্ষায়তনিক ব্যক্তিবর্গ
১৩৫ (২০২০)
প্রশাসনিক ব্যক্তিবর্গ
২০
শিক্ষার্থী৯০০০ (২০২১)
অবস্থান
শিক্ষাঙ্গনপল্লী অঞ্চল
ওয়েবসাইটjionanupur.com
মানচিত্র

জামিয়া ইসলামিয়া ওবাইদিয়া নানুপুর (অডিও ফাইল "Bn-আল জামিয়া আল ইসলামিয়া ওবাইদিয়া নানুপুর.flac" খুঁজে পাওয়া যায়নি ইংরেজি: Jamia Islamia Obaidia Nanupur আরবি: الجامعة الاسلامية العبيدية النانوفور) সংক্ষেপে নানুপুর মাদ্রাসা চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি উপজেলার নানুপুরে অবস্থিত একটি কওমি মাদ্রাসা। এই প্রতিষ্ঠানটি দারুল উলূম দেওবন্দের মূলনীতিকে ভিত্তি করে পরিচালিত হয় এবং বাংলাদেশের কওমী মাদ্রাসা সমূহের মধ্যে এটিই সর্বপ্রথম অনলাইনে ভর্তি কার্যক্রম চালু করেছিল[] সুলতান আহমদ নানুপুরী ১৯৫৮ খ্রিষ্টাব্দে (৬৪ বছর পূর্বে) এটি প্রতিষ্ঠা করেন।[]

ইতিহাস

প্রেক্ষাপট

ইসলামি শিক্ষার প্রসারের লক্ষ্যে বিংশ শতাব্দীর প্রথমভাগে ওবাইদুল হক তার নিজ গ্রাম নানুপুরের কালু মুন্সিরহাটে মাদ্রাসায়ে হেমায়াতুল ইসলাম নামে একটি কওমি মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করেন। এই মাদ্রাসায় পর্যায়ক্রমে কওমি মাদ্রাসার জামাতে চাহারুম পর্যন্ত চালু হয়। এরপরে ছাত্ররা উচ্চশিক্ষা লাভের উদ্দেশ্যে দারুল উলুম দেওবন্দ, দারুল উলুম হাটহাজারী অথবা অন্য কোনো প্রতিষ্ঠানে গমন করতেন। তবে ওবাইদুল হকের মৃত্যুর পর মাদ্রাসার কার্যক্রমে ক্রমান্বয়ে ভাটা চলে আসে এবং এক পর্যায়ে বন্ধ হয়ে যায়। এই মাদ্রাসার অন্যতম ছাত্র ছিলেন আমির উদ্দিন, যিনি এই মাদ্রাসায় পড়াশোনা সমাপ্ত করে দারুল উলুম দেওবন্দে চলে যান।

প্রতিষ্ঠা

মাদ্রাসার শাহী গেইট

আমির উদ্দিন দারুল উলুম দেওবন্দে পড়ালেখা সমাপ্ত করে দেশে প্রত্যাবর্তনের সময় তার শিক্ষক হুসাইন আহমদ মাদানি তাকে নিজ এলাকায় একটি মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে গুরুত্বারোপ করেন। দেশে ফিরে তিনি তার পূর্বের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হেমায়তুল ইসলাম মাদ্রাসায় শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন, যেখানে তিনি সাত বছর পড়ালেখা করেছেন। পরবর্তীতে এই মাদ্রাসাটি বন্ধ হয়ে গেলে তিনি বাবুনগর মাদ্রাসায় যোগদান করেন এবং নানুপুরে একটি মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টা চালিয়ে যান। পরবর্তীতে বাবুনগর মাদ্রাসা থেকে ইস্তফা দিয়ে তিনি তার বন্ধু মাহমুদ অলীর পরামর্শে একটি নতুন মাদ্রাসায় প্রতিষ্ঠায় মনোনিবেশ করেন। প্রাথমিক পর্যায়ে তিনি নানুপুর বাজারের উত্তর পার্শ্ববর্তী মসজিদে মাদ্রাসার কার্যক্রম শুরুর উদ্যোগ নিলেও তা সফল হয় নি। পরবর্তীতে তিনি পটিয়া মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাতা আজিজুল হকের সাথে পরামর্শ করেন। আজিজুল হক তাকে নানুপুরের স্থানীয় বাসিন্দা ফজলুর রহমানের ইবাদতখানায় মাদ্রাসার কার্যক্রম শুরু করার নির্দেশ দেন। নির্দেশ পেয়ে তিনি ১৩৭৭ হিজরির ২৯ শাওয়াল মোতাবেক ১৯৫৭ সাল থেকে এই ইবাদতখানায় পড়াশোনা শুরু করেন। তার সাথে শিক্ষক হিসেবে ছিলেন মাহমুদ অলী ও ভুজপুরের কারী হামেদ। ধীরে ধীরে ছাত্রসংখ্যা বৃদ্ধি পেলে তিনি সেখানে একটি বাঁশের ঘর নির্মাণ করেন এবং আবু সুফিয়ানকে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ প্রদান করেন। পর পর দুইবার বাঁশের ঘরটি প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং তৃতীয়বার ১৯৬০ সালের ৫ ডিসেম্বর অগ্নিকাণ্ডে মাদ্রাসাটি ক্ষতিগ্রস্ত হলে স্থানীয়দের পরামর্শে সেখানে মাটির ঘর নির্মাণ করা হয়। তিনি তার শিক্ষক ওবাইদুল হকের নামানুসারে এই মাদ্রাসার নাম রাখেন 'ওবাইদিয়া হাফিজুল উলুম'।

ক্রমবিকাশ

মাদ্রাসার তিনতলা বিশিষ্ট মসজিদ

আমির উদ্দিন ১৯৫৭ থেকে ১৯৬০ পর্যন্ত মাদ্রাসাটি পরিচালনা করেন। তার আমলে মাদ্রাসা মক্তব থেকে হিফজ পর্যায়ক্রমে জামাতে শশুমে উন্নীত হয়। তখন ছাত্রসংখ্যা ছিল প্রায় ১৫০ এবং শিক্ষক ৫/৬ জন। ১৯৬০ সালে তিনি হজ্জে গমন করেন। হজ্জে গমনের পূর্বে তিনি আজিজুল হকের সাথে পরামর্শ করে সুলতান আহমদ নানুপুরীকে মাদ্রাসার পরিচালক হিসেবে নিয়োগ দিয়ে যান। তার নিয়োগের পর হাজী আব্দুস সালামের অর্থায়নে ইটের দেয়াল ও একটি বড় পুকুর খনন করে তার সংলগ্ন পাকা ঘাট নির্মাণ করা হয়। ১৯৬৫ সালে তিনি জমির উদ্দিন নানুপুরীকে মাদ্রাসার সহকারী পরিচালক হিসেবে নিয়োগ প্রদান করেন। ১৯৭৬ সালে এখানে কওমি মাদ্রাসার সর্বোচ্চ স্তর দাওরায়ে হাদিস চালু হয় আর প্রথম শায়খুল হাদিস হিসেবে দায়িত্ব পান মাসউদুল হক। ১৯৯৭ সালে সুলতান আহমদ নানুপুরীর মৃত্যুর পর পরিচালকের দায়িত্ব গ্রহণ করেন জমির উদ্দিন নানুপুরী। তার সময়ে মাদ্রাসার ব্যাপক অবকাঠামোগত উন্নয়ন ঘটে এবং এটি অন্যতম ধর্মীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হিসেবে পরিচিতি লাভ করে। তার আমলে মধ্যখানে মাঠসহ চতুর্দিকে মাদ্রাসা ভবন, তিনতলা বিশিষ্ট মসজিদ, শীততাপ নিয়ন্ত্রিত গেস্ট হাউস, চর্তুদিকে পাকাঘাট বিশিষ্ট পুকুর ও বাবুর্চিখানা নির্মিত হয়। ২০১১ সালে জমির উদ্দিন নানুপুরীর মৃত্যুর পর মাদ্রাসার মহাপরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পান সালাহ উদ্দিন নানুপুরী। ২০১৫ সালে এই মাদ্রাসায় উচ্চতর তাফসির বিভাগের সূচনা হয়। শেখ আহমদের পর ২০১৮ সালে কুতুব উদ্দীন নানুপুরীকে মাদ্রাসার শায়খুল হাদিস মনোনীত করা হয়। ২০১৯ সালে প্রথম কওমি মাদ্রাসা হিসেবে এটি অনলাইন ভর্তি কার্যক্রম চালু করে। ২০২৪ সালে মাদ্রাসার নিজস্ব অর্থায়নে নানুপুর ইউনিয়নে চালু হয় ওবাইদিয়া এলপিজি ফিলিং স্টেশন।

ব্যবস্থাপনা

মাদ্রাসার শিক্ষাভবনের একাংশ

এই প্রতিষ্ঠানে কওমি মাদ্রাসার প্রাথমিক স্তর থেকে দাওরায়ে হাদিস (স্নাতকোত্তর) এবং তার পরবর্তী উচ্চতর তাফসির বিভাগ, উচ্চতর হাদিস গবেষণা বিভাগ, উচ্চতর ইসলামি আইন বিভাগ, উচ্চতর তাজবিদ ও কেরাত বিভাগ, উচ্চতর আরবি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগ, উচ্চতর দাওয়া বিভাগ, উচ্চতর বাংলা/ইংরেজি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগ রয়েছে। এছাড়াও কম্পিউটার কোর্স, হস্তলিপি, দরজীগিরি ও বই পুস্তক বাইন্ডিংসহ বিভিন্ন হস্তশিল্প ও কারিগরি শিক্ষার ব্যবস্থা আছে। বিশেষ বিভাগ হিসেবে আছে তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত ইসলামি কিন্ডার গার্ডেন, কুরআন মুখস্থকারীদের জন্য তাহফীযুল কুরআন বিভাগ এবং স্কুল কলেজের ছাত্রদের আলেম হওয়ার কোর্স হিসেবে সর্টকোর্স বিভাগ। ছাত্রদের বিনা বেতনে শিক্ষাদান ও বাসস্থানের ব্যবস্থাসহ যাবতীয় পাঠ্য পুস্তক ফ্রি প্রদান করা হয়। বর্তমানে মাদ্রাসার ছাত্র সংখ্যা প্রায় ৮০০০ এবং শিক্ষক ও অন্যান্য কর্মচারীর সংখ্যা প্রায় ১৫৫ জন। মাদ্রাসার কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার সুলতানিয়া পাঠাগার সকলের জন্য উন্মুক্ত। এই পাঠাগারের পক্ষ হতে প্রতি মাসে শিক্ষা সেমিনার আয়োজিত হয়। এছাড়াও আরবি ভাষা ও বক্তৃতাচর্চা বিভাগ প্রতি মাসে একটি সেমিনার এবং কাব্যরচনা বিভাগ প্রতিবছর ৪/৫ টি কাব্যানুষ্ঠানের আয়োজন করে। নূরানী মুয়াল্লিম প্রশিক্ষণ বিভাগ কর্তৃক প্রতি বছর ২১ দিন ব্যাপী ফ্রী মুয়াল্লিম তথা শিক্ষক প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়। বিভিন্ন জেলাতেও এই বিভাগের কার্যক্রম বিস্তৃত। প্রতি বছর ২ সহস্রাধিক মানুষের উপস্থিতিতে এই মাদ্রাসায় ইতিকাফের আসর আয়োজিত হয়, যা বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ ইতিকাফের আসর হিসেবে বিবেচিত।[]

পরিচালিত সংস্থা

জমীরিয়া দাওয়াত সেন্টার বাংলাদেশ

জমীরিয়া তা’লিম ও তাযকিয়া পরিষদ

আল মানাহিল ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ

নওগাঁয় খাদ্য বিতরণ

বাংলাদেশ সরকার নিবন্ধিত এই বেসরকারি সেবা সংস্থাটির বর্তমান চেয়ারম্যান হলেন হেলালুদ্দিন বিন জমিরুদ্দিন। ১৯৯৮ সালে মাদ্রাসাটির প্রতিষ্ঠাতা শাহ জমিরুদ্দিন'ই এই স্বেচ্ছাসেবা সংস্থাটি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।[]

রোহিঙ্গা আশ্রয়প্রার্থীদের মধ্যে সেবা ও শিক্ষামূলক কার্যক্রম পরিচালনা, গভীর নলকূপ স্থাপন, দুর্যোগকালে ত্রাণ বিতরণ সহ বহু সেচ্ছাসেবী কর্ম প্রতিষ্ঠানটি করেছে। চট্টগ্রামের হালিশহরে কোভিড-১৯ রোগে আক্রান্তদের জন্য একটি স্বতন্ত্র হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করেছে এই সেচ্ছাসেবী সংস্থাটি[]। এছাড়াও সেচ্ছাসেবী হিসেবে কোভিড-১৯ রোগে মৃত ব্যক্তিদের দাফনকর্মও সম্পাদনা করেছে এই সংস্থাটি।[]। আল মানাহিল নার্চার হাসপাতাল: চট্টগ্রাম মহানগরীর হালিশহরের ফইল্যাতলী বাজারে এই 'ফিল্ড হাসপাতাল ও আইসোলেশন সেন্টার' টি অবস্থিত। এটিতে কোভিড-১৯ রোগীদের জন্য কেন্দ্রীয় অক্সিজেন সরবরাহের ব্যবস্থা রয়েছে।[]

প্রতিষ্ঠিত প্রতিষ্ঠান

সোলতানিয়া একাডেমী

শিক্ষার্থী

আরও দেখুন

তথ্যসূত্র

  1. "নানুপুরের পীর সালাহউদ্দীন নানুপুরী অসুস্থ"খুতবাহ টিভি 
  2. "কওমীতে সর্বপ্রথম অনলাইনে ভর্তি কার্যক্রম চালু করতে যাচ্ছে চট্টগ্রামের নানুপুর মাদ্রাসা"একুশে জার্নাল। ২০১৯-০৩-১৩। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০৭-১৩ 
  3. "জামিয়া ইসলামিয়া ওবাইদিয়া নানুপুর : একটি বিশ্বজনীন কওমি মাদরাসা"কমাশিসা। ১৯ সেপ্টেম্বর ২০০৬। সংগ্রহের তারিখ ১৫ জুন ২০২০ 
  4. "দেশের সর্ববৃহৎ ইতিকাফের আসর"দৈনিক ইনকিলাব। ৩০ এপ্রিল ২০২২। 
  5. "চট্টগ্রামে করোনাসেবায় আল মানাহিল"কালের কন্ঠ। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০৭-১৩ 
  6. "করোনা রোগীর চিকিৎসায় হাসপাতাল প্রস্তুত করছে আল-মানাহিল"The Daily Star Bangla। ২০২০-০৬-১৮। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০৭-১৩ 
  7. "চট্টগ্রামে করোনা ডেডিকেটেড আল-মানাহিল হাসপাতালের যাত্রা শুরু"https://wwww.jagonews24.com। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০৭-১৩  |ওয়েবসাইট= এ বহিঃসংযোগ দেয়া (সাহায্য)

বহিঃসংযোগ