বিষয়বস্তুতে চলুন

আলোকচিত্রশিল্প

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে

এটি এই পাতার বর্তমান সংস্করণ, যা WikitanvirBot (আলোচনা | অবদান) কর্তৃক ১১:১৩, ২০ ডিসেম্বর ২০২৩ তারিখে সম্পাদিত হয়েছিল (বট নিবন্ধ পরিষ্কার করছে, কোনো সমস্যায় পরিচালককে জানান)। উপস্থিত ঠিকানাটি (ইউআরএল) এই সংস্করণের একটি স্থায়ী লিঙ্ক।

(পরিবর্তন) ← পূর্বের সংস্করণ | সর্বশেষ সংস্করণ (পরিবর্তন) | পরবর্তী সংস্করণ → (পরিবর্তন)

আলোকচিত্রশিল্প হচ্ছে আলো বা অন্য কোনো রকম তড়িচ্চুম্বকীয় বিচ্ছুরণকে কাজে লাগিয়ে টেঁকসই ছবি সৃষ্টি করার যে শিল্প, বিজ্ঞান ও পদ্ধতি। আলোকচিত্রগ্রাহী ফিল্ম জাতীয় আলোক-সংবেদনশীল বস্তুর মাধ্যমে রাসায়নিক পদ্ধতিতে অথবা কোনো ইমেজ সেন্সরের মাধ্যমে বৈদ্যুতিক পদ্ধতিতে ফটোগ্রাফ তোলা সম্ভব।[] ক্যামেরার ভিতর একটি আলোক-সংবেদনশীল তল থাকে। সাধারণত, লেন্সের মাধ্যমে কোনো বস্তু থেকে প্রতিফলিত বা নিঃসৃত আলো কেন্দ্রীভূত করে একটি নির্দিষ্ট সময়ের অনাবৃতকরণে ওই তলে বস্তুর একটি যথার্থ ছবি ধরা হয়। একটি বৈদ্যুতিক চিত্র অনুধাবকে এর ফল হয়, প্রতি পিক্সেলে একটি বৈদ্যুতিক আয়ন। এটি একটি বৈদ্যুতিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে পরিণতিলাভ করে এবং পরবর্তী প্রদর্শন বা প্রক্র য়াকরণের জন্য একটি দ্বিমিক চিত্র ফাইলে সঞ্চিত হয়। আলোকচিত্রগ্রাহী রঞ্জকস্তরে এর ফলে একটি সুপ্ত চিত্র তৈরি হয়। এটি পরে রাসায়নিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে প্রক্রিয়াজাত হয়ে একটি দৃশ্যমান চিত্রে পরিণত হয়। এই দৃশ্যমান চিত্রটির আলোকচিত্রগত উপকরণ ও প্রক্রিয়াকরণের পদ্ধতি অনুযায়ী হয় নেগেটিভ বা পজিটিভ হয়ে থাকে। প্রথাগতভাবে, ফিল্মে একটি নেগেটিভ চিত্র থেকে কাগজে পজিটিভ চিত্র তৈরি হয়। এটিকে বলে মুদ্রিত আলোকচিত্রপরিবর্ধক (Enlarger) বা সংস্পর্শ মুদ্রণ পদ্ধতিতে এটি করা হয়।

ব্যবসা, বিজ্ঞান, উৎপাদন (যেমন আলোকপ্রস্তর চিত্রলিখন), শিল্প, বিনোদন ও গণমাধ্যম শিল্পে আলোকচিত্রশিল্পের ব্যবহার দেখা যায়।

লেন্স ও একটি লার্জ-ফরম্যাট ক্যামেরার মাউন্টিং
সর্বশেষ রাসায়নিক স্নানের পর একটি ফটোগ্রাফিক প্রিন্ট

ব্যুৎপত্তি

[সম্পাদনা]

১৮৩৪ সালে ব্রাজিলের ক্যাম্পিনাসে হারকিউলিস ফ্লোরেন্স নামে এক ফরাসি চিত্রকর ও আবিষ্কারক ডায়েরিতে নিজের একটি পরীক্ষার বিবরণীতে "photographie" শব্দটি ব্যবহার করেন।[] যতদূর জানা যায়, ১৮৩৯ সালের ১৪ মার্চ লন্ডনের রয়্যাল সোসাইটির একটি লেকচারে স্যার জন হারসেল "photography" শব্দটি প্রথম জনসমক্ষে আনেন। যদিও ওই বছরই ২৫ ফেব্রুয়ারি Vossische Zeitung নামে একটি জার্মান সংবাদপত্রে বার্লিনের জ্যোতির্বিদ জোয়ান ফন মেডলার ফটোগ্রাফি শব্দটি ব্যবহার করেছিলেন।[]

ইংরেজি "photography" এসেছে গ্রিক φωτός (phōtos) (φῶς (phōs) শব্দ থেকে আগত) বা "আলো"[] এবং γραφή (graphé) বা "লাইনের দ্বারা প্রকাশ" বা "অঙ্কন"[] শব্দ থেকে। দুটি শব্দের একত্রে অর্থ দাঁড়ায় "আলো দিয়ে আঁকা"।[]

প্রযুক্তিগত খুঁটিনাটি

[সম্পাদনা]

ক্যামেরা হল "ইমেজ-ফর্মিং ডেভাইস" বা ছবি তোলার যন্ত্র এবং ফটোগ্রাফিক ফিল্ম বা একটি সিলিকন ইলেকট্রনিক ইমেজ সেন্সর হল "সেন্সিং মিডিয়াম" বা ছবি ধরে রাখার মাধ্যম। রেকর্ড করার মাধ্যমটি হল যথাক্রমে ফিল্ম বা ডিজিট্যাল ইলেকট্রনিক বা ম্যাগনেটিক মেমরি।[]

ফটোগ্রাফার ক্যামেরা নিয়ন্ত্রণ করেন। লেন্সের মাধ্যমে আলোক রেকর্ডিং উপকরণের (যেমন ফিল্ম) উপর যথাযথ পরিমাণ আলো ফেলে "ল্যাটেন্ট ইমেজ" (ফিল্মে) বা আরএডব্লিউ ফাইল (ডিজিট্যাল ক্যামেরায়) প্রস্তুত করা হয়। যেগুলি সঠিক প্রসেসিং-এর পরে ব্যবহারযোগ্য ছবিতে পরিণত হয়। ডিজিট্যাল ক্যামেরা চার্জ-কাপলড ডেভাইস (সিসিডি) বা কমপ্লিমেন্টারি মেটাল-অক্সাইড-সেমিকনডাকটর (সিএমওএস) প্রযুক্তি জাতীয় আলোক-সংবেদনশীল ইলেকট্রনিক্স-ভিত্তিক এক ধরনের ইলেকট্রনিক ইমেজ সেন্সর ব্যবহার করে। তার ফলে ডিজিট্যাল ইমেজ বৈদ্যুতিক পদ্ধতিতে সঞ্চিত হয়। কিন্তু তাকে কাগজ বা ফিল্মেও ধরে রাখা যায়।

ক্যামেরা (বা 'ক্যামেরা অবস্ক্যুরা') হল একটি ডার্করুম বা চেম্বার। এর মধ্যে যেটুকু আলো ছবি তৈরি করে সেটুকু বাদ দিয়ে অন্য আলো যথাসম্ভব বাদ দেওয়া হয়। অবশ্য যে বস্তুটির ফটোগ্রাফ নেওয়া হচ্ছে, সেটির উপর আলো পড়া জরুরি। ক্যামেরা ছোটো থেকে অতি বড়ো সব রকমই হতে পারে। যে ঘরে ক্যামেরা সেই ঘরটি অন্ধকারে রেখে অন্য একটি ঘরে যথাযথ আলোর ব্যবস্থা করে বস্তুর ছবি তোলা যায়। বড়ো ফিল্ম নেগেটিভ ব্যবহার করে ফ্ল্যাট কপির রিপ্রোডাকশন ফটোগ্রাফি করার সময় এই পদ্ধতি ব্যবহার করা হয় (প্রসেস ক্যামেরা দেখুন)।

মুভি ক্যামেরা হল একধরনের ফটোগ্রাফিক ক্যামেরা যা খুব দ্রুত ফিল্মের স্ট্রিপের উপর ধারাবাহিক ফটোগ্রাফ তুলে যায়। স্টিল ক্যামেরায় একেবারে একটিই ফটো তোলা যায়। কিন্তু মুভি ক্যামেরা পরপর ছবি তুলে যায়। প্রতিটি ছবিকে বলে ফ্রেম। একটি ইন্টারমিটেন্ট মেকানিজম দ্বারা একটি করা হয়। ফ্রেমগুলি পরে একটি মুভি প্রোজেক্টরে নির্দিষ্ট গতিতে চালানো হয়। এই গতিকে বলে "ফ্রেম রেট" (এক সেকেন্ডে প্রদর্শিত ফ্রেমের সংখ্যা)। দেখার সময়, একজন ব্যক্তির চোখ ও মস্তিষ্কে প্রতিটি আলাদা ছবি একসঙ্গে মিশে গতির দৃষ্টিবিভ্রম সৃষ্টি করে।[]

ক্যামেরা কনট্রোল

[সম্পাদনা]

কয়েকটি নির্দিষ্ট ক্যামেরা ছাড়া সব ক্যামেরাতেই, ব্যবহারযোগ্য এক্সপোজার পাওয়ার পদ্ধতিটি স্বয়ংচালিত অথবা ব্যবহারকারীচালিত কয়েকটি কনট্রোলের ব্যবহারের উপর নির্ভরশীল। এর মাধ্যমে ফটোগ্রাফটি পরিষ্কার, স্পষ্ট ও যথাযথভাবে আলোকপ্রাপ্ত অবস্থায় তোলা সম্ভব হয়। কনট্রোল অনেক রকমের হয়। তার মধ্যে নিম্নলিখিত কনট্রোলগুলি প্রধান:

কনট্রোল বিবরণ
ফোকাস দৃশ্যমান বস্তুর অবস্থান বা পরিষ্কার ছবি তোলার জন্য অপটিক্যাল যন্ত্রের প্রয়োজনীয় নিয়ন্ত্রণ: ইন ফোকাস, আউট অফ ফোকাস।[]
অ্যাপারচার লেন্স ওপেনিং-এর এফ-নাম্বার দ্বারা পরিমিত নিয়ন্ত্রণ। লেন্সের মধ্যে কতটা আলো ঢুকবে তা এই অ্যাপারচার নিয়ন্ত্রণ করে। ডেপথ অফ ফিল্ডডিফ্র্যাকশনের উপরেও অ্যাপারচার প্রভাব বিস্তার করে –এফ-নাম্বার যত বেশি হবে, ওপেনিং যত ছোটো হবে, যত কম আলো ঢুকবে, ডেপথ অফ ফিল্ড তত বাড়বে, এবং ডিফ্র্যাকশন ব্লারও তত বাড়বে। এফ-নাম্বার কর্তৃক বিভাজিত ফোকাল লেন্থ কার্যকর অ্যাপারচার ডায়ামিটার নির্ধারণ করে।
শাটার স্পিড শাটারের গতি (এটি অনেক সময় সেকেন্ডের বিভাগ বা মেকানিক্যাল শাটারের ক্ষেত্রে কোণ দ্বারা প্রকাশ করা হয়) নিয়ন্ত্রণ করে। এর মাধ্যমে প্রতিটি এক্সপোজারে ইমেজিং মাধ্যমটি কতক্ষণ আলোয় প্রকাশিত অবস্থায় থাকবে তা নির্ধারণ করা হয়। ইমেজ প্লেনের উপর নিক্ষিপ্ত আলোর পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করার জন্যও শাটার স্পিড ব্যবহার করা হয়। 'দ্রুততর' শাটার স্পিড (অর্থাৎ, কম সময়ে তোলা) আলোর পরিমাণ এবং বিষয়বস্তু বা ক্যামেরার সঞ্চালনজনিত ইমেজ ব্লারিং-এর পরিমাণও হ্রাস করে।
হোয়াইট ব্যালান্স ডিজিট্যাল ক্যামেরায়, কালার টেম্পারেচারের জন্য বৈদ্যুতিক ক্ষতিপূরণ দিতে নির্দিষ্ট আলোর শর্ত দেওয়া থাকে। এতে সাদা আলো ইমেজিং চিপে রেজিস্টার্ড হয়ে থাকে এবং তাই ফ্রেমের রংগুলিকে স্বাভাবিক মনে হয়। মেকানিক্যাল, ফিল্ম-ভিত্তিক ক্যামেরায় এই কাজটি করে ব্যবহারকারী কর্তৃক নির্বাচিত ফিল্ম স্টক অথবা বা কালার কারেকশন ফিল্টার। এর সঙ্গে হোয়াইট ব্যালান্সের ব্যবহারের সঙ্গে সঙ্গে ছবির প্রাকৃতিক রং রেজিস্টার করতে ফটোগ্রাফারেরা হোয়াইট ব্যালান্সের চূড়ান্ত নান্দনিক প্রয়োগ ঘটাতে পারেন। যেমন নীল বস্তুর হোয়াইট ব্যালান্সিং-এর মাধ্যমে উষ্ণ কালার টেম্পারেচার পাওয়া যায়।
মিটারিং এক্সপোজারের পরিমাপ। এর ফলে ফটোগ্রাফারের ইচ্ছা মতো হাইলাইট ও শ্যাডোর ব্যবহার করা যায়। অনেক আধুনিক ক্যামেরায় মিটার আর এক্সপোজার নির্ধারণ স্বয়ংক্রিয়ভাবে হয়ে থাকে। স্বয়ংক্রিয় এক্সপোজারের আগে সঠিক এক্সপোজারটি পাওয়া যায় একটি পৃথক লাইট মিটারিং যন্ত্রের মাধ্যমে অথবা সঠিক সেটিং সম্পর্কে ফটোগ্রাফারের জ্ঞান বা অভিজ্ঞতার মাধ্যমে। আলোর পরিমাণকে ব্যবহারযোগ্য অ্যাপারচার ও শাটার স্পিডে ধরতে মিটারকে ফিল্ম বা সেন্সরের আলোক-সংবেদনশীলতার সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে হয়। এটি করা হয় মিটারের মধ্যে "ফিল্ম স্পিড" বা আইএসও সেন্সিটিভিটির মাধ্যমে।
আইএসও স্পিড প্রথাগতভাবে ফিল্ম ক্যামেরায় নির্বাচিত ফিল্মে ফিল্ম স্পিড "বলে দিতে" হত। আইএসও স্পিড ব্যবহার করা হয় আধুনিক ডিজিট্যাল ক্যামেরায়। এর মাধ্যমে স্বয়ংক্রিয়ভাবে এক্সপোজার ব্যবস্থাকে নিয়ন্ত্রণ করা যায়। আইএসও সংখ্যা বেশি হয় ফিল্মের আলোক-সংবেদনশীলতা বাড়ে, সংখ্যা কম হলে সংবেদনশীলতা কমে। আইএসও স্পিড, অ্যাপারচার ও শাটার স্পিডের সঠিক মেলবন্ধনের ফলে ছবি বেশি কালো বা বেশি উজ্জ্বল দেখায় না, ফলে সেটি কেন্দ্রীভূত মিটারের দৃষ্টিতে 'সঠিকভাবে এক্সপোজড' মনে হয়।
অটোফোকাস পয়েন্ট ইমেজিং ফ্রেমের একটি বিন্দুর নির্বাচন। এটি কোনো কোনো ক্যামেরায় থাকে। এর মাধ্যমে অটো-ফোকাস ব্যবস্থা ফোকাস করার চেষ্টা করে। অনেক সিঙ্গল-লেন্স রিফ্লেক্স ক্যামেরায় (এসএলআর) ভিউফাইন্ডারে একাধিক অটোফোকাস পয়েন্ট থাকে।

ছবি তোলার অন্য অনেক উপকরণ ফটোগ্রাফের মান ও নান্দনিক দিকটিকে প্রভাবিত করে। এর মধ্যে আছে:

আরও দেখুন

[সম্পাদনা]
প্রকারভেদ
ফটোগ্রাফার ও ফটোগ্রাফ
যন্ত্রপাতি (ক্যামেরা ইত্যাদি)
ইতিহাস
পদ্ধতি
সাধারণ বিষয়
প্রযুক্তিগত নিয়মকানুন

পাদটীকা

[সম্পাদনা]
  1. Spencer, D A (১৯৭৩)। The Focal Dictionary of Photographic Technologies। Focal Press। পৃষ্ঠা 454। আইএসবিএন 240 50747 9 |আইএসবিএন= এর মান পরীক্ষা করুন: length (সাহায্য) 
  2. Boris Kossoy (২০০৪)। Hercule Florence: El descubrimiento de la fotografía en Brasil। Instituto Nacional de Antropología e Historia। আইএসবিএন 968-03-0020-X 
  3. Eder, J.M (১৯৪৫) [1932]। History of Photography, 4th. edition [Geschichte der Photographie]। New York: Dover Publications, Inc.। পৃষ্ঠা 258–259। আইএসবিএন 0-486-23586-6 
  4. φάος, Henry George Liddell, Robert Scott, A Greek-English Lexicon, on Perseus
  5. γραφή, Henry George Liddell, Robert Scott, A Greek-English Lexicon, on Perseus
  6. Online Etymology Dictionary
  7. Dpreview.com
  8. Joseph and Barbara Anderson, "The Myth of Persistence of Vision Revisited", Journal of Film and Video, Vol. 45, No. 1 (Spring 1993): 3–12. uca.edu ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ২৪ নভেম্বর ২০০৯ তারিখে
  9. "Definition of focus"। IAC। সংগ্রহের তারিখ ৩১ জানুয়ারি ২০১২ 

আরও পড়ুন

[সম্পাদনা]

পরিচিতি

[সম্পাদনা]

ইতিহাস

[সম্পাদনা]
  • A New History of Photography, ed. by Michel Frizot, Köln : Könemann, 1998
  • Franz-Xaver Schlegel, Das Leben der toten Dinge - Studien zur modernen Sachfotografie in den USA 1914-1935, 2 Bände, Stuttgart/Germany: Art in Life 1999, আইএসবিএন ৩-০০-০০৪৪০৭-৮.

তথ্যসূত্র

[সম্পাদনা]

অন্যান্য বই

[সম্পাদনা]

বহিঃসংযোগ

[সম্পাদনা]