ফরাসি ইন্দোচীন
ইন্দোচৈনিক ফেডারেশন Fédération indochinoise | |
---|---|
১৮৮৭-১৯৫৪ | |
জাতীয় সঙ্গীত: | |
অবস্থা | ফরাসি ঔপনিবেশিক দখলদারত্বের ফেডারেশন |
রাজধানী | |
প্রচলিত ভাষা | ফরাসি (দাপ্তরিক) |
ধর্ম | |
সরকার | ফরাসি ঔপনিবেশিক ফেডারেশন |
গভর্নর-জেনারেল | |
ঐতিহাসিক যুগ | নব্য সাম্রাজ্যবাদ |
• প্রতিষ্ঠা | ১৭ অক্টোবর ১৮৮৭ |
• লাওসের সংযোজন | ৩ অক্টোবর ১৮৯৩ |
• কুওয়াং-চৌ-এর সংযোজন | ৫ জানুয়ারি ১৯০০ |
• উত্তর ভিয়েতনামের স্বাধীনতা (দাবিকৃত) | ২ সেপ্টেম্বর ১৯৪৫ |
• ফরাসি ইন্দোচীন চুক্তি | ২৮ ফেব্রুয়ারি ১৯৪৬ |
• লাওসের স্বাধীনতা | ২২ অক্টোবর ১৯৫৩ |
• কম্বোডিয়ার স্বাধীনতা | ৯ নভেম্বর ১৯৫৩ |
• দক্ষিণ ভিয়েতনামের স্বাধীনতা | ২১ জুলাই ১৯৫৪ |
আয়তন | |
১৯৩৫ | ৭,৩৭,০০০ বর্গকিলোমিটার (২,৮৫,০০০ বর্গমাইল) |
জনসংখ্যা | |
• ১৯৩৫ | ২১৫৯৯৫৮২ |
মুদ্রা | ফরাসি ইন্দোচৈনিক পিয়াস্ত্রে |
বর্তমানে যার অংশ |
ফরাসি ইন্দোচীন,[ক] সংক্ষেপে ইন্দোচীন,[খ] আনুষ্ঠানিক নাম ইন্দোচৈনিক ইউনিয়ন[গ] এবং ১৮৮৭ সালের পর যার নামকরণ করা হয় ইন্দোচৈনিক ফেডারেশন,[ঘ] একটি সাবেক ফরাসি উপনিবেশ, যা দক্ষিণপূর্ব এশিয়ায় অবস্থিত ছিল। এটি ফরাসি ঔপনিবেশিক সাম্রাজ্য এর অংশ ছিল।
১৮৮৭ সালে তিনটি ভিয়েনামীয় অঞ্চল, টনকিন (উত্তর), আন্নাম (মধ্য), এবং কম্বোডিয়ার সাথে কোচিনচীন (দক্ষিণ) নিয়ে ইন্দোচীন গঠিত হয়। ১৮৯৩ সালে লাওসকে এর সাথে যুক্ত করা হয়। ১৮৯৮ সালে চীনের কাছ থেকে ইজারা নেয়া কুওয়াং-চৌ এর সাথে যুক্ত করা হয়।
দেশটির রাজধানী সাইগন থেকে সরিয়ে প্রথমে কোচিনচীন এবং পরে হ্যানয়ে স্থানান্তর করা হয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ফ্রান্সের পতনের পর জাপান ঔপনিবেশিক শাসনকে উচ্ছেদ করে এবং ১৯৪৫ সাল পর্য়ন্ত দেশটিকে নিজের অধীনে রাখে। ১৯৪১ সালের মে মাসে ভিয়েন মিন নামের কমিউনিস্ট সৈন্যরা হো চি মিনের নেতৃত্বে জাপানীদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করে। আগস্ট ১৯৪৫ সালে তারা ভিয়েতনামের স্বাধীনতা ঘোষণা করে এবং প্রথম ইন্দোচীন যুদ্ধের সূচনা করে। ১৯৪৯ সালে সায়গনে কমিউনিস্ট বিরোধী রাষ্ট্র ভিয়েতনাম প্রাক্তন সম্রাট বাও জাই এর নেতৃত্বে স্বাধীনতার স্বীকৃতি পায়। ৯ নভেম্বর ১৯৫৩ সালে লাওস রাজ্য এবং কম্বোডিয়া রাজ্য স্বাধীনতা লাভ করে। ফরাসিরা এই অঞ্চল ত্যাগ করে। সেই সাথে ইন্দোচীন নামের অবসান হয়।
ইতিহাস
১৭ শতকে সোসাইটি অব যেশাসের ধর্মযাজগ আলেক্সান্ডার ডি রোডসের কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে ফ্রান্স এবং ভিয়েতনামের মধ্যে সম্পর্কের সূত্রপাত হয়। সে সময় ভিয়েতনাম মেকং ব-দ্বীপ অধিগ্রহণ করা শুরু করেছে। মেকং ছিল চাম্পা রাজ্যের অংশ যা ১৪৭১ সালে ভিয়েতনাম কর্তৃক বিজিত হয়েছিল।[২] ১৮ শতক পর্য়ন্ত ইউরোপিয়ানরা ভিয়েতনামে শুধুমাত্র ব্যবসায়িক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করত। ১৭৮৭ সালে একজন Pierre Pigneau de Behaine নামক একজন ফরাসি ধর্মযাজক তার দখরকৃত জমি উদ্ধারের জন্য ফরাসি সামরিক বাহিনীর সাহায্য প্রার্থনা করেন। ১৮০২ সাল পর্য়ন্ত লড়াই কেরে ফরাসি সৈন্যরা সে জমি উদ্ধার করেন।
১৯ শতক
১৯ শতকের ভিয়েতনামে ফরাসিদের কর্মকাণ্ড বৃদ্ধি পেতে থাকে। তৎকালিন শাসক নিগুয়েন বংশের সম্রাটরা ফরাসি ধর্ম্প্রচারকদের কর্মকাণ্ডকে রাজনৈতিক হুমকি হিসাবে বিবেচনা করত। ১৮৫৮ সালে সম্রাট তৃতীয় নেপোলিয়নের আদেশে ফরাসি অ্যাডমিরাল শার্ল রিগো দ্য জনুই (Charles Rigault de Genouilly) ভিয়েতনাম আক্রমণ করেন। রাষ্ট্রদূত শার্ল দ্য মোঁতাইনের মিশন ব্যর্থ হয়। অ্যাডমিরাল জনুইয়ের (Genouilly) মিশন ছিল ভিয়েতনাম থেকে ক্যাথলিক ধর্মপ্রচারকদেরকে বহিষ্কার করতে বাধা দেয়া, সব রকম অত্যাচারের হাত থেকে তাদের রক্ষা করা এবং ধর্মপ্রচারের কাজ অব্যাহত রাখতে সাহায্য করা।[৩]
সেপ্টেম্বর ১৮৫৮ সালে চৌদ্দটি ফরাসি যুদ্ধ জাহাজ, ৩০০০ সৈন্য এবং স্পেনীয়দের পাঠানো ৩০০ ফিলিপিনি যোদ্ধা[৪] টুরানের বন্দর আক্রমণ করে এবং শহর দখল করে নেয়। এই আক্রমণে বন্দরের ব্যাপক ক্ষতি সাধিত হয়। এর কয়েকমাস পর অ্যাডমিরাল জনুই, অসুস্থতা এবং পর্য়াপ্ত রসদ সরবরাহের অভাবে বন্দর শহরটি ত্যাগ করেন।[৩]
আরো দক্ষিণে অগ্রসর হয়ে, ১৮ ফেব্রুয়ারি ১৮৫৯ সালে অ্যাডমিরাল দ্য জনুই দুর্বল প্রতিরক্ষা ব্যবস্থায় থাকা সাইগন শহর দখল করে। ১৩ এপ্রিল ১৮৬২ সালে, ভিয়েতনাম সরকার Biên Hòa, Gia Định এবং Định Tường এই তিনটি প্রদেশ ফরাসিদের কাছে সমর্পন করতে বাধ্য হয়। অ্যাডমিরাল দ্য জনুইকে তার কৃতকর্মের জন্য তিরস্কার করা হয় এবং ১৮৫৯ সালে অ্যাডমিরাল পাজকে তার স্থানে নিয়োগ দেয়া হয়। নতুন অ্যাডমিরালের প্রতি নির্দেশ ছিল এলাকা অধিগ্রহণ থেকে বিরতে থেকে তার সেনারা যেন ক্যাথলিক ধর্ম যাজকদের নির্বিঘ্নে ধর্মপ্রচার নিশ্চিত করার জন্য একটি চুক্তি করতে অধিক সচেষ্ট হয়।[৩]
চার বছর পর ফরাসিরা ভিয়েতনামে তাদের নীতি পরিবর্তন করে ভিয়েতনামের বিভিন্ন স্থান দখল করতে শুরু করে। ১৮৬৭ সালে Châu Đốc, Hà Tiên এবং Vĩnh Long প্রদেশগুলো ফ্রান্স নিয়ন্ত্রিত অঞ্চলের সাথে যুক্ত হয়।
স্থাপনা
১৮৮৪-৮৫ সালে চীনা-ফরাসি যুদ্ধে চীনের বিরুদ্ধে জয়লাভ করার পর উত্তর ভিয়েতনাম ফ্রান্সের দখলে আসে। ১৭ অক্টোবর ১৮৮৭ সালে Annam, Tonkin, Cochinchina কে নিয়ে নিয়ে ফরাসি ইন্দোচীন গঠিত হয় (পরে যা মিলিত হয়ে আধুনিক ভিয়েতনাম হয়েছে)। ১৮৮৩ সালে ফরাসি-শ্যাম যুদ্ধের পর কম্বোডিয়া রাজ্য, এবং লাওস ফরাসি ইন্দোচীনের অন্তর্ভুক্ত হয়। এই সংযুক্ত রাষ্ট্র ২১ জুলাই ১৯৫৪ পর্য়ন্ত টিকে ছিল।
ভিয়েতনাম বিদ্রোহ
১৮৫৮ সালে ফরাসি সৈন্যবাহিনী ভিয়েতনামে প্রবেশ করে। ১৮৮০ সালের মাঝামাঝি সময়ের মধ্যে তারা সমগ্র উত্তরাঞ্চল নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নেয়। ১৮৮৫ থেকে ১৮৯৫ সালে ফরাসি ঔপনিবেশিক শাসনের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ সংগঠিত হতে থাকে। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর জাতীয়তাবাদী চেতনা দৃঢ় হতে থাকে। যদিও সে সময়ে ফরাসি প্রভূদের কাছ থেকে তারা খুব বেশি দাবী তারা আদায় করতে পারেনি।
ফরাসি-শ্যাম যুদ্ধ (১৮৯৩)
ইন্দোচীন উপদ্বীপে আঞ্চলিক আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে ১৮৯৩ সালে ফরাসি-শ্যাম যুদ্ধের সূচনা হয়। ফরাসি গানবোট ব্যাংককে প্রবেশ করে এবং মেকং নদীর পশ্চিমে থাকা লাওস তাদের নিকট হস্তান্তরের দাবী করে। রাজা চুলালংকর্ন ব্রিটিশদের দ্বারস্থ হন। ব্রিটিশ মন্ত্রী তাকে ফরাসীদের দাবী মেনে নিতে বলেন। রাজা একটি চুক্তির মধ্য দিয়ে, বার্মার অন্তর্গত থাই ভাষাভাষী শান অঞ্চলকে ব্রিটিশদের নিকট হস্তান্তর করে এবং লাওসকে ফরাসীদের নিকট ছেড়ে দেয়। এর পর রাজা চুলালংকর্ণ মেকং নদী অববাহিকায় অবস্থিত Luang Prabang, দক্ষিণ লাওসের Champasak এবং পশ্চিম কম্বোডিয়া ফরাসিদের নিকট হস্তান্তর করতে বাধ্য হন।
টীকা
তথ্যসূত্র
- ↑ ১৭ অক্টোবর ১৮৮৭ সালের ডিক্রি অনুযায়ী
- ↑ Kahin, George McTurnin; Lewis, John W. (১৯৬৭)। The United States in Vietnam: An analysis in depth of the history of America's involvement in Vietnam। Delta Books।
- ↑ ক খ গ Tucker, Spencer C. (১৯৯৯)। Vietnam (Google Books)। University Press of Kentucky। পৃষ্ঠা 29। আইএসবিএন 0-8131-0966-3।
- ↑ Chapuis, Oscar (১৯৯৫)। A History of Vietnam: From Hong Bang to Tu Duc (Google Books)। Greenwood Publishing Group। পৃষ্ঠা 195। আইএসবিএন 0-313-29622-7।