বিনোদন, চিত্তবিনোদন বা মনোরঞ্জন এমন এক ধরনের কাজ যা দর্শক বা শ্রোতার আকর্ষণ বা আগ্রহের বিষয় এবং যা তাদের আনন্দ প্রদান করে। বিনোদন কোন ধারণা বা কাজ হতে পারে কিন্তু হাজার বছর ধরে দর্শক বা শ্রোতা আগ্রহ ধরে রেখেছে এমন কাজ হতে হবে। যদিও মানুষের বিভিন্ন বিষয়ে আগ্রহ থাকে, কারণ বিনোদনে মানুষের ভিন্ন ভিন্ন পছন্দ থাকে, এবং বেশির ভাগই স্বীকৃত ও পরিচিত। সংস্কৃতিতে গল্পবলা, সঙ্গীত, নাটক, নৃত্য, ও বিভিন্ন ধরনের প্রদর্শন কলা বিদ্যমান। এসব বিনোদনের রূপ সময়ের সাথে সাথে আধুনিকীকরণ হয়েছে। বিনোদন শিল্প গড়ে ওঠার সাথে সাথে এই আধুনিকীকরণ পদ্ধতি তরান্বিত হয়েছে।

ভোজ এবং সঙ্গীতকে প্রাচীনকাল থেকেই দুটি গুরুত্বপূর্ণ বিনোদন হিসেবে বিবেচনা করা হয়

বিনোদন গ্রহণের অভিজ্ঞতা আনন্দ লাভের সাথে জড়িত। ফলে বিনোদনের একটি সাধারণ উদ্দেশ্য হল মজা ও হাস্যরস, যদিও অনেক বিনোদন গুরুতর উদ্দেশ্য থাকে। এই কারণেই বিনোদনের বিভিন্ন রূপ দেখা যায়, যেমন অনুষ্ঠানাদি, উৎযাপন, ধর্মীয় উৎসব, ও ব্যঙ্গ। যাই হোক, বিনোদনে যাই প্রদর্শিত হোক না কেন এ থেকে অন্তর্দৃষ্টি বা বুদ্ধির বিকাশের সম্ভাবনা রয়েছে।

মনোবিজ্ঞান ও দর্শন

সম্পাদনা

বিনোদন শিক্ষা ও বিপণন থেকে ভিন্ন যদিও বিনোদনের লক্ষ্য অর্জনের জন্য কীভাবে বিনোদনের আবেদন ব্যবহার করতে হয় তা শিখা প্রয়োজন। পণ্ডিতগণ বিনোদনের গুরুত্ব ও প্রভাব অনুধাবন করেছেন[][] এবং এর আধুনিকীকরণের প্রভাব কলাবিদ্যার অন্য ক্ষেত্রেও রয়েছে।[][]

কোন নির্দিষ্ট বিনোদনে তখনই দর্শক সন্তুষ্টি অর্জন করে এবং তাদের দৃষ্টিভঙ্গি পাল্টায় যখন তা মানুষের মনে "জীবনের অর্থ কি?", "মানুষ হওয়ার অর্থ কি?", "কোনটা সঠিক কাজ?" বা "আমি কি জানি তা কীভাবে জানি" এ ধরনের সার্বজনীন দর্শনতাত্ত্বিক প্রশ্ন ঢুকিয়ে দেয়। এই প্রশ্নসমূহ গল্প, চলচ্চিত্র, নাটক, কবিতা, বই, নৃত্য, কমিক, বা গেম আকারে উপস্থাপিত হয়। নাটকের উদাহরণ হল উইলিয়াম শেকসপিয়র এর নাটক হ্যামলেট, যেখানে কেন্দ্রীয় চরিত্র কাব্যের মাধ্যমে এই বিষয়সমূহ উপলব্ধি করে; চলচ্চিত্র, যেমন দ্য ম্যাট্রিক্স-এ জ্ঞানের প্রকৃতি খুঁজে বের করা হয়[] এবং বিশ্বব্যাপী মুক্তি দেওয়া হয়।[] উপন্যাস এই বিষয় সম্পর্কে অনুসন্ধান করার সুযোগ প্রদানের পাশাপাশি পাঠকদের বিনোদন দান করে।[] দর্শনতাত্ত্বিক প্রশ্নসমূহ বিনোদনের মাধ্যমে বিভিন্ন রকম ভাবে উপস্থাপন করেছে এমন একটি সৃজনশীল কাজ হল দ্য হিচিকার্‌স গাইড টু দ্য গ্যালাক্সি। প্রকৃতপক্ষে এটি একটি রেডিও কমেডি, গল্পটি এত জনপ্রিয় হয়েছিল যে পরে এই গল্প উপন্যাস, চলচ্চিত্র, টেলিভিশন সিরিজ, মঞ্চ নাটক, কমিক, অডিও বই, এলপি রেকর্ড, রোমাঞ্চকর গেমঅনলাইন গেম এ গৃহীত হয়, কিছু ধারণা বাগধারা (দ্য হিচিকার্‌স গাইড টু দ্য গ্যালাক্সির বাগধারা) হিসেবে ব্যবহৃত হয় এবং বিভিন্ন ভাষায় অনূদিত হতে থাকে।[] এর মূল বিষয়বস্তু হল জীবনের অর্থ, এবং "বিনোদনে মূল্যবোধ, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, একাধিক শব্দ, স্রষ্টা, ও দর্শনতাত্ত্বিক পদ্ধতি"।[]

ইতিহাস

সম্পাদনা
 
ক্যাম্পফায়ারের পাশে গল্পবলা।

গল্পবলার মাধ্যমে বা শব্দ, চিত্র বা ইঙ্গিতের মাধ্যমে ঘটনাবলী ও অভিজ্ঞতা প্রকাশের দ্বারা এক প্রজন্ম থেকে অন্য প্রজন্মের কাছে তাদের সাংস্কৃতিক মূল্যবোধ, ঐতিহ্য, ও ইতিহাস বিবৃত করে আসছে।[১০] তবে এটি একমাত্র উপায় না হলেও প্রাচীনকাল থেকে এটিই বিনোদনের গুরুত্বপূর্ণ রূপ। এখনো পূর্বের মতই গল্প বলা হয়, যেমন ক্যাম্পেইনে আগুনের চারপাশে বসে বা ভ্রমণকালীন অন্য সংস্কৃতির গল্প শুনা। প্রাচীন সময়ের গল্পবলার ধারা, এখন অবশ্য লেখার দ্বারা প্রকাশ করা হয়, তা সেসময়ে মূলত কথ্য রূপে ছিল এবং তাতেও বর্তমান সময়ের চলচ্চিত্র ও উপন্যাস উপভোগের মত একই উপাদান ছিল।[১১] গল্পবলা বিভিন্ন ভাবে বিবর্তিত ও পরিবর্তিত হয়েছে। অনেক বিনোদন, যেমন সঙ্গীত ও নাটক এখনো জনপ্রিয়, কিন্তু ব্যক্তিগত পছন্দ ও সাংস্কৃতিক অভিব্যক্তির সাথে সামঞ্জস্য রাখতে বিভিন্ন ভাবে পরিবর্তিত হয়েছে। অনেক ধরন আবার অন্য আরেক ধরনের সাথে যুক্ত হয়ে গেছে। যেমন, নাটক, গল্পবলা, গল্প, ও একসাথে খাদ্য গ্রহণ মূলত সঙ্গীতের আবেদন বৃদ্ধি করে; খেলাধুলা অন্য কাজের সাথে জড়িত হয়ে সে কাজের আবেদন বাড়ায়। কিছু বিনোদন বিভিন্ন প্রতিযোগিতার প্রয়োজনীয় কর্মকাণ্ড (দৌড়লাফ) থেকে এসেছে এবং পরে বিনোদনে রূপান্তরিত হয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, বলা হয় থাকে যে পোল ভল্টিং হয়ত নেদারল্যান্ডে উৎপত্তি হয়েছে, যেখানে মানুষজন কিছু পথ হেঁটে নিকটস্থ পুল ব্যবহার না করে লম্বা দণ্ড দিয়ে প্রশস্ত খাল পাড় হত। আবার অনেকে মনে করেন, পোল ভল্টিং যুদ্ধ চলাকালীন পরিখাসমূহ পাড় হতে ব্যবহৃত হত।[১২] এ ধরনের খেলায় অত্যাধুনিক সরঞ্জামাদি ব্যবহৃত হত। ভল্টিং দণ্ড মূলত ফ্রাক্সিনাস, হিকরি ও হেজেল গাছের কাঠ থেকে তৈরি করা হয়। ১৯শ শতাব্দীতে বাঁশ ব্যবহৃত হত এবং ২১শ শতাব্দীতে এসে এখন দণ্ডগুলো কার্বন ফাইবার দিয়ে তৈরি করা হয়।[১২] অন্যান্য কর্মকাণ্ড যেমন রণপা-এ হাঁটা এখনো সার্কাসে দেখা যায়। রোমান সাম্রাজ্য সময়ের জনপ্রিয় মল্লযুদ্ধ খেলা, শাস্তি, ও বিনোদনের সম্মিলিত রূপ।[১৩][১৪]

বিনোদন সামাজিক উত্থান, যেমন যুদ্ধ ও বিপ্লবের কারণে বিভিন্ন রূপ ও অভিব্যক্তিতে বিবর্তিত হয়েছে। উদাহরণস্বরুপ, চৈনিক সাংস্কৃতিক বিপ্লবের ফলে কমিউনিস্ট পার্টি অপেরাকে পৃষ্ঠপোষকতা প্রদান করে এবং প্রথম বিশ্বযুদ্ধ, মহামন্দারুশ বিপ্লব বিনোদনে প্রভাব বিস্তার করে।[১৫][১৬][১৭][১৮]

রাজসভায় বিনোদন

সম্পাদনা

সামন্ততান্ত্রিক ও রাজসভা পেশাদারী বিনোদনের প্রশিক্ষণ ক্ষেত্র ও পৃষ্ঠপোষকতা প্রদান করেছে। বিভিন্ন সংস্কৃতিতে রাজপ্রাসাদ, দুর্গ ও কেল্লা বিভিন্ন রকম ভাবে ব্যবহৃত হয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, মায়া সভ্যতায় রাজ্যসমূহে দর্শকেরা রাজপ্রাসাদের সামনে বড় চত্বরে আসত এবং তাদের সুবিধামত উঁচু স্থানে বসত যাতে দূর থেকেও দেখা যায়।[১৯] রাজসভার বিনোদনে বিভিন্ন সংস্কৃতির মিলন ঘটত। উদাহরণস্বরূপ, মুঘলরা প্রথম দরবার প্রথা চালু করে, এবং ব্রিটিশ সাম্রাজ্য সময়কালেও ভারতীয় এই প্রথা দেখা যায়।[২০] কোরিয়ায় রাজসভায় বিনোদনের উদ্দেশ্যে নৃত্য মূলত রাজসভার ভোজনালয়ে বিনোদনের স্থানে অনুষ্ঠিত হত।[২১]

জনসম্মুখে শাস্তিদান

সম্পাদনা

যদিও বিনোদনের বেশির ভাগ রুপই প্রবর্তিত হয়ে দীর্ঘ সময় পর্যন্ত চলেছে, একসময়ের কিছু জনপ্রিয় রূপ পরে আর গ্রহণযোগ্য হয়ে ওঠে নি। উদাহরণস্বরূপ, ইউরোপে প্রারম্ভিক কয়েক শতাব্দীতে অপরাধী ও সমাজচ্যুতদের শাস্তি প্রদানে অংশগ্রহণ করা বিনোদনের গ্রহণযোগ্য এবং জনপ্রিয় রূপ ছিল। অতীতে জনগণকে অপদস্ত করাও স্থানীয় বিনোদন হিসেবে গৃহীত হত। এমনকি ফাঁসিতে ঝুলিয়ে বা মস্তকচ্ছেদ করে মৃত্যুদন্ডও জনগণকে সতর্ক করে দেওয়ার জন্য প্রদর্শিত হত এবং তাও বিনোদনের অংশ হিসেবে গৃহীত হত। এই ধরনের শাস্তি বিনোদন হিসেবে ১৯শ শতাব্দী পর্যন্ত স্থায়ী ছিল এবং এরপর এই ধরনের জনসম্মুখে ফাঁসিতে ঝুলানো লেখক ও দার্শনিকদের কাছে ঘৃণ্য হয়ে ওঠে। চার্লস ডিকেন্সউইলিয়াম মেকপিস থেকারি ১৮৪০ সালে নিউগেট জেলে একটি ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যু সম্পর্কে লিখেন "প্রাণদণ্ড একপ্রকার কদর্য বিনোদন"।[২২]

শিশুতোষ

সম্পাদনা
 
পিয়েতার ব্রুজেল এর চিলড্রেন্‌স গেমস্‌ (১৫৬০)

শিশুতোষ বিনোদন মূলত খেলাধুলা কেন্দ্রিক এবং তা তাদের মানসিক বৃদ্ধি ও শিক্ষার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। শিশুদের জন্য বিনোদন বা বয়স্করা বিভিন্ন উপায়ে তাদের শিক্ষা দিয়ে থাকে, যেমন পুতুল, ভাঁড়, সঙ, এবং কার্টুন, যেসবের প্রতি শিশুদের আবেদন রয়েছে এবং বয়স্করাও তা উপভোগ করে।[২৩] [২৪]

শিশুরা সবসময় খেলাধুলা করতে ভালোবাসে। ইহা সর্বস্বীকৃত যে খেলাধুলা বিনোদনের পাশাপাশি শিশুদের বিকাশে সাহায্য করে। শিশুদের খেলাধুলা নিয়ে পিয়েতার ব্রুজেল দ্য এল্ডার এর ১৫৬০ সালে অঙ্কিত চিলড্রেন্‌স গেমস্‌ একটি প্রসিদ্ধ চিত্র। চিত্রে দেখা যায় শিশুরা বিভিন্ন রকম খেলায় মেতে আছে। শিশুদের কয়েকটি খেলার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল মার্বেল, লুকোচুরি, সাবানের ফেনা ছোড়া, অন্য কাউকে পিঠে বহন করা।

কৌতুকাভিনয়

সম্পাদনা

কৌতুকাভিনয় বিনোদনের ধরন ও উপাদান উভয়ই। এটি হাসি এবং পরিতৃপ্তি প্রদান করে। কৌতুকাভিনয় সাহিত্য, থিয়েটার, অপেরা, চলচ্চিত্র ও গেমসহ বিনোদনের বিভিন্ন রূপের গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। রাজদরবারে, যেমন বাইজেন্টাইন কোর্টে এবং বিত্তশালী বাড়িতে, মুখাভিনয় হিউমারের কেন্দ্রবিন্দু ছিল এবং শুধুমাত্র সম্রাট বা রাজকীয় পরিবারের সদস্যই নয় বরং রাজদরবারের সকলেই এতে আনন্দ পেত। মধ্যযুগীয় সময়ে, সকল কৌতুকাভিনয়ের ধরন, যেমন ভাঁড়, বিদূষক, কুঁজো, বামন, কৌতুকাভিনেতাদের "বোকা" ধরনে ফেলা হত, যারা সবসময় হাস্যকর হত তা নয়, তবে তারা মানুষের ক্রটি-বিচ্যুতিসমূহ তুলে ধরত।[২৫][২৬]

ক্রীড়া

সম্পাদনা

ক্রীড়া প্রতিযোগিতা সবসময় জনগণকে বিনোদন প্রদান করেছে। খেলোয়াড়দের থেকে দর্শকদের পৃথক করতে স্টেডিয়াম ও অডিটরিয়াম তৈরি করা হয়েছে। এছাড়া রেকর্ডিং ও সম্প্রচারের প্রযুক্তি খেলার স্থান থেকে দূরের দর্শকদেরও খেলা দেখার সুযোগ করে দিয়েছে। ফলে দর্শকের পরিমাণ পূর্বের থেকে বেড়েছে এবং এই ধরনের খেলাধুলা আরও জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। বৈশ্বিক আবেদেওনের প্রেক্ষিতে ফুটবল ও ক্রিকেট বর্তমান সময়ের সবচেয়ে জনপ্রিয় দুটি খেলা। এই দুই খেলার প্রধান আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতা বিশ্বকাপ এবং টেস্ট ক্রিকেট পৃথিবীর বহু দেশে সম্প্রচারিত হয়। খেলার সাথে জড়িতরা বিশ্বের কোটি কোটি মানুষের কাছে তাদের বিনোদনের প্রধান উৎস হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ।[২৭] এই দুই খেলার সাথে তুলনীয় এবং ক্রীড়ার দীর্ঘ রূপ ট্যুর ডি ফ্রান্স বৈশ্বিক আবেদন লাভ করেছে। খেলাটি বিশেষ কোন স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত না হয়ে স্টেডিয়ামের বাইরে কোন গ্রামাঞ্চলে অনুষ্ঠিত হয়।[২৮]

প্রদর্শন

সম্পাদনা

দর্শকদের সামনে সরাসরি উপস্থাপনা বিনোদনের একটি প্রধান রূপ, বিশেষ করে অভিনব কোন অডিও বা ভিডিও প্রদর্শন। এ ধরনের উপস্থাপনা বিভিন্ন রকমের হতে পারে, যেমন মঞ্চনাটক, সঙ্গীতনাটক। ১৬শ শতাব্দী এবং ১৭শ শতাব্দীতে ইউরোপীয় রাজদরবারে প্রদর্শিত মাস্ক ছিল এক ধরনের জটিল মঞ্চ বিনোদন, যেখানে নাচ, গান ও অভিনয় উপস্থাপিত হত। অপেরাও প্রদর্শনের জনপ্রিয় রূপ। অপেরার তিনটি রূপ রয়েছে, যেমন উচ্চাঙ্গ সঙ্গীত ও নাটকীয় দক্ষতা, সমন্বয় এবং মাস্কের মত নির্মাণ দক্ষতা।

দর্শকেরা হাততালির মাধ্যমে বিনোদন উপস্থাপনার প্রশংসা করেন। যাই হোক, সকল উপস্থাপকেরাই দর্শকের মনোযোগ ধরে রাখা এবং সর্বোপরি বিনোদন দানে অকৃতকার্য হওয়ার ঝুঁকিতে থাকেন। দর্শকের অসন্তুষ্টতা প্রদর্শনও অনেক সময় সরাসরি হয়ে থাকে।

গল্পবলা

সম্পাদনা

গল্পবলা বিনোদনের একটি প্রাচীন রূপ, যা অন্য সব রূপকে প্রভাবিত করে। এটা শুধু বিনোদনই নয়, বরং এটা মানবিক সংঘর্ষ ও বিরোধ নিয়েও ভাবায়। যদিও গল্প নির্দিষ্ট সংখ্যক শ্রোতার সামনে পেশ করা হয়, এগুলো বিনোদন হিসেবে উপস্থাপন করা হয় এবং চলচ্চিত্র, নাটক, বেলে এবং অপেরার সাথে সম্পর্ক স্থাপন করেই বর্ণনা করা হয়। লিখিত গল্প চিত্র ও ব্যাখ্যা এবং উচ্চ শিল্পমানসহ উপস্থাপন করা হয়, যেমন আলোকসজ্জিত পান্ডুলিপি এবং প্রাচীন নির্ঘন্টের আকারে, জাপানীরা করে থাকে।[২৯] গল্প বলা ভ্রমণরত অবস্থায় বিনোদনের একটি অন্যতম উপায়। জিওফ্রে চসার তার ১৪শ শতাব্দীর সাহিত্যকর্ম দ্য ক্যান্টারবেরি টেলস এবং য়ু চেং'আন তার ১৬শ শতাব্দীর জার্নি টু দ্য ওয়েস্ট গল্পে দেখিয়েছেন কীভাবে গল্প বলার মাধ্যমে সময় ক্ষেপণ এবং শ্রোতাদের বিনোদন দেওয়া যায়। যদিও প্রযুক্তিগত উন্নয়নের ফলে বর্তমানে ভ্রমণের সময় কমে এসেছে, তবুও গাড়ি এবং উড়োজাহাজে ভ্রমণরত যাত্রীদের কাছে মৌখিক বা প্রযুক্তির সাহায্যে কোন গল্প উপস্থাপন করা হয়।

চলচ্চিত্র

সম্পাদনা

চলচ্চিত্র বিনোদনের একটি অন্যতম রূপ। সকল চলচ্চিত্রের মূল উদ্দেশ্য বিনোদন হলেও প্রামাণ্য চলচ্চিত্র এর ব্যতিক্রম। প্রামাণ্য চলচ্চিত্রের উদ্দেশ্য হল নথি তৈরি করা বা কোন তথ্য জানানো, অথবা উভয়ই।[৩০] শুরু থেকেই এই মাধ্যম বৈশ্বিক ব্যবসায়ের উপাদান ছিল। লুমিয়েঁ ভাতৃদ্বয় প্রথম সারা বিশ্বে ক্যামেরাম্যান পাঠান মানুষের আগ্রহ রয়েছে এমন বিষয়ের ছবি তুলতে। ১৯০৮ সালে পাথে নিউজরিল চালু ও বণ্টন করেন, এবং প্রথম বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী সময়ে চলচ্চিত্র জনগণের বিনোদনের চাহিদা পূরণ করতে ভূমিকা রাখে। ২০শ শতাব্দীর প্রথম দশকে বিভিন্ন কল্পকাহিনী ও সংবাদচিত্রে সিনেমেটিক প্রোগ্রাম যুক্ত হতে থাকে।[৩১]

নৃত্য সাংস্কৃতিক উপস্থাপনের একটি রূপ, যেখানে শুধুমাত্র নৃত্যশিল্পীই নয়, নৃত্য পরিচালক, দর্শক, পৃষ্ঠপোষক ও জলসার পরিচালক থাকে, যারা পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসে।[৩২] আফ্রিকা, ইউরোপ, এশিয়া যেখানেরই হোক না কেন নৃত্য রাজনৈতিক, সামাজিক আধ্যাত্মিক ও শৈল্পিক অঙ্গনে প্রভাব বিস্তার করে আসছে।[৩৩] এমনকি নাচের ঐতিহ্য কোন নির্দিষ্ট সাংস্কৃতিক দলের মধ্যে সীমাবদ্ধ হলেও তার বিকাশ ঘটে। উদাহরণস্বরূপ, আফ্রিকার দাহোমিয়া নৃত্য, হাউসা নৃত্য, মাসাই নৃত্য ইত্যাদি।[৩৪]

মঞ্চনাটক

সম্পাদনা
 
১৮৭২ সালে লন্ডনের ভিক্টোরিয়া থিয়েটারে শনিবার রাতের দর্শক।

মঞ্চনাটক মূলত নাটকীয় বা সঙ্গীতধর্মী উপস্থাপন, যা দর্শকদের সামনে মঞ্চে প্রদর্শিত হয়। মঞ্চ নাটকের গোড়াপত্তন হয় হেলেনিস্টিক সময় থেকে যখন শীর্ষ সঙ্গীতজ্ঞ ও অভিনয়শিল্পীরা "কবিয়াল" এ অংশগ্রহণ করত, উদাহরণস্বরূপ "ডেলফি, ডেলস, ইফেসুস"।[৩৫] এরিস্টটল ও তার গুরু প্লাতো দুজনেই মঞ্চ নাটকের তত্ত্ব ও উদ্দেশ্য সম্পর্কে লিখেছেন। এরিস্টটল প্রশ্ন রাখেন, "চরিত্র রুপায়নে শিল্পকলার কাজ কি? যার উপর অনেক দায়ভার ন্যস্ত সে কি শুধু সেই উপস্থাপনা দেখবে নাকি সেও অংশগ্রহণ করবে এবং অভিনয় করবে? যারা অভিজাত নয় তাদের সামনে কি ধরনের বিনোদন প্রদর্শিত হবে?"[৩৬] পের্গামুমসেলেউসিড সাম্রাজ্য সময়ের মিশরের টলেমিদের মঞ্চ নাটকের প্রতি প্রবল ঝোঁক ছিল এবং পরে রোম সাম্রাজ্যের পৃষ্ঠপোষকতায় আরো বেশি ব্যয়বহুল মঞ্চ নাটক নির্মিত হত।[৩৭][৩৮]

সঙ্গীত

সম্পাদনা

সঙ্গীত অনেক ধরনের বিনোদন, বিশেষ করে প্রদর্শন কলার সহকারী উপাদান হিসেবে কাজ করে। উদাহরণস্বরূপ, সঙ্গীত গল্পবলাকে ত্বরান্বিত করে, নাচ ও অপেরার অপরিহার্য অংশ, এবং নাট্যধর্মী চলচ্চিত্র বা থিয়েটারে ব্যবহৃত হয়।[৩৯]

সঙ্গীত বিনোদনের সার্বজনীন ও জনপ্রিয় ধরন। তাল, যন্ত্র, উপস্থাপন এবং শৈলী অনুযায়ী গানকে বিভিন্ন ভাগে ভাগ করা হয়, যেমন ধ্রুপদী, জ্যাজ, লোক, রক, পপ, বা ঐতিহ্যবাহী। ২০শ শতাব্দী থেকে বিনোদন শিল্পের কল্যাণে একবার উপস্থাপিত বা প্রদর্শিত সঙ্গীত ধারণ করে বা সম্প্রচার করে সকলের কাছে স্বল্প ব্যয়ে পৌঁছে দেওয়া যাচ্ছে।

নিরাপত্তা

সম্পাদনা

কিছু বিনোদনে, যেমন বড় উৎসব (ধর্মীয় বা ধর্ম নিরপেক্ষ), কনসার্ট, ক্লাব, পার্টি এবং উদ্‌যাপন, বেশি মানুষ জড় হয়। প্রারম্ভিক সময় থেকেই বিনোদনে বেশি মানুষের কোলাহল হলে কোন না কোন ক্ষতি বা দুর্ঘটনা ঘটে আসছে, বিশেষ করে যেসব স্থানে বিনোদনের উৎস হিসেবে নেশা দ্রব্য, যেমন অ্যালকোহল, কেনাবেচা হয়। প্রাচীন গ্রিসে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটত, উদাহরণস্বরূপ রোমানদের সাতার্নালিয়া। অতিরিক্ত কোলাহলের ফলে সামাজিক বিশৃঙ্খলা দেখা দেয়, মাঝে মাঝে তা দুর্ঘটনা এমনকি মৃত্যু পর্যন্ত গড়ায়। এমন একটি উদাহরণ হল রক গানের উৎসব অ্যাল্টামন্ট ফ্রি কনসার্ট। নাইটক্লাবসমূহে সংগঠিত এমন কিছু ঘটনা হল ছত্রভঙ্গ; অতিরিক্ত কোলাহল; সন্ত্রাসবাদ; যেমন ২০০২ বালি বোমা হামলা, এবং বিশেষ করে আগুন লাগা।

আরও দেখুন

সম্পাদনা

তথ্যসূত্র

সম্পাদনা
  1. Bryant, Jennings; Vorderer, Peter (২০০৬)। Psychology of Entertainment (ইংরেজি ভাষায়)। Mahwah, New Jersey: Lawrence Erlbaum Associates, Inc। পৃষ্ঠা 367–434। আইএসবিএন 0-8058-5238-7 
  2. Sayre, Shay; King, Cynthia (২০১০)। Entertainment and Society: Influences, Impacts, and Innovations (Google eBook) (2nd সংস্করণ)। Oxon, New York: Routledge। আইএসবিএন 0-415-99806-9  p. 22.
  3. Frost, Warwick, সম্পাদক (২০১১)। Conservation, Education, Entertainment? (ইংরেজি ভাষায়)। Channel View Publication। আইএসবিএন 978-1-84541-164-0 
  4. Macleod, Suzanne; Watson, Sheila (২০০৭)। Knell, Simon J., সম্পাদক। Museum Revolutions (ইংরেজি ভাষায়)। Oxon, New York: Routledge। আইএসবিএন 0-203-93264-1 
  5. Irwin, William, সম্পাদক (২০০২)। The Matrix and Philosophy (ইংরেজি ভাষায়)। Peru, Illinois: Carus Publishing Company। পৃষ্ঠা 196। আইএসবিএন 0-8126-9502-X 
  6. IMDb The Matrix worldwide release dates
  7. Jones, Peter (১৯৭৫)। Philosophy and the Novel (ইংরেজি ভাষায়)। Oxford, Clarendon। 
  8. Simpson, M. J. (২০০৫)। The Pocket Essential Hitchhiker's Guide (ইংরেজি ভাষায়) (2nd সংস্করণ)। Pocket Essentials। পৃষ্ঠা 120। আইএসবিএন 1-904048-46-3 
  9. Joll, Nicholas, সম্পাদক (২০১২)। Philosophy and The Hitchhiker's Guide to the Galaxy (ইংরেজি ভাষায়)। Houndmills, Basingstoke, Hampshire; New York: Palgrave Macmillan। আইএসবিএন 978-0-230-29112-6 
  10. Gakhar, Sonia (২০০৭)। The influence of storytelling on pre-service students' attitudes and intentions (MSc Thesis) (ইংরেজি ভাষায়)। Iowa State University। 
  11. Kuhns, Richard Francis (২০০৫)। Decameron and the Philosophy of Storytelling: Author as Midwife and Pimp (ইংরেজি ভাষায়)। New York; Chichester West Sussex: Columbia University Press। পৃষ্ঠা 7আইএসবিএন 0-231-13608-0 
  12. Carlsen, Spike (২০০৯)। A Splintered History of Wood (ইংরেজি ভাষায়)। New York: Harper Perennial। পৃষ্ঠা 170আইএসবিএন 978-0-06-137356-5 
  13. Dunkle, Roger (2008), Gladiators: violence and spectacle in ancient Rome, Harlow, England; New York: Pearson/Longman, আইএসবিএন ৯৭৮১৪০৫৮০৭৩৯৫
  14. Wiseman, Douglas C. (1977), Medieval Sport: Quest for Survival, Distributed by ERIC Clearinghouse Microfiche
  15. Roshwald, Aviel; Stites, Richard (২০০২)। European Culture in the Great War: The Arts, Entertainment and Propaganda, 1914–1918 (ইংরেজি ভাষায়)। Cambridge University Press। আইএসবিএন 0-521-57015-8 
  16. Heinrich, Anselm (Meech, Tony, ed.) (২০০৭)। Entertainment, propaganda, education: regional theatre in Germany and Britain between 1918 and 1945. Hatfield, England (ইংরেজি ভাষায়)। University of Hertfordshire Press। আইএসবিএন 978-1-902806-74-7 
  17. Arthur, Max (২০০১)। When this bloody war is over: soldiers' songs from the First World War (ইংরেজি ভাষায়)। London: Piatkus। আইএসবিএন 0-7499-2252-4 
  18. Laing, Dave; Oliver, Paul; Wicke, Peter (Horn, David, ed.) (২০০৩)। Continuum Encyclopedia of Popular Music of the World Part 1 Media, Industry, Society (ইংরেজি ভাষায়)। Continuum। আইএসবিএন 0-8264-6321-5 
  19. Walthall, Anne, ed. (২০০৮)। Servants of the Dynasty: Palace Women in World History (ইংরেজি ভাষায়)। London, England: University of California Press। পৃষ্ঠা 4–5। আইএসবিএন 978-0-520-25443-5 
  20. Allen, Charles; Dwivedi, Sharada (১৯৮৪)। Lives of the Indian Princes (ইংরেজি ভাষায়)। London: Century Publishing। পৃষ্ঠা 210আইএসবিএন 0-7126-0910-5 
  21. Van Zile, Judy (২০০১)। Perspectives on Korean Dance (ইংরেজি ভাষায়)। Middletown, Connecticut: Wesleyan University Press। পৃষ্ঠা 36আইএসবিএন 0-8195-6494-X 
  22. Gay, Peter (২০০২)। Schnitzler's Century – The making of middle-class culture 1815–1914 (ইংরেজি ভাষায়)। New York, London: W.W. Norton & Co.। পৃষ্ঠা 121আইএসবিএন 0-393-32363-3 
  23. O'Brien, John (২০০৪)। Harlequin Britain: Pantomime and Entertainment, 1690–1760 (ইংরেজি ভাষায়)। Baltimore: The Johns Hopkins University Press। আইএসবিএন 0-8018-7910-8 
  24. Geipel, John (১৯৭২)। The cartoon: a short history of graphic comedy and satire (ইংরেজি ভাষায়)। Newton Abbot: David & Charles। আইএসবিএন 0-7153-5328-4 
  25. Hokenson, Jan Walsh (২০০৬)। The Idea of Comedy: History, Theory, Critique (ইংরেজি ভাষায়)। Cranbury, New Jersey: Rosemont Publishing and Printing Corp। পৃষ্ঠা 150–1। আইএসবিএন 0-8386-4096-6 
  26. Hornback, Robert (২০০৯)। The English clown tradition from the middle ages to Shakespeare (ইংরেজি ভাষায়)। Woodbridge Suffolk, Rochester, New York: D.S. Brewer। আইএসবিএন 978-1-84384-200-2 
  27. Hardy, Stephen; Sutton, William Anthony (২০০৭)। Mullin, Bernard James, সম্পাদক। Sport Marketing (ইংরেজি ভাষায়)। Human Kinetics। আইএসবিএন 978-0-7360-6052-3 
  28. Thompson, Christopher S. (২০০৮)। The Tour de France: A Cultural History (ইংরেজি ভাষায়)। Berkeley, Los Angeles, London: University of California Press। আইএসবিএন 978-0-520-25630-9 
  29. Watanabe, Masako (২০১১)। Storytelling in Japanese Art (ইংরেজি ভাষায়)। New York: Metropolitan Museum of Art। আইএসবিএন 978-0-300-17590-5 
  30. Wyver, John (1989). The Moving Image: An International History of Film, Television, and Video. John Wiley & Sons, Limited. আইএসবিএন ০-৬৩১-১৬৮২১-৪.
  31. Paris, Michael, ed. (1999). The First World War and popular Cinema. Edinburgh: Edinburgh University Press. আইএসবিএন ০-৮১৩৫-২৮২৪-০. p. 9.
  32. Albright, Ann Cooper (2001). Dils, Ann, ed. Moving History/Dancing Cultures: A Dance History Reader. Durham, North Carolina: Wesleyan University Press. আইএসবিএন ০-৮১৯৫-৬৪১২-৫. p. xviii.
  33. Dils & Albright (2001), p. 96.
  34. Dils & Albright (2001), p. 34.
  35. McDonald, Marianne and Walton, J. Michael, সম্পাদকগণ (২০০৭)। The Cambridge companion to Greek and Roman theatre। Cambridge; New York: Cambridge University Press। আইএসবিএন 0-521-83456-2  p. 26.
  36. McDonald & Walton (2007), p. 93.
  37. McDonald & Walton (2007), p. 26.
  38. Milling, Jane; Donohue, Joseph W.; Thomson, Peter, সম্পাদকগণ (২০০৫)। The Cambridge History of British Theatre (ইংরেজি ভাষায়)। Cambridge University Press (3 volumes)। আইএসবিএন 0-521-82790-6 
  39. Griffiths, Paul (২০০৬)। A concise history of western music (ইংরেজি ভাষায়)। New York: Cambridge University Press। আইএসবিএন 978-0-521-84294-5