ইস্পাহান
এসফাহন [২] (প্রাচীন ফার্সি ভাষায়: অ্যাস্প্যাদ্যান্যা, মধ্য ফার্সি ভাষায়: স্প্যাহন্, ফার্সি ভাষায়: اصفهان এস্ফ়্যাহন্) তেহরান শহরের ৩৪০ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থিত ইরানের তৃতীয় বৃহত্তম নগরী।
Isfahan Esfahan | |
---|---|
Ancient names: Spadana, Spahan, Sepahan, Espahan | |
From Upper to down:Chehel Sotoon, Ali Qapu Palace, Naqsh-e Jahan Square, Chahar Bagh School and 33 Bridge. | |
ডাকনাম: Nesfe Jahan (Half of the world) | |
Isfahan | |
Isfahan in Iran | |
স্থানাঙ্ক: ৩২°৩৮′ উত্তর ৫১°৩৯′ পূর্ব / ৩২.৬৩৩° উত্তর ৫১.৬৫০° পূর্ব | |
Country | ইরান |
Province | Isfahan |
County | Isfahan |
District | Central |
সরকার | |
• Mayor | Cyrus Sadeghi |
আয়তন | |
• মোট | ১,০৬,১৭৯ বর্গকিমি (৪০,৯৯৬ বর্গমাইল) |
উচ্চতা | ১,৫৯০ মিটার (৫,২১৭ ফুট) |
জনসংখ্যা (2006) | |
• মোট | ১৫,৮৩,৬০৯ |
• Population Rank in Iran | ৩rd |
Population Data from 2006 Census[১] | |
সময় অঞ্চল | IRST (ইউটিসি+3:30) |
• গ্রীষ্মকালীন (দিসস) | March 21 - September 20 (?) (ইউটিসি+4:30) |
ওয়েবসাইট | http://www.Isfahan.ir |
একসময় এসফাহন বিশ্বের বড় শহরগুলোর মধ্যে অন্যতম ছিল । ১০৫০ থেকে ১৭২২ খৃষ্টাব্দ পর্যন্ত ছিল এর সমৃদ্ধিকাল। সাফাভিদ সাম্রাজ্যের সময়কালে এসফাহন শৌর্যের শীর্ষে পৌঁছে। সেসময় দ্বিতীয়বারের মত এসফাহন পারস্যের রাজধানীর মর্যাদা পায়।
অনন্য ইসলামী স্থাপত্য, ছাদ ঢাকা সেতু, মসজিদ ও মিনারের অসাধারণ সৌন্দর্য আজও এসফাহনকে আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত করে রেখেছে। এসফাহনের সৌন্দর্য কিংবদন্তীতুল্য। ইরানে প্রবাদ প্রচলিত আছে "এসফাহন নেস্ফে জাহন আস্ত" যার অর্থ "এসফাহন পৃথিবীর অর্ধেক"।[৩] বিখ্যাত ভ্রমণপ্রিয় ফরাসি লেখক অঁদ্রে মালরো লিখেছিলেন:
“ | Qui peut prétendre avoir vu la plus belle ville du monde sans avoir visité Ispahan?[৪] | ” |
অর্থাৎ "কে দাবী করতে পারে সে পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর শহর দেখেছে, যে এখনও এসফাহনে যায়নি?" মালরো এসফাহনকে "l'une des trois plus belles villes du monde", অর্থাৎ "বিশ্বের সবচেয়ে সুন্দর তিনটি শহরের একটি" বলে আখ্যা দিয়েছিলেন।[৫]
নাক্শ-এ-জাহান চত্বর (ميدان نقش جهان ম্যাইদনে ন্যাগ়্শে জ্যাহন্) বিশ্বের সবচয়ে বড় চত্বরগুলোর মধ্যে অন্যতম। ইউনেস্কো এটিকে একটি বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান হিসেবে ঘোষণা করেছে।
ভৌগোলিক অবস্থান ও জলবায়ু
এসফাহন জাগ্রোস পর্বতমালার পাদদেশে জায়েন্দে নদীর তীরে অবস্থিত। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে এটি ১৫৯০ মিটার উপরে অবস্থিত। বাৎসরিক গড় বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ৩৫৫ মিমি। তাপমাত্রা মোটামুটি ২ থেকে ২৮ ডিগ্রী সেলসিয়াসে মধ্যে থাকে। সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪২ ডিগ্রী সেলসিয়াস আর সর্বনিম্ন -১৯ ডিগ্রী সেলসিয়াস।
ইতিহাস
প্রাচীন ইতিহাস
এসফাহনের ইতিহাসের সূচনা প্রাচীন প্রস্তর যুগে। নৃতত্ত্ববিদেয়া এখানে প্রাচীন প্রস্তরযুগীয়, নব্য প্রস্তরযুগীয়, ব্রোঞ্জ এবং লৌহযুগীয় নিদর্শনের সন্ধান পেয়েছেন।
এলামীয় সাম্রাজ্য
প্রাচীন এসফাহন এলামীয় সাম্রাজ্যের অংশ ছিল। মেদিয়ান গোত্রের অধীনে শহরটির নাম ছিল আসপানদানা। ম্যাসেডোনীয় দখল থেকে আর্সাসিডরা ইরানকে মুক্ত করার পর এটি পার্থীয় সাম্রাজ্যভুক্ত হয়। সাসানিদ যুগে এসফাহন শাসন করতেন "ইসফুরান" বা সাতটি অভিজাত পরিবারের সদস্যরা। এসময় এসফাহন সামরিক দিক দিয়ে বেশ শক্তিশালী হয়ে উঠে। আরবদের কাছে ইরানীদের সর্বশেষ পরাজয়ের পর এসফাহন আরবদের পদানত হয় ।
ইসলামী যুগ
আব্বাসী বংশের শাসক আল-মনসুরের আগে এসফাহন অল্পদিনের জন্য আরবদের পদানত ছিল। সেলজুক বংশের মালিক শাহের শাসনামলে এসফাহন পুনরায় রাজধানীর মর্যাদা পায়। এ সময়টা ছিল এসফাহনের স্বর্ণযুগ। দার্শনিক ইবনে সিনা ১১শ শতকে এসফাহনে শিক্ষকতায় নিয়োজিত ছিলেন।
ত্রয়োদশ শতকে মঙ্গোলদের অভিযানে এসফাহনের অধিকাংশ অধিবাসী গণহত্যার শিকার হয়। ১৩৮৭ সালে তৈমুর লঙ পুনরায় এসফাহনে অভিযান চালালে এসফাহন অনেকাংশে তার গুরুত্ব হারিয়ে ফেলে ।
কিন্তু সাফাভিদ শাসকেরা পুনরায় এসফাহনের স্বর্ণযুগ ফিরিয়ে আনেন। ষোড়শ শতকে সাফাভিদ শাসক মহান শাহ আব্বাস (১৫৮৭-১৬২৯)-এর সময়কালে এসফাহন পুনরায় পারস্যের রাজধানীতে পরিণত হয়। এ সময়কালে এসফাহন সমৃদ্ধির শীর্ষে পৌঁছে যায়। এসফাহনের পার্ক, পাঠাগার, মসজিদ, স্থাপনা ইউরোপীয়দের অবাক করে দেয়। এসময় এসফাহনে ১৬৩টি মসজিদ , ৪৮টি ধর্মীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ১৮০১টি দোকান এবং ২৬৩টি হাম্মামখানা নির্মিত হয়।
আধুনিক যুগ
বর্তমানে এসফাহন ইরানের তৃতীয় বৃহত্তম নগরী। শহরটি শতরঞ্চি এ গালিচা (কার্পেট), বস্ত্র, ইস্পাত এবং বিধি হস্তশিল্পের জন্য বিখ্যাত। এখানে পারমাণবিক জ্বালানি উৎপাদনের চুল্লী রয়েছে। ইউরেনিয়ামকে এখানে ইউরেনিয়াম হেক্সাফ্লুরাইডে পরিণত করা হয় ।[৬]
এসফাহনের অনুকূল অর্থনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক পরিমন্ডলে গড়ে উঠেছে ২০০০টির বেশি শিল্প প্রতিষ্ঠান। ইরানের বড় তেল শোধনাগার এবং গুরুত্বপূর্ণ বিমান ঘাঁটি এখানে অবস্থিত । ইরানের সবচয়ে উন্নত উড়োজাহাজ তৈরির কারখানাটিও এখানে অবস্থিত। এখানে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর রয়েছে। এসফাহন মেট্রো তৈরির কাজ শেষ পর্যায়ে রয়েছে । ২০০৭ সালে এসফাহনে আন্তর্জাতিক পদার্থবিজ্ঞান অলিম্পিয়াড অনুষ্ঠিত হয়।
সংস্কৃতি
স্থাপত্য
ঐতিহাসিক স্থাপনাসমূহ
- স্কয়ার এবং রাজপথ
- নাখ্শ-এ-জাহান চত্বর (ইমাম চত্বর) - ১৬০২
- মেইদনে কোহনে (পুরাতন চত্বর)
- শাহেনশাহ চত্বর
- চহারবাগ বুলভার - ১৫৯৬
- প্রাসাদ
- আলি কাপু (রাজকীয় প্রাসাদ) - ১৭ শতকের গোড়ার দিকে
- তালার আশরাফ- ১৬৫০
- হাশত বেহেশত (আট স্বর্গের প্রাসাদ) - ১৬৬৯
- চেহেল সুতুন (চল্লিশ স্তম্ভের প্রাসাদ) - ১৬৪৭
- মাদ্রাসা (ধর্মীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান)
- মাদ্রাসায়ে সাদ্র
- ইমাম জাফর সাদেক মাদ্রাসা
- মাদ্রাসায়ে খাজু
- মসজিদ
- ইমাম মসজিদ
- শেইখ লোতফোল্লাহ মসজিদ
- জামে মসজিদ
- জুম'আ মসজিদ
- ক্যারাভানসারি
- শাহ ক্যারাভানসারি
- সেতু
- শাহরেস্তান সেতু
- পোলে খাজু - ১৬৫০ খাজু সেতু
- সি-ও-সে পোল (The Bridge of 33 Arches) - ১৬০২
- পোলে চুবি
- গির্জা ও ক্যাথেড্রাল
- ভানক ক্যাথেড্রাল- ১৭ শতক ভানক ক্যাথেড্রাল
- কেলিসায়ে মারিয়াম (Maryam Church)
- অন্যান্য স্থাপনা
- অতাশগহে এসফাহন (Atashgah- জরথুষ্ট্রীয় অগ্নি-উপাসনা মন্দির])
- বুকেয়ে ইবনে সিনা (Avicenna's Dome) - ১২ শতক
- নিজাম-উল-মূলক এবং মালেক শাহর মাজার - ১২ ও ১৮ শতক
- নিউ জুলফা (The Armenian Quarter)
- শেখ বাহাই হাম্মামখানা
- পিজিওন টাওয়ার- ১৭ শতক পিজিয়ন হাউস
- মানার জমবান (একটি বিখ্যাত মিনার)
গালিচা শিল্প
সাফাভিদ শাসনামলে এসফাহনে গালিচা শিল্প গড়ে উঠে। কিন্তু আফগান আগ্রাসনের পর এটি স্তিমিত হয়ে যায়। ১৯২০ সালের দিকে গালিচা শিল্পের পুনর্জাগরণ হয়। এসফাহনীরা সাফাভিদ আমলের নকশা অনুসরণ করে গালিচা বুনতে শুরু করেন। হাতির দাঁত রঙের পটের, নীল-লাল গোলাপ নকশার মোটিফে গড়া এসফাহনী গালিচার খ্যাতি বিশ্বজোড়া। গালিচাগুলোর নকশা খুবই সুষম।
বিখ্যাত ব্যাক্তিত্ব
- শিল্পী
- আলীরেজা ইফতেখারি, ১৯৫৬-, জনপ্রিয় এবং ক্লাসিকালসঙ্গীতের গায়ক
- রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব
- আহমাদ আমির আহমাদি, ১৯০৬-১৯৬৫, সামরিক নেতা এবং ইরানী মন্ত্রী
- মোহসেন নুরবাখশ, ১৯৪৮-২০০৩, অর্থনীতিবিদ , ইরান সেন্ট্রাল ব্যাংকের গভর্নর
- ধর্মীয় ব্যাক্তিত্ব
- আয়াতুল্লাহ মোহাম্মাদ বেহেশতী, ১৯২৮-১৯৮১, ধর্মীয় নেতা , চেয়ারম্যান , কাউন্সিল অব রেভ্যুলেশন ইন ইরান
- খেলোয়াড়
- মোহাররাম নাভিদকিয়া, ক্যাপ্টেন , সেপাহান ফুটবল ক্লাব
- রাহমান রাজায়ি,বিখ্যাত ফুটবলার , এএস লিভোর্নো
- লেখক এবং কবি
- হামিদ মোসাদেক, ১৯৩৯-১৯৯৮,কবি এবং আইনজীবি
- হাসান সাফদারি , কবি এবং লেখক
- অন্যান্য
- আর্থার পোপ, ১৮৮১-১৯৬৯, মার্কিন নৃতত্ত্ববিদ
শিক্ষা
বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান ছাড়াও এসফাহন শহরের প্রধান বিশ্ববিদ্যালয়গুলো হল :
- বিশ্ববিদ্যালয়
- এসফাহন ইউনিভার্সিটি অফ মেডিকেল সায়েন্স
- এসফাহন ইউনিভার্সিটি অফ টেকনোলোজি
- ইউনিভার্সিটি অফ এসফাহন
- এসফাহন ইউনিভার্সিটি অফ আর্ট
খেলাধুলা
ইরানীয় প্রিমিয়ার ফুটবল লীগ শিরোপো প্রত্যাশী এসফাহনের শক্তিশালী দু'টি ফুটবল ক্লাব রয়েছে যারা হল:
সহযোগী শহর
গ্যালারি
-
হাশত-বেহেশত প্রাসাদের ছাদ
-
শাহ মসজিদ
-
শাহ মসজিদের মিনার
-
জামে মসজিদ
-
জামে মসজিদের দক্ষিণ প্বার্শ
-
জায়েন্দে নদীর উপরে বিখ্যাতসি-ও-সে পোল সাফাভিদ আমলের সেতুগুলোর নিদর্শন হয়ে আছে
-
রাতে সি-ও-সে পোল
-
"খাজু সেতু"
-
মামান সেতু
-
ভানক ক্যাথেড্রাল
-
হস্তচিত্র
পাদটীকা ও তথ্যসূত্র
- ↑ Census (from the Statistical Center of Iran, in Persian.)</
- ↑ "ইসফাহান" বা "ইস্পাহান" বানানও প্রচলিত।
- ↑ "Isfahan Is Half The World" - সাউদি আরামকো
- ↑ ১৯২৫ সালে Indochine নামের একটি দৈনিকে মোরিস সাঁত-রোজ ছদ্মনামে মালরো L'expidition d'Ispahan শিরোনামের একটি প্রবন্ধে এ কথা লেখেন।
- ↑ মালরোর স্ত্রী ক্লারা মালরোর ভাষ্য অনুযায়ী। সূত্র: http://www.amiscorbin.com/textes/francais/malraux.htm
- ↑ Iran - is military action feasible? - দ্য ডেইলি টেলিগ্রাফ, ২৫ জানুয়ারি,২০০৬
- ↑ "Isfahan, Beirut named sister cities" (English ভাষায়)। MNA। সংগ্রহের তারিখ ২০০৭-০৫-০২।
- ↑ "Sisterhoods"। Isfahan Islamic Council। ২০০৫। সংগ্রহের তারিখ ২০০৭-১২-৩১।
বহিঃসংযোগ
- সরকারী ওয়েবসাইট
- অন্যান্য ওয়েবসাইট