এস এম সুলতান: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য
বিষয়বস্তু বিয়োগ হয়েছে বিষয়বস্তু যোগ হয়েছে
অ →পাকিস্তান (১৯৪৭-১৯৭১): চিত্র |
অ 103.202.223.37 (আলাপ)-এর সম্পাদিত সংস্করণ হতে Moheen-এর সম্পাদিত সর্বশেষ সংস্করণে ফেরত ট্যাগ: পুনর্বহাল |
||
(৬ জন ব্যবহারকারী দ্বারা সম্পাদিত ৮টি মধ্যবর্তী সংশোধন দেখানো হচ্ছে না) | |||
৭ নং লাইন:
| birth_date = {{জন্ম তারিখ|mf=yes|১৯২৩|০৮|১০}}
| birth_place = মাসিমদিয়া, [[নড়াইল]], [[ব্রিটিশ ভারত]]
| death_date
| death_place
| resting_place
| resting_place_coordinates = {{Coord|23.1581796|89.5009485|type:landmark|display=inline}}
| nationality
| alma_mater = [[গভর্নমেন্ট কলেজ অব আর্ট অ্যান্ড ক্র্যাফট, কলকাতা|কলকাতা আর্ট স্কুল]]
| known_for = চিত্রাঙ্কন, অঙ্কন
| notable_works = ''[[প্রথম বৃক্ষরোপণ]]'' (১৯৭৫)<br />
''[[জমি চাষ]]'' (১৯৮৬)<br />
''[[বন্যার পর]]'' (১৯৮৬)
২৩ ⟶ ২২ নং লাইন:
| father = শেখ মেছের মিয়া
| mother = মোছাম্মদ মেহেরুননেসা
| awards = {{awd |award=[[একুশে পদক]] |year=১৯৮২}}
{{awd |award=[[স্বাধীনতা দিবস পুরস্কার]] |year=১৯৯৩}}
| signature =
| signature_type =
| signature_size =
| signature_alt =
৪৬ ⟶ ৪৪ নং লাইন:
== জীবনী ==
=== প্রাথমিক জীবন ===
[[চিত্র:আত্মপ্রতিকৃতি, এস এম সুলতান.jpg|থাম্ব|বাম|''আত্মপ্রতিকৃতি'']]▼
শেখ মোহাম্মদ সুলতান ১৯২৩ সালের ১০ আগস্ট তৎকালীন [[পূর্ব বাংলা]], [[ব্রিটিশ ভারত|ব্রিটিশ ভারতের]] (বর্তমান [[বাংলাদেশ]]) [[নড়াইল জেলা|নড়াইলের]] মাসিমদিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।{{r|বাংলাপিডিয়া}}{{sfn|খান|২০০৩|pp=৩১}} তার পৈতৃক ভিটা পুরুলিয়া গ্রামে।{{r|ইশতিয়াক}} তার জন্ম হয়েছিল দরিদ্র কৃষক-পরিবারে।{{r|বাংলাপিডিয়া}} তার মায়ের নাম মোছাম্মদ মেহেরুননেসা। তার বাবা শেখ মেছের মিয়া{{sfn|ইসলাম|২০০৯|pp=৯}} পেশায় ছিলেন [[রাজমিস্ত্রির কাজ|রাজমিস্ত্রী]]।{{r|সাক্ষাতকার}}{{sfn|খান|২০০৩|pp=১৩৫}} সুলতানে একমাত্র বোন ফুলমণি। তবে কৃষিকাজই ছিল তার বাবার মূল পেশা, পাশাপাশি বাড়তি আয়ের জন্য [[ঘরামি|ঘরামির]] কাজ করতেন।{{r|গাফফার}} সুলতান ছিলেন পরিবারের একমাত্র সন্তান।{{sfn|খান|২০০৩|pp=৩১}}{{r|যুগান্তর}} শৈশবে পরিবারের সবাই তাকে ''লাল মিয়া'' বলে ডাকতো।{{r|বাংলাপিডিয়া}}{{sfn|হাই|২০১৮|pp=১৪৫}} বিদ্যালয়ে পড়ানোর মত সামর্থ্য তার পরিবারের না থাকলেও ১৯২৯ সালে পাঁচ বছর বয়সে রূপগঞ্জ বাজারের জি টি স্কুলের নিকট একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রথম শ্রেণীতে তাকে ভর্তি করানো হয়।{{sfn|ইসলাম|২০০৯|pp=১১}} সে বছরই আজানা অসুখে সুলতানের মা মারা যান।{{sfn|ইসলাম|২০০৯|pp=১১}} এ সময় পিতার রাজমিস্ত্রির কাজের সহকারি হিসেবে অবসরে ছবি আঁকতেন সুলতান। ছবি আঁকার প্রতিভার কারণে শৈশব থেকেই তিনি এলাকার [[জমিদার]] ধীরেন্দ্রনাথ রায়ের স্নেহভাজন হয়ে উঠেন।{{r|রহমান}} ধীরেন্দ্রনাথের ভাইয়ের ছেলে অরুণ রায় তখন [[গভর্নমেন্ট কলেজ অব আর্ট অ্যান্ড ক্র্যাফট, কলকাতা|কলকাতা আর্ট স্কুলের]] ছাত্র। সুলতানের আঁকা দেখে শিল্পী অরুণ রায় তাকে ছবি আঁকতে অনুপ্রেরণা যোগান এবং তিনি সুলতানকে ছবি আঁকা শিখাতে শুরু করেন।{{sfn|হাই|২০১৮|pp=১৩৬}} সুলতানকে তিনি কলকাতা থেকে ছবি আঁকার সরঞ্জাম সরবরাহ করতেন।{{sfn|ইসলাম|২০০৯|pp=১১}} বাল্যবয়সেই অরুণ রায়ের মাধ্যমে পুরানো মাস্টারপিস চিত্রকর্মগুলি দেখার সুযোগ ঘটেছিল সুলতানের।{{r|প্রহর-স্টার}} ১৯৩৩ সালে পঞ্চম শ্রেণীতে সুলতান প্রথম স্থান অর্জন করেন।{{sfn|ইসলাম|২০০৯|pp=১১, ৭৪}} ১৯৩৪ সালে, সুলতান [[নড়াইল ভিক্টোরিয়া কলেজিয়েট উচ্চ বিদ্যালয়|নড়াইলে ভিক্টোরিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ে]] ৬ষ্ঠ শ্রেণীতে ভর্তি হন।{{sfn|ইসলাম|২০০৯|pp=১১, ৭৪}}{{r|বাংলাপিডিয়া}}{{r|গাফফার}} সে বছর রাজনীতিবিদ [[আশুতোষ মুখোপাধ্যায়|স্যার আশুতোষ মুখোপাধ্যায়ের]] ছেলে শিক্ষাবিদ শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জি নড়াইলে বঙ্গীয় সাহিত্য সম্মেলনে যোগ দিতে আসেন। সে সময় তিনি নড়াইলে ভিক্টোরিয়া উচ্চ বিদ্যালয় পরিদর্শনে এলে সুলতান তার একটি পেন্সিল স্কেচ আঁকেন।{{sfn|ইসলাম|২০০৯|pp=১১, ২০}}{{r|রহমান}} শাম্যপ্রসাদ তার আঁকা পেন্সিল স্কেচ দেখে বিশেষভাবে আকৃষ্ট হন এবং এই পেন্সিল স্কেচের মাধ্যমেই শিল্পী হিসেবে সুলতানের প্রথম আত্মপ্রকাশ ঘটে।{{sfn|খান|২০০৩|pp=১৩৫}}{{r|বিডিনিউজ-শিশু স্বর্গ}} ১৯৩৪ সালে সুলতানের বাবা দ্বিতীয় বিবাহ করেন। এরপর সৎমায়ের পরামর্শে তাকে নাকসী এ বি এস জুনিয়র মাদ্রাসায় পুনরায় ৬ষ্ঠ শ্রেণীতে ভর্তি করানো হয়। তবে মাদ্রাসা শিক্ষায় সুলতানের মন বসত না।{{sfn|ইসলাম|২০০৯|pp=১৩}} এসময় ভিক্টোরিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিল্পী কৃষ্ণনাথ ভট্টাচার্যের সাথে সুলতানের সাক্ষাত ঘটে। এরপর তিনি আবার ভিক্টোরিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ে ভর্তি হন।{{sfn|ইসলাম|২০০৯|pp=১২}} এসময় বাবার ইমারত তৈরির কাজ সুলতানকে প্রভাবিত করে এবং তিনি রাজমিস্ত্রীর কাজের ফাঁকে আঁকাআঁকি শুরু করেন। [[কাঠকয়লা]] দিয়ে আঁকার প্রতিটি সুযোগ তিনি কাজে লাগান।{{sfn|জার্মান সাংস্কৃতিক ইনস্টিটিউট|১৯৮৭|pp=১১–৩৫}} তার বাবার এই পেশাই সুলতানের ভেতরে শিল্পীসত্তার জন্ম দেয়।{{r|গাফফার-কিআ}} সুলতানের বাল্যবয়সের চরিত্র-গঠন সম্পর্কে [[আহমদ ছফা]] লিখেছেন: "কোনো কোনো মানুষ জন্মায়, জন্মের সীমানা যাদের ধরে রাখতে পারে না। অথচ যাদের সবাইকে ক্ষণজন্মাও বলা যাবে না। এরকম অদ্ভুত প্রকৃতির শিশু অনেক জন্মগ্রহণ করে জগতে, জন্মের বন্ধন ছিন্ন করার জন্য যাদের রয়েছে এক স্বাভাবিক আকুতি। ...শেখ মুহাম্মদ সুলতান সে সৌভাগ্যের বরে ভাগ্যবান, আবার সে দুর্ভাগ্যের অভিশাপে অভিশপ্ত।"{{sfn|ছফা|১৯৮১|pp=}}{{r|ইশতিয়াক}} ১৯৩৭ সালে অষ্টম শ্রেণীতে উত্তীর্ণ হয়ে কৃষ্ণনাথ ভট্টাচার্যের সাথে সুলতান [[কলকাতা]] ভ্রমণে যান।{{sfn|ইসলাম|২০০৯|pp=২১, ৭৫}} গতানুগতিক পড়াশোনার প্রতি সুলতানের আগ্রহ না থাকায় ১৯৩৮ সালে তিনি বিদ্যালয় ত্যাগ করেন।{{sfn|ইসলাম|২০০৯|pp=১৯}} একইবছর ছবি আঁকা শেখার জন্য কলকাতায় পাড়ি জমান।{{r|বাংলাপিডিয়া}} ১৯৩৮ সালে, বয়স কম হবার কারণে সুলতান [[গভর্নমেন্ট কলেজ অব আর্ট অ্যান্ড ক্র্যাফট, কলকাতা|কলকাতা স্কুল অব ফাইন আর্টসে]] ভর্তি হতে পারেননি। কলকাতায় ধীরেন্দ্রনাথ রায়ের বাড়িতে, তার ভাই সত্যেন রায়ের বাড়িতে, কখনো তাদের অন্যান্য ভাইদের বাড়িতে থেকে সুলতান তিনবছর ছবি আঁকার চর্চা করেন।{{sfn|খান|২০০৩|pp=১৩৫}}{{sfn|হাই|২০১৮|pp=১৪১-১৪২}} খরচ মিটানোর জন্য তিনি [[ভবানীপুর|ভবানীপুরের]] রুবি সাইন আর্ট সেন্টারে ৩০ টাকা মাসিক বেতনে সাইনবোর্ড লেখা, পোস্টার ও রিকশা চিত্র অঙ্কনের কাজ নেন।{{sfn|ইসলাম|২০০৯|pp=১৯, ৭৫}}
=== কলকাতা আর্ট স্কুলে অধ্যয়ন (১৯৪১-১৯৪৪) ===
[[
১৯৪১ সালে তিনি কলকাতা আর্ট স্কুলে ভর্তি পরীক্ষা দেন। পরীক্ষায় অংশ নেয়া চারশো ছেলেমেয়েকে পনেরো মিনিটে [[ভেনাস ডি মিলো|ভেনাস মিলোর]] ছবি আঁকতে দেয়া হয়। সুলতান প্রথম হন, কিন্তু প্রবেশিকা পাশ না থাকার কারণে তার ভর্তি নিয়ে জটিলতার সৃষ্টি হয়। তখন ধীরেন্দ্রনাথ রায় বিষয়টা অবগত করেন শিল্প ইতিহাসবিদ ও সমালোচক [[হাসান শহীদ সোহ্রাওয়ার্দী|হাসান শহীদ সোহ্রাওয়ার্দীকে]], যিনি তখন কলকাতা আর্ট স্কুলের পরিচালনা পরিষদের সদস্য।{{r|ইশতিয়াক}} তার সাহায্যে সুলতান ১৯৪১ সালে কলকাতা আর্ট স্কুলে ভর্তি হন।{{r|বেঙ্গল}} তিনিই সুলতানকে পরামর্শ দেন ভর্তি হবার সময় কাগজপত্রে ''লাল মিয়া'' না লিখে ''শেখ মোহাম্মদ সুলতান'' লিখতে। সুলতানকে সোহরাওয়ার্দী সব ধরনের পৃষ্ঠপোষকতা করতে থাকেন।{{sfn|জার্মান সাংস্কৃতিক ইনস্টিটিউট|১৯৮৭|pp=১১–৩৫}} তার অসাধারণ সমৃদ্ধ গ্রন্থাগার সুলতানের জন্য সব সময় উন্মুক্ত ছিল। কিছুকাল তার বাসায় ও তার ভাই শহীদ সোহরাওয়ার্দীর বাসায় থেকে সুলতান পড়াশোনা করেন।{{sfn|হাই|২০১৮|pp=১৪৩-১৪৫}} কলকাতা আর্ট স্কুলের তৎকালীন প্রধান শিক্ষক [[মুকুল দে|মুকুলচন্দ্র দের]] অধীনে, স্কুলটি পুরনো শিল্পগুরুদের অনুকরণকে গুরুত্বহীন করে তোলে এবং [[পুরাণ (ভারতীয় শাস্ত্র)|ভারতীয় পৌরাণিক]], রূপক এবং ঐতিহাসিক বিষয়গুলিকে ছাড়িয়ে যায়। সেসময় শিক্ষার্থীদের তাদের নিজস্ব জীবনের অভিজ্ঞতা থেকে মৌলিক বিষয়বস্তুর মাধ্যমে সমকালীন দৃশ্য এবং প্রতিকৃতি আঁকতে উৎসাহিত করা হত।{{r|সেলিম}}
৫৬ ⟶ ৫৫ নং লাইন:
কলকাতা আর্ট স্কুলে র অন্যান্য ক্লাসে তখন [[জয়নুল আবেদিন]], [[কামরুল হাসান]], [[সফিউদ্দীন আহমেদ|সফিউদ্দিন আহমেদ]], [[রাজেন তরফদার]], [[আনোয়ারুল হক|আনওয়ারুল হকের]] মত মানুষেরা পড়াশোনা করতেন। ফলে তাদের সাথে সুলতানের যোগাযোগ ঘটে। ছাত্র হিসেবে সুলতান ভাল ছিলেন, এর পাশাপাশি [[মঞ্চনাটক|মঞ্চনাটকে]] অভিনয় করেও প্রশংসা অর্জন করেন।{{sfn|হাই|২০১৮|pp=১৪৬-১৪৭}} আর্ট স্কুলে পড়ার সময় সুলতান [[রাজেন তরফদার]] পরিচালিত ''উর্মিলা'' নামের একটি মঞ্চ নাটকে অভিনয় করেছিলেন।{{sfn|ইসলাম|২০০৯|pp=২৬}} আর্ট স্কুলে সুলতান প্রথম বছরের পরীক্ষায় দ্বিতীয় এবং পরের দুই বছর পর-পর প্রথম হয়েছিলেন৷ যদিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বাঁধাধরা জীবন এবং প্রাতিষ্ঠানিক চর্চার কঠোর রীতিনীতি সুলতানের জীবনের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ ছিল না। সে সময় তিনি [[জলধর সেন|জলধর সেনের]] ভ্রমণ কাহীনী পড়ে ভ্রমণের প্রতি আকৃষ্ট হন।{{sfn|ইসলাম|২০০৯|pp=৭৬}} ১৯৪৩ সালে সুলতান ব্রিটিশ ভারতে [[ইনায়েতউল্লাহ খান মাশরিকি|ইনায়েতউল্লাহ খান মাশরিকির]] [[খাকসার আন্দোলন|খাকসার আন্দোলনে]] যোগ দেন।{{r|বাংলাপিডিয়া}}{{r|রহমান}} ১৯৪৪ সালে, চতুর্থ বর্ষে উঠে সুলতান তার ছয় বছরের চারুকলা কোর্স অসমাপ্ত রেখে আর্ট স্কুল ছেড়ে দেন।{{r|বোস}}{{sfn|হাই|২০১৮|pp=১৫০}}{{r|মজুমদার}}{{sfn|ইসলাম|২০০৯|pp=২৩}}
=== ব্রিটিশ ভারত (১৯৪৪-১৯৪৭) ===
[[চিত্র:এস এম সুলতান-দুর্ভিক্ষের চিত্র (১৯৪৪).jpg|থাম্ব|১৯৪৪, ''দুর্ভিক্ষের চিত্র'']]
[[চিত্র:এস এম সুলতান-শিরোনামহীন (কাশ্মীর ল্যান্ডস্কেপ), ১৯৬৮.jpeg|থাম্ব|১৯৬৮, ''শিরোনামহীন (কাশ্মীর ল্যান্ডস্কেপ)'', কাগজে জলরং, ৩৪.৭ x ৫৪.৫ সেমি]]
৬৪ ⟶ ৬৩ নং লাইন:
তবে এটুকু জানা গেছে যে, সেসময় তিনি প্রাকৃতিক নৈসর্গ্য এবং প্রতিকৃতি আঁকতেন। এসময় তিনি [[শিমলা]] যান। এরই মধ্যে শিল্পী হিসেবে তিনি কিছুটা পরিচিতি অর্জন করেন ৷ ১৯৪৬ সালে [[কানাডা|কানাডিয়]] শিল্পপ্রেমী মিসেস হাডসন শিমলায় সুলতানের আঁকা ছবির প্রথম একক প্রদর্শনী করেন।{{r|রহমান}}{{r|মজুমদার}} এই প্রদর্শনীর বেশিরভাগই ছিল বাংলা ও কাশ্মীরের ভূদৃশ্য৷ [[কাপুরথালা, পাঞ্জাব|কাপুরথালার]] মহারাজা সেই প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেছিলেন।{{r|ইশতিয়াক}} পরে মহারাজার সঙ্গে সুলতানের ঘনিষ্ঠতা গড়ে উঠে এবং তিনি শিমলা ও জলন্ধরে মহারাজার ব্যক্তিগত অতিথি হয়ে উঠেছিলেন। পরে তিনি [[কাঘান উপত্যকা]] সুন্দর প্রাকৃতিক দৃশ্য এবং এর পরিশ্রমী মানুষের কঠোর জীবনচিত্র আঁকতে ব্যস্ত ছিলেন।{{r|চৌধুরী, এনাম}} ১৯৪৬ সালে, তিনি কাশ্মিরে যান এবং সেখানে তিনি প্রাকৃতিক দৃশ্য এঁকেছেন এবং কাশ্মিরের সংগ্রামী মানুষদের স্কেচ করেছেন।{{r|চৌধুরী, এনাম}}
=== পাকিস্তান (১৯৪৭-১৯৭১) ===
১৯৪৭ সালে [[ব্রিটিশ সাম্রাজ্য|ব্রিটিশ উপনিবেশ]] বিভক্ত হয়ে [[পাকিস্তান]] ও [[ভারত|ভারতের]] জন্ম হয়। এই বিভক্তির পর সুলতান কিছুদিনের জন্য নিজ দেশ তথা তৎকালীন [[পূর্ব পাকিস্তান|পূর্ব পাকিস্তানে]] ফিরে আসেন। সেবছরের শেষের দিকে তাকে [[শ্রীনগর]] থেকে [[লাহোর|লাহোরের]] উদ্দেশ্যে একটি শরণার্থী ট্রাকে দ্রুত পালিয়ে যেতে হয়েছিল। তার আঁকা চিত্রকর্মগুলি সেখানেই ফেলে আসেন তিনি। লাহোরে তিনি শিল্প সমালোচক আমজাদ আলির সাথে দেখা করেন। পরে আমজাদ আলির সুলতানকে উপমহাদেশের আরেকজন উজ্জ্বল শিল্পী— [[আব্দুর রহমান চুঘতাই|আব্দুর রহমান চুঘতাইয়ের]] সাথে পরিচয় করিয়ে দেন। ১৯৪৮ সালের ডিসেম্বরে, আমজাদ আলি এবং চুঘতাই সহ অন্যান্যদের সহায়তায় লাহোরে সুলতানের একটি একক প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হয়। এই প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন [[ফিরোজ খান নুন|স্যার মালিক ফিরোজ খান নুন]], যিনি পরবর্তীতে পাকিস্তানের সপ্তম প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন।{{r|চৌধুরী, এনাম}} পরের বছর, ১৯৪৯ সালে তিনি করাচিতে চলে যান। সেখানে পারসি স্কুলের শিল্প শিক্ষক হিসেবে দুই বছর কর্মরত ছিলেন। পাকিস্তানে আমজাদ, চুঘতাই, [[শাকির আলী (শিল্পী)|শাকির আলীর]] এবং কয়েকজনের পৃষ্ঠপোষকতায় তিনি একটি বড় একক প্রদর্শনী করেন, যা উদ্বোধন করেন মোহতারমা ফাতিমা জিন্নাহ।{{r|চৌধুরী, এনাম}} চিত্রকর্ম সংরক্ষণের ব্যাপারে সুলতানের উদাসীনতার কারণে তার এই সময়ের কোনো শিল্পকর্মই বর্তমানে টিকে নেই।{{r|বাংলাপিডিয়া}}{{r|টিপু}} পঞ্চাশের দশকে [[ফোর্ড ফাউন্ডেশন|ফোর্ড]] এবং [[রকফেলার ফাউন্ডেশন|রকফেলার ফাউন্ডেশনের]] অর্থায়নে, [[নিউ ইয়র্ক শহর|নিউ ইয়র্কের]] [[ইন্সটিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল এডুকেশন]] তাদের আন্তর্জাতিক শিল্প কর্মসূচির মাধ্যমে ২৫ থেকে ৩৫ বছর বয়সী অসাধারণ প্রতিশ্রুতিশীল বিদেশি শিল্পীদের [[মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র|যুক্তরাষ্ট্রে]] কয়েক সপ্তাহের কর্মসূচিতে অংশগ্রহণের সুযোগ দিত। এই শিল্পীদের নির্বাচন করা হত [[মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শিক্ষা বিভাগ|মার্কিন শিক্ষা মন্ত্রণালয়]] এবং ইন্সটিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল এডুকেশনের যৌথ উদ্যোগে। উক্ত কর্মসূচির মধ্যে ছিল জাদুঘর পরিদর্শন, একটি স্কুলে সৃজনশীল কাজ বা অধ্যয়নের সময়কাল, আমেরিকার নেতৃস্থানীয় শিল্পীদের সাথে পরামর্শ এবং দর্শকদের কাজের প্রদর্শনী।{{r|আইআইই}}{{r|রকফেলার-১৯৫০}}{{r|রকফেলার-১৯৫১}} ১৯৫০ সালে আন্তর্জাতিক শিক্ষা বিনিময় প্রোগ্রামের অধীনে চিত্রশিল্পীদের এই আন্তর্জাতিক সম্মেলনে যোগ দেয়ার উদ্দেশ্যে সুলতান [[মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র|যুক্তরাষ্ট্রে]] যান।<ref group=টীকা>জার্মান সাংস্কৃতিক কেন্দ্রেের ''এস.এম. সুলতান এবং তাঁর চিত্রকর্ম'' এবং বাংলাপিডিয়ার নিবন্ধে সুলতানের যুক্তরাষ্ট্র সফরের তারিখ দেয়া আছে ১৯৫০ সাল। "স্বাধীনতা পুরস্কার তালিকা বিবরণী" বলছে এটা ছিল ১৯৫১ সাল। আইইই এবং রকফেলার ফাউন্ডেশনের বার্ষিক প্রতিবেদনের অনুযায়ী, ১৯৫১-১৯৫২ শিক্ষাবর্ষ ছিল প্রথম বছর যখন পাকিস্তান আইইই-এর আন্তর্জাতিক শিল্প কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করেছিল।</ref>{{r|হোক-সান্ডারেসন}} সেখানে তিনি গ্যালারি এবং জাদুঘর পরিদর্শন করেন, ছবি আঁকেন, প্রদর্শনী করেন এবং বিভিন্ন সভায় বক্তব্য রাখেন।{{r|চৌধুরী, এনাম}} এই সফরে নিউ ইয়র্কের [[ইন্সটিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল এডুকেশনের]], [[ওয়াশিংটন, ডি.সি.|ওয়াশিংটন, ডি.সি.র]] ওয়াইএমসিএ,{{r|ওয়াইডব্লিউসিএ}} [[বস্টন]], [[শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়|শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের]] ইন্টারন্যাশনাল হাউস এবং [[অ্যান আর্বার, মিশিগান|অ্যান আর্বারের]] [[মিশিগান বিশ্ববিদ্যালয়|মিশিগান বিশ্ববিদ্যালয়ে]] তার শিল্পকর্মের প্রদর্শনী হয়। এই সফরকালে সুলতানকে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়, এবং ''[[দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমস|নিউ ইয়র্ক টাইমস]]'', ''[[দ্য ওয়াশিংটন পোস্ট|ওয়াশিংটন পোস্ট]]'', ''[[দ্য টেলিগ্রাফ]]'', ''[[দ্য টাইমস|টাইমস]]'', ''[[দ্য গার্ডিয়ান|গার্ডিয়ান]]'', ''[[ল্য মোঁদ (সংবাদপত্র)|ল্য মোঁদ]]''সহ বিভিন্ন বিখ্যাত সংবাদপত্রে তার কাজের প্রশংসামূলক সমালোচনা প্রকাশিত হয়।{{r|চৌধুরী, এনাম}} তিনি [[ভার্মন্ট|ভার্মন্টেও]] বেশকয়েক সপ্তাহ কাটিয়েছেন।{{r|হোক-সান্ডারেসন}} পরে তিনি [[ইংল্যান্ড|ইংল্যান্ডে]] যান, যেখানে তিনি [[লন্ডন|লন্ডনর]] হ্যাম্পস্টেডের ভিক্টোরিয়া বাঁধ গার্ডেনে বার্ষিক ওপেন-এয়ার গ্রুপ প্রদর্শনীতে অংশগ্রহণ করেন।{{r|হোক-সান্ডারেসন}} সেখানে [[পাবলো পিকাসো]], [[সালভাদোর দালি]], [[জর্জেস ব্রাক]], [[পল ক্লি]]র মতো আধুনিক চিত্রশিল্পীদের সাথে সুলতানের চিত্রকর্ম প্রদর্শিত হয়েছিল।{{r|হোক-সান্ডারেসন}} সে সময়ে ইউরোপজুড়ে তার কুড়িটির মতো চিত্রপ্রদর্শনী হয়।{{r|গাফফার-কিআ}} সুলতানের জীবনমুখী ও বাংলার রূপের সেসব চিত্রকর্ম আলোড়িত এবং প্রশংসিত হয়েছিল।{{r|ইশতিয়াক}}
কাশ্মীরে কিছুকাল বসবাস ও ছবি আঁকার পর, ১৯৫৩ সালের অক্টোবরে তিনি আবার নড়াইলে ফিরে আসেন।{{r|বাংলাপিডিয়া}} তিনি চিত্রা নদীর তীরে একটি জমিদার বাড়ির পরিত্যক্ত শিবমন্দিরে বসতি স্থাপন করেছিলেন, যেখানে তিনি বিভিন্ন পোষাপ্রাণীর একটি সারগ্রাহী সংগ্রহ নিয়ে থাকতেন।{{sfn|চক্রবর্তী|চক্রবর্তী|২০১৩|pp=৪৪৪–৪৪৫}} এর কিছুদিন পর শিবমন্দির ত্যাগ করে সুলতান মাছিমদিয়া গ্রামের আরেকটি পরিত্যক্ত দুতলা জমিদারবাড়িতে এসে উঠলেন৷ পরবর্তী তেইশ বছর তিনি মাটির কাছাকাছি বাইরের শিল্পজগত থেকে দূরে থাকতেন, ফলে একজন বিচ্ছিন্ন এবং বোহেমিয়ান হিসেবে তার পরিচিত ঘটে।{{sfn|জার্মান সাংস্কৃতিক ইনস্টিটিউট|১৯৮৭|pp=১১–৩৫}}{{sfn|খান|মালাকার|২০১৩|pp=২৩–২৪}} তার কিছুদিন পর তিনি চলে আসেন [[চাঁচুড়ী ইউনিয়ন|চাঁচুড়ী]] পুরুলিয়াতে। সেখানকার পরিত্যক্ত কৈলাসটিলা জমিদারবাড়ি পরিষ্কার করে সেখানে তিনি নন্দনকানন প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং নন্দনকানন স্কুল অব ফাইন আর্টস প্রতিষ্ঠা করেন।{{r|বিডিনিউজ-শিশু স্বর্গ}} সেখানকার ছাত্র-ছাত্রীদের কাছ থেকে তিনি কোন পারিশ্রমিক নিতেন না৷{{r|মন্ত্রিপরিষদ}} যদিও চারুকলা বিদ্যালয়টি পরে বন্ধ হয়ে যায়। নন্দনকানন প্রাথমিক বিদ্যালয়টি পরে চাচুড়ী পুরুলিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে পরিণত হয়। চারুকলা বিদ্যালয়টি বন্ধ হয়ে যাওয়ার পরে অনেকটা অভিমান নিয়েই সুলতান আবার নড়াইলে ফিরে আসেন।{{r|গাফফার-কিআ}} এবার এসে তিনি শিশুশিক্ষার প্রসারে কাজ শুরু করেন। শেষবয়সে তিনি নড়াইলে ''শিশুস্বর্গ'' এবং [[যশোর|যশোরে]] ''চারুপীঠ'' নামে দুটি শিশু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছিলেন।{{r|বিডিনিউজ-শিশু স্বর্গ}} ১৯৬৯ সালে ২০ সেপ্টেম্বর তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের খুলনা ক্লাবে সুলতানের একটি একক প্রদর্শনী হয়।{{r|স্টার-২০২৪}}{{r|নৃ}}
৭৬ ⟶ ৭৫ নং লাইন:
</gallery>
=== বাংলাদেশ (১৯৭১-১৯৯৪) ===
[[চিত্র:প্রথম বৃক্ষরোপণ (১৯৭৫).jpg|থাম্ব|১৯৭৫, ''[[প্রথম বৃক্ষরোপণ]]'', ক্যানভাসে তেলরঙ, ({{convert|abbr=on|disp=br|sortable=on|108|x|145|cm|in}}), [[বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি]]।]]
সত্তরের দশকের শুরুর দিকে তিনি নড়াইল জেলার পুরুলিয়া গ্রামে থাকতেন। সুলতান তার সেরা কিছু কাজ ১৯৭০ এবং ১৯৮০-এর দশকে তৈরি করেন। এসময় তিনি তার সবচেয়ে পরিচিত চিত্রকর্ম ''[[প্রথম বৃক্ষরোপণ]]'' (১৯৭৫) আঁকেন।{{r|বিশ্বাস-বিডিনিউজ২৪}} সত্তরের দশকের মধ্যভাগে তার কিছু শুভানুধ্যায়ী তাকে ঢাকায় নিয়ে আসেন। এখানে এসে তিনি কিছু চিত্রকর্ম আঁকেন। ১৯৭৫ সালে ঢাকায় [[জাতীয় চারুকলা প্রদর্শনী|১ম জাতীয় চারুকলা প্রদর্শনীতে]] (দলগত প্রদর্শনী) তার কাজের মধ্যে পরিবর্তন দেখা যায়।{{r|নৃ}} ১৯৭৬ সাল অবধি ঢাকায় আধুনিক চিত্রশিল্পের বিকাশের সময়টায় তিনি শিল্পরসিকদের চোখের আড়ালেই থেকে যান।{{r|বাংলাপিডিয়া}}{{r|বিডিনিউজ-শিশু স্বর্গ}} ১৯৭৬ সালে [[বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি]] তার পঁচাত্তরটিরও বেশি চিত্রকর্ম নিয়ে একটি একক প্রদর্শনীর আয়োজন করে, এবং এই প্রদর্শনীর মাধ্যমেই তিনি নতুন করে শিল্পসমাজে প্রতিষ্ঠা লাভ করেন।{{r|বাংলাপিডিয়া}}{{r|গাফফার}}{{r|মজুমদার}} এটি ছিল একইসাথে তার প্রথম বড় প্রদর্শনী এবং ঢাকায় তার প্রথম চিত্রপ্রদর্শনী।{{r|সেলিম}}{{sfn|চক্রবর্তী|চক্রবর্তী|২০১৩|pp=৪৪৪–৪৪৫}}
আশির দশক থেকে তিনি আবার নড়াইলেই থাকতে শুরু করেন। তার কাছে যেসব মানুষ এবং শিশু আশ্রয় নিয়েছিল তাদের জন্য তিনি নিজের ঘর ছেড়ে দেন। জীবজন্তুর প্রতি ভালোবাসা থেকে তিনি একটি অভয়ারণ্য তৈরি করেন। সেখানে তিনি তার পোষা [[বিড়াল]], [[কুকুর]], [[বেজি]] এবং [[বানর|বানরের]] সাথে বাস করতেন—এছাড়াও তার একটি [[সাপ]] ছিল।{{r|হক, ফায়েজা}} সুলতান শিশুদের চিত্রাঙ্কন শেখানোর জন্য নড়াইল শহরের উপকণ্ঠে কুড়িগ্রামে ১৯৭৮ সালে প্রতিষ্ঠা করেন "শিশুস্বর্গ"।{{r|রহমান, আজিবর}} ১৯৮১ সনে ঢাকায় অনুষ্ঠিত এশীয় চারুকলা প্রদর্শনীতে তিনি আন্তর্জাতিক জুরী কমিটির সদস্য মনোনীত হন৷{{r|মন্ত্রিপরিষদ}} ১৯৮৪ সালেে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি তাকে আজীবন শিল্পী হিসেবে নিয়োগ দেয়। এর অধীনে সরকারি সহায়তায় আর্থিক ভাতা প্রদান এবং ঢাকায় স্থায়ীভাবে সুলতানের থাকার ব্যবস্থা করা হয়, যার বিনিময়ে শিল্পকলা একাডেমিকে বছরে তাকে ছয়টি ছবি এঁকে দিতে হবে। প্রাথমিকভাবে দুই বছরের জন্য এই চুক্তি হলেও, পরবর্তীতে সুলতানের মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্তই তা বহাল ছিল ৷ ১৯৮৬ সালে তার তেলরঙে আঁকা ''ধান-মাড়াই'' (মতান্তরে ''ধান ঝাড়াই'') শিরোনামের চিত্রকর্মগুলোতে মোটাদাগে গ্রামবাংলার চিত্র ফুটে উঠেছে। যেখানে পেশীবহুল কৃষক, গ্রামীণ নারীর দেহসৌষ্ঠব, গবাদি পশু, দোচালা খড়ের ঘর, গোলাঘর আর মাঠ-ঘাট-নদী-গাছপালার সৌন্দর্য ধরা পরে।{{r|বিশ্বাস-বিডিনিউজ২৪}} ১৯৮৭ সালে ঢাকার জার্মান সাংস্কৃতিক কেন্দ্রে শতাধিক চিত্রকর্ম নিয়ে তার একক প্রদর্শনী হয়। এই প্রদর্শনীর ক্যাটালগে তার চিত্রকর্মের বিষয়বস্তুগুলোকে তিনি কীভাবে দেখতেন তার বর্ণনা করা হয়েছিল: {{Blockquote
৮৬ নং লাইন:
}}
১৯৯২ সালে তিনি সম্পূর্ণ নিজস্ব অর্থায়নে শিশুদের জন্য [[সুন্দরী]] কাঠ দিয়ে {{convert|60|x|15|ft}} বিশিষ্ট দ্বিতলা [[নৌকা]] "ভ্রাম্যমাণ শিশুস্বর্গ" তৈরি করেছিলেন।{{r|বিডিনিউজ-শিশু স্বর্গ}}{{r|আলী}} তার ইচ্ছা ছিল শিশুরা নৌকায় চড়ে সমুদ্র পরিভ্রমণে বের হবে আর শিল্পচর্চার উপকরণ খুঁজে পাবে।{{r|সাক্ষাতকার}}
আশির দশকের শেষদিকে তার স্বাস্থ্য খারাপ হতে থাকে। ১৯৯৪ সালে ঢাকার গ্যালারি টোনে তার সর্বশেষ প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হয়।{{r|গাফফার}} সে বছরেরই আগস্ট মাসে শিল্পকলা একডেমির উদ্যোগে নড়াইলে তার ৭০তম জন্মদিন পালন করা হয়।
<gallery widths="170" heights="180" class="center">
চিত্র:
চিত্র:এস এম সুলতান-চরদখল-১ (১৯৭৬).jpg|১৯৭৬, ''[[চরদখল|চরদখল-১]]'', ক্যানভাসে তেলরঙ ({{convert|abbr=on|disp=br|sortable=on|80|x|150|cm|in}}), [[বেঙ্গল ফাউন্ডেশন]]।
চিত্র:এস এম সুলতান-জলোচ্ছ্বাস (১৯৮৬), বেঙ্গল ফাউন্ডেশন.jpg|১৯৮৬, ''[[বন্যার পর]]'', {{convert|162 x 203|cm|in}}, বেঙ্গল ফাউন্ডেশন।
চিত্র:এস এম সুলতান-জমি কর্ষণ-২ (১৯৮৭).jpg|১৯৮৭, ''[[জমি কর্ষণ-২]]'', ক্যানভাসে তেলরঙ।
চিত্র:এস এম সুলতান-মাছ কাটা.jpeg|১৯৮৭, ''মাছ কাটা'', ক্যানভাসে তেলরঙ
চিত্র:এস এম সুলতান-শিরোনামহীন (সংঘবদ্ধ হালচাষ) (১৯৯১).jpg|১৯৯১, ''শিরোনামহীন (সংঘবদ্ধ হালচাষ)'', ক্যানভাসে তেলরঙ
চিত্র:এস এম সুলতান-গ্রাম্য কাইজা.jpg|''গ্রাম্য কাইজা'', ক্যানভাসে তেলরঙ ({{convert|abbr=on|disp=br|sortable=on|220|x|140|cm|in}}), সুলতান স্মৃতি সংগ্রহশালা, নড়াইল।
▲চিত্র:আত্মপ্রতিকৃতি, এস এম সুলতান.jpg|''আত্মপ্রতিকৃতি''
</gallery>
১৪০ ⟶ ১৩৯ নং লাইন:
{{div col end}}
== খ্যাতি এবং উত্তরাধিকার ==
[[চিত্র:
[[ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়|ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের]] [[চারুকলা অনুষদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়|ভাস্কর্য বিভাগের]] চেয়ারম্যান অধাপক লালা রুখ সেলিম, বাংলাদেশের আধুনিকতার চারজন অগ্রদূতের মধ্যে একজন হিসেবে সুলতানকে বর্ণনা করেছেন, যাদের মধ্যে [[জয়নুল আবেদিন|জয়নুল আবেদিন]], [[সফিউদ্দীন আহমেদ]], এবং [[কামরুল হাসান]]ও রয়েছেন।{{r|সেলিম}} লেখক [[আহমদ ছফা]] তার বিশ্লেষণমূলক লেখায় সুলতান সম্পর্কে উল্লেখ করেছেন, "সুলতানের চিত্রে যে মানুষগুলো ফুটে উঠেছে, তারা যদিও বাংলাদেশের, আসলে তারা পৃথিবীরই সন্তান… তিনি তুলনাহীন, কারণ [[অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর]], [[যামিনী রায়]], [[নন্দলাল বসু]], [[জয়নুল আবেদিন]], [[কামরুল হাসান]], [[আব্দুর রহমান চুঘতাই]] কিংবা [[আহমেদ সাঈদ নাগী|আহমেদ সাঈদ নাগীর]] মতো খ্যাতিমান শিল্পীদের মতো উপমহাদেশীয় আদর্শ ও ধাঁচের বাইরে বেরিয়ে এসে তিনি নিজেকে মহাকাব্যিক সৃষ্টিকারী হিসেবে প্রমাণ করেছেন।"{{r|চৌধুরী, এনাম}}
১৯৫০-এর দশকে শিকাগো ক্রনিকলে সুলতানকে 'মানবতাকে উপড়ে ফেলা' একজন ভালো শিল্পী হিসেবে প্রশংসা করা হয়েছিল।{{r|হক, ফায়েজা}} ১৯৮৪ সালে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি তাকে আজীবন শিল্পী হিসেবে নিয়োগ দেয়, যা তার শিল্পের অবিচল প্রভাব ও শিল্পজগতে তার সম্মানিত অবস্থানের প্রতিফলন।{{r|কালবেলা}}{{r|গাফফার-কিআ}}{{r|স্টার-২০২৪}} সুলতানের চিত্রকর্ম ''[[জমি চাষ]]'' (১৯৮৬) [[বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর|বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরের]] "১০০টি প্রসিদ্ধ বস্তুর" তালিকায় ৯৩তম স্থানে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে।{{r|বাজাজা}}{{r|forgotten}} ২০২৪ সালে তার জন্ম শতবর্ষে সুলতান জাতীয় ও আন্তর্জাতিক উদ্যাপন কমিটি গঠিত হয়েছিল।{{r|মামুন}}
সাহিত্যিক [[হাসনাত আব্দুল হাই]] সুলতানের জীবন নিয়ে ''সুলতান'' (১৯৯১) নামে একটি গবেষণামূলক উপন্যাস লিখেছেন,{{r|রহমান}} যে বিষয়ে কবি [[শামসুর রাহমান]] তার "সুলতান তার সুলতানাত ছাড়েননি" প্রবন্ধে সুপারিশ করেছিলেন।{{r|চৌধুরী, এনাম}} ২০০৫ সালে আলোকচিত্রী [[নাসির আলী মামুন]] ''গুরু'' নামে একটি বই প্রকাশ করেন, যাতে সুলতানের ৬৮টি আলোকচিত্র রয়েছে। এই ছবিগুলো ১৯৭৮ সালে সুলতানের সাথে নাসির আলী মামুনের প্রথম সাক্ষাতে সময় থেকে তার মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তোলা সহস্রাধিক ছবির মধ্যে থেকে বাছাইকৃত হয়েছে।{{r|আহমেদ}}
==== সুলতান কমপ্লেক্স ====
[[
সুলতানের স্মৃতিসংগ্রহ সুলতান কমপ্লেক্স [[চিত্রা নদী|চিত্রা নদীর]] তীরে নড়াইল শহরের মাছিমদিয়া এলাকায় মনোরম পরিবেশে প্রায় ২৬ একর এলাকা জুড়ে অবস্থিত। এখানে চিত্রশিল্পী সুলতানকে সমাহিত করা হয়েছে। সমাধির সামনে সুলতানের আদি বাসভবনের একটি ছোট অংশ রয়েছে। লাল সিরামিক দিয়ে মোড়ানো কমপ্লেক্সটি শান্ত, নির্জন এবং চমৎকার সব চিত্রকর্ম সুলতান কমপ্লেক্সের মর্যাদা বাড়িয়ে দিয়েছে। কমপ্লেক্সের পাশে চিত্রা নদীর পাড়ে সংরক্ষিত হয়েছে সুলতানের তৈরি "শিশুস্বর্গ"।{{r|সুলতান কমপ্লেক্স}} এই কমপ্লেক্সে শিশুদের জন্য সুলতানের তৈরি নৌকা "শিশুস্বর্গ" সংরক্ষিত আছে।{{r|জাহান}}
=== সুলতান স্মৃতি সংগ্রহশালা ===
নড়াইলের মাছিমদিয়ায় চিত্রা নদীর পারে সরকারি উদ্যোগে ২০১৬ সালে এস এম সুলতান স্মৃতি সংগ্রহশালা প্রতিষ্ঠা করা হয়।{{r|প্রাআ-নতুনরূপে}} দোতলা জাদুঘরটি শিল্পীর স্মৃতিতে পূর্ণ, যা তার শিল্পকর্মের সমৃদ্ধ স্মারক বহন করে। যদিও কিছু জিনিসপত্র সময়ের সাথে সাথে হারিয়ে গেছে, তারপরও সুলতানের কিছু ব্যক্তিগত সামগ্রী এখনও রয়েছে - যার মধ্যে রয়েছে কুরআন, পোশাক, রং-তুলি, ক্যানভাস, বাদ্যযন্ত্র, লাঠি, টর্চ, আয়না, ফুলদানি, ছবি এবং আরও অনেক কিছু। এই সংগ্রহশালায় সুলতানের ৭৭টি শিল্পকর্ম রয়েছে যার মধ্যে একটি অসম্পূর্ণ।{{r|জাহান}}
=== সুলতান স্বর্ণ পদক ===
[[বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি]] "সুলতান স্বর্ণ পদক" নামে একটি পুরস্কার চালু করেছে। সুলতানের নামে নামকরণ করা এই পুরস্কারটি প্রতি বছর তার জন্মবার্ষিকী উদযাপন অনুষ্ঠানে একজন বিশিষ্ট শিল্পীকে প্রদান করা হয়।{{r|সুলতান স্বর্ণ পদক ২০২০}} ২০২০ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত পুরস্কার প্রাপ্তদের মধ্যে রয়েছেন [[কাইয়ুম চৌধুরী]], [[রফিকুন নবী]], [[মুর্তজা বশীর]], [[আমিনুল ইসলাম (চিত্রশিল্পী)|আমিনুল ইসলাম]], [[সৈয়দ জাহাঙ্গীর]], [[মাহমুদুল হক (চিত্রশিল্পী)|মাহমুদুল হক]], আব্দুস শাকুর শাহ্, আবুল বারাক আলভী, [[সমরজিৎ রায় চৌধুরী]], [[আবু তাহের (চিত্রশিল্পী)|আবু তাহের]], [[হামিদুজ্জামান খান]], [[মনিরুল ইসলাম (চিত্রশিল্পী)|মনিরুল ইসলাম]], [[মনসুর উল করিম]], [[কালিদাস কর্মকার]], আব্দুল মান্নান, [[হাশেম খান]], [[ফেরদৌসী প্রিয়ভাষিণী]], [[মোস্তফা মন্ওয়ার]] এবং [[ফরিদা জামান]]।{{r|সুলতান স্বর্ণ পদক ২০২০}}
২৪৩ ⟶ ২৪২ নং লাইন:
|}
== টীকা ==
{{Reflist|group=টীকা}}
== তথ্যসূত্র ==
{{সূত্র তালিকা|২|refs=
<ref name="আইআইই">{{cite book |author=ইন্সটিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল এডুকেশন |title=Institute of International Education 32nd Annual Report |অনূদিত-শিরোনাম=ইন্সটিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল এডুকেশন ৩২তম বার্ষিক প্রতিবেদন |url=http://www.iie.org/~/media/Files/Corporate/AR/1951-IIE-Annual-Report.ashx |format=PDF |location=নিউ ইয়র্ক |publisher=[[ইন্সটিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল এডুকেশন]] |page=২৮, ৩১ |date=১৯৫১ |ভাষা=en |access-date=30 July 2014 }}{{অকার্যকর সংযোগ|তারিখ=নভেম্বর ২০২৪ |bot=InternetArchiveBot |ঠিক করার প্রচেষ্টা=yes }}</ref>
<ref name="আবির পোথি">{{সংবাদ উদ্ধৃতি |শিরোনাম=Remembering SM Sultan, the Bangladeshi Artist Who Captured Peasants With Exaggerated Muscles |ইউআরএল=https://abirpothi.com/remembering-s-m-sultan-the-bangladeshi-artist-who-captured-peasants-with-exaggerated-muscles/ |ওয়েবসাইট=ভারতের একমাত্র দৈনিক ডিজিটাল আর্ট সংবাদপত্র |প্রকাশক=আবির পোথি |সংগ্রহের-তারিখ=১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪ |ভাষা=en |তারিখ=১০ আগস্ট ২০২৪ |আর্কাইভের-তারিখ=২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪ |আর্কাইভের-ইউআরএল=https://web.archive.org/web/20240921230014/https://abirpothi.com/remembering-s-m-sultan-the-bangladeshi-artist-who-captured-peasants-with-exaggerated-muscles/ |ইউআরএল-অবস্থা=কার্যকর }}</ref>
<ref name="আলী">{{সংবাদ উদ্ধৃতি |শেষাংশ1=আলী |প্রথমাংশ1=মো.বাবর |শিরোনাম=চিত্রশিল্পী এস এম সুলতানের আদ্যোপান্ত |ইউআরএল=https://www.agaminews.com/special-report/news/47229 |সংগ্রহের-তারিখ=২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪ |প্রকাশক=আগামী নিউজ |তারিখ=৬ এপ্রিল ২০২১ |অবস্থান=[[নড়াইল]] |আর্কাইভের-তারিখ=২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪ |আর্কাইভের-ইউআরএল=https://web.archive.org/web/20240926151652/https://www.agaminews.com//special-report/news/47229 |ইউআরএল-অবস্থা=কার্যকর }}</ref>
২৬১ ⟶ ২৬০ নং লাইন:
<ref name="কমল">{{সংবাদ উদ্ধৃতি |শেষাংশ1=কমল |প্রথমাংশ1=এরশাদ |শিরোনাম=S.M. Sultan: The golden man of fine arts |ইউআরএল=https://www.thedailystar.net/news-detail-49663 |সংগ্রহের-তারিখ=২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪ |প্রকাশক=[[দ্য ডেইলি স্টার (বাংলাদেশ)|দ্য ডেইলি স্টার]] |তারিখ=১০ আগস্ট ২০০৮ |ভাষা=en |আর্কাইভের-তারিখ=২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪ |আর্কাইভের-ইউআরএল=https://web.archive.org/web/20240924001647/https://www.thedailystar.net/news-detail-49663 |ইউআরএল-অবস্থা=কার্যকর }}</ref>
<ref name="কালবেলা">{{সংবাদ উদ্ধৃতি |শিরোনাম=চিত্রশিল্পী এস এম সুলতান |ইউআরএল=https://www.kalbela.com/ajkerpatrika/joto-mot-toto-path/110325 |সংগ্রহের-তারিখ=২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪ |প্রকাশক=[[দৈনিক কালবেলা]] |তারিখ=১০ আগস্ট ২০২৪ }}{{অকার্যকর সংযোগ|তারিখ=নভেম্বর ২০২৪ |bot=InternetArchiveBot |ঠিক করার প্রচেষ্টা=yes }}</ref>
<ref name="গাফফার">{{ওয়েব উদ্ধৃতি|ইউআরএল=https://www.prothomalo.com/kishoralo/article/1559588/%E0%A6%AA%E0%A7%8D%E0%A6%B0%E0%A6%BE%E0%A6%A3-%E0%A6%93-%E0%A6%AA%E0%A7%8D%E0%A6%B0%E0%A6%95%E0%A7%83%E0%A6%A4%E0%A6%BF%E0%A6%B0-%E0%A6%B6%E0%A6%BF%E0%A6%B2%E0%A7%8D%E0%A6%AA%E0%A7%80|শিরোনাম=প্রাণ ও প্রকৃতির শিল্পী|শেষাংশ=গাফফার|প্রথমাংশ=আবদুল|তারিখ=৫ আগস্ট ২০১৮|ওয়েবসাইট=[[প্রথম আলো]]|সংগ্রহের-তারিখ=৮ জুলাই ২০২০|আর্কাইভের-তারিখ=১৯ মে ২০২০|আর্কাইভের-ইউআরএল=https://web.archive.org/web/20200519014034/https://www.prothomalo.com/kishoralo/article/1559588/%E0%A6%AA%E0%A7%8D%E0%A6%B0%E0%A6%BE%E0%A6%A3-%E0%A6%93-%E0%A6%AA%E0%A7%8D%E0%A6%B0%E0%A6%95%E0%A7%83%E0%A6%A4%E0%A6%BF%E0%A6%B0-%E0%A6%B6%E0%A6%BF%E0%A6%B2%E0%A7%8D%E0%A6%AA%E0%A7%80|ইউআরএল-অবস্থা=কার্যকর}}</ref>
|